মঙ্গলময় ঈদ

সে অনেক কাল পরের কথা। মানুষ ততদিনে মঙ্গলে বসবাস শুরু করে দিয়েছে।
এখানে সূর্যের আলো পৃথিবীর চেয়ে কম। এজন্য গ্রহটি কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। তবুও মানুষের এই গ্রহেই আসতে হবে। পৃথিবীটাকে দ্রুত ধংস করার জন্য যত উপায় আছে, সবই বলতে গেলে একসাথে প্রয়োগ করা হয়েছে। সব যে ইচ্ছাকৃত তা নয়৷ মানুষের স্বভাবই ধংসাত্নক। তাই পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠতে বেশি দিন আর লাগলো না। তাই মঙ্গলেই পরবর্তী বসত গড়া ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিলো না।

মঙ্গলেও মানুষের জীবনে হাসি কান্না আছে। এখানেও রোজা আসে, ঈদ আসে। “উগাণ্ডায় যাদের শেকড়, মঙ্গলে বসবাস করলেও তারা উগান্ডানিয়ানই রয়ে যায়”। এই আদি প্রবাদ আজ এখানে বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। এখানে তাদের একটি সমস্যা দেখা দিলো। কোন চাঁদ দেখে তারা রোজা রাখবে কিংবা ঈদ করবে? মঙ্গল তো পৃথিবীর মত অত সহজ সরল নয়।

এখানে সবকিছু হয় প্রয়োজনের চেয়ে কম নয়ত ডাবল ডাবল। পৃথিবীর মত এখানে অত অক্সিজেন নেই, পানিও অতি সামান্য কিন্তু উপগ্রহ প্রয়োজনের অতিরিক্ত! খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি! একটি নয়, এখানে উপগ্রহ দুটি! ডিমোস আর ফেবোস।

অবশ্য ডিমোস আকারে এতই ছোট যে, পৃথিবীর এভারেস্টের অর্ধেকের চেয়েও কম। এত ছোট উপগ্রহ দেখে ঈদ করার কোন মানে হয় না। তাই ফেবোসকেই উপযুক্ত একটি উপগ্রহ বলে বিবেচনা করা হলো U-MASA (The Ugandanian Martian Aeronautics and Space Administration) থেকে। ফেবোস দেখে রোজা রাখা হবে, ঈদ করা হবে, এই হলো সিদ্ধান্ত।

কিন্তু সিদ্ধান্ত একটা হলেই তো হলো না! এ নিয়ে দ্বন্দ্ব, সমালোচনা, গুজব তৈরি করাটা হলো উগাণ্ডার ঐতিহ্য। সে ঐতিহ্য অনুযায়ী এখানে তিনটি মতবাদের ভিত্তিতে তিন ধরনের অনুসারী তৈরি হয়ে গেলো। নিচে মতবাদগুলো দেওয়া হলো।

প্রথম দলের মতবাদঃ U-MASA এর সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক, তাই ফেবোসের উদয় অস্ত অনুযায়ী রোজা রাখা ও ঈদ পালন করাই যুক্তিযুক্ত হবে। এর বাইরে কথা থাকতে পারে না।

দ্বিতীয় দলের মতবাদঃ পৃথিবীর চাঁদ দেখেই চিরকাল ঈদ করা হয়েছে। তাই চাঁদ দেখেই ঈদ করতে হবে। এছাড়া ঈদ করা সম্ভব নয়।

দ্বিতীয় দলের মতবাদ শুনে প্রথম দল হাসলো। তারা আবার মতবাদ দিলো।

“মঙ্গল থেকে চাঁদকে অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ নক্ষত্রের মধ্যে সাধারণ মানুষ এক নজরে দেখে চিনতে নাও পারে! তাছাড়া মঙ্গলের বায়ুমন্ডলে ধুলাও বেশি। চাঁদ দেখাটাও মুশকিল হয়ে যাবে৷ আপনারা তো আবার প্রাচীনপন্থী। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন না! খালি চোখেই চাঁদ দেখতে হবে আপনাদের। সেক্ষেত্রে, ফেবোস দেখেই ঈদ করুন। খালি চোখে দেখতে পাবেন, দেখে চিনতে পারবেন।”

দ্বিতীয় দল এরপর আবার জানালো, “যত যাই হোক,,আমরা পৃথিবীর চাঁদ দেখেই ঈদ করবো।”

একথা শুনে প্রথম দল হাসাহাসি করলো, “মঙ্গলের দিনরাতের দৈর্ঘ্য প্রস্থ পৃথিবীর মত নয়! তাহলে মঙ্গলে বসবাস করে পৃথিবীর চাঁদের হিসাবে ঈদ করাটা বেহিসাবি চিন্তা হয়ে গেলো না?”

দ্বিতীয় দল তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকলো। তারা চাঁদ দেখেই ঈদ করবে। নাহলে ঐতিহ্য বজায় থাকে না। ভদ্রলোকের এক কথা! নির্বিঘ্নে চাঁদ দেখার জন্য তারা ‘চাঁদ দেখা কমিটি’ও বানালো।

তৃতীয় মতবাদের দলটিও আর বসে রইলো না। তারাও সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলো উগাণ্ডানিয়ানদের উদ্দেশ্যে “ফেবোস কিংবা পৃথিবীর চাঁদ নয়, ঈদ হবে সেইদিন, যেদিন সৌদি আরবে ঈদ!”

সৌদি আরবের অধিবাসীরা মঙ্গলে বসতি গড়ার পর ফেবোস নাকি পৃথিবীর চাঁদ, কোনটা দেখে ঈদ করতো তা আমার ঠিক জানা নেই।

তবে তাদের ঈদ যে মঙ্গলময় হয়েছিলো, এটা অনস্বীকার্য।

আপনাদের ঈদও মঙ্গলময় হোক।
ঈদ মোবারক।

(ছবিটি curiosity rover মঙ্গল গ্রহ থেকে ক্যাপচার করে)

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত