সংঘাত

[ষোড়শ শতাব্দিতে বাংলায় ১২ জন ভূঁইয়া শাসন করতো। সে ইতিহাস আমরা প্রায় সকল বই পড়া বাংগালি জানি। সে সময় দিল্লীর মসনদে আসিন ছিলো সম্রাট আকবর। আমার এই অনু গল্প সেই সময়কার কোন ইতিহাস বলার জন্য নয়, ইতিহাস আশ্রয় করে গল্পও নয় … ইতিহাসকে সূচনা ধরে বর্তমানে একখানা স্যাটায়ার খন্ড নির্মান উদ্দেশ্য। ]

মনে করি ১২ ভূঁইয়ার সেই আমলে প্রতিবেশি দুই ভূঁইয়ার মধ্যে একবার এক বিশেষ স্থানের দখল নিয়ে শুরু হলো বিতন্ডা। বিতন্ডা থেকে নিয়মিত ক্ষুদ্রাকার লাঠালাঠি ….
এই যুদ্ধ সংগঠিত হবার স্থানে পাশাপাশি, গলাগলি করে গড়ে ওঠা দুটো গ্রাম ছিলো – পঞ্চতন্ত্র গ্রাম আর শনিদশা গ্রাম।
স্বল্প সময়ের সেই যুদ্ধে পঞ্চতন্ত্র গ্রাম আর শনিদশা গ্রাম ছিলো একে অপরের বিপরীত অবস্থানে । পঞ্চতন্ত্র গ্রাম পক্ষ নিয়েছিলো ‘ ক’ নামক ভূঁইয়ার আর অন্যগ্রামটি ‘ খ’ ভূঁইয়ার।

যুদ্ধে অনেক ক্ষয় ক্ষতি, জমির ফসল পোড়ানো , পুকুরের মাছ মারা এসব কান্ড , নিয়মিত আহত হচ্ছিলো দু গ্রুপের লোকজন ।
শেষের দিকে দুই ভূঁইয়ার মাঝে সমঝোতা হওয়ার একটা সময়ও ঘনিয়ে আসছিলো কিন্তু তার আগেই সম্রাটের থেকে একদল শক্তিশালী বাহিনী এসে দুইদলকে একসাথে কচুকাটা করে তারপর পরিস্থিতি শান্ত করলো এবং বিশেষ জায়গায় আপাতত সম্রাটের লোকজন নিজেরা দখলে রাখলো।
ভূইয়াদের গোচর না করে ঐ দুই গ্রামের কোন এক গ্রাম বা দুইগ্রামেরই মিলিত হয়তো কোন একটা বিচ্ছিন্ন গ্রুপ বিস্তারিত জানিয়ে সম্রাটের লোকের কাছে দূত পাঠিয়েছিলো ।
কিন্তু অদ্যবধি সেই কাজটি কাদের ছিলো সে ইতিহাস আজ চারশ বছর পরেও অজানাই রয়ে গেছে…
কিন্তু তা হলে কি হবে এক গ্রাম তো অন্যগ্রামের দোষারোপ করতে ৪০০ বছরের ক্ষান্ত হয়নি..।
কিভাব হবে? সেই সে সব আক্রমনে দু গ্রামেরই ডজন ডজন পরিবার পুরুষ শূন্য হয়ে গিয়েছিলো।
আর তাই দু গ্রামের কলহ বিবাদ জমিজমার উত্তরাধিকারের মতই জেনারেশন থেকে জেনারেশন স্থানান্তরিত হয়ে আসছে।
দু গ্রাম বর্তমানে একই সংসদীয় আসনের অধীন, দুই গ্রামের ই পক্ষের লোক যে সংসদে যায়নি সব সময় তা ঘটেনি, কিন্তু বর্তমানে যে সাংসদ তিনি পঞতন্ত্র গ্রাম ঘেষা।
স্বভাবতই শনিরদশা গ্রাম এখন কোনঠাসা।

দু গ্রাম গত চারশ বছরে এত এত বিষয়ে মারামারি করেছে যে এখন আর নতুন কোন বিষয়ে তর্ক বা বিবাদ শুরু হতে গেলেই আইন শৃংখলা বাহিনী থামাতে আসে-সমাধানের পথ বাতলে দেয়। এই যেমন- শনির দশা গ্রামে প্রথম যখন মোবাইল টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু হলো -পঞ্চতন্ত্র গ্রামে তো তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো । ওদের গ্রামে টাওয়ার বসবে-নাএ হতে পারে না ; দুই গ্রামের কমন এক হাটে এই বিষয়ে একদিন দু হালি মানুষের একে অন্যরে নিচু দেখানোর পায়তারা শুরু হলো।
সে কথা যখন আইন শৃংখলা বাহিনীর কানে গেলো- তারা টেলিকম কোম্পানীর প্রতিনিধি সহযোগে একটি যৌথ সম্মেলন করে বললো, শনির দশা গ্রামের যে প্রান্তে টাওয়ার বসবে সেখান থেকে পঞ্চতন্ত্র গ্রামই ৭৫ ভাগ কভারেজ পাবে আর শনির দশা গ্রাম পাবে মাত্র ২৫ কারণ শনির দশা গ্রামের অন্যপ্রান্তে যে টাওয়ার আছে তা এই গ্রাম কভার করে।
শনির দশা গ্রামে যে জায়গা পছন্দ করা হয়েছে সেখানে বসালে ফসলের জমি ক্ষতি হবে না, কিন্তু পঞ্চতন্ত্র গ্রামে তেমন জমি পাওয়া যায় নি…
আসলে একটা উইন উইন সিচুয়েশন আর কি। এতে লাভ হয়েছিলো।

আধুনিক কোন সমস্যা নিয়ে ইদানিং বড় আকারে লাঠালাঠি একটু দূরহ হয়ে গেছে।
কিন্তু সম্প্রতি পঞতন্ত্র গ্রামের মোড়ল নিজেদের কাছের এমপি থাকায় সরকারীভাবে সেই চারশ বছর আগের বিশেষ দিনটিকে শোকের দিন ঘোষনা করে একটি মনুমেন্ট বানানোর ব্যবস্থা করেছে ।
এতে করে শনির দশা গ্রাম গেছে ভীষণ ক্ষেপে- তাদের কথা হলো সম্রাটের কাছে দূত পাঠিয়েছিলো তাদের জানা ইতিহাস মতে পঞ্চতন্ত্র গ্রামের লোক। তাই এইটা পঞতন্ত্রের শোক দিবস না এটা শনির দশা গ্রামের শোক দিবস। তারা এই মর্মে সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করলো।
বিষয়টি নিয়ে রোজ রোজ বাক বিতন্ডা হতেই থাকলো, কখনও হাতাহাতিও…
পুলিশের লোকাল সেই অফিসার যিনি টাওয়ার নির্মাণ গন্ডগল থামানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি দুই গ্রামের আসন্ন লাঠালাঠির অশনি সংকেত নিয়ে অধনস্তকে বললেন –যখন চলমান পরিস্থিতি এবং চলমান আধুনিকতা থেকে মারামারির সুযোগ কমে আসে, তখন চিরশত্রুরা সেই পুরাতন সংঘাতের ইস্যুকেই পুন: টেনে নিয়ে আসে কারণ তাতে আধুনিকমনা নিরপেক্ষগণ সহজে সমাধান খুঁজে দিতে পারে না…

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত