মৃত্যু

(১)
বেশ কিছু দিন আগের কথা। সঠিক সময় মনে নাই। সৎ হবার একটা চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। চাঁদ অফিস থেকে ফিরে বললো প্রফেসর দাশ নাকি মারা গ্যাছেন। চাঁদের পেটের সমস্যা আছে। বলেই বাথরুমে ঢুকে যায়। আমার মাথা তোলপাড়, লাস্ট দশ মাসের স্মৃতিতে ভয়াবহ সার্চিং করছি দাশকে নিয়ে আমাদের সম্মিলিত স্বল্প পার্টটুকুই ভেবে যতটা দুঃখ পাওয়া যায়। লীনা অবশ্য মাস দুয়েক আগেই জানিয়ে দিয়েছে যোগাযোগ আর করবে না আমাকেও করতে নিষেধ করেনি অবশ্য। একটু হাঁফ ছেড়েই বেঁচেছি, সুকন্যা সেদিন ফোন দিয়ে জানালো লীনা নাকি বিয়ে করছে, এগুলোতে আমার আর কি যায় আসবে, চিঁড়ে খাচ্ছিলাম জলে ভিজিয়ে আধা শুকনো করে। ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে। এগুলো কি দুঃখের না সুখের স্মৃতি তা জানা নাই, চিঁড়েতে অল্প একটু চিনি ছড়িয়ে দিত মা, তলা অব্দি পৌছাতো না, এখন চিনি মেশাই না, ইন দ্যাট মিন হোয়াইল চিনি খাওয়াই ছেড়ে দিচ্ছি, চাঁদ কালকে চিনি কতটা বিষ তা নিয়ে একটা আর্টিকেল পাঠিয়েছিল। পড়িনি।

মহিলা নিয়ে ইন্সিকিওরড পাঁচ বছর আগে ছিলাম। এখন সহিষ্ণুতা না বাড়লেও মনে দৈব ভাব অবশ্যই একটা আসছে। কাথিরকে দুয়েকটা বলা কথা নিয়ে অনুশোচনা হয়। দোলের দিন ভাঙ না মদ খাওয়ার পর সিন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, উঠে দেখলাম মাঝরাত, ফোন বমির ভেতর সাঁতার কাতছে, আমার ভয় হয় সিন্ধু না গন্ধ পেয়ে যায়, বিছানা ভিজে বমিতে, মোবাইল সুইচড অফ, মাথাও অন্ধকারে! সামান্য আলোও কোথা থেকে আসে না যে উষ্ণ করে।

চিঁড়ে খেতে খেতে গান শুনছিলাম। মোবাইলে। আমাদের সোফাটা নতুন, হাঁটু মুড়ে বসার ব্যবস্থা আছে। কেনা।সায়ন এখনো হাজার দুয়েকটাকা দেবো দেবো ক’রে ঝুলিয়ে রেখেছে। ও এরকমই। শর্মা প্রত্যেকবার সোফায় বসছে আর টিভি চালাতে চালাতে চাঁদকে মনে করিয়ে দিচ্ছে টাকার কথা, আমাকেও দুয়েকবার বলেছে। চাঁদই পায় মনে হয় সায়নের থেকে, তার তো বিকার দেখছি না। চামচে চিঁড়ে নিয়ে মুখে ঢোকাতে গিয়ে অকস্মাৎ হেডফোনে কামড় দিই। চাঁদ বলে তিন হাজারের ইয়ারফোন! শর্মাতো আজ বাংলাদেশী বলে গাল দেবে! ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলাম, ইয়ারফোনের আঘাত এমন গুরুতর না, কিছুই হয়নি, না তাকিয়েই তার দিকে চাঁদকে বললাম-
– বাল ছিঁড়বে মাদারচোত!
– কি?
– মাদারফাকারটি বাল ছিঁড়বে!
– কি?
– মাদারচোত সেদিনের পাঁচশো টাকা এখনও ফেরত দেয়নি!
চাঁদ বলে আমার থেকেও তুমি পাবে না- হাজার নাকি দেড়? সেদিনের লাঞ্চ আর নেট রিচার্জের টাকাটা দিলে, ওকে শান্ত করলাম ওটা কোনো ব্যাপার না বলে। সে ঘর থেকে টাকা নিয়ে দেয়, বললাম ঠিক আছে, ব্যাপার না। মনে পড়ে যাওয়া ধারের স্মৃতি সে আর জমাতে চায় না। দেখলাম ভালোই চলছে, টাকার গায়ে কি লেখা থাকে সব কিছু!

(২)
চাঁদ যখন ফোন করছিল, কিছুই শুনতে পাচ্ছিনা, হাত-পা নেড়ে কথা বলছে, তার পক্ষে স্বাভাবিক, ওড়িয়া ভাষায় কথা বলছে, বাকি অনেকের সাথেই একই ভাবে কথা বলে; আন্দাজে জিজ্ঞাসা করলাম- শুভ? ইশারায় হ্যাঁ বললো। সুকন্যার অবশ্য পুড়কি অনেক, বেশীরভাগই মেয়েলি চব্য, ওগুলো না দেখে থাকা যায় না, তবে লীনার ওপর আমার আগ্রহ নিয়ে সে উত্তেজিত ছিল, তাতে বিরক্তিই লাগছিল। ঐ; যতটুকু কম দেখানো যায়।

এগুলো আমি রপ্ত করছিলাম লাস্ট চার বছর ধরে, ইলিকের সাথে সম্পর্কের শেষে সহিষ্ণুতা বাড়াবার বিধায়, দীর্ঘজীবনের পরিকল্পনায় যোগ-ব্যায়াম করছিলাম চাঁদের সাথে একমাস। কিন্তু। কারোর এসোসিয়েসানে দীর্ঘদিন থাকা বিরক্তিকর। এই বয়সে বন্ধূত্বের সেই ইমপালসও পাওয়া যায় না। একই লোকের সাথে ঘন্টা খানেক টানা কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি, অনেক বন্ধুতো বিদেশেও চলে গ্যাছে, দেশে ফিরে বিবাহ- সংসার করছেও অনেকে। তাদের ব্যাপারে ভাবতেই আমার ঘেন্না লাগে! তারাও আমাকে মনে রাখেনি, আমি ভাগ্যবান।

সুকন্যার আগ্রহের জ্যায়গাটা বুঝতে পারছিলাম কিছুদিন পর থেকে, লীনার সাথে তার বন্ধূত্ব কস্মিন কালেও ছিল না। আমাদের বন্ধুদের ভাষায় ওটা চেনাজানার থেকেও একটু কম। ঈর্ষার ভাষাগুলো আবিষ্কার করেছিলাম একদিন, হেব্বালের রুফটপের জনবিরল পাবে বসে, ইন্টেরেস্টিং লাগছিল, এরকম জনতাহীন পাব ব্যাঙ্গালোরে কোনদিন দেখেছি কি! উদয়কেও সেদিন বলছিলাম- ব্যাঙ্গালোরে কথাবার্তা শুরু থেকে মেক আউটে পৌছে যাওয়ার স্পিড কলকাতার থেকে বেশী, উদয় বললো হায়দ্রাবাদের থেকেও বেশী। সুকন্যার সাথে এমন হয়ে যাবে তা ধারণায় ছিল না, সুট্টা জোনে চুমু খাওয়া অব্দি লাট সাহেবের মুডে ছিলাম আর সে জিন্সের ভেতর হাত ধুকিয়ে একাকার কান্ড! সেদিন সুকন্যা আর কিছু বলেনি বাড়ি ফেরা অব্দি! দুদিন তার টেক্সটের রিপ্লাই দেওয়া দেখে বুঝলাম সে অখুশি তো না। লীনা একদিন মেসেজ করে এসব জানতে চায়, উত্তর সেরকম দেওয়া হয়নি, তবে সুকন্যার কাজ আমার বেশ লাগে, পরে লীনাকে ফোন করে বলি এসব কিছুই হয়নি। বুঝলাম কিছুই হলো না। সম্পর্কের অনেক খুঁটিনাটি আয়ত্তের অনেক বাইরে। সুকন্যার সাথে হেব্বালের সন্ধ্যের ব্যাপারে কথা বলা শুরু করি আলতো করে। উৎসাহে তার কমতি নাই।

(৩)
চাঁদকে একদিন বলছিলাম সব মেয়েদের নাম গুলো ব্লার করে দিয়ে, যতটা দার্শনিক করে তোলা যায়, চাঁদ ওসব এগনস্টিক বা এথেইস্ট কিছুই না, পাব্বনে সে সাত্ত্বিক আহার করে, তার সাথে আলোচনার স্পিরিচুয়াল গুরুত্ব অনেকেই দ্যায়, ইভেন মিশা কিম্বা সঞ্জয়ের মতন ফোড়কেলও তার সামনে গুটিয়ে যায় দেখেছি, সব শুনে বুঝে সে আমার বিচার বুদ্ধির প্রশংসা করারই চেষ্টা করলো, তবে বুঝলাম এখনও খামতি অনেক, সে হাসতে হাসতে বলে এগুলো শিখলাম কই? আমার কলা-কৈবল্যের প্রয়োগে সে অনেক সন্তুষ্ট বোঝা যায়। সে হাসি থামিয়ে বলে ইংরেজিতে একে মডেস্টি বলে। অনেক মানে জিগ্যাসা শুনে সে বলে কন্সাসনেসে ব্যাখ্যাহীন একপ্রকার জ্ঞানকে নাকি মডেস্টি বলে, ভগবানপ্রদত্ত নাকি, আর ইংরেজরা নয়, মডেস্টির নিতশিয়ান অর্থ নাকি এই। তারপরেও এ বিষয়ে তূলনামূলক অনেক ইনফো দেয়। যা মনে পড়ে তা আমি শোনার চেষ্টার করছিলাম। সত্য কি বাল না ছাল তা নিয়ে আমার কৌতুহল কম।

সুকন্যার সাথে আমার সক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে ছিল না, না রাখার ওপরেই জোর ছিল বেশী, ততদিনে অভ্যাস হয়ে গ্যাছে। এদিকে সিন্ধুকে নিয়ে মাথা নষ্ট অবস্থা, দুদিকের উৎসাহ অনেক কিন্তু যথেষ্ট কনভারসেশানের অভাবে, সুকন্যাদের ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে সেক্স করবার সময় এসব মনে পড়ছিল, জ্যায়গাটায় স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ, তার বাকি রুমমেটরাও লাগায় মনে হয় এখানে। সিন্ধু বিষয়ে আমার অদূরদর্শিতা টের পাচ্ছিলাম, খুব একটা বেশিও ভবিনি, কাজে মন দিই।

সৎ হবার চেষ্টা করবার সময়েই সততা নিয়ে অনেক ননলনিয়ার ব্যাখ্যা আবিষ্কার করলাম। চাঁদের কাছে কিছু সত্য গোপন করা, সিন্ধুর কাছে কিছু, লীনা- সুকন্যার কাছে কিছু, এসব কে এক জ্যায়গায় জড়ো করলে কি হবে! সম্ভাবনা ওই খাতায় কলমেই ঠিক আছে, লাইফ এমনিতেই যথেষ্ট ফ্যাব্রিকেটেড তার ওপর এত মনোটোনাস না করাই ভালো, সত্য নিজেও জানে নিরপেক্ষ হবার বাসনা তা থাকলেও কখনো হয়ে গেলেও সে একটা বেজন্মা মাল!
সুকন্যার সাথে কদিন ওঠাপড়া কম হল না, মিথ্যাচার থাকলেও নাকচ করবার মত দুর্ব্যবহার কারোর সাথে করিনি, আনটিল পুরো স্বনির্ভর হয়ে যাওয়া; নিজেকে গাছ ভেবে হাসি পাচ্ছে, এভাবে নিজের গরিমা প্রকাশ অসম্ভব, তাছাড়া টাইম বরবাদ করছি, সম্পর্ক গুলো বাইরে থেকে দেখতে যতটা হাস্যকর ভেতরে ভেতরে ততটাই বরবাদ করছে, আমি বুঝছিলাম যে নিজেকে বিট্রে করা অতিক্রম করা যেতে পারে, সেই মাহেন্দ্রক্ষন উপস্থিত। তাছাড়া মাস ছয়েকের মাস্টারবেশানের স্মৃতি পাওয়া গিয়েছে। বাড়ি গেলাম না আর। সুদীপ্ত এমেরিকা থেকে ফিরে বিয়ে করে গ্যালো, তার বউ যাবে সামনের বছর, ততদিন ভিডিও কলের সামনে বসে সেক্সের প্রতীক্ষা করা, আমি এতটা সময় দিতে পারবো না কাউকে, সময় নিরপেক্ষ ভাবে একটা স্পিরিচুয়াল ধারণায় পৌছে গেছি, চাঁদকে বললাম, জিগরি দোস্ত, সাধ্য মতন সে বুঝলো, মানুষ তার বৌদ্ধিক লেভেল পার করলে গান্ডু হয়ে পড়ে, অ্যাচিভমেন্ট বটে, দেখার অ্যাচিভমেন্ট বোঝার থেকে আলাদা, সংসারে মন দিতে আইসোলেশান জরুরী হয়ে পড়ছিল।

অনেকের প্রতিই আমার আগ্রহ একটু কমেছে, স্মৃতি নিয়ে বড়াই করা লোকেদের অনেক জ্বালা, ইনোভেশানগুলো ভুলে মেরে দিয়ে খিচুড়ি বানানো যায়, যারা কবিতা লেখেন তারা বুঝবেন, তীর্থদার সাথে দেখা হওয়ার আগে অব্দি কবিতা লিখতাম, তারপর সিগারেট খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছি, এখন আর ওই লেখার পদ্ধতিও কিছু মনে নাই। চাঁদ বাথরুম থেকে বেরিয়ে বললো প্রফেসার দাশ মারা গ্যাছেন। তিন নাম্বার বার হলো তার টয়লেট ভ্রমণ; তার উৎসাহ ছিল বলায়, গামছায় হাত-পা মোছে, আমার অসহায়তা কাটলো- বরবাদ হয়ে যাওয়া লোকের অসহায়তা লুকানো অভিনয় দিয়ে জিগ্যেস করলাম- দেবলীনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছিল না? পেছোবে কি? চাঁদ আমায় পেছন দেখাতে দেখাতেই জিগ্যাসা করলো লীনাকে আমি চিনি কি করে, স্ট্রীট লাইটের আলো আসছে ব্যালকনিতে, নিখিলেশের ফোন আসে, তাকে কি বলতে কি বলবো কে জানে, ফোন ধরবার আগে চাঁদকে বললাম- চাকরীটা ছেড়ে দেবো ভাবছি, ব্যাঙ্গালোর আর ভালো লাগছে না।

এমন না যে ঘটনাকে দেখাই লক্ষ্য। অলক্ষ্যের সাধনা আয়ত্তেও আগ্রহ নাই। দেখা- বোঝা- জানা অব্দিই ঠিক আছে। এর বাইরে বেরোলে ভগবানের ফাঁন্দে পা দেবো। সুশিক্ষিত- সুসভ্য চাঁদের যোগ ব্যায়াম প্র্যাক্টিস করা, ব্রিদিং এর অনুশীলন যা করছিল অবিকল করছিলাম যৌন ক্ষমতা বাড়াবার বিধায়, পুতুল হয়ে থাকবার অভ্যেস আমার নেই লীনাকে বলছিলাম একদিন, সুকন্যার সাথে এমন প্রানের খেলা নাই, তার অরুচী নিয়ে সে অনেক কথা বলে, ভালোবাসা নিয়ে, সুকন্যার সাথে থাকতেই দেহের এই যত্ন নেওয়া, স্বাস্থ্যের চিন্তার অভ্যাস ফিরিয়ে নিয়ে আসা। এসব সে অনেকবার মনে করিয়ে দ্যায়। ওসব নিরপেক্ষ হয়ে আমায় বেরিয়ে যেতে হবে মায়া থেকে। মানুষ আত্মবিস্মৃত যতই হোক না ক্যানো, আফসোস করবার সময় তার থেকেই যায়। সমস্ত রকম প্রস্তুতি নিয়েও বেরতে পারছিলাম না সুকন্যার ঘর থেকে, গতমাস থেকে এমন কিছু বদাভ্যাস রপ্ত করেছি যে কোন ফন্দিই আর ধোপে আঁটছে না, চাঁদ ওর ডায়েরি পড়তে দিয়েছিল, হঠাৎ করেই মনে পড়লো, ওড়িয়া ভাষায় সে কম লেখে, কনভেন্ট স্কুল। বাড়ি গেছিল সে। লেখা পড়ছিলাম বেশ কতক দিন, রিলেট করবার চাপ নিইনি, সাবলীল ভাবেই পড়ছিলাম চার-পাঁচ দিন, দেখলাম লেখা ফিজিক্যাল ইনটিমেসি প্রবল ভাবে কমিয়ে দ্যায়, ধ্যান করছিলাম য্যানো, পলিটিক্যাল কারণ হতে পারে, স্বেচ্ছাচারী ভাবে গুস্যা- ভক্তি নিরপেক্ষ হয়ে খিস্তি মারা যায় লোককে- অবশ্য আমার নিজেরই কত ডাউট ছিল, এ পদ্ধতি আদৌ ঠিক না দুদিনের ইলিউশান তা নিয়ে মতভেদ তো অনেক, কিনারা করবার কছু নাই, সন্দেহ নেহাতই অভ্যাসের ব্যাপার। বাস্তবতা-মেটাফিজিক্যাল অবস্থান ইত্যাদির ওপর জোর দিয়ে চাঁদ নিজের অবস্থান স্পষ্ট করছে লেখায়, তার দায় তার অবশ্যই আছে, সে স্বীকারও করে, ব্যাখ্যা দিতে সে ভালোবাসে, তার চোখ চকচক করে, ভালোবাসাটা টের পাই, একরকম ভগবানের অস্তিত্ব টের পাই, আনন্দে আমার চোখে জল আসে, আত্ম-অবস্থান পাল্টানোর কারন নাই, রাস্তায় চলতে ফিরতে ঘুরতে হয় অনেক, তবুও চোখে জল আসে, তার ব্যাখার দক্ষতা ছাপিয়ে ভালোবাসা আরো গভীর হয়ে ওঠে, মনে হয় এক্ষুনি মারা গেলেও কি বা সমস্যা হাজার বছর বাঁচতেও নাই, আলাপ শেষে সে গম্ভীর হয়ে ওঠে, য্যানো তপস্যা শেষ হল, এবার ঘুমানো যাবে।

সে ফিরে এলে তাকে ডায়েরি ফেরত দিই, পড়েছি জেনে যে তার স্টক থেকে বই উপহার দ্যায়, মানুষ সে মহান হোক কিম্বা বোকাপাঁঠা যে যার নিজের রাস্তায় টেনে আনে অন্যকে, খুব আগ্রহ নিয়ে বই নিই। সুকন্যার সাথে মারাত্মক ঝগড়া হয়ে গ্যালো। আমার তরফ থেকেই শুরু। মাঝখানের দুদিন ভারতবন্ধের চিপকায় পড়ে ফোনসেক্সের জন্য ঘ্যানঘ্যান করছিলাম, পাল্টা সে খানকির ছেলে বলে গালাগাল দিল! আমরা কেউ ভালো নই। তাকে মাগী গাঁড়ে ভাইব্রেটার লাগিয়ে বাপকে ফোন দে বলে দিলাম। তাদের ঘরোয়া কেচ্ছা, সৎ বাপ ইত্যাদি সহ ভাইব্রেটার কেনার সব ইনটিমেট কথার এমন বাক্য রচনা তাকে বিমূঢ় করলো?

(৪)
শুনলাম অনেক ঘুর পথে। সুকন্যার নাকি ভাতার জুটেছে নতুন। নিজেকেই বললাম মনে মনে, পাব্লিকলি বললে অনেক পোলাইট হতো। আর কাউকেই বা বলবো, বলার লোকজন বাড়িয়ে পাড়ার কোন্দল করার ইচ্ছে নাই। মাঝখানে কদিন ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তুহিনদা ফোন করে বলছিল অন্য কোনখানে ইন্টারভিউ দেওয়ার কি অবস্থা। বাবাকে মেয়ের মুখেভাতে নিমন্ত্রণ করার জন্য ফোন করেছিল। বললো আমার চাকরি এবার চেঞ্জ করার দরকার, সে দেখবে ব্যাপারটা। তার বিয়ের খবরই জানতাম না যে, তার মেয়ের অন্নপ্রাশন হয়ে গ্যালো, ব্যস্ততা কাটলে এসবে মন দিই, বাড়ি যাবো বলে ঠিক করছিলাম। এমনিই। হঠাৎ ব্যস্ততা এসে হঠাৎ চলে যাওয়ায় মানুষের দিশাহারা অবস্থায় পড়েছি। তবে অবস্থা ততটাও গুরুতর না, সেটা বুঝতে কদিন সময় লাগলো। শর্মাকে বলছিলাম মাটনে একটু নুন দিয়ে চেখে আরেকটু দিতে, সে নস্যাৎ করলো; তার অনুমান অভূতপূর্ব- চাঁদ বললো এজ আ রুকি আমার প্রসেস ঠিক আছে, সায়নের নাকি খুব খিদে পেয়েছে, কাথির বাড়ি গ্যাছে গত সপ্তায়, শর্মাও খাওয়ার তাড়া দিচ্ছে, বললাম- গরম গরম খেতে মজাই…। খিদে একটুও পায়নি, আসলে কি যে ভাবছি ধরতে পারছি না, অনেকদিন বাদ একসাথে খেতে বসছি সবাই, খালি কাথির নাই- মেঘলা রবিবারের বাড়িতে দুপুরের খাওয়া মনে পড়ছে।

তারপর সুকন্যাকে আর ফোন দিইনি, টেক্সট কতক গুলো করা হয়েছিল, যাইহোক তাতে উত্তরের প্রত্যাশা কমই ছিল যে, আর কোন রাস্তাও ভাবছিলাম না, যোগাযোগ সে করলো ক’দিন বাদ। জানালো অন্য একজনকে ডেট করছে, সুযোগ পেয়ে কয়েকটা এপোলজি লেটার লিখলাম, বেশ কয়েকটা। এত লম্বা-চওড়া ব্যাখ্যার বহর সম্ভবত চাঁদ ছাড়া আর কেউ বিশ্বাস করবে না। এক সপ্তাহ ধরে টাইম নিয়ে বানানো লেটার গুলো, সুকন্যা জবাব দেয়নি, সময় নিচ্ছে মনে হয়, ভাতারের থেকেও। লীনাকেও তার বাপ মরবার অজুহাতে কয়েকটা স্মল বাট কম্প্যাক্ট লেটার তৈরী করছিলাম। লীনা অতি ধীর, স্থির- সময় নিচ্ছি একটু ভেবে, যতটা ভুলহীন হয় বাক্য। সুকন্যা জানালো এমন পলিটিক্যাল কারেক্ট আগে হওয়া দরকার ছিল। দেখা করলাম একদিন, ওয়াটার মেলন জুস খাওয়া হলো লেমনেড দিয়ে। বন্ধূত্বের দিক গুলো বিবেচনায় আনা যাবে নাকি, বললাম। সে বলে বন্ধুই তো আছি, পলিটিক্যাল কারেক্ট হবার সময় চলে গ্যাছে কি? সে উত্তর না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। দেখাসাক্ষাৎ চালাতে হবে কয়েক দিন- পর্যবেক্ষণ।

সম্পর্কে কম্পিটিশান খারাপ জিনিস না, প্রেম তো মহান পবিত্র কিছু না। লেখাপড়ার মতন মাঝারী কাজের একটু ওপরে; বোকাচোদাদের সাথে কদিন আর কম্পিটিশান করা যায় তা নিয়ে সংশয় চলছে, মাঝে মাঝে মনে হয় তাদের বলি আপনিই বাল ছেড়েন একা একা, আমি একা প্রেম না করি!

সিন্ধুর সাথে কনভারসেশানের যা অবস্থা হয়েছে লীনার সাথেও সেই একই, না লিখে লিখে ল্যাদ খেয়ে যা লিখি তা গাধার পড়ারও যোগ্য হয় না, চাঁদকে লেখার বিষয়টা বললাম, সে বললো তুমিও পড়তে পারছো না? তামাশা সে করে না এমনিতে। তবে দুজনেই হাসলাম গলা ছেড়ে। সমস্যা অনেক এবং বিভিন্ন জ্যায়গায়, টানা দশ মিনিট অতি মন দিয়ে শোনার পর মাছ হয়ে যাই! মাছ না ঘোড়া কে দাঁড়িয়ে না বসে ঘুমায় সে বিষয়ে অজ্ঞতা আছে, ঘোড়াই সম্ভবতঃ, হাইব্রিড- ঘোড়া আর মাছ। চাঁদ টের পায়- আমার বাপের চেয়েও বেশী চেনে আমায়, তার ভালবাসা ঐশ্বরিক। শর্মা নাই, সায়ন গ্যাছে তার গার্লফ্রেন্ডের ফ্ল্যাটে লাগাতে। মদ খেয়েও অবশ্য সে স্বীকার করে না তার বান্ধবী ভার্জিন নয়। শর্মাও এসব দেখছে অনেক দিন ধরে- বলে- ব্যাহেন কি লওড়ে মদ খায় কতটা যে সত্যি কথা বলবে! চাঁদ বলে চল মুড়ি খাই, চানাচুর এনেছে ভুবনেশ্বর থেকে, তেল-পেয়াঁজ- লঙ্কা দিয়ে মুড়ি মাখা। আমায় শুকনো লঙ্কা খুঁজতে বললো আবার।

মুড়ি খাচ্ছি রাক্ষসের মত, চাঁদ যথারীতি স্পিডে শুরু করে নিজের ভাবনায় ডুবে গ্যাছে। তার দৃষ্টি শূন্য এবং সোজা। তাকে বলি প্রফেসর দাশ যে মারা গেলেন লীনাদের পরিবারের কি অবস্থা? নিজের ভাবনা থেকে ফিরে আমার কথা বুঝতে পাঁচ মিনিটের একটু কম সময় নিল সে, মুড়ি প্রায় শেষ। সে উত্তর দ্যায় ঠিকই আছে, ফিনানশিয়ালি তারা খুব স্টেবল, তাছাড়া আন্টির বিজনেসও যথেষ্ট। মুখ- চোখ- কান- নাক স্বাভাবিক রেখে জিগ্যাসা করলাম- দেবলীনা সামলে নিয়েছে নাকি, ওর তো সামনে বিয়ে ছিল! কিছুক্ষন অবাক থেকে চাঁদ হাসতে শুরু করে- বলে আরে এ ব্যাঙ্গালোরের সমীর দাশ না, আমাদের কলেজের প্রফেসর দাশ, ভুলে গ্যাছো নাকি, পিপল কে পিপুল উচ্চারণ করতো, কম্পিউটার আর্কিটেকচার পড়াতো আমাদের! এমন আশা ভাঙ্গায় এক পেট মুড়ি বিষ হয়ে উঠলো- চোখে জল আসা অবস্থা! আমার ভুল বোঝাবুঝি সংক্রান্ত হাসাহাসিতে খামোখা জড়িয়ে না থেকে চাঁদ আগের দিনের কৌতুহলের উত্তর চায়ঃ দেবলীনাকে আমি কিভাবে চিনি? হতাশা ও তাদের পারিবারিক লোকজনদের সাথে ছকের ইতিহাস লুকানোর ফাঁকে বুঝলাম ছোটবেলার মতন বাপের থেকে রেসাল্ট লুকিয়ে শেষ সন্ধ্যেতে ধরা খেয়েছি বেমালুম! এতবড় বয়সে আমি মিথ্যা কথা বলতে ভুলে গেছি এই সন্ধ্যেবেলায়ঃ অকস্মাৎ

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত