ভেলুয়া সুন্দরীর আখড়ায়- ০৫

লাকু রাশমনের ফালতু গল্পের সিরিজ থেকে…

ভেলুয়া সুন্দরীর আখড়ায়- ০৫

[প্রাক-কথন: ঘটনাগুলোর কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। কিন্তু বেজায় তাদের দাপট। ধান ভানতে যেমন শিবের গীত গাওয়া এই কথাগুলোও ঠিক তেমনি। গুরুত্ব নেই কিন্তু দায় আছে। মানুষটা খেয়ে পড়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কিন্তু অদ্ভুত মাথার ব্যামোতে ধরলো। কোনো ডাক্তার কবিরাজে কাজ হয় না। ভিমরি খাওয়া রোগ। এ বড় শঙ্কার কথা। এ রোগ কী ছোঁয়াচে! কী জানি বাপু। আমাদের না হলেই বাঁচি। তাই দূরে দূরে থাকি।
তবে শোনা যায়, সে রোগের বাই চাপে শনিগ্রহের ফেরে। শনিগ্রহ থেকে সরাসরি রোগের আকর তার মস্তিকে ভর করে আর পঁই পঁই করে এমন লেখা বের হয় যে, তাকে ধোলাই না দিলে রাতের ঘুম হারাম হবার যোগাড়। তাই পাড়ার মাতব্বররা তাকে ভেলুয়া সুন্দরীর আখড়ায় ভর্তি করে দিলেন। এরপর যা কাÐ ঘটলো! চেনা পৃথিবী গেল উল্টে। ভেলুয়া সুন্দরীর নাম ছড়িয়ে গেল সবখানে, সবখানে, সবখানে…]

ফালতু গল্প- ০৫। রাতের দরবেশ

ধুর হালার পুত। ফহিন্নির পোলা। দামড়া। আবাল।
এতো গাইল দেন ক্যান?
চ্যাটের বাল, একখান কামও করতে পারো না। তোমারে কী চুমু খাবো?
চুমু খাবার দরকার নাই। টাহার মামলাটা ক্লিয়ার করেন।
লোকটা তার পান খাওয়া কালো গাবের বিচির মতো দাঁত কেলায় আর দু’পায়ের ফাঁকে গোত্তা মারে।
টাহার গাছ লাগাইছি, রোজ রাইতে পানি দেই, গাছে ফুল ফুটুক, ফল ধরুক, টসটস করুক, তারপর না তোর কথা ভাববো?
বলে খ্যাঁ খ্যাঁ করে হাসে। ছেলেটা খানিক ঠান্ডা চোখে লোকটার দিকে তাকায় থাকে। লোকটা তার দৃষ্টির মানে বোঝে। দাঁতের ফাঁকে সুপারির কুঁচো আর পানের আঁশ খোঁচাতে খোঁচাতে বলে- কামডা কইরে দে। টাহা পয়সা যা লাগে ক্যাশ নিয়ে যাস।
ছেলেটার কী মতি হয় তা সেই জানে! একটানে নিজের পায়জামা খুলে লোকটার সামনে, পিছন ফিরে দাঁড়ায়। দড়াম করে বলে উঠে-
নেন চ্যাটের ফুল ফোটান, ফল পাকান।
লোকটা হা হা করে উঠে। তাড়াতাড়ি ছেলেটার পায়জামাটা কোমড় অব্দি গোটায়। তারপর ঠাস করে একটা চড় মারে।
বজ্জাত। কুলাঙ্গার পোলা কোয়ানকার। তোর লজ্জা শরম নাই। তুই কী আমারে রাইতের দরবেশ ভাবিচ্ছিস? মাইরের ঘাপানে তোর কলিজা বাইর করব নে।
ছেলেটা পায়জামার ডুরি বাঁধতে বাঁধতে খানিকটা দূরে সরে যায়। গাবের বিচি বেশ কিছুটা নরম কেটে এবার ছেলেটাকে কাছে টেনে কাঁধে হাত রেখে বলে।
শোন তোরে আমি কত্ত¡ পেয়ার মোহাব্বত করি। তুই কী তা ভুলে গেচ্ছিস? অ্যাঁ! আমি কী আর ছ্যাঁচড়া মানুষ? ঘরে আমার বিবি বাচ্চা আছে না! আমি মাজহাব মেনে চলা মানুষ। তুই এতো চেইতে গেলি ক্যান? শোন রে বোকা। সপ্তাহে না হোক মাসে এক একটা পাখি ধরে আনবি। একশ’ টাহা গুনে নে যাবি। হিসেব সোজা। তোর মোবাইল আছে?
ছেলেটা মাথা নাড়ে।
নেই! ঠিক আছে সামনের ঈদে একটা কিনে দেবা নে।
অতো পাখি পাবো কায়ানে?
এই দেখ! কী সুন্দর একটা কথা কইলি? আরে খোপাখোলায় কী পাখির অভাব? তোরে সব বুঝায় দিবানে। কাইল দুপুরের দিকে বাসায় আসিস, গোসত দিয়ে ভাত খাবানে।

লোকটা সন্ধ্যায় সাইকেল চালিয়ে বাড়িতে আসে। হাতে ধরা টিফিন ক্যারিয়ার। তাতে নানান পদের খাবার ভরা। রোজ টিউশনি বাড়ি থেকে যেমন দিয়ে থাকে। হাতমুখ ধুয়ে খাটের উপর বসে আয়েশ করে একটা পান খায় লোকটা। বিবিকে জিগ্যেস করে পোলায় কই? বিবি বলেন- আপনের ভাই নিয়ে গেছে। রাতে দরবেশ আসবেন, তারে খিদমত করতে হবে। লোকটার চোখ ছানাবড়া। খাট থেকে কুমড়ো গড়ান গড়িয়ে সাইকেল নিয়ে রাত দরবেশের উদ্দেশ্যে জোরসে প্যাডেল মারে!

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত