শকুন্তলম

: হ্যালো, স্যার, আপনি কি আজও আসবেন না? আবারও কোভিড সিম্পটম?

: শকুন্তলা, আমি আজও আসতে চাচ্ছিলাম না। মনটা কেমন অস্থির। এই অস্থির, অন্ধকার মন নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের মহা গুরুত্বপূর্ণ আলো চ্যাপ্টার পড়ানো যায় বলো?

: আমার নাম কুন্তলা, শকুন্তলা নয়। এই নামে ডাকলে আপনাকে মনে হয় রাজা দুষ্মন্ত। তখন ইচ্ছে করে সব ছেড়েছুড়ে আমি এখনই তপোবনে চলে যাই। 

:কুন্তলা নামটা কেমন! কেশযুক্তা। বন্ধুরা তোমাকে খেপায় না !

:স্যার, চারদিন অলরেডি কামাই দিয়েছেন। আগেরদিন বললেন, আপনার খুব জ্বর, ১০২ এর উপরে। সন্ধ্যায় মা দেখে আপনি বসুন্ধরা ফুড কোর্টে খুব হেসে হেসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। 

:১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে কি হাসা যায় না?তোমার মা কার সঙ্গে ছিলেন সেইটা বলে নাই। ওইদিন আমার জন্মদিন ছিল। ইরা এসে অনেকটা ঘাড়ে ধরেই নিয়ে গেল।

:  আমার মাকে আপনি দেখেনই নাই। দেখলে জানতেন আমিও ছিলাম। আর আপনার জন্মদিন শ্রাবণ মেঘ মাসে। আমি সেটা জানি।

: বাংলাদেশী প্রত্যেকটা মানুষের দুইটা করে জন্মদিন। ওই দিনেরটা ছিল বয়স কমানোর সার্টিফিকেট বার্থ ডে। এই জন্মদিনটা আমার সবচেয়ে প্রিয়। বয়স একটানে দুই বছর কমে যায়।

: আজকে না আসলে কিন্তু মা বেতন কেটে নিবে,স্যার। এর আগেও আপনাকে বাদ দিয়ে নতুন স্যার খুঁজেছে। আমি তাই আপনার সাবজেক্টগুলোর জন্য বেশি কষ্ট করেছি যেনো মার্কস বেশি আসে, আপনাকে বাদ দিতে না পারে।

: কৃতজ্ঞতা, অন্যতম অধ্যবসায়ী প্রিয় ছাত্রী  আমার।

: আমি এখন আপনার একমাত্র ছাত্রী, প্রিয় না হয়ে উপায় আছে! এই মাসে রুমকির টিউশনি চলে গেলো। গতমাসে রাতুলরা টাকা না দিয়েই বিদায় করেছে। আর আপনি পড়ানোর পর নাকি ওদের গ্রেড একটানে এ থেকে বি তে নেমে গেছে। এখন আমারটাও চলে গেলে বুঝবেন ডাবল জন্মদিন সেলিব্রেশনের মজা।

: তোমাকে না শিখিয়েছি একমাত্র বলে কিছু নেই। হয় বলবে মাত্র কিংবা কেবল। আমার পড়ার স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। ওদের ধৈর্য ছিল কিন্তু ওদের মায়েদের ধৈর্যের বড়ই অভাব।

: ফোনে শুদ্ধ বানান চর্চা না করিয়ে বাসায় এসে মাস্টারি করেন।সামনের সপ্তাহ থেকে ক্লাস টেস্ট শুরু।

: এই, তোমাকে যে ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ টা দিয়েছিলাম, কেমন আছে ওইটা। সালোকসংশ্লেষণ হয় ? পোকামাকড় খাইতে দাও তো নিয়মিত? 

: প্রসঙ্গ ঘোড়াচ্ছেন। আপনি এখনো করোনা ভ্যাক্সিন নেন নাই। এন্টার্কটিকে গিয়ে আপনার আর পেঙ্গুইন দেখা হইলো না, স্যার। ভ্যাক্সিন সার্টিফিকেট ছাড়া আপনাকে যশোহা বৃক্ষের দেশে ঢুকতেই দিবে না। 

: সত্যি সময় পাই না।

: দুই বছরে একদিনও সময় পান নাই! আপনার বালিকা বন্ধু নিয়ে যেতে পারে না? সে কেবল বিয়ে,চাকুরী নিয়ে টেনশন দেয়। স্যার, বেশ কয়েকদিন দেখলাম আপনার চোখগুলো ভীষণ লাল। ইনসমনিয়া? আপনাকে ক্যামোমিল চায়ের টি ব্যাগ দিয়েছিলাম। ঐগুলো খেলে ঘুমের রুটিনটা ঠিক হবে।

: কুন্তলা, মোটামুটি ভালো পাকামো হচ্ছে কিন্তু।

: এই যে কুন্তলা বলে ডাকলেন। এইভাবেই ডাকবেন সবসময়ই, কেমন। 

: এইভাবে ডাকবে তোমার ভালোবাসার মানুষ। আদর করে কুন্ত কিংবা কুন্তী। ডিয়ার স্টুডেন্ট, এখন রাখছি। তোমার মাকে বইলো কাল এসে এক ঘন্টা বেশি পড়িয়ে যাব।

: স্যার, সত্যি আপনি আসবেন না।

: সত্যি মিথ্যা কোনোভাবেই আসতে পারছি না।

: আজ আমার জন্মদিন। আর কেবল একটাই জন্মদিন আমার। আপনি ভুলে গেলেন!

: ইন্টারে পড়া একটা মেয়ের আবার কিসের জন্মদিন। তুমি বাচ্চা নাকি! আচ্ছা, তোমাকে যে বেলি ফুল গাছটা দিয়েছিলাম। ফুল ফুটেছে বলেছিলে। আমাকে একটা মালা গেঁথে দিও তো। ইরাকে বলবো, নিজে গাছ লাগিয়ে ফুল ফুটিয়ে ওর জন্য মালা গেঁথে নিয়ে আসছি। ও খুব খুশি হবে।

: ইরা বলতে আপনার পৃথিবীতে কারো অস্তিত্ব নেই । আমি জানি স্যার। এটা আমাকে কষ্ট দিতে আপনার বানানো একটা কাল্পনিক চরিত্র!

 

ওপাশ থেকে হঠাৎ লাইন কাটার শব্দ আসলো। ফোন ব্যাক করলে কুন্তলা শুনতে পেলো,

“দুঃখিত, এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনুগ্রহপূর্বক কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন।”

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত