টুথপেস্ট

মায়মুনা বেগম এখন টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজেন। আজন্ম ছাই-কয়লা দিয়ে দাঁত মাজতে অভ্যস্ত মায়মুনা, পাড়া-প্রতিবেশি আত্মীয়-স্বজনের কাছে যিনি নীলুফার মা নামেও পরিচিত, এখন নিয়মিত টুথপেস্ট দিয়েই দাঁত মাজেন।

মায়মুনার বেগমের স্বামী মারা গেছে সেই কবে, পঁচিশ ছাব্বিশ বছর হতে চলল। মনে রাখাও কঠিন। দুই মেয়ে আর কোলের ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি ফিরে এলো মায়মুনা। যৌবনকালে স্বামী স্নো-পাউডার-লিপিস্টিকের সাথে টুথপেস্ট-টুথব্রাশও কিনে এনেছিল। স্নো-পাউডার গায়ে মাখতে অসুবিধা হয়নি মায়মুনার। কিন্তু টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজতে পারলো না মায়মুনা, নিজের কাছে কেমন লাগে, শ্বশুর-শাশুড়িও অবাক চোখে তাকায়।

মেয়েরা বড় হয়ে নিজেরা টুথপেস্ট-টুথব্রাশ ব্যবহার করা শিখল। মায়মুনা তখনো ছাই-কয়লা দিয়েই দাঁত মেজেছেন। ঝামেলা করেছিল ছেলে, স্কুল থেকে শেখা সমস্ত বিদ্যা সে মায়ের ওপর প্রয়োগ করতে চাইত। ভাত খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, টয়লেট থেকে বেরুবার পর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, রাতে খাবার পর টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজতে হবে- সব কিছুই সে মাকে শেখাতে চাইত।

পড়ালেখায় খুব ভালো ছিল মোস্তফা। স্কুলের পরীক্ষায় এক থেকে দুই হতো না। বোর্ড পরীক্ষায় মোস্তফার রেজাল্ট শুনে স্কুলের মাস্টাররা মিস্টি বিলি করেছে। কিন্তু গরিব মানুষের জীবনে সব সুখ স্থায়ী হয় না। মোস্তফা কলেজের পড়া শেষ করতে পারল না। তাকে ঢাকায় যেতে হলো চাকুরির খোঁজে। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় মোস্তফাকে একটি ঔষধ কোম্পানিতে চাকুরি দিল। প্রথম মাসের বেতন পেয়ে মোস্তফা যা কিছু কিনল সব মায়ের জন্য। শাড়ি, সাবান, তেল, টুথপেস্ট, টুথব্রাশ- সব মায়ের জন্য। কিন্তু সেই টুথপেস্ট মায়মুনার ব্যবহার করা হয়নি কখনো। ছেলে কত পীড়াপীড়ি করেছে, মায়মুনা ছাই-কয়লা ছাড়তে পারেননি। বড়জোর নিমের ডাল তার হাতে উঠেছে।

সেই মায়মুনা, পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই মায়মুনা, এখন টুথপেস্ট দিয়েই দাঁত মাজেন। ছাই তিনি মুখে তুলতে পারেন না, ছেলেটা তার ঢাকা শহর থেকে ছাই হয়ে ফিরেছিল।
[আগের ঘটে যাওয়া নিমতলী বা বনানী বা যে-কোনো অগ্নিকাণ্ড এমন গল্পের জন্ম দিতে পারে। ভবিষ্যতেও যে এমন গল্প জন্ম নেবে না, সেটা নিশ্চিত করে বলার সাধ্য আমাদের নেই।]

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত