এক ছিলো রাজকন্যা

হয়েছিল কি, একবার এক রাজকন্যা তার বাবাকে বলে বসলো, ‘আমি তোমাকে লবণের মত ভালোবাসি।’ এমন কথা শুনে রাজা রেগে গিয়ে রাজকন্যাকে বনবাসে দিয়ে দিলো। গভীর বনে একা একা বাস করার কিছু বিপদ তো আছেই। তার উপর যদি রাজকন্যা সুন্দরী হয়।আমাদের এই রাজকন্যাও বিপদে পড়ে গেলো। এক ভয়ানক রাক্ষস এসে তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে বন্দী করে রাখলো রাক্ষসপুরীতে। রাজকন্যা প্রথমে ভয় পেলেও অল্পদিনেই বুঝতে পারলো, রাক্ষস হলেও মনটা তার বড্ড নরম। আর সে রাজকন্যাকে ভীষণ ভালোবাসে। রাক্ষসের ভালোবাসায় রাজকন্যার নিজেকে একটু-ও বন্দী বন্দী মনে হলো না। এখানে কেউ তাকে সোনার কাঠি রূপার কাঠির জাদু দিয়ে-ও ঘুম পাড়িয়ে রাখে নি। উলটো নিজের ইচ্ছেমত পুরো রাক্ষসপুরীতে ঘুরে বেড়ানো যায়। রাক্ষস-ও তাকে নানা রকম লেটেস্ট ডিভাইস,কসমেটিক্স আর সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় কিনে দেয়। বনবাসের চেয়ে এই ভালো।
একদিন রাক্ষসপুরীর কুয়ার পাড়ে বসে রাজকন্যা আবোলতাবোল ভাবছিল। তার হাতে ছিল রাক্ষসের দেওয়া উপহার, একটা সেলফি তোলার যন্ত্র। হঠাৎ আনমনে সেই যন্ত্রটা কুয়ার পানিতে পড়ে গেল। যন্ত্র হারানোর দু:খে, সেলফি তুলতে না পারার শোকে রাজকন্যা কাঁদতে লাগলো। আহা, রাজকন্যার চোখের জল যেন মুক্তোর বিন্দু। সেই কুয়ায় বাস করতো একটা ব্যাঙ। রাজকন্যার দু:খ দেখে সেই ব্যাঙ সেল্ফি ডিভাইসটা উদ্ধার করে দিলো। রাজকন্যা দু:খ ভুলে হাসলো, আহা হাসিতে যেন মুক্তা ঝরে।
— ধন্যবাদ ব্যাঙ!
এই ধন্যবাদ দেওয়াই কাল হলো রাজকন্যার। সেই ব্যাঙ আর তার পিছু ছাড়ে না। ঘরে, বিছানায়, সবগুলো ইলেকট্রনিক ডিভাইস, সোশ্যাল মিডিয়ার ইনবক্সে, খাবার টেবিল, বাথটাব, রাজকন্যা যেখানে যায় সেখানেই সেই ব্যাঙ লাফালাফি করে। ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর করে। রাজকন্যার কান ঝালাপালা, মেজাজ খারাপ। তবু সেই ব্যাঙ যায় না।
ব্যাঙ হলেও ওটা কিন্তু অনেক জ্ঞানী ছিল। রাজকন্যাকে সে অনেক ভাল ভাল পরামর্শ দিত। রাজকন্যার মন খারাপ হলে মজার মজার গল্প শোনাত। একদিন হঠাৎ সেই ব্যাঙ বললো, তোমার আর ডালিমকুমারের অপেক্ষায় থাকার দরকার নেই।।
রাজকন্যা ভীষণ বিরক্ত হল।
— তোমাকে কে বলল আমি ডালিমকুমারের অপেক্ষায় আছি? ওকে তো আমি চিনিই না। তাছাড়া রাক্ষসকে নিয়েই আমি খুশি।
— ডালিমকুমার এসেই কিন্তু প্রথমে রাক্ষসের প্রাণভোমরাকে মেরে ফেলবে।
— রাক্ষসের প্রাণভোমরা হচ্ছি আমি। মারলে আগে আমাকে মারতে হবে। তারপর রাক্ষস। তুমি সর এখন।
রাজকন্যা তার হাতের কমুনিকেটিং ডিভাইসে মন দেয়। এর মাধ্যমে তার পরিচয় হয় দূর গাঁয়ের এক রাখাল ছেলের সংগে। ছেলেটি মাঠে গরু চরায় আর দারুণ বাঁশি বাজায়। লাইভে ছেলেটির বাঁশির সুর নিয়মিত শোনে রাজকন্যা। তখন তার ইচ্ছে করে সব ছেড়েছুঁড়ে রাখাল ছেলের হাত ধরে দূরে কোথাও চলে যেতে। কিন্তু তা তো আর সম্ভব না। এই প্রথম নিজেকে তার বন্দী বন্দী মনে হলো।
দূরে বসে ব্যাঙ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। রাজকন্যার মনোযোগ পেলে, রাজকন্যার সামান্য স্পর্শ পেলে সেও হয়ে উঠতে পারতো অনিন্দ্য সুন্দর এক রাজকুমার, সেই আগের মত, আগে যেমন ছিল সে। ভাগ্যের ফেরে সে আজ এক অবহেলিত ঘৃণ্য ব্যাঙ। তার দিকে রাজকন্যার মন নেই। রাজকন্যার মনের তল বোঝাও মুশকিল।।
কমুনিকেটিং ডিভাইসটা রেখে রাজকন্যা এবার তার স্মার্ট মিররের সামনে এসে বসে। স্মার্ট মিরর রাজকন্যার দুটো ছবি তুলে দেয়। কিন্তু সেদিকে রাজকন্যার মন নেই।
–কী ব্যাপার? আজ তোমার মনটা মনে হচ্ছে একটু বেভুলো।
–হুম।
–কী হয়েছে?
–আয়না, তুমি তো সব জানো। তুমিই বলো না, কী হয়েছে আমার!
— ৩ ন্যানো সেকেন্ড প্লিজ। আমি আপডেট নিচ্ছি।
–হলো আপডেট নেওয়া?
–হুম।
–এবার বলো, আমার কী হয়েছে?
–হবার মত কিছু তো খুঁজে পাচ্ছি না। আমি দেখতে পাচ্ছি, পুরো ইউনিভার্সে তুমিই সবচেয়ে সুন্দরী।
–তুমি একটা ঘোড়ার ডিমের স্মার্ট মিরর! ওসব মুখস্থ তোতা পাখির কথা বন্ধ করো তো!
— দাঁড়াও, তোমার আরো দুটো ছবি তুলে দিচ্ছি। তোমার মন খারাপের জন্য চোখের নিচে সামান্য কালি পড়েছে। আমি এডিট করে দেবো।
— লাগবে না আমার এডিট করা ছবি।
–অবশ্য তুমি ন্যাচারালিই সুন্দর।
— অহ, চুপ কর।
রাজকন্যা স্মার্ট মিররটা অফ করে দিয়ে বসলো জানালার ধারে। বহু দূরে চোখ যায়। কিন্তু সেই দূরের মাঝে রয়েছে রাক্ষসপুরীর চারদিক ঘেরা উঁচু পাঁচিল। এই পাঁচিলের ওপারেই রাখাল ছেলের গ্রাম। অথচ পাঁচিল পার হবার উপায় রাজকন্যার জানা নেই। দূর থেকে উড়ে উড়ে রাক্ষস তার পুরীতে ফিরে আসছে, রাজকন্যা দেখতে পেলো। নিশ্চয়ই আজ-ও রাক্ষস তার জন্য কোন দামী ও দূর্লভ উপহার নিয়ে এসেছে। তবুও আজ তার মন ভালো হলো না। সে জানালা থেকে সরে ঘরের ভেতর চলে গেলো।রাক্ষস উড়ে এসে সেই জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকলো। রাজকন্যার কাছে গিয়েও তার মুখে অন্যান্য দিনের মত হাসি দেখতে পেলো না। আর তাতেই রাগ উঠে গেল রাক্ষসের।
— সমস্যা কী তোমার?আজ কয়দিন ধরে দেখছি তুমি মুখ ভার করে রাখছো?
–বাহ! আমার কী মন খারাপ হতে পারে না?
–কেন তোমার মন খারাপ হবে? কী দিই নি তোমাকে যে, সব সময় এত মন ভার করে ঘুরে বেড়াবে?
— আশ্চর্য, তুমি সব কিছু এত হিসেব করছো কেন? তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি আমাকে কিনে ফেলেছো!
–দেখো, তর্ক করা আমি পছন্দ করি না!
–সব কি তোমার ইচ্ছেমতই হবে, আমার কি নিজের কোন ইচ্ছে নেই?
— না, তুমি আমার ইচ্ছেতে চলবে, আমার ইচ্ছেতে হাসবে, আমার ইচ্ছেতে কথা বলবে। এর বাইরে আমি আর কিছু শুনতে চাই না।
— আমি তোমাকে চিনতে ভুল করেছিলাম। তুমি আসলেই আপাদমস্তক একটা রাক্ষস!
এরপর রাক্ষস আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলো না। রাজকন্যাকে জোড় করে ধরে নিয়ে গিয়ে সোনার পালংকে শুইয়ে দিলো। আর শিয়রে সোনার কাঠি, পায়ের কাছে রূপার কাঠি রেখে রাজকন্যার ঘুমকে তালা বন্দী করে আবার উড়ে চলে গেলো।
সেই ব্যাঙ কিন্তু রাজকন্যার পালংকের নিচে বসে সব ঘটনাই দেখেছে। কিন্তু তার কিছু করার নেই। সে কী করতে পারে? সামান্য একটা ব্যাঙ সে! ঐ সামান্য সোনা-রূপার কাঠিগুলো এলোমেলো করে দেবার ক্ষমতা পর্যন্ত তার নেই। রাজকন্যার এমন দূর্দশায় সে কিছুই করতে পারছে না, ব্যাপারটি তাকে আহত করে। হঠাৎ জানালার দিকে চোখ পড়ে তার। দেখতে পায় পংখিরাজ ঘোড়ায় চড়ে এক সুন্দর রাজপুত্র আসছে। এ যে ডালিম কুমার দেখেই ব্যাঙ চিনতে পারলো। এইতো কিছুদিন আগেই রয়াল সার্চ ইঞ্জিনে এই রাজকুমারের জন্মদিনে ডুডল করা হয়েছিল। জন্মদিন শেষে ডালিমকুমার নিখোঁজ ও বন্দী রাজকন্যা বিষয়ক তথ্য পেয়ে তাকে খুঁজতে বের হয়ে যায়। স্যাটেলাইটের সংকেত থেকে ম্যাপ দেখে সার্চ করে করে সে ঠিকই এখানে পৌঁছে গেছে!
রাজকন্যার ঘরে এসে প্রবেশ করে ডালিমকুমার । ঘুমন্ত রাজকন্যাকে দেখে ডালিমের মন আবেগাক্রান্ত হয়ে উঠে। সোনার কাঠি আর রূপার কাঠিগুলো চোখে পড়তেই সে ওগুলো উলোট পালোট করে দেয়। আর তাতেই ঘুম ভেংগে জেগে উঠে আমাদের রাজকন্যা। ঘুমন্ত রাজকন্যার চেয়ে জাগ্রত রাজকন্যা বেশি সুন্দর, এরকমই মনে হলো ডালিমকুমারের।
— হাই, আমি ডালিমকুমার।
— হাই, তুমি আসবে, এটা আমি আগে থেকেই জানতাম।
— তুমি এটা কোত্থেকে জানলে? এরকম তো কথা ছিলো না?
— সব কি তোমার ইচ্ছে মত হবে নাকি?
ডালিম জবাবে কিছু বলার আগেই ঘরে এসে প্রবেশ করে রাক্ষস। ডালিমকে দেখেই রাগে ফেটে পড়ে সে।
রাক্ষসঃ হাঁও মাঁও খাঁও, মানুষের গন্ধ পাঁও!
ডালিমঃ তোর-ও দিন শেষ হয়ে এসেছে রাক্ষস!
শুরু হলো দুজনের তলোয়ারবাজি। দুজনের ভয়ংকর লড়াইয়ের মাঝে এসে দাঁড়ায় রাজকন্যা, ‘ বন্ধ করো এসব, প্লিজ! আমার জন্যই তো এত লড়াই, আমি বলছি এসব বন্ধ করতে।‘’
ডালিমঃ এসব তুমি কী বলছো? আমি তোমাকে রাক্ষসের হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে এসেছি।
রাজকন্যাঃ আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে তুমি কী করবে? এই রাক্ষসের মতই তো বন্দি করে রাখবে। তারপর আমাকে তোমার ইচ্ছেয় হাসতে হবে, গাইতে হবে, কথা বলতে হবে, এই তো? আর আমাকে এত অবলা ভাবো কেন যে, আমি নিজে নিজেকে উদ্ধার করতে পারবো না?
রাজকন্যা এরপর রাক্ষসপুরীর প্রধান ফটক খুলে থেকে বের হয়ে যায়। আর তার পিছু পিছু বের হয়ে যায় ব্যাঙ। লড়াই ভুলে রাজকন্যার চলে যাওয়া হা করে তাকিয়ে দেখতে থাকে রাক্ষস আর ডালিমকুমার।
রাখাল ছেলের গ্রামে পৌঁছাতে মোটেও বেগ পেতে হয় নি রাজকন্যাকে। দূরত্ব বেশি হলেও পথ একদম সোজা। আর রাজকন্যা আসবে, এতো আগে থেকেই রাখালের জানা ছিল। তাই এগিয়ে গিয়ে নিয়ে আসে সে। রাখাল ছেলেকে কাছে পেয়ে রাজকন্যার আনন্দ আর ধরে না। সেই আনন্দকে সেলিব্রেট করার জন্য রাখাল বাঁশি বাজিয়ে শোনায়। এত মধুর সেই বাঁশির সুর! কিন্তু বাঁশি বাজিয়ে আর কত? খিদে পায় দুজনেরই। কিন্তু রাখাল তো গরিব। সব সময় ঘরে খাবার থাকে না। তাই খাবারের জন্য রাজকন্যাকেও মাঠে গিয়ে গরু চরাতে হয়, ধানের ক্ষেত থেকে ফসল কেটে এনে মাড়াই করতে হয়, গরুকে খাবার দিতে হয়, আরো কত কী! রাজকন্যার আরাম প্রিয় শরীর ।এত পরিশ্রম সে কোনদিনই করে নি। তাই বিরক্ত হয়ে একদিন সে বলে বসে, ‘রাখাল, তুমি কিন্তু আমাকে দিয়ে অনেক কাজ করাচ্ছো। এটা ঠিক নয়।‘
—কাজ তো করতেই হবে। নাহলে আমরা খেয়ে পরে বাঁচবো কিভাবে?
—তাই বলে আমি কাজ করবো?
–নিজের কাজ নিজে করতে হয়। তোমার তো অভ্যাস নেই, তাই প্রথম প্রথম এমন লাগছে, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
–অসম্ভব, আমি এত কাজ করতে পারবো না।
–ছেলেমানুষি কথা তোমার।
— আসলে তোমরা কেউ আমাকে ভালোবাসো না। না রাক্ষস, না ডালিম, না তুমি! ওরা আমাকে ভালো বাসায় বন্দি করে রাখতে চায়।আর তুমি আমাকে দিয়ে শুধু কাজ করাতে চাও। তোমাদের ভালবাসায় ঘাটতি আছে।
রাজকন্যা কাঁদতে শুরু করে।
‘রাজকন্যা, তোমাকে যেমন আরাম আয়েশে রাখা দরকার সেভাবে রাখার ক্ষমতা আমার নেই। আর তাছাড়া আমার প্রতি তোমার ভালবাসা এক ধরনের মোহ। তুমি দূর থেকে কমুনেটিং ডিভাইসের মাধ্যমে আমাকে যখন দেখেছিলে, আমার বাঁশির সুর আর গরু চরানোকে খুব ভালো লেগেছিল। কিন্তু ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে বাস্তব জীবনে এসে তুমি আমাকে, আমার কাজকে আর ভালোবাসতে পারছো না। আর সবার মত তোমার ভালোবাসাতেও ঘাটতি রয়েছে, রাজকন্যা।‘’
রাজকন্যা অবাক হয়ে রাখালের কথাগুলো শোনে। হয়ত রাখালের কথাই ঠিক। তাহলে এখন রাজকন্যা কী করতে পারে? এই রাখালি জীবন-ও তার পোষাচ্ছে না। শেষে রাখালের কাছে ক্ষমা চাইলো। রাখাল হাসি মুখে জানালো, রাজকন্যা তার সাথে এমন কোন কিছুই করে নি যে ক্ষমা চাইতে হবে।
রাজকন্যা এরপর রাখালের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। কোথায় যাবে তা অবশ্য জানে না। রাজকন্যার পিছু পিছু সেই ব্যাঙ কিন্তু ঠিকই চলছে। এতদিন রাখালের ঘরের কোনে গর্তের ভেতরে লুকিয়ে ছিল। আজ বেরিয়ে এসেছে।
পথ চলতে চলতে রাজকন্যা ব্যাঙর পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়ে পিছনে তাকায়। ব্যাঙকে দেখে খানিকটা অবাক-ও হয়।
–ব্যাঙ তুমি?
— হ্যাঁ, তুমি তো রাস্তা চেনো না, তাই রাস্তা চেনাতে এলাম। এই বনের সব রাস্তা আমার চেনা।
— হুম, আচ্ছা, কোনদিকে যাবো বলো তো?
–বলবো তবে, এক শর্তে।
–কী শর্ত?
–আমাকে চুমু খেতে হবে।
— অসভ্য, শয়তান! আমার মত সুন্দরী মেয়েকে এভাবে একা পেয়েই শয়তানি চিন্তা ভর করেছে তোমার মাথায়!
— না, না, রাজকন্যা। তুমি ভুল বুঝো না। আমিও একজন রাজা। তুমি যদি আমাকে চুমু খাও, তাহলে আমি আবার আগের মত সুন্দর হয়ে যাবো। তারপর তোমাকে বনের পথ খুঁজে দিতে পারবো।
রাজকন্যা ভাবলো, ‘খারাপ কী? আমার একটা চুমুতে যদি কেউ ব্যাঙ থেকে রাজা হয়ে যায়, তাতে তো একজনের উপকারই হয়।‘
রাজকন্যা এবার ব্যাঙের কথায় রাজি হয়ে চুমু খেল।
কিন্তু একি! ব্যাঙ তো ব্যাঙ-ই রয়ে গেলো। উলটো রাজকন্যা দেখে সে নিজেই হয়ে গেছে একটা ব্যাঙ!
— মিথ্যুক! তুমি বলেছিলে, তুমি রাজা হয়ে যাবে!
– ঠিকই বলেছি, আমি তো রাজা-ই। তবে আমি বিশাল এই ব্যাঙ রাজ্যের রাজা। আর তুমি হবে আমার রাণী!
রাজকন্যা তাকিয়ে দেখে তার চারপাশে অসংখ্য ব্যাঙ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর করছে তাদেরকে বরণ করে নিতে। নাহ, রাজকন্যা তবুও যাবে না। এত মিথ্যুক এই ব্যাঙটা! রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়ে দেখে, বলার বদলে সে-ও শুধু ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর করা শুরু করেছে। তারপর, কারণ ছাড়াই দিলো লম্বা একটা লাফ।
রাজকন্যা একটা লাফ দিলো। ব্যাঙ রাজা-ও লাফ দিলো।ব্যাঙ রাজাকে দেখতে আগের মত মোটেও বদখত লাগছে না। বরং অনেক ভালো লাগছে। একজন রাজা যেমন হয়, ঠিক তেমনি দেখতে শুনতে আর চাল চলন। খুশিতে রাজকন্যা আরেকটা লাফ দিলো। রাজকন্যা লক্ষ্য করলো, লাফাতে তার খুব ভালো লাগছে। নিজেকে খুব স্বাধীন স্বাধীন মনে হচ্ছে। এরকম স্বাধীন তার আগে কখনো লাগে নি।
পরিশিষ্টঃ
লাফাতে লাফাতে একসময় রাজকন্যা ও ব্যাঙ রাজা দুজনেই ক্লান্ত হয়ে যায়। লাঞ্চ টাইম হয়ে যাওয়ায় দুজন খাবার খেতে বসে। কিন্তু ইয়াক থু, এসব কি? না না, এসব পোকা মাকড় রাজকন্যা খেতে পারবে না, যতই সে এখন ব্যাঙ হোক।
ব্যাঙ রাজা বললো, ব্যাঙ হয়েও তুমি এসব খেতে চাও না! দেখো গিয়ে, ওদিকে মানুষ হয়েও বেয়ার গ্রিলস কী করছে?
জবাবে রাজকন্যা বললো, যদি পোকামাকড় খেয়েই বাঁচতে হয় তবে ব্যাঙ হয়ে কেন? বেয়ার গ্রিলসের বউ হয়েই খাবো। কোথায় বেয়ার গ্রিলস? আমি ওর কাছে যাবোওওওওওও…

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত