কষ্ট

 

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। এই জীবের কিছু বাহ্যিক ও আত্মিক কিছু বৈশিষ্ট্য আছে।মানুষ জন্মের পর থেকে মৃত্যু অবধি অনেক কিছুর সম্মুখীন হয়। মানুষের এই জীবনঅযাত্রা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্নরকম হয়। আমাদের জীবনে যেমন সুখ,কষ্ট,দুঃখ,ভালবাসা,আনন্দ,শান্তি,জরাজীর্ণতা ইত্যাদি থাকে।তেমনি আমদের নিজস্ব কিছু কৃষ্টি, কালচার আছে। কেউ গান শুনে আনন্দ পায়, কেউ কবিতা আবৃত্তি করে কেউবা আবার নৃত্য করে। কিন্তু মানুষের অধিকাংশ সংস্কৃতি চর্চাতেই দেখা যায় কষ্টের সংগীত,আবৃত্তি,গানের পরিমাণ বেশি এবং মানুষ তা শুনতে বেশি পছন্দ করে। কারণ আমরা দুঃখকে বয়ে নিয়ে বেড়াতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।এই দুনিয়ায় এমন কাউকে খুজে খুবই দুষ্কর যার কোনো দুঃখ নেই,কষ্ট নেই।মানুষ একে অপরকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিয়ে চলছে।সেটার না বুঝতে পেরে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে।পুজিবাদী রক্তচোষাদের থেকে কষ্ট পাচ্ছে সাধারণ জনতা। রক্তচুষে খাওয়ার ফলে তাদের শরীরে আবার বাসা বাধছে মরণব্যাধির ন্যায় নানাবিধ রোগ। জগতের নিয়ম এটাই একে অপরের থেকে কষ্ট পেতেই হবে।মানুষভেদে কষ্টের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
কোন বড়লোকের আদুরে দুলালী তার সম্ভান্ত্র বাবাকে বারংবার তাগদা দেয়ার পরেও মার্সেডিজ এর আপডেট ভার্সনটা কেন নিয়ে দিচ্ছে না !এটা নিয়ে তার আফসোসের সীমা নেই।
ঢাকা কলেজে পড়ুয়া এক ছেলে আড়ং থেকে একটা পাঞ্জাবি কিনতে গিয়ে টাকা স্বল্পতার কারনে নিজ কলেজের ফুটপাত থেকে একটা পাঞ্জাবি খরিদ করে।ছুটির দিনে তার বন্ধুরা সবাই ব্রান্ডের পাঞ্জাবি পরে ঘুরতে বের হবে এটা ভেবে তার কষ্টের সীমা নেই।

ফুটপাতের মানুষগুলোর কাছে সিগারেট বিক্রি করা রহিম চাচার দুঃখ একটাই এই ঊর্ধগতির বাজারে তার পরিবারকে আজ রাতে দুমুঠো ডাল-ভাত মুখে তুলে দিতে পারবো তো!
শহরের সবচেয়ে ধনী মানুষগুলোর কষ্ট হয় এটা ভেবে হার্টে যে রিং পরানো সেটা ঠিকঠাক কাজ করছে তো। কিছুদিন থেকে কেন জানি শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে।এই বুঝি সময় ঘনিয়ে এলো। মাদ্রাজের চিকিৎসায় হবে না এবার সিঙ্গাপুর যেতে হবে।
পেটের দায়ে দেহবন্টন করে দেয়া মেয়েটার যখন বাচ্চা প্রসব করে ডাস্টবিনের পাশে পরে থাকতে দেখা যায়। তখন আমাদের চেতনার দুঃখ হয়।পুরো সমাজ হুংকার দিয়ে উঠে ফেসবুকে দুয়েকদিন সহানুভূতিশীল স্টাটাস শেয়ার দেয়।
হাসপাতালে ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করা ছেলেটার দুঃখগুলো বোধহয় এরকম হয়।যদি অল্প কিছুদিনের জন্য হলেও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারতাম,বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজী করতে পারতাম,পুরা ঢাকা শহর রিক্সায় করে প্রেমিকার সাথে ঘুরতে পারতাম,রাস্তায় হাটতে হাটতে বন্ধুদের সাথে আকাশের তারা গুনতাম,রাত জেগে বাসায় ফিরে বাবা-মায়ের বকবকানি শুনতাম।ইশ!যদি পারতাম।

ফার্মগেটের ফুটপাতে আজন্ম অন্ধ চাচাকে একদিন আকাশের পানে তাকিয়ে কি যেন বিড়বিড় করতে দেখেছিলাম। তার কথাগুলো বোধহয় এরকমঃইশ!ঈশ্বর যদি আমারে একবার এই পৃথিবীর আলো দুচোখ ভরে দেখার সুযোগ করে দিতেন৷
ন্যাংড়া মানুষটা লাঠি ছাড়া চলতে পারে না এটা তার কষ্ট। বোবা মানুষটা কথা বলতে পারে না এটা তার কষ্ট। প্রত্যেককে প্রত্যেকের দিক থেকে আমরা কেউই ভাল নেই।আসলে আমরা দুঃখ পুষে রাখা মানুষ। আমাদের প্রতিনিয়ত এত শত সুখের মুহূর্ত আসে সেগুলো আমরা মনে রাখি না বা মনে রাখতে চাই না, বোধহয় দুঃখ আমাদের সুখগুলো মনে রাখতে দেয় না।

এই জগৎ সংসারে একমাত্র দুঃখবিহীন মানুষ হচ্ছে পাগলেরা। কি দারুণ;স্বাধীন জীবন যাপন করছে ওরা!যখন যেখানে মন চাচ্চগে সেখানেই যাচ্ছে একজায়গা থেকে অন্যত্রে,এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। ওরা চাইলে এক দেশ থেকে অন্য দেশেও খুব সাবলীলভাবে চলে যেতে পারবে।রাস্তার অলিতে গলিতে,ফুটওভার ব্রিজে তপ্ত দুপুরের রোদে,ঝুম বৃষ্টিতে কিংবা সাইক্লোনের ঝড়ের দিনে কি নিদারুণ ভাবে কুকুরের সাথে ওদের শুয়ে থাকতে দেখা যায়।ওদের কোন জ্বর বাধার ভয় নেই,শ্বাসকষ্টের চিন্তা নেই,জলাতঙ্ক হওয়ার বিন্দু মাত্র দুশ্চিন্তা নেই।আচ্ছা!পাগলেরা কি কষ্ট পায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য। ওরা কি সত্যি ভাবে যে স্বাভাবিক মানুষের জীবনে ফিরে আসলে ওদের সব কষ্ট লাঘব হবে৷ ওদেরকে কি ঈশ্বর এজন্যই স্বাভাবিক সুস্থতায় ফিরিয়ে দেয় না! নাকি ওরা শান্তির ভং ধরে ঘুরে বেড়ায়।

পাগলের ন্যায় এই দুঃখবোধ, কষ্ট,জরাজীর্ণতা থেকে মুক্তি প্রয়োজন আমার, আপনার,সকলের তথা পুরো মানবজাতির৷

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত