সহ্যক্ষমতা

“নাচ দেখতে এলো সব জোয়ান পোলা,হায় জোয়ান পোলা
সুন্দরী নাচে কোমড় ঢুলাইয়া

নাচো তোমরা সবাই উড়াধুরা,হায় উড়াধরা
মনের মতো পাইছি একটা বুড়া”

ইকবাল তার নিজের রুমে বসে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে চেষ্টা করছিল। তবে, প্রতিবারই সে ব্যর্থ হচ্ছে।কারণ তাদের পাশের বাড়িতে উচ্চশব্দে বাজানো সাউন্ডবক্সের গান প্রতিবারই তার মস্তিষ্কে অনুরণন ঘটাচ্ছে।সে আর সহ্য করতে পারছে না,যদিও ইকবাল এতদিন জানত সে অনেক ধৈর্যশীল।ইকবালের বয়স ১৬-১৭ বছর হবে।এবার সে এস.এস.সি. পরীক্ষা দেবে।

রাত ৯ টা বেজে গিয়েছে,এখনো ইকবাল বইয়ের একটা পৃষ্ঠাও ভালোভাবে পড়তে পারেনি।সে উঠে পড়ল,পাশের ঘরে রাখা জগ থেকে পানি খেল।পুরো এক গ্লাস।তারপর মূল দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে পড়ল।তার বাবা-মা তো অবাক।এই রাত-বিরেতে বাড়ির বাইরে যাচ্ছে কেন ইকবাল!তাছাড়া ও তো ওর বাবার কাছ থেকে অনুমতিও নিয়ে যায়নি।ইকবাল তো এরকম সচরাচর কখনো করে না।ইকবালের বাবা ইলিয়াসও ছেলে প্রবল কন্ঠে ডাকতে লাগলেন,”এই ইকবাইল্লা,আন্ধার রাইতে বাড়ির বাইর কই যাস?.. ইকবাল…ইকবাল….”

রাত ১১ টা বেজে ২৫ মিনিট।ইলিয়াস নিজের ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছেন না।তিনি প্রথম ভেবেছিলেন ইকবাল বিয়েবাড়িতে গিয়েছে।তবে সেখানে খোঁজ করে তাকে পাওয়া গেল না।ইকবালদের আর তার প্রতিবেশীদের বাড়িকে বিচ্ছিন্ন করেছে একটা ছোট পুকুর,আর কদিন পরেই এটাকে বালু ভরে ফেলা হবে।বিয়েবাড়ি থেকে ইলিয়াস যখন ফিরে আসছিলেন,তখন হঠাৎ-ই তার চোখ গেল সেই পুকুরটার দিকে।পুকুরের অর্ধেকের বেশি অংশ বিয়েবাড়ির রঙবেরঙের ঝিলিক বাতির আলোতে আলোকিত।হঠাৎ, কি একটা বস্তু দেখতে পেলেন ইলিয়াস। হ্যা,এটাতো ইকবালের সেই শার্টটা, গেল কুরবানির ঈদে ইকবালকে কিনে দিয়েছিলেন।ইলিয়াস বুঝতে পারলেন যে তার ছেলে পানিতে ঝাপ দিয়েছে।ইকবালটা সাতার শিখলো না কেন?-ইলিয়াস মনে মনে ভাবেন।কতবার ওর চাচা বললো, “আয় ইকবাল,তোরে এইবেলা সাতোর হিগায়া দেই” কে শোনে কার কথা।ইকবাল কেন নাড়াচাড়া করছে না?তবে কী ও মারা গেল?এত তাড়াতাড়ি ওর দম শেষ হয়ে গেল!ইলিয়াস পাথরের মত ক্ষণ মুহূর্ত দাড়িয়ে থাকল। হঠাৎ ওর সমস্ত শরীরটা কেঁপে উঠলো, সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিলেন পুকুরে।সেকেন্ড পনের লাগলো ইকবালের কাছে পৌছতে।তাকে কাঁধে নিয়ে আবারো উল্টোদিকে সাঁতরাতে লাগলেন।পাড়ে তুলে তাকে সবুজ ঘাসের বিছানায় শোয়ালেন।ইলিয়াসের একবারের জন্যও মনে হল না কাউকে ডাকা দরকার। ছেলের বুকে দুই হাত দিয়ে চাপ দিতে লাগলো,কৃত্রিম পদ্ধতিতে অক্সিজেন দিতে চেষ্টা করল তার মুখে।এরকম কিছুক্ষণ বৃথা ও অহেতুক চেষ্টার পরে ইলিয়াস ছেলেকে দু’হাতে তুলে নিয়ে পাজাকোলা করে নিয়ে গেল,সাধারণত ছোট শিশুরা যেভাবে মায়ের কোলে থাকে।

 

 

২৩/০২/২০২৩

(ভুল-ভ্রান্তিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন,এই আমার আশা)

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত