নিরব প্রেম

শিলিগুড়ির বাগডোগরা এয়ারপোর্টে পৌঁছে আদিত্য শুনলো তাঁর দিল্লি ফিরে যাওয়ার ফ্লাইট প্রায় দেড় ঘণ্টা লেট রয়েছে। আর সেখানেই সে প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে আবার মুখোমুখি হলো পরমার।এই সেই পরমা যাঁর জন্য সে কলকাতা থেকে পালিয়ে দিল্লিতে কাজ খুঁজে নিয়েছে।বিশেষ করে পরমার বিয়ের পরে তো তাঁর পক্ষে কলকাতায় থাকা একরকম অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। সেই কারনে দিল্লিতে খবরের কাগজের সাংবাদিকের চাকরির সুযোগ পেয়ে কলকাতা ছাড়তে দুবার আর ভাবেনি।

পরমা যে তাঁকে দেখেছে, সে বিষয়ে সে নিশ্চিত।এত বছরেও পরমা খুব একটা বদলায়নি। সময়টা যদিও তিন বছরের বেশি, পরমার চেহারার তো পরিবর্তন সামান্যই হয়েছে। বাগডোগরা উত্তরবঙ্গের একমাত্র এয়ারপোর্ট। এয়ারপোর্টে যে সমস্ত যাত্রীরা অপেক্ষা করছেন, তাঁরা অধিকাংশ দিল্লি ফ্লাইটের প্যাসেঞ্জার। কিন্তু আদিত্য তো শুনেছিল, যে পরমার কলকাতাতেই বিয়ে হয়েছে।তবে কি বাগডোগরা হয়ে দিল্লি যাচ্ছে পরমা !

আদিত্য দিল্লিতে যে ইংরাজি খবরের কাগজে কাজ করে, সেই কাগজের জন্যই রিপোর্ট সংগ্রহ করতে তাঁকে দার্জিলিং পাঠানো হয়েছে অফিস থেকে। করোনা আবহের মধ্যে এবং রাজনৈতিক ভাবে দার্জিলিং দিল্লির খবরের কাগজে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সেই দার্জিলিং এঁর অশান্তি দিল্লিতে যথেস্ট আলোচোনার বিষয়। সেদিন তাঁদের কাগজের এডিটোরিয়াল মিটিং এ চিফ রিপোর্টার বিক্রমন কুমারস্বামী আগামী লোকসভা নিবার্চনের আগে হিংসা পরবর্ত্তী দার্জিলিং নিয়ে খবর করার বিষয়ে আগ্রহ দেখালেন, আর সেই খবর করার দায়িত্ব আদিত্যকে দিলেন, সেদিন আদিত্য সত্যি অবাক হয়েছিল। গত সপ্তাহে এই বাগডোগরা এয়ারপোর্ট দিয়েই আদিত্য পাহাড়ে উঠেছিল।

                                  ।।২।।

কলকাতায় কলেজে পড়ার সময় কি সব দিন কেটেছে তাঁর আর পরমার। পরমা ছিল তাঁর চেয়েও বেশি প্রান চঞ্চল। কলেজের তো সবাই ধরেই নিয়ে ছিল যে তাঁর আর পরমার বিয়ে হচ্ছেই।কলেজের ক্লাস কেটে সিনেমা দেখা, শপিং মলে ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা দেওয়া- এসব তো ছিলই। আদিত্যর লেখা গল্প বা কবিতার প্রথম পাঠক ছিল পরমা।পরমাই তাঁকে উৎসাহ দিত লেখা বিভিন্ন পত্রপত্রিকাতে পাঠানোর জন্য।লেখার হাত তখন থেকেই মোটামোটি ছিল আদিত্যর।আদিত্যর লেখা ছাপা হলে শহরের কোন শপিং মলের ফুড কোর্টে সেটা সেলিব্রট করতো পরমা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে। আদিত্য অনেক চাপাচাপিতেও সেই সেলিব্রেটের খরচ নিজে করতে পারেনি। পরমাই তাঁকে করতে দেয়নি।আদিত্য এনিয়ে কিছু বললেই পরমার জবাব ছিল, “আরে! আমার টাকা কি তোমার টাকা নয়!” যদিও পরমার পরিবারের আথির্ক অবস্থা অনেকটাই ভালো ছিল আদিত্যর থেকে।

আর একটা দুপুরের কথা আদিত্য ভুলতে পারবে না কোনদিনও। সেই দুপুরে পরমাকে সবচেয়ে কাছে পেয়েছিল সে।

নিউটাউনে পরমার এক মামার ফ্ল্যাট সেদিন ফাঁকা ছিল। মামার বাড়ির সবাই থাইল্যান্ড ঘুরতে গিয়েছিলেন। সেই ফ্ল্যাটের চাবি ছিল পরমাদের বাড়িতে। কোনভাবে সেই চাবি ম্যানেজ করেছিল পরমা। সেই দুপুরে আকাশ ছিল কালো মেঘে ঢাকা।কলেজ থেকে সিটি সেন্টার ওয়ানের এক মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা ছিল ওদের। কলেজে আদিত্য পরমাকে সে কথা জানাতে উত্তর পেয়েছিল, “না, আমাকে একবার নিউটাউনে মামার ফ্ল্যাটে যেতে হবে।মামা একটা জরুরী জিনিস বাবাকে দেওয়ার জন্য ফ্ল্যাটে রেখে গিয়েছে। সেটা নিয়ে বাবাকে পৌঁছে দিতে হবে।আজ আর সিনেমা দেখতে যাওয়া হবেনা। তা, তুমি কি আমার সঙ্গে নিউটাউনে যাবে?”

আদিত্য কিছু বলার আগেই পরমা বলেছিল, “এই যাবো আর আসবো। চলোই না,একটু আমার সঙ্গে।একা একা যেতে আমার ভালো লাগবে না।”

পরমার অনুরোধে সেদিন আদিত্য না করতে পারেনি।নিউটাউনে পৌঁছনোর আগেই শুরু হয়েছিল তুমুল বৃষ্টি। কোনমতে সেখানে পৌঁছতেই তাঁরা দুজনে ভিজে গিয়েছিল। ফ্ল্যাটের সব জিনিষপত্রের সঙ্গে পরমা যে ভালভাবে পরিচিত,সেটা পরমার আচরনে বেশ ভালো বুঝতে পেরেছিল আদিত্য। পরমা নিজেই ওয়ার্ড্রোব খুলে তোয়ালে বের করা নিজে একটা নিয়ে আর একটা দিয়েছিল আদিত্যকে। কিন্তু যেকাজে সেখানে গিয়েছিল পরমা, সেই বিষয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিলনা। বৃষ্টির দুপুরে ফাঁকা ফ্ল্যাটে দুজনে গল্প করতে করতে নিজেদের সামলাতে পারেনি। তবে উৎসাহটা পরমার দিক থেকেই বেশি ছিল।বেশ কিছুক্ষন পরে দুজনেই যখন শারিরীকভাবে ক্লান্ত, আদিত্য বলেছিল, “এভাবে আমি তোমায় চাইনি। একটা কিছু কিন্তু প্রোটেকশন নেওয়া উচিত ছিল।যদি কিছু একটা হয়ে যায়!”

পরমা বিছানার চাদর গায়ে টেনে উত্তর দিয়েছিল, “এখন অনেক কিছু প্রোটেকশন পাওয়া যায়। সত্যি, আদি, তুমি কি কিছুই জানোনা!”

সেদিন ওই ফ্ল্যাট থেকে বের হওয়ার আগে তাঁরা আরও দুবার মিলিত হয়েছিল।

আজ আবার সেই পরমার সঙ্গে বাগডোগরা এয়ারপোর্টে দেখা। তবে বেশ কয়েক বছর পরে।

                                  ।।৩।।

প্লেনের মাঝামাঝি জায়গায় জানালার ধারে সিট পড়েছিল পরমার। দিল্লির আনন্দবিহারে সে এক গোয়ানিজ পরিবারে পেয়িং গেষ্ট হয়ে থাকছে বছরখানেক। বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই জীবনে ওই দূর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে পরমার বেঁচে থাকার ইচ্ছাই চলে গিয়েছিল। কলকাতাতেই সাইক্রিয়াটিষ্টের ওষুধে কিছুটা সুস্থ হলে কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। ডাক্তারের কথাতেই ‘অন্য পরিবেশে’ কাজের সন্ধান করে দিয়েছিলেন পরমার বাবার এক পরিচিত।আর পরমাও কলকাতায় পরিচিত গন্ডির মধ্যে থাকতে চায়নি। সেই সূত্রেই পরমা দিল্লির এক বেসরকারি সংস্থায় রিসেপশনিস্ট। পরমা এখন অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পেরেছে।তাঁর জীবনের সেই দূর্ঘটনা কার্শিয়াং এর কাছে ঘটেছিল বলে তাঁকে সেখানের কোর্টে সাক্ষী দিতে আসতে হয়েছিল।

পরমা বাগডোগরা এয়ারপোর্টেই আদিত্যকে নজর করেছে। তবে এভাবে আদিত্যর সঙ্গে দেখা হবে সেটা ভাবেনি। এক ঝলক দেখে পরমার চোখে আদিত্যর চেহারার খুব একটা চেঞ্জ ধরা পড়েনি। একই প্লেনে আদিত্যর সিট পড়েছে সামনের দিকে। তাঁর পিসতুতো বোন ঝিনুকের বুদ্ধিতে কলেজে সেদিন আদিত্যকে ওভাবে অপমান করার পরে আর সামনে আসেনি। এজন্য বিয়ে বা তাঁর জীবনের সেই দূর্ঘটনার পরে আদিত্যর সামনা সামনি হওয়ার ভয়ে কলকাতাকে এড়িয়েই চলেছে।

আদিত্যর সঙ্গে উদ্দাম প্রেমের সময় বাড়িতে আত্মীয়রা পরমার বিয়ের সম্বন্ধ প্রায়ই নিয়ে আসতো। পরমাও নানা অজুহাতে বারবার বিয়ের বিষয় এড়িয়ে চলছিল।পরমার ছোটমামা যখন আর এন আই পাত্র আনির্বানের সম্বন্ধ এনেছিল, প্রথমে বেঁকে বসেছিল পরমা। আদিত্যর কথা বাড়িতে বলেও পরিবারের কাউকে রাজি করাতে পারেনি। বিশেষ করে পরমার মা তো মেয়ের কলেজের বন্ধুকে নিজের একমাত্র জামাই হিসাবে মানতেই রাজি নন। বাড়িতে তুমুল অশান্তির পরেও মেয়েকে ছোটভাই এঁর আনা পাত্রের সঙ্গে পরমাকে বিয়ে করতে রাজি করাতে না পেরে হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। পরমাই মাকে ওই অবস্থায় বাথরুমে দেখতে পেয়ে বাবাকে ফোন করে মাকে নার্সিংহোমে নিয়ে এসেছিল। তারপর যা হয়! মা সুস্থ হয়ে বাড়িতে এলে তাঁদের পছন্দের পাত্রকে বিয়ের সন্মতি দিতে হয়েছিল পরমাকে।কিভাবে আদিত্যর সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে সহজ হবে সেই বুদ্ধি পরমাকে দিয়েছিল ঝিনুক। ঝিনুকের কথামতো ‘কাজ’ করেছিল পরমা। নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কলেজে আদিত্যকে প্রচন্ড অপমান করেছিল। তারপর আর কলেজেই যায়নি পরমা।আদিত্য যাতে কোনভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে, সেকারনে বদলে নিয়েছিল সেলফোনের সিমকার্ডও।ডিলিট করে দিয়েছিল নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট টিকেও।

                                   ।।৪।।

প্লেনে বসে পরমার কথাই ভাবছিল আদিত্য।পরমাকে ভালোবাসাতে কোথায় তাঁর গাফিলতি ছিল সেটা আজও নিজের কাছে পরিস্কার হয়নি। কলেজের বন্ধুদের সামনে আদিত্যর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুধু না, ভবিষ্যতে আদিত্যর পক্ষে যে মোটা রোজগার করার কোন সম্ভাবনা পরমা দেখতে পায়না, সেকথা তুলেও প্রচন্ড ঝেড়েছিল। সেদিন সামান্য কথাতে পরমা তাঁকে অপমানই শুধু করেনি, তাঁর সঙ্গে সব রকমভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল,   তাজ্জব হয়ে গিয়েছিল আদিত্য। হোয়াটসঅ্যাপে যে তাঁরা প্রায় সারাদিন কথা চালাচালি করতো,ওই ঘটনার পর থেকে সেই হোয়াটসঅ্যাপ পরমার বন্ধ, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাচ্ছেনা, সেলফোন সুইচঅফ বলছে। ঘটনার দিন তো বটেই, পরপর বেশ কিছুদিন আদিত্য চেষ্টা করেও কোনভাবে যোগাযোগ করতে পারেনি পরমার সঙ্গে।পরমা কলেজে আসাও বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে বন্ধুদের থেকে আদিত্য যখন শুনতে পেয়েছিল, পরমার ‘বিয়ে’, তখন চমকে উঠলেও পরমাদের বাড়িতে যায়নি আদিত্য, প্রচন্ড দুঃখে কলকাতা ছেড়ে বর্ধমান চলে গিয়েছিল।তারপরেই কলকাতা থেকে দূরে থাকতে তাঁর এই দিল্লিতে খবরের কাগজের চাকরি।

                                  ।। ৫।।

মনকে আড়াল করে ‘মুখোশ’ পরেই আনির্বানের গলায় বিয়ের মালা পড়ালো পরমা। পরমাকে নিয়ে অনির্বান যেহেতু লন্ডনে তাঁর কর্মস্থলে চলে যাবে, বিয়ের পরে তাই চেয়েছিল,এদেশে ছুটির কয়েকটা দিন নতুন বৌয়ের সঙ্গে কাটাতে। হানিমুনে দার্জিলিং এ হোটেল আগেই বুক করাছিল ওঁদের। আগে দার্জিলিং পরমার বেশ কয়েকবার ঘোরা হলেও অনির্বানের ইচ্ছাতে না করেনি পরমা। বিয়ের আগে পরমাকে একদেখাতে পছন্দ করে বিয়ের দিন ঠিক করার সঙ্গে পার্কস্ট্রীটের রেস্তোরাতে ডিনারে ডেকে হানিমুনের জায়গা নিয়ে পরমার মত জেনে নিয়েছিল অনির্বান। ট্রেনে নিউজলপাইগুড়ি পৌঁছে ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে দুজনে রওনা হয়েছিল দার্জিলিং এঁর দিকে। ভাড়ার মারুতি গাড়ির নেপালি ড্রাইভার সুকনায় পৌঁছে অনির্বানকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “স্যর, পাংখাবাড়ি রোড পকরনেসে জলদি দার্জিলিং পৌঁছ যায়েঙ্গে। আপ লোগোকা কুছ প্রবলেম তো নেহি !”

গাড়ির পিছনের সিটে পরমাকে সঙ্গে নিয়ে বসা অনির্বান সন্মতি দিতে পরমা আর না করেনি। স্কুলে পড়ার সময় বাবা-মা এঁর সঙ্গে একবার দার্জিলিং ঘুরতে এসে পাংখাবাড়ি রোড দিয়ে উঠেছিল।তাই পাংখাবাড়ি রোডের ভয়াবহ টার্নিংগুলির অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। তবে হানিমুন নিয়ে কোন উদ্দীপনা ছিলনা পরমার। তবুও স্বামী অনির্বানের মন রাখতে অভিনয় করে চলেছিল সে। মানুষ হিসাবে অনির্বান বেশ দিলখোলা ধরনের। সম্পর্ক তৈরিতে পরমার সঙ্গে আপন হওয়ার চেষ্ঠায় কোন কসুর করেনি।কিন্তু পরমাই স্বাভাবিক হতে পারেনি।বিয়ের পরেও পরমার বারবার মনে পড়ছিল আদিত্যর কথা। এমনকি, ফুলশয্যার রাতেও অনির্বানের জায়গায় আদিত্যর মুখ ভেসে উঠেছিল। দার্জিলিং যাওয়ার পাহাড়ী পথে মনে আসছিল আদিত্যর কথা। সেজন্য বারবারই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিল পরমা।

পাহাড়ী রাস্তায় টার্নিং নেওয়ার সময় হঠাৎই জোরে বোমা ফাটার মতো আওয়াজে চমকে উঠেছিল পরমা।কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরমা অনুভব করেছিল তাঁর পেটের ভিতরটা কেমন হাল্কা লাগছে।মাথায় জোরে আঘাত পেয়েছিল সে। এরপর কিছু মনে ছিলনা পরমার।

                                  ।।৬।।

প্লেনের পাইলটের ঘোষনা শুনে নিজের সিট বেল্ট আটকে নিল পরমা। কিছুক্ষনের মধ্যে প্লেন দিল্লিতে ল্যান্ড করবে। প্রায় দুঘন্টা পথ সেই পুরানো দিনের কথা ভেবেই কাটিয়ে দিল পরমা। অতীতের কথা সে কিছুতেই ভুলতে পারেনা। আজ প্লেনে আদিত্যকে দেখে তাঁর ভীষনভাবে সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে।

আচ্ছা! আদিত্য কি জানে তাঁর জীবনে কি বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে।জানে সে আজ একজন বিধবা!আদিত্য কি জানে হানিমুনে যাওয়ার পথে পাহাড়ে টায়ার ফেটে ড্রাইভার গাড়িকে কন্ট্রোল করতে না পেরে খাদে গিয়ে পড়েছিল! ড্রাইভার সহ অনির্বান ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিল! শুধু বেঁচে গিয়েছিল সে!

দিল্লি এয়ারপোর্টে লাগেজ বেল্টের কাছে গিয়ে দাঁড়াতে পরমা আদিত্যকে দেখতে পেল। লাগেজ বেল্ট দিয়ে বেরিয়ে আসছে তাঁদের ফ্লাইটের বিভিন্ন যাত্রীদের লাগেজ। নিজের সুটকেস চিনতে পারলো পরমা। তাঁর সুটকেসের সঙ্গে আরও একটি ট্রাভেল ব্যাগ লাগেজ বেল্ট দিয়ে এগিয়ে আসছে। পরমার সুটকেসের সঙ্গেই ছিল আদিত্যর ট্রাভেল ব্যাগটি।দুজনে প্রায় একসঙ্গে বেল্ট থেকে লাগেজ তুলতে গেলে আজান্তেই আদিত্যর সঙ্গে ধাক্কা লেগে গেল পরমার। এরপর কথা না বলে থাকতে পারলো না আদিত্য। জিজ্ঞাসা করলো, “কেমন আছো? এখানে বেড়াতে না কাজে?”

আদিত্যকে আর উপেক্ষা করতে পারলোনা পরমা। উত্তর দিল, “সে অনেক কথা। এভাবে বলা যাবেনা।”

আদিত্য নিজে থেকেই বললো, “আমি তো এখন দিল্লিতেই রয়েছি।”

“আমিও,” পরমার ছোট্ট উত্তর।

“তোমার তো এখন বিলেতে থাকার কথা। তা দিল্লিতে কোথায় থাকো!” বলে আদিত্য তাঁর নিউজ পেপারের ভিজিটিং কার্ড পরমার দিকে এগিয়ে দিল। ওই কার্ডে আদিত্যর অফিসের ঠিকানা, নিজের সেলফোন নম্বর-সব রয়েছে।

কার্ডটা হাতে নিয়ে পরমা ছোট করে হেসে বললো, “এই সেল নম্বরে মিসকল দিয়ে দিচ্ছি। তুমি সেভ করে নিও।।”

 

 

 

 

 

.

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত