নষ্ট মেয়েদের উপাখ্যান

আজ এই সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে জানতে পেরেছি আমার জগত এবং জগদীশ্বরের সাথে অন্য সম্বন্ধও আছে,তাই সাহস করে এ চিঠিখানা লিখছি। সামন্ত সংসারের দমবন্ধ দরজা খুলে চলে গিয়ে মৃণাল কী করে বাকি জীবন কাটিয়েছিলো? এ ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ কোথাও কী লিখে গেছেন কিছু? বোধহয় না। আসল সংকট ফাঁকি দিয়ে দিব্যি নারী মুক্তির ধ্বজা উড়িয়ে গেছেন।
অথচ এই আমি আজ সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে একদিনেই জীবনের দিশা খুঁজে পাচ্ছিনা। মনে হচ্ছে বিশাল একটা ভুল করে ফেলেছি, এর চেয়ে দাঁত কামড়ে সংসারে পরে থাকাই বরং শ্রেয় ছিলো! আমার এই হতবিহবল দশা মৃণালের কথা লেখার দুইশ বছর পর! যখন প্রাচ্যে প্রতীচ্যে নারীকুল স্বাধীনতার বাদানুবাদ নিয়ে এগিয়ে গেছে কয়েকটি ঢেঊ! রবীন্দ্রনাথ তখন বুঝি জানতেন না ঘর ছেড়ে বের হয়ে যাবার পর মৃণালের লড়াইটা কতো কঠিন হবে? আমি আর তোমাদের সাতাশ নম্বর মাখন বড়ালের গলিতে ফিরবো না, বলে মৃণালকে মুক্তি দিয়ে চলে গেছেন।
সমুদ্রের ধারে মৃণালের কথা ভাবতে ভাবতে আমি দেখি অবুঝ গোঁয়ারের মতো গোঁ গোঁ শব্দ করতে করতে সমুদ্রটা আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। ঠিক যেমন এই দিনশেষে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে দিনের সমস্ত সাহস আর এর আগে কয়েকদিনে তিলতিল করে জমানো সব প্রস্তুতি। এক মূহুর্ত পরে কি ঘটবে এই মূহুর্তে ভাবনাকে সেই পর্যন্তও টেনে নিয়ে যেতে পারছি না, ভেঙে পড়ছি উত্তাল সমুদ্রে হালভাঙা নাবিকের মতো।
আচ্ছা সৈকতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর কী কষ্ট হচ্ছে ক্রমশ দূরে চলে যেতে থাকা সমুদ্রের জন্য? সারাদিন তাদের আদরে আহ্লাদে ভিজিয়ে রাখা নোনা পানির জন্য একটুও কি মন খারাপ করছে কারো ? জিসান, জিহান কারো কী আমার জন্য একটুও মন খারাপ লাগছে না এই সন্ধ্যায়? মাখন, মেয়নেজ দিয়ে পাস্তা। জিসানের কফি, জিহানের হরলিক্স মেশানো দুধ। কারো কি একটুও মনে পড়ছে না? একটুও মন খারাপ হচ্ছে না? কী আশ্চর্য সারাটা দিন কেটে গেছে একবারও কল করেনি কেউ আমাকে।
কলাতলি সৈকতে উপচে পরা ভীড়ের ফাঁক গলে সন্ধ্যা ঢুকছে। অচেনা নাবিকের মতোই আকাশ থেকে নেমে আসা অন্ধকারে অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে সমুদ্র। রিনিঝিনি হাসতে থাকা, পরস্পর ঢলতে থাকা, বার্মিজ আচার আর ঝিনুকের পুতুল কিনতে থাকা পর্যটকদের ভীড়ে আমার নিজেকে খুব একা অসহায় লাগে। বেমানানও লাগে। একা এক নারী লাগেজ পত্র নিয়ে বসে আছে সৈকতের বালিতে, এ দৃশ্যের ভেতরে ঘটনা যাই থাকুক, এই সুখী উচ্ছল সামাজিক, অসামাজিক জোড়ামুখর সৈকতে দৃশ্যটা একেবারেই বেমানান।
ভাগ্যিস নিজেদের ব্যস্ত উপভোগ ছেড়ে কেউ আমার দিকে তেমন দৃষ্টি দিচ্ছেনা। অসহায় একাকীত্বে আমার চোখ ছাপিয়ে জল আসে। সারাদিন না খেয়ে আছি। হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে একেবারে খাবো, ভাবতে ভাবতে একটা দিন এগিয়ে চলে যাচ্ছে আরেকটা দিনের দিকে। আমার কিচ্ছু খাওয়া হয়নি। দুচোখ ভরে উঠে জলে, অভিমান, ক্লান্তি আর অসহায়ত্বের জলে।
না চোখের জলকে মোটেই প্রশ্রয় দেয়া যাবেনা। এই চোখের জলকে প্রশ্রয় দেয়ার কারণেই আজ এখানে এ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি আমি।
মিতু আমার অফিসের নতুন সহকর্মী, বেঢপ মোটার জন্য ওকে নিয়ে সবাই যে মুখ টিপে হাসতো, আমি অবাক হয়ে ওর চোখে শীতল উপেক্ষা দেখতাম। ওর এই উপেক্ষার শক্তি আমাকে প্ররোচিত করতো ওর কাছে যেতে। আমি সম্মান আর সহানুভূতি নিয়ে ওর কাছে যেতাম,মিশতে চাইতাম। ওকে নিয়ে কফি খেতে ক্যাফেটেরিয়ার দিকে যেতে যেতে ও উল্টো আমাকেই প্রশ্ন করতো, তুমি ওসবে মন খারাপ করো? আমি কিন্তু কিচ্ছু গায়ে মাখি না। আমার খারাপ লাগা লজ্জা পেতো ওর দৃঢ়তার কাছে। আমি মিতুর দিকে তাকিয়ে মিতুর মতো দৃঢ় হবার বাসনা প্রাণপনে গোপন করতাম।
আমি অবাক মানতাম মিতুর ব্যক্তিত্বে। আশেপাশে কে কি বলছে তোয়াক্কা না করে ও অফিস আসতো জিন্সের উপর টি শার্ট লাগিয়ে। দিব্যি ওর কাজ করে যেতো। আমি যে জিসানের খোঁচায় মন খারাপ করি,জিসান কথায় কথায় চাকরি ছাড়তে বলে, স্বাভাবিক মান অভিমানকে টাকার গরম বলে টিটকারি দেয় আমি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতাম। নিজের এই দুঃসহ আর অব্যক্ত কষ্ট নিয়ে আমি মিতুর কাছে ওর মতো থোড়াই পরোয়া করা ব্যক্তিত্ব ধার করতে যেতাম, ওর ছায়ায় ছায়ায় ঘুরতাম। সেই আমি একদিন দেখে ফেললাম ওয়াশরুমে চোখ ফুলিয়ে কাঁদছে মিতু।
কলাতলি পয়েন্টে পাশে বসা মেয়েটি হঠাৎ কথা বলে উঠে, যাকে এতোক্ষন খেয়ালই করিনি আমি। যেনো অশরীরীর মতো ভেতরের সমস্ত খবর জেনে কথা বলে উঠে ও। স্বামীকে ছেড়ে চলে এসেছেন? থাকার জায়গা পাচ্ছেন না? এই ‘চলে আসা’ শব্দটির মধ্যে আমি ধাক্কা খাই। প্রচলিত সংসার একে আসা বলবে না, বলবে ‘চলে যাওয়া’। স্বামী সন্তান সব অগ্রাহ্য করে চলে যাওয়া। আসা এবং যাওয়ার মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধের যে মাপকাঠিগত পার্থক্য, তার কোনটিতেই আমার জন্য বিন্দুমাত্র সহমর্মিতার ফাঁক নেই। চলে যাওয়া বললেই কী আর চলে আসা বললেই কী! তবু মেয়েটির “চলে আসা” বলায় আমি ব্যতিক্রম ভাবনার আঁচটাতে ঠিকই গলে যাই। সারাদিনের ক্লান্তিতে ক্ষয়ে যেতে থাকা মনের জোর আবার যেনো একটু খড়কুটো পায়।
আমি যা করেছি আমার মতো দুর্বল স্নায়ুর নারীর জন্য তাকে আদতে বলে দুঃসাহস! বেয়াড়া! বেয়াড়া দুঃসাহস! হ্যা আমি সেই দুঃসাহস করেছি। বাসায় কাউকে কিছু না জানিয়ে বের হয়ে এসেছি। গভীর রাতে ফকিরাপুল থেকে বাসে চড়ে সারারাত জার্নি করে সকালে কক্সবাজার এসে পৌঁছেছি। একদম একা।
আমি চলে এসেছি কারণ থাকাটা আর সম্ভব হচ্ছিলো না। থাকাটা যদিও মুখ্য ছিলো কিন্তু আমার জন্য অসহ্য হয়ে উঠেছিল। তাই সাহস করে চলে এসেছি। কিন্তু এই চলে আসার কারণটা এমনই যে আমি কাউকে কোনদিন সেটা গলা উঁচু করে বলতে পারবোনা। আমি নিশ্চিত জানি বললে কেউ আমার পাশে সমর্থন সহানুভূতি নিয়ে দাঁড়াবে না। দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। আমি প্রত্যাশাও করিনা। আমি অবশ্য সব জেনে বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হ্যা এটা ঠিক যে অফিস ঠিক এই মূহুর্তে ট্রান্সফার অর্ডার না করলে এভাবে চলে আসতে পারতাম কিনা জানি না।
এই মূহুর্তে আমার ভেতর থেকে ভেঙে যাওয়া কিংবা আবার নিজেকে ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া কিছুই এ মেয়েটাকে বুঝতেও দেয়া যাবেনা। আমি আর কোন মেয়ের চক্করে পড়তে রাজি নই। কে বিশ্বাস করবে কোন পুরুষ নয় মূলত এক মেয়ে আজ আমাকে এই ভর সন্ধ্যায় নিরুপায় সৈকতে এনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে! যা আমি কাউকে বলতে পারবো না!
শক্তপোক্ত মিতুকে সেদিন কাঁদতে দেখে আমি হতচকিত হয়ে ওর কাঁধে বিস্ময়ের হাত রেখে জানতে চেয়েছিলাম তুমি কাঁদছো মিতু। মিতু চোখ মুছে নিজেকে সামলে নিয়েছিলো। যেনো ও নয় আমিই কাঁদছিলাম, বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলো হালকা শীতের কাপড়ের মতো। জানিয়েছিলো, ওর সব কথা জানিনা আমি। না বলা অনেক কথা রয়ে গেছে ওর। যে মেয়ের ব্যক্তিত্ব আমাকে মোহিত করে রেখেছে এতোদিন, যার দৃঢ়তা আমি ঋণ করতে চেয়েছি, সেও কাঁদে! তার কান্নার কারণগুলি নিশ্চয়ই নারী সুলভ সাধারণ নয়, আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতে চেয়েছিলাম। শুনার জন্য সেদিন বাসা পর্যন্ত নিয়ে এসেছিলাম মিতুকে।
দৈহিক সৌন্দর্যের প্রচলিত দৃষ্টিতে মিতুকে আপাদমস্তক দেখে নিজের দিকে ইশারা করে জিসান টিপ্পনি কেটেছিলো, রিস্ক নেই দেখেই বাসায় তুলে এনেছো।
কলাতলি সৈকতে আমি মেয়েটির কথার কোন উত্তর না দিয়ে লাগেজ নিয়ে আবার উঠে দাঁড়াই। আর কোন মেয়ের চক্করে পড়তে চাইনা। আবারও আরো দুয়েকটা হোটেল মোটেলের দ্বারস্থ হই। ইজিবাইক ডেকে ঘুরে বেড়াই। উৎসব মুখর শহরে ঝাঁকে ঝাঁকে রঙিন বাতি জ্বলে উঠেছে। দলে দলে ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের মধ্যে কোন অভাব নেই, অভিযোগ নেই,যেন তাদের জীবনে কোন সুতা ছিদ্র দিয়ে কোন ত্রুটিই ঘটেনি। তারা কলকল হাসছে, শপিং করছে,ডাব খাচ্ছে ।কেউ আমাকে ফিরেও দেখছে না। না হয়না। এবারও কোন থাকার জায়গা হয়না। পুরো দিনের ব্যার্থতা আমার সন্ধ্যাকে গ্রাস করে, ধেয়ে আসা রাত আমাকে সন্ত্রস্ত করে।
জগদীশ্বরের সাথে সম্পর্কটা বাস্তব জগতে কোন প্রভাব বিস্তারকারী বা দৃশ্যমান নয় বলে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়না সেই মূহুর্তে। বরং জগতের সাথে সম্পর্কটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে থাকে ধীরে ধীরে মুখোমুখি হওয়া যাবতীয় সমস্যা নিয়ে।
এই সমুদ্রের ধারে জিসানের সাথে, বাচ্চাদের সাথে পারিবারিক ভাবে এমনকি জিসানের বোন, বোন জামাই সহ একান্নবর্তী ভ্রমণেও এসেছি কয়েকবার। কখনোই আমাকে একাএকা এর রাস্তাঘাট, হোটেল লবি,বার্মিজ জুতা, শুটকি মার্কেট, মারমেইড রেস্টুরেন্ট কিছুই খুঁজতে হয়নি।সব ওরাই করেছে। আমি ওদের সাথে সেজেগুজে বের হয়েছি কেবল। বিয়ে বাড়ির আলোর রোশনাইয়ের স্রোতে ভেসে যাওয়া শতো শতো নারী পুরুষের মতোই যে কোন কেউ হয়েই থাকতাম আমি। আমার দিকে কেউ ফিরেও তাকাতো না গিজগিজ জনস্রোতে। তবু শাড়ি চুরি গয়না পরে সেজেগুজে আমি সৈকতে যেতাম। ছাতা ঢাকা ইজিচেয়ারে বসে ডাব খেতাম, ভাসমান ক্যামেরাম্যানদের ডি এস এল আরের ছবি তুলতাম, কলাতলি বিচের ঘোলা জলে, পাড়ে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচল উড়িয়ে, রুমে ফিরেই প্রোফাইল ছবি বদলাতাম। কখনো এর কোন কাজকেই কঠিন কিছু মনে হয়নি।
এবারই প্রথম সমুদ্রের কাছে এসে বুঝতে পারছি সহজ সবকিছুই সহজ নয়। সারাদিন এ হোটেল থেকে সে হোটেল ঘুরেছি। লবিতে, রিসিপশনে সবাই প্রথম যে প্রশ্নটি করছে সাথে কে? দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিলো , কেন এসেছি? আমি সহজ ভাবে সরল সত্য উত্তরটি দিয়েছি। একাই এসেছি, চাকরি করতে। এবং যথারীতি সবাই জানিয়েছে রুম খালি নেই। সরল বিশ্বাসে সত্যি রুম নেই ভেবে আমিও আরেক হোটেলে গেছি।
সন্ধ্যায় অসহায়, নিরুপায় ক্লান্তিই আমাকে আবার কলাতলি সৈকতে নিয়ে আসে। এই সমুদ্রের ধারে গিজগিজ জনারণ্য ছাড়া মেয়েদের আর নিরাপদ জায়গা কই? গায়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দু একটা স্পর্শ ছাড়া এতো ভীড়ে অন্তত আর কোন দুর্ঘটনার ভয় নেই।
মেয়েটি আবার তখন সামনে এসে দাঁড়ায়। বোধহয় অনুসরণ করছিলো আমাকে। বলে, আপনি একা। সে বেড়াতে হোক কিংবা চাকরি করতে জেনে কেউ আপনাকে রুম দেবে না। আসার আগে এই জ্বলজ্বল সত্যটা উপলব্ধি করতে না পারলেও, এর অন্তর্নিহিত গভীর খাদটা এখন উপলব্ধি করতে পারছি,তাই মেয়েটির কথায় চুপ করে থাকি। এই শহর,
ওই শহর কেন, কোন শহরেই একা মেয়েদের জন্য কোন স্থান নেই।
মেয়েটি এবার প্রস্তাব দিলো কিংবা বলা যায় আমাকে অনুসরণ করার আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ করলো, আমি এখানে একা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকি। আপনি আমার সাথে থাকতে পারেন। মেয়েটি অনুসূয়া, ততক্ষণে ওর নামটি আমার জানা হয়,জানা হয় এটা তার আয়ের একটা উপায়। ইদানিং এই শহরে এরকম প্রচুর মেয়ে একা আসে। নানা কাজে। কিন্তু হোটেল গুলোতে একা মেয়েদের রুম দেয় না। ফলে মেয়েদের এরকম থাকার মতো এখানে যে অনেক ফ্ল্যাট গড়ে উঠেছে, মেয়েটি সম্ভবত আমার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য বাড়তি তথ্যটা অমূলক হলেও নিজের কথার সাথে যোগ করে।
প্রস্তাবটা এমন, সারাদিন থাকার জায়গা খুঁজে ব্যার্থ হওয়া একা আসা যে কোন নারীর লুফে নেয়ার মতো। কিন্তু যে ধাক্কা খেয়ে আমি এখানে এসেছি আমার পক্ষে এক কথায় ওর প্রস্তাবটা লুফে নেয়া সম্ভব হয়ে উঠেনা। মেয়েটি ভদ্রস্ত নাছোড়বান্দা। আমার এই দোনোমনার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিলো না। এর আগে যতোগুলো মেয়ে সে ডিল করেছে সবাই হয়তো ওর এমন প্রস্তাব এককথায় লুফে নিয়েছে। মেয়েটি যে আমাকে ভেতর থেকে পড়ার চেষ্টা করে আমি টের পাই। কিন্তু কী বুঝে জানিনা, থাকতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন সুলভ আর একটা শব্দও ব্যায় করেনা। ওকে বাই…বলে চলে যাবার স্পর্ধিত ভঙ্গিতে চলে যাবার ভঙ্গিতে আমার মেয়েটিকে খুব পছন্দ হয়ে যায়। সাহায্য সহযোগিতা চেয়ে নাকি কান্না না কেঁদে মেয়েটি যে স্মার্টলি আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছে তাতে আত্মবিশ্বাসের দাগটা বেশ স্পষ্ট।
কিন্তু আমি তো ঘরপোড়া গরু। যাকে বাধা মেনে চলতে হবে সে যদি বুদ্ধিকে মেনে চলতে চায় তবে তো ঠোকর খেয়ে খেয়ে তার কপাল ভাঙবেই। আমি বুদ্ধিকে মেনে মানিয়ে নিলেই পারতাম। ইচ্ছেয় হোক কিংবা অনিচ্ছায় সমাজ সংসারের প্রচলিত প্রথায় মেনে না নেয়ার মতো ঘটনা একটা ঘটেছে এটাতো আর অস্বীকার করতে পারিনা। অথচ আমি নির্বুদ্ধিতায় না মেনে না মানিয়ে সংসার ভেঙে চলে এসেছি।
সন্ধ্যা নামছে কলাতলি সৈকত জুড়ে। হোটেল রুম থেকে দামি শাড়িতে পারফিউমের তীব্র ঘ্রাণ মেখে জোড়ায় জোড়ায়, পরিবার-পরিজনে দলে দলে লোকজন যাচ্ছে সৈকতে, সুর্যাস্তের সমুদ্র দেখতে। নাগরিক ক্লান্তির গায়ে তারা এখন অবকাশের হাওয়া মাখবে নিশ্চিন্তে। অথচ আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে দুশ্চিন্তা। আমি এখনো থাকার কোন জায়গা পাইনি। মূহুর্তে সিদ্ধান্ত নেই মেয়েটিকে এবার আর হাতছাড়া করা যাবেনা। বলি চলেন আপনার থাকার জায়গাটা দেখি।
মিতু সেদিন আমাকে বলেছিলো, এই বেঢপ চেহারা স্বাস্থ্যের জন্য বিয়ে হয়নি ওর। বিয়ে হয়ে গেছে ছোট ভাইবোন সবার। পড়শিদের করুণার দৃষ্টি আর শহরবাসীর অযাচিত টিপ্পনীতে মফস্বলে টিকতে না পেরে এই রাজধানীতে এসে উঠেছে সে। চাকরি জুটেছে ঠিক। কিন্তু থাকার জায়গা জুটছে না। আমার একটা রুম খালিই পড়ে থাকে। থাকুক ও।আমিই মিতুকে ধরে নিয়ে এসেছিলাম বাসায়। আর চরম ভুলটি করেছিলাম।
এবার ভুল করছি কিনা জানিনা, কিন্তু এছাড়া এই মূহুর্তে আমার এই মেয়েটির সাথে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় খোলা নেই। ইজিবাইক থেকে নেমে কয়েক পা হাঁটা পথ। গলিতে ইজিবাইক ঢুকে না। লিফটের চার। হাতের ব্যাগেজে খুব বেশি কিছু নেই আমার। কয়েক ভরি সোনা আর মায়ের দেয়া পেনশনের পনেরো লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। পরনের কয়েকটি কাপড় চোপড়, কসমেটিক্স,হাতের কাছে যা পেয়েছি তাই নিয়ে চলে এসেছি।
ঘরে ঢুকে ঘরটা আমার পছন্দ হয়। অবশ্য সারাদিন সারা শহর ঘুরেছি। পছন্দ না হলেও উপায় ছিলো না। এখানেই থাকতে হতো। রাস্তায় তো আর একটা মেয়ে রাত কাটাতে পারবেনা!
প্রশস্ত ঘরের একপাশ জুড়ে কেবলই জানালা,হু হু বাতাস। দমবন্ধতা থেকে মুক্তির বাতাসই তো চেয়েছি আমি। আমি সিদ্ধান্ত নেই এখানেই থাকার। যা হবার হোক।আমি এখানেই থাকবো।
আমার জীবনের সিদ্ধান্তগুলো এমনই হুটহাট নেয়া। জিসানকে বিয়ে করা থেকে ছেড়ে আসা।মিতুকে বাসায় এনে তোলা। এই এখন অনুসূয়ার সাথে থাকার সিদ্ধান্ত। সব হুট করেই নেয়া।এখন তবু এখানে আসার ক্ষেত্রে নিজের কাছে একটা যুক্তি আছে, এছাড়া আর কোন উপায় খোলা নেই আমার কাছে।
অনুসূয়া আমাকে রুমটা বুঝিয়ে দেয়। আলো জ্বালিয়ে ওয়াশ রুম দেখিয়ে দেয়। ব্যাগ রেখে সবার আগে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল সারি আমি। রান্নাঘরে ঢুকতে ঢুকতে দেখি অনুসূয়ার দরজা ভেতর থেকে আটকানো, দরজার নিচ দিয়ে মৃদু সুরে আসছে লগ্নজিতা-আমাদের গল্পগুলো অল্প সময় পথ হারালো…।
আমার ভেতরে এমন একটা আমি আছে প্রথমবারের মতো টের পাই। দায়িত্বের ভারহীন এক পলকা ঘুড়ি মনে হয় নিজেকে। যখন ইচ্ছা, যা ইচ্ছা করার স্বাধীনতার স্বাদ যেন চাটনির মতো লাগতে থাকে জিভে অনুসূয়ার বাসায় এসে।হোক না ভাড়ায় তবু নিজের রুম। একলা একটা রুম।
কফি বানাই, কেকের প্যাকেট খুলি,ভাবি রাতে রান্না করবো না, খাবোই না আজ। জিসান কী খাবে, জিহান যদি না খেয়ে ঘুমিয়ে যায় কিচ্ছু ভাবনা নেই নিজেকে বেশ মুক্ত মুক্ত মনে হয়। চলে আসার আগে শেষ কয়টা দিন কী অসহনীয় ছিলো সংসারটা! ঠাট্টার ছলে জিসানের টিপ্পনি। ঠিক কোথায় হাত দিয়েছে বলোতো? বুকে? সাক করেছে? তুমি নিশ্চয়ই সুখ পেয়েছো,আমার চেয়ে বেশি? উফ! আমার মাথা দপদপ করে। জিসানের উপহাস প্রতিটি মূহুর্তে আমার নিজেকে ঘৃণা করতে প্ররোচিত করতো। নিজেকে ঘৃণা করে বাঁচা যায়না। আমি বাঁচতে চেয়েছি। আমি বাঁচার জন্য চলে এসেছি।
অনুসূয়াকে বিকেলে যেরকম প্রগলভ মনে হয়েছিলো কয়েকদিনে ঠিক তার বিপরীত ঠেকে। জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয়,কথা বাড়ায় না। চোখেমুখে নির্বিকার নিরুত্তাপ অবহেলা। একবার রান্নাঘরে আমাকে দেখলে চুপ করে সরে যায়। ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। ভাব জমানোর আমার যতো আয়োজন সব হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। আমার ফিরতে দেরি হবে, কাল ইলেক্ট্রিসিটি থাকবে না ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কথা কয়টি বলে নিজের ফ্ল্যাটেই নিঁখোজ হয়ে যায় সে।
অবশেষে একদিন বেশ রাতে জিসানের কল আসতে থাকে। কয়েকবার কেটে দেই। ভেতরের শূন্যতা অসহায়ত্ব, নিজের উপর ভরসাহীনতা সব অস্বীকার করতে চাই প্রাণপনে। প্রচলিত মাতৃত্বের জৈবিক মানবিক টানও মিথ্যে করে দিতে চাই। জিসান কল দিয়েই যাচ্ছে। মেসেজ দিচ্ছে,জিহান কান্নাকাটি করছে ফোনটা ধরো। আমি নাম্বার ব্লক করে দেই। জিহানের জন্য মন খারাপ লাগে।বাবাটা আমার। যদিও খুব একটা আমার ধার ঘেঁষতো না জিহান। বাপ ন্যাওটা ছেলে। বাপও ছেলে বলতে অজ্ঞান। আমার ব্যাটা আমার ব্যাটা বলে সারাক্ষণ লেগে থাকে ছেলের পেছনে। খাওয়া, ঘুম,হোম ওয়ার্ক সবই বাপের কাছে। আমাকে ছাড়া না থাকলেও বাবার উপর নির্ভর করতেই অভ্যস্ত জিহান। ভালোই থাকবে।
আমি প্রাণপনে নিজের কাছেই নিজেকে ফাঁকি দিতে চাই, আমার একটুও একা লাগছে না, অনভ্যাসের নিঃসঙ্গতা আমাকে অসহায় করে দিচ্ছে না। আমি ভালো আছি। ভালো আছি। এতো চেষ্টা করছি দিনরাত ভালো থাকার, যাপনের চোরাগলিতে তবু বিগত সময়, সংসারী জীবনের স্মৃতি চোরের মতো ঢুকে পড়ে।সন্ধ্যায় একটু নুডলস রান্না, ছেলেটার হুটোপুটি। আমার ঘর সংসার। আর নিজেকে আটকাতে পারিনা,কান্নার কাছে আত্মসমর্পণ করি। সেই কান্না কখন অনুচ্চ থেকে সুউচ্চ হয় আমি টের পাইনা। অনুসূয়া লাইট জ্বালায়। এতো জোরে কাঁদছেন কেনো!ওর বলার ভঙ্গিতে মনে হয়, এখানে কান্নার নিয়ম আছে বটে কিন্তু তার স্বরেরও একটা সীমা আছে। তারপর যেনো গুহার ভেতর থেকে গমগম স্বরে বলে,কান্নাকাটি না করে বরং ফিরেই যান, আপনি একা থাকতে পারবেন না। ওর বলায় নিস্পৃহ নির্দেশ। মনে হয় এরকম ও সবাইকে বলেই অভ্যস্ত। যারা ওর বাসায় থাকতে আসে নিয়ম করে সবাইকে বলে। কিন্তু ওর দায়সারা হেয়ালি আদেশ মূহুর্তে আমার মাঝে আমি ফিরে যাবো কী যাবো না এই দোদুল্যমানতায় তৈরি করে। আমি বুঝি এই ভঙ্গুরতা আমারই, আমার ভেতরে তোলপাড় করছে ফিরে যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্তের সংশয়ে,ওর বলা বাহানা মাত্র। আমি ঠিক আছি, বলে ওর সামনে চোখ মুছে নেই।
অনুসূয়া চলে গেলে আমি সত্যি ভাবতে বসি আমি কেন চলে এসেছি। আমার কি ফিরে যাওয়া উচিত? সারাজীবন কাউকে না কাউকে নির্ভর করে চলা আমি আদতে কয়দিন একা থাকতে পারবো? আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার যন্ত্রণা কারো কাছে বলতে না পারার অসহনীয় ব্যাথা পুড়াবে আজীবন। একবার এবং শেষবার নিজের নির্বুদ্ধিতায় জিসানকে বলে তার প্রায়শ্চিত্তে আজ ঘর সংসার সব ফেলে চলে এসেছি। আসলে আমি কি ঘর সংসার হারাতে চেয়েছি? কিংবা হারাবো জানলে জিসানকে কথাগুলো বলতাম? এই একা জীবন কি কাঙ্ক্ষিত ছিলো আমার? আমি কি এই জীবন উপভোগ করতে পারছি ? কেন নিজেকে মনে হচ্ছে ক্লান্ত!
একটা মিহি কান্নার সুর আমার কানে ধাক্কা দেয় তখন। আমি আর অনুসূয়া ছাড়া বাসায় কেউ নেই। এদিক সেদিক হেঁটে নিশ্চিত হই অনুসূয়াই কাঁদছে। প্রবল কষ্টেও আমার হাসি পায়। শেষ পর্যন্ত কান্না তবে পিছু ছাড়ছে না আমার।

আমি অনুসূয়ার ঘরে নক করি। অনুসূয়া খুলে দেয়। কোন ভূমিকা না করেই বলি, আমাকে না ফিরে যাবার পরামর্শ দিয়ে এসেছো! বলতে পারলে নিজেই হালকা হই যেনো,তাই শরীরে জমে থাকা অসহনীয় পুঁজের মতো যন্ত্রণা মিতুর কথা বলতে থাকি অনুসূয়াকে।
অফিসে মিতুকে কাঁদতে দেখে অসহায় ভেবেই ঘরে জায়গা দিয়েছিলাম আমি। একটা ঘর নিয়ে থাকতো। ঘরে টুকটাক সাহায্য করতো পারিবারিক সদস্যের মতোই। শিক্ষিত মেয়ে। আমার খুব কাছে চলে আসতে সময় নেয়নি মোটেই। আমিও সহজ করেই নিয়েছি।
কিন্তু যখন তখন আমার সামনে কাপড় চোপড় খুলে ফেলতো মেয়েটা। ওর সারা গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা। মুখ কালো করে মিতু একদিন বললো ওকে কিশোরী বয়সে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো বখাটেরা। রাতভর ওর শরীর নিয়ে ফুটবল খেলেছে এগারো জনের দল। পুরুষ জাতির প্রতি ভীষণ ঘৃণা ওর। বলার সময় ওর চোখেমুখে ফুটে উঠা জিঘাংসার তীব্রতা ওকে পেটানো ইস্পাতের প্রাণহীন ভাস্কর্য বানিয়ে দেয় যেন। আমার আরও মায়া হয় ওর জন্য। ওকে আরও জড়িয়ে রাখি। মাঝরাতে কান্না শুনি। প্রায়ই গিয়ে মমতা দিয়ে বুঝাই, যা ঘটেছে ভুলে যাও। জীবন জীবনের মতো উপভোগ করো।
একদিন রাতে এভাবেই ওর মাথায় সহমর্মিতার হাত রাখতেই হঠাৎ ও আমাকে জাপটে ধরলো। এমনভাবে যে আমি হতচকিত হয়ে গেলাম। আটকাতে পারিনি, আমি বলতে থাকি। অনুসূয়ার চোখের জল শুকিয়ে সেখানে চৈত্রের মরা নদীর সুতা। বিস্ময় আর কৌতুহলের তৃষ্ণা। জানতে চায়, এজন্য ঘর ছেড়ে এলে? ওর গলায় অপ্রস্তুত কাঁপুনি। সাবলেট থাকতে দিয়ে অনেক মেয়ের গল্পই হয়তো শুনেছে সে। কিন্তু কোনটাই আমার মতো নয়।
আমি বললাম, আমার হয়তো আসতে হতোনা যদি জিসানকে সব বলে না দিতাম। বন্ধুর মতো সব বৃত্তান্ত শুনে ওর আচরণ বন্ধুর মতো রইলো না। কথায় কথায় খোঁটা দিতো। অসহ্য হয়ে চলে এসেছি আমি।
এখন তবে কাঁদো কেন? অনুসূয়ার যৌক্তিক প্রশ্ন। নিজেকে খুলে উল্টেপাল্টে দেখি নিজেই, আসলে আমি সংসারী মেয়ে। এরকম জীবন আমি চাইনি। প্রবলভাবে অস্বীকার করতে চাইলেও এই কয়টা দিনের প্রতিটি মূহুর্ত আমার মনে হয়েছে আমার নিশ্চিন্ত নির্ভরতার আগের জীবনটাই ভালো ছিলো।
পাল্টা এবার আমি অনুসূয়াকে ধরি। আমাকে ফিরে যেতে বলো, তুমি কেন যাওনা?
আমি কই যাবো? ঋজুতা থেকে দৃঢ় হয়ে যায় ও, আমিতো কাজলকে বের করে দিয়েছি আমার বাসা থেকে। একদম অচেনা এক অনুসূয়াকে দেখি আমি, ভাঙে কিন্তু মচকায় না। বলতে থাকে, এই সাবলেট আমি শুরু করেছিলাম কাজলের চাকরি চলে যাওয়ার পর।বাড়তি একটু আয়ের জন্য। বেশ বড় অংকের টাকা পাঠাতে হয় ওর মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসায়। এখনো পাঠাই। অনুসূয়ার বলে যাওয়া বৃত্তান্তে আমি নতুন অনুসূয়াকে দেখি,একয়দিনে যাকে আমি চিনিনি।অনুসূয়া বলতে থাকে,সারাদিন অফিস করি আমি। কাজল সারাদিন বাসায়, সংগত কারণে পুরুষই সাবলেট দিতাম।
আমি কাজলকে ঘিরে নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে ঘরে পুরুষ রেখেছি অথচ তাদেরই একজনের সাথে সম্পর্ক হয়ে যায় আমার। কেনো কী এতোসব খুঁড়ে বের করিনি। কেমন জানি ভেসে যাই। আর যা হয়, হওয়া খুব স্বাভাবিক। কাজলের কাছে ধরাও পরে যাই একদিন। আমার টাকায় চলা সংসার। ইগো ছলকে উঠে। তুমুল ঝগড়ায় বের করে দেই ওকে। এখনো ও ফিরতে চায়,বলে চোখের জল গোপন করে অনুসূয়া।
তো আর সমস্যা কী? নিয়ে আসো। যোগ বিয়োগের মতো সরল গণিত কষে দেই আমি।
অনুসূয়া বিকেলের চেয়েও বেশি দৃঢ় এবার, এই অনুসূয়াকে দেখে কে বলবে ও কাঁদতে পারে! কিংবা একটু আগেই কাঁদছিল মিহি সুরে। এখন দৃষ্টিতে হেড মিস্ট্রেসের মতো অনমনীয়তা। তুমি জানো কাজল এখনো বেকার? অনুসূয়া জানা অথচ গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গটি আবার মনে করিয়ে দেয় আমাকে। আমি মাথা নাড়ি,আমি জানি। অনুসূয়ার কণ্ঠে আরও কঠোরতা। ও স্বাবলম্বী হলে আমাকে ক্ষমা করতো? ফিরে আসতে চাইতো?
জিসান আমাকে ডাকছে। আচ্ছা আমার ঘটনাটা কোন পুরুষকে নিয়ে হলে জিসান আমাকে আবার ওর সংসারে ডাকতো?
এক অভিন্ন সুরের দুইটা প্রশ্ন দুজনের মাঝে সেতু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এই সমাজ যে দুই মেয়েকে নষ্ট আখ্যা দেবে।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত