ভেলুয়া সুন্দরীর আখড়ায়- ০১

লাকু রাশমনের ফালতু গল্পের সিরিজ থেকে…

ভেলুয়া সুন্দরীর আখড়ায়

[প্রাক-কথন: ঘটনাগুলোর কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। কিন্তু বেজায় তাদের দাপট। ধান ভানতে যেমন শিবের গীত গাওয়া এই কথাগুলোও ঠিক তেমনি। গুরুত্ব নেই কিন্তু দায় আছে। মানুষটা খেয়ে পড়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কিন্তু অদ্ভুত মাথার ব্যামোতে ধরলো। কোনো ডাক্তার কবিরাজে কাজ হয় না। ভিমরি খাওয়া রোগ। এ বড় শঙ্কার কথা। এ রোগ কী ছোঁয়াচে! কী জানি বাপু। আমাদের না হলেই বাঁচি। তাই দূরে দূরে থাকি।
তবে শোনা যায়, সে রোগের বাই চাপে শনিগ্রহের ফেরে। শনিগ্রহ থেকে সরাসরি রোগের আকর তার মস্তিকে ভর করে আর পঁই পঁই করে এমন লেখা বের হয় যে, তাকে ধোলাই না দিলে রাতের ঘুম হারাম হবার যোগাড়। তাই পাড়ার মাতব্বররা তাকে ভেলুয়া সুন্দরীর আখড়ায় ভর্তি করে দিলেন। এরপর যা কাÐ ঘটলো! চেনা পৃথিবী গেল উল্টে। ভেলুয়া সুন্দরীর নাম ছড়িয়ে গেল সবখানে, সবখানে, সবখানে…]

ফালতু গল্প- ০১। স্ফুলিঙ্গ

স্ফুলিঙ্গ। একটা মাত্র আগুনের কণা। সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়-খার করে দিলে গা! বছর বছর ধরে রাজ হাঁসের মতো সোনার ডিমটি পাড়ার চেষ্টা করছি তা আমার হলো শনির দশা। শরীরের মধ্যে, মনের মধ্যে নানান ধরণের ডিমের মাল মসলা ধারণ করে ডিম পাড়ার সময়ে এসে দেখা যায় সব বিপত্তি, সকল কাজের শেষে একটা স্ফলিঙ্গের অভাবে ডিম আর হাঁস যে কে সেই থেকে যায়!
সকাল বিকাল খালি ভাবার তালেই বাতাস করা। উচু তাল গাছের মগ ডালে বসে বসে দূরবীন দিয়ে মাঠ-ঘাট-বিল-জঙ্গলা এমনকী আকাশ ফুটো করে স্বর্গের সিঁড়ি, নরকের নর্দমা, ঈশ^রের টিঁকি সবই দেখে আসি। তাতে ফুটো পয়সা লাভ হয় না গাঁয়ের কারোর। আর আমার কী? ভুতের মতো লম্বা ঠ্যাং দুটোকে হাওয়ায় লটকে দিয়ে লটকন খাই। তাতে আমার বয়েই গেল!
ওপাড়ার কুঁড়ে ঘর থেকে ভেসে আসে ‘বাজিল কাহার বীণা’। ধুৎ মশাই। বীণা কী কানেস্তরা সবই ভুয়ো। রবি ঠাকুর দাঁড়ি দুলিয়ে ফাউন্টেন পেন দিয়ে কত গান কবিতাইতো লিখে গেছেন। তাতে ভুতের বাবার কী? শান্তিনিকেতনে বেড়াতে আসা নব্য দম্পতি কী আর কাঁচ ঘরে গিয়ে প্রার্থনা করে, না উদীচীতে গিয়ে কবি’র ব্যবহৃত আসবাবপত্র দেখে। তারা তো সেখানে যায় সস্তায় ঘরভাড়া করে মাংস ভক্ষন করতে। ভাবো ভুত হয়েছি বলে এসব কিছু বুঝি না। জ্যান্ত থাকতে আমিও কত ধস্টামি করেছি তার হিসেব স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াও রাখে নি।
এই আর এক কেলো হলো? ভাবো.. .. ভাবো.. .. ভাবা প্র্যাকটিস করো। কে যেন বলেছিল কথাটা, নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। কিন্তু কথাটা খুব খাঁটি বলেছিল কর্তা। ও হ্যাঁ এবার মনে পড়েছে। ঋত্বিক কুমার ঘটক। তা সে ব্যাটা বাংলা মদের ঠেকে ভেসে গেল সেই সাথে তার ভাবাও। আরে অতো বেহিসাবী হলে কী মাথার ঘিলু ভাবার জন্য উপযুক্ত থাকে? তা সেই ফিল্মওয়ালার যদি অপঘাতে মৃত্যু হতো তাহলে না হয় তার সাথে দু’দÐ কথা বলে ভাবার বিষয়ে একটু ভাবাদর্শন করা যেত। কিন্তু তা তো হবার নয়। যাক সেকথা!
যারা দিব্যি ফটো তুলে ফেসবুকে আপলোড করছে আর রাত জেগে লাইক গুনছে ওদের বাঁদরামি দেখলে আমার সর্বাঙ্গ জ¦লে যায়। অবশ্য আমার গা মানে গতর-তো অদৃশ্য। একি পাখির ঠোঁটে আড্ডা মশাই! যতসব ভ্যানতারা। গোদাই লস্কর। জামার নিচে ছেঁড়া গে্িঞ্জ আর প্যান্টের নিচে ফক্কা! আর মেয়েগুলো বুকে হেলমেট লাগিয়ে পামেলা এন্ডারসন! কিন্তু ওদের জামা শাড়ি খুলে নিলে দেখা যাবে সেখানে গড়ের মাঠ। মানে ফ্লাট ব্রেস্ট। হিহিহিহি এবার নারীমুক্তির দল আমার বাপের শ্রাদ্ধ করবে। প্যানা প্রিন্ট করে আমার ফাঁসির দাবি করবে। তাতে আমার ঘন্টা!
এইযে সবাই ফুটবল নিয়ে মাতলামী করছে তাতে ফুটবলের কী? সেতো লাথি খাবার জন্যেই জন্ম নিয়েছে। ফুটবলের পোঁদে লাথি মেরে যদি সুখ পাওয়া যেতো, তা বাবা নিজেদের পাছায় লাথি মারো না কেন? তাতে তো আরো আনন্দ। একি কম কথা। তবে জ্যান্তদের কর্ম্ম সাবাড়। তারা কী আর পা বেঁকিয়ে নিজের নিতম্বে লাথি মারতে পারে। ওদের সেই শক্তি কী আর আছে? দেশে কী রাজা রাণী নেই আর।
বেতন তুলতে গিয়ে পাড়ার লবেজানের চোখ ছানাবড়া। কেন কী হলো আবার? হয়েছে তো অনেক কিছু। নিজের পেনশনের টাকা তুলতে গিয়ে দেখে সব ভ্যাটম্যান নিয়ে গেছে ফদ্দাসেতুর উন্নয়নে। আর উন্নয়নের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে দেশসুদ্ধ মানুষ। এবার তাদের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু নৌকা বোঝাই ধান। এ ধান কিন্তু রবি ঠাকুরের সোনার ফসল নয়। এহলো গিয়ে বেগম সাহেবের মার্কা। এবার বোঝ ঠেলা! ওদিকে লেজে হমো জলপাই বাহিনী লাঙ্গল দিয়ে তাবৎ নেতাদের পোদাঞ্চল রাঙ্গা করে তুলেছেন। আমার আর কী? ভুতের না আছে পোদ না আছে গোদ। সব হাওয়াই মিঠাই।
ঘাটে বসে আছি আনমনা যেতেছে বহিয়া সুসময়। তা আমাদের সুসময় একরকম ছিল সেই আদ্দিকালে। তখন টাকায় আটমণ চাল আর সিকিতে দুই ঠিলে মদ। সুখের বাতাসে ভাসতে ভাসতে আমরাও রগর করতাম। ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা, বোয়ল মাছের দাড়ি, বাবা হলো দামড়া পাঁঠা, বৌদি হলো মাগি। এরকম কত্ব ছড়ার ছড়াছড়ি গো। হিঁদু- মুসলমান- সাপ- ব্যাঙ- খোক্কশ- রাক্ষস সব একঘাটে, এক বাঁটে। আমার চোখ তখনই ফুটেছে আর মরার পরে ভুত হয়েও শান্তি নেই কো! এখনো সেই চক্ষু দিয়ে ইক্ষুর রস গড়ায় গো। যা দেখি তাই মিঠে লাগে। প্রেরেম হয়েছিল ও পাড়ার গানের দাদা ঠাকুরের সাথে। তা সে মিনস্ েদিব্যি আরো চার পাঁচটাকে গার্ল ফ্রেরেন্ড বানিয়ে সংসার চালাতো। আর আমি ছিলাম তার সখের দাসী। তার পেরেমের হেরেমে গলায় দড়ি না দেবা পর্যন্ত আমার নিস্তার মেলেনি। ভুত হয়ে তার উঠোনের শেওড়া গাছে বাসা বাঁধলাম। আর একখানা খাতাতে তার নস্টামির হিসেব রাখতাম। তা একদিন দেখলাম সেই দাদাও দিব্যি গলায় দড়ি দিয়ে ছাদের আড়ায় ঝুলে পড়লেন। আমি তো ফুর্তিতে অজ্ঞান। ভাবলাম এবার ভুতের জন্ম আমার সার্থক হলো। তা অতো সুখ কেন সইবে আমার। বগলে কাঁথা পোদে হারিকেন। দাদাভাই ভেলকি দেখাবার ছল করেছিল। মরতে মরতে বেঁচে গেল। এখন আছে মাদাম তুসোর মিউজিয়ামে মোমের পুতুল হয়ে। তার আত্মা ঘুরে মরছে হারমোনিয়ামের রীডে রীডে। ভাবলাম নারী জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীতে আগমন করবো। সেই নিয়ত করে বাবা রামদেবের কাছে ধন্না দিলাম। তা তিনি তিন’শ বছরের যোগব্যায়েমের প্রেসক্রিপশন গলায় লটকে দিলেন। সেই থেকে আসন প্রাণায়াম মুদ্রাতে আছি আর তার সাথে খালি পেটে আধা লিটার গোমূত্র পান। তিন’শ পুরতে আরো কত বাকী এখন তা ভুলেই গেছি। আর নারী হয়ে কাজ নেই এই হিজড়া ভুত হয়েই মরণ সাঙ্গ করতে পারলেই বাঁচি। হাঁচি! ধুৎতরিকা। ভুতের আবার মরণ! যাই খোয়াইয়ের তালগাছে গিয়ে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের সাথে চিত্রকর্ম নিয়ে খানিক আলাপ জমাই। বুড়ো আবার চোখে দেখে না। তাতেই ভালো। চক্ষুমানদের নিয়ে হয় যত বিপদ!
আমি আবার শিল্পী ভুত কিনা তাই শিল্পীদের খুঁজে খুঁজে বের করি। আগামী সপ্তাহে প্যারিস যাবো। সেখানে বহুত শিল্পী আছেন যারা অপঘাতে মরেছেন। তাদের কাছে গিয়ে খানিকটা সংস্কৃতি চর্চা করবো ভাবছি। তা প্লেনের টিকিট করে উঠতে পারছি না। ভুত হয়েছি বলো তো আর অতোদূর উড়ে যাওয়া যায় না। মাধ্যম লাগে। তবে আর যাই করি বাংলাদেশের বিমানে যাবো না। এত্তো লেট করে যে ভুতের বাবারও সাধ্যি নেই সেই অনন্ত কাল অপেক্ষ করার!
এই কে রে ঢিল ছোঁড়ে। বদমাইশের দল আম পাড়ার আর সময় পেলি না। দেখচ্ছিস আমগাছে বসে আমি চিন্তা করছি আর এই ভর দুপুরে তোদের বাই উঠলো। নাহ্্ এখান থেকে বাস উঠাতে হবে মনে হচ্ছে। যাই উত্তর পাড়ার বাঁশ বাগানে। ইউরোপ যাবার একটা ওর্য়াকপ্লান করতে হবে। ভোঁ ভোঁ চোঁ চোঁ ছোঁ ছোঁ… ভুতেরা যখন উড়ে যায় এরকম বাতাসে শব্দ হয় গো বাছাধন। এই উড়-দৌঁড়ের বাতাস যদি জ্যান্তদের গায়ে লাগে তাহলে বুঝবে ভোঁকাট্টা ঘুড়ির কী তেজ? এক্কেবারে ঠ ঠ ঠক্কাস্!!!

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত