ব্যাক বেঞ্চ

ব্যাক বেঞ্চ

ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস শুরুর প্রথম দিনেই ক্লাসে যেতে আমি দেরি করে ফেলেছিলাম। ক্লাস শুরু হয়ে গেলে সামনের দরজা দিয়ে রুমে ঢোকার নিয়ম ছিল না । তাই আমি পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে ব্যাক বেঞ্চে যেয়ে বসে পড়ি। ঐ ব্যাক বেঞ্চে বসতে গিয়ে দেখি আরও একটি মেয়ে বসে আছে।

ক্লাস শেষ হলে করিডোরে এসে দাঁড়াই। পাশে বসা ঐ মেয়েটি অনেকটা কাছাকাছি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। দুজনেই চুপচাপ। কোনো কথা নেই। তারপর প্রথম কথা আমিই বলেছিলাম ওকে — তোমার নাম কী?

— মরিয়ম।
— কোথায় থেকে এসেছ?
— বানরীপাড়া, বরিশাল ।

তারপর এককথা, দু’কথা। তারপর দিনকয়েকের মধ্যে এই মেয়েটিই আমার বন্ধু হয়ে গেল।

ক্লাসে আমরা ষাট জনের মতো ছেলেমেয়ে ছিলাম। তার ভিতর অর্ধেক ছিল মেয়ে। সব মেয়েদের ভিতর এই মেয়েটি ছিল সবচেয়ে নিরীহ ও সাধারণ । অন্যসব মেয়েরা ছিল তুলনামূলকভাবে আধুনিক। মরিয়ম ছিল গ্রাম থেকে আসা অতি সাধারণ একটি মেয়ে। আর এই মেয়েটি আমার বন্ধু হলো।

মেয়েটিকে ক্লাসের অন্যসব ছেলেমেয়েরা খুব একটা পাত্তা দিত না। সবাই কেমন অবজ্ঞা করত। মেয়েটি ঠিকমতো কথাও বলতে পারত না। কথায় গ্রাম্য টান চলে আসত। চালচলন ছিল সাদামাটা। কোনো রূপসজ্জা করত না। একদম নিরাভরণ ছিল। আমি পর্যবেক্ষণ করেছি সবমিলিয়ে ওর দুই তিনটে সালোয়ার কামিজ ছিল।

মেয়েটির সাথে কথা বলতে বলতে এবং ওর সাথে মিশতে মিশতে ওকে ভালো লেগে যায়। ওর ভিতর লুকিয়ে থাকা একটা অনন্য মাধুর্য রূপ ছিল। যা আমি আমার চোখে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম।

মরিয়মের গায়ের রং ছিল শ্যামলা ধরণের গৌরীয়। চুল ছিল কালো। সবসময় সাধারণ খোপা করে বেঁধে রাখত। প্রায়ই ওর চুল থেকে সুগন্ধি তেলের গন্ধ পেতাম। খুব একটা দামি তেল নয়। ওর চোখদুটো ছিল টানাটানা। অন্য মেয়েরা যেখানে আইব্রাউ করত মাসকারা লাগাত। মরিয়ম তা করত না। চোখের পাতার পালকগুলো ছিল ঘন। ঠোঁট ছিল নজরকাড়া কিন্তু লিপস্টিক দিয়ে তা রাঙিয়ে রাখত না। ওর ত্বক ছিল কোমল ও মসৃণ। শরীরের ভাজ ছিল সেতারের তারের মতো টানটান। সুডৌল শরীর সৌষ্ঠব। লম্বা পা। কোথাও বাড়তি কোনো মেদ নেই । গ্রামের একটি মেয়ে যে এমন রূপশ্রী হয়, তা সাধারণভাবে বোঝা যেত না।

প্রথম দিনের মতো আমরা দুজন বেশির ভাগ সময় ব্যাক বেঞ্চেই বসতাম। ক্লাস শেষ হলে ঘুরেফিরে সেই আমরা দুজন। সেমিনার কক্ষে কিংবা লাইব্রেরিতে যেয়ে পড়াশোনা করতাম, টিফিনের সময় টিফিন খাওয়া সব একসাথেই। এইরকম একসাথে চলতে চলতে আমরা দুজন সম্পর্কে জড়িয়ে যাই।

একদিনের কথা। ইউনিভার্সিটিতে ঐদিন হঠাৎ করেই একটি ছাত্র সংগঠন ধর্মঘট ডেকেছে। কোনও ক্লাস হবে না। মরিয়ম বলছিল – কী করব থেকে? বাসায় চলে যাই।
ওকে বললাম – চলো কোথাও থেকে ঘুরে আসি।
— কোথায় যাবে?
— কোনও নদীর পাড়ে, কিংবা শালবনে । তোমার যেখানে যেতে মন চায়, সেখানেই চলো।

— অনেকদিন ধরে সন্ধ্যা নদী দেখা হয় না। খুব মনে পড়ে আমাদের ঐ নদীর কথা। জলের ধ্বনি শুনতে ইচ্ছা করছে খুব , জলের ঢেউও দেখতে ইচ্ছে করছে। চলো, কোনও নদীর পাড়ে চলে যাই ।

ওকে বললাম — তাহলে চলো, বুড়ীগঙ্গার তীরে।
— আচ্ছা।

চানখার পুলের কাছে থেকে আমরা একটি রিকশায় উঠি। রিকশার হুডি ফেলে কাটাসুর আর ফরিদাবাদের সরু গলির রাস্তা পেরিয়ে চলে যাই বুড়িগঙ্গার তীরে। নদীর কূল ছিল তখন জনারণ্য। কোথাও নিরিবিলি একটুও বসার জায়গা নেই। সারা নদী জুড়ে নৌকা আর লঞ্চ। লঞ্চের ভেঁপু’র শব্দে জলের ধ্বনি আর শোনা হলো না। আমরা ফিরে চলে আসি ওয়ারীর বলধা গার্ডেনে।

গার্ডেনের গেট দিয়ে ঢুকে সাইকীতে চলে যাই। সাইকীতে আছে নীল, লাল, সাদা, হলুদ, জাতের শাপলায় ভরা অনেক গুলো শাপলা হাউজ, বিরল প্রজাতির দেশী বিদেশী ক্যাকটাস, অর্কিড, এনথুরিয়াম, ভূজ্জ পত্র গাছ, বিচিত্র বকুল, আমাজান লিলি ও সুরংগ সহ একটি ছায়াতর ঘর। আমরা গিয়ে ঐ ছায়াতর ঘরটিতে বসি। তখন ছিল আসন্ন দুপুর। চারদিকে থৈথৈ নীরবতা। অজানা অচেনা সব ফুলের গন্ধ ভেসে আসছিল!
মরিয়ম বলছিল এত অদ্ভুত সুন্দর এই জায়গা! এত ছায়াময়! এত ফুল চারদিকে! এত ফুল ফুটে আছে! আমার কী যে ভালো লাগছে!

আমি ওকে বললাম — তাহলে একটা অভিজ্ঞান রেখে দাও এই অপূর্ব সুন্দর মুহূর্তটির উপর।
— কী অভিজ্ঞান? বুঝিনি।
— বোঝো নি?
— না।
— আদর।
— দাও। নাও।
এই প্রথম কোনো লাল টকটকে একটি ক্যাকটাসের কাঁটায় আমরা রক্তাক্ত হলাম।

****

মরিয়ম থাকত ওর দূর সম্পর্কের এক মামার বাসায়। ঐ পরিবারের সাথে কথা ছিল যতশীঘ্র হোস্টেলে সিট পেলে মরিয়ম হোস্টেলে চলে যাবে। ও চেষ্টা করছিল হোস্টেলে সিটের জন্য। আবেদনও করে রেখেছিল। মরিয়ম হোস্টেলে সিট পেয়ে যায়৷ এবং চলে আসে হোস্টেলে।

হোস্টেলে ওঠার পর প্রথম যেদিন মরিয়ম ক্লাসে আসে ওকে সেদিন খুব উৎফুল্ল লাগছিল। ওকে বললাম – খুব আনন্দে আছ বুঝি!

— হ্যাঁ, খুব ভালো লাগছে। আমার রুমমেট আমার অনেক সিনিয়র । মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা দেবে। নাম এষা। আমি ওনাকে এষা আপু বলে ডাকি। আমাকে প্রথম দিনই অনেক আপন করে নিয়েছে। আমাকে বলেছে — তুমি খুব ভালো মেয়ে।

আমি বললাম — তাই?
— হ্যাঁ।
মরিয়ম ওর দু’হাতের আঙুল দেখিয়ে বলে — দেখ, উনি আমার নখে নেইলপালিশ লাগিয়ে দিয়েছে। নেইলপালিশ মাখতে মাখতে আপু বলছিল — তোমার এত সুন্দর হাত, এত সুন্দর নোখ! আর এই নোখে কোনো নেইলপালিশ মাখা নেই! তাই কী হয়!

জুতা খুলে পা দেখিয়ে বলে — এই দেখো আমার পায়ের নোখেও নেইলপালিশ দিয়ে দিয়েছে।

আমি ওকে বললাম — খুব ভালো। তুমি একজন চমৎকার আপু পেয়েছ!
– জ্বী।

ক্লাস শেষে মরিয়মকে বলি — চলো, লাইব্রেরি বারান্দায় গিয়ে একটু বসি। দুজন ফুসকা খাব। চৈত্রের বিকালের কড়ই গাছের পাতা ঝরা দেখব। তোমার রাঙানো হাতের নোখ ছুঁয়ে বলব — ‘ভালোবাসি তোমাকে, ভালোবাসি তোমাকে এই রাঙা আঙ্গুলের সৌন্দর্য মাধুর্যের মতো।’

মরিয়ম বলছিল — আজ দেরি করতে পারব না লক্ষীটি। এষা আপু আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে। আর একদিন বসবো লাইব্রেরি চত্বরে।

আরেকদিন মরিয়মকে ক্লাসে দেখে তো অবাক হই। চুল পিঠের উপর ছড়িয়ে আছে। খোঁপা বাঁধা নেই।
দামী সালোয়ার কামিজ পরেছে। ক্লাসের অনেকেই ওকে দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হয়। অনেককে আবার দেখলাম, বন্ধুত্ব করার জন্য ওর সাথে খাতির করছে। আমি প্রতিদিনের মতো আজও ব্যাক বেঞ্চেই বসেছিলাম। মরিয়ম বসেছিল সামনের বেঞ্চে অন্য সহপাঠীদের সাথে। ব্যাক বেঞ্চে আমার পাশে এসে আজ আর বসলো না।

ক্লাস শেষ হলে আমি করিডোরে এসে দাঁড়িয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করি। মরিয়ম চলে আসে। ওকে বললাম — তোমাকে তো চেনাই যাচ্ছে না। একদম তিলোত্তমার মতো লাগছে।

ও বলছিল — ‘আর বলো না। এষা আপু এইসব করেছে। সেই আমাকে চুল কেটে মাথায় শ্যাম্পু করে দিয়েছে। নতুন সালোয়ার কামিজ কিনে দিয়েছে। সে আমাকে বলেছে — ‘তুমি আমার ছোট হলেও তুমি আমার পরমা বন্ধুও একজন।’

আমি মরিয়মকে বললাম — তোমার এষা আপু খুব বড়োলোকের মেয়ে তাই না?

— হ্যাঁ, উনি বড়োলোকের মেয়ে। চট্টগ্রামে ওনার বাবা শিপিং এর ব্যাবসা করেন। আমি সালোয়ার কামিজ নিতে চাই নি। উনি আমাকে জোর করে কিনে দিয়েছে। তাও একটি নয়। চারটি।

আমি ওকে বললাম, আজও কী তাড়াতাড়ি চলে যাবে? চলো না, কোথাও গিয়ে বসি। মরিয়ম মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। আমরা সেদিন কিছুক্ষণ বসেছিলাম ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাসের উপর। প্রাণ খুলে খুব বেশি কথা বলা হলো না ওর সাথে। মনে মনে বলছিলাম ওকে — ‘তোমার হৃদয় আজ ঘাস’।

****

খুব ঘনঘন মরিয়মের বেশভূষা ও গেটআপে পরিবর্তন দেখতে পাই। একটি সাধারণ মেয়ে দিনে দিনে অসাধারণ হয়ে উঠতে থাকে। একটি নির্জন লাবণ্যময়ী মেয়ে হয়ে ওঠে ধ্রুপদী সৌন্দর্যের অধিকারিণী একটি মেয়ে। এইরকম সৌন্দর্যের মেয়েকেও অন্যরকম রূপবতী দেখায়। আমিও ওর এই রূপকে চেয়ে চেয়ে উপভোগ করতাম।

কিন্তু মরিয়ম আমাকে আগের মতো আর সময় দেয় না। একদিন ওকে বললাম — একজন এষা আপুকে পেয়ে তুমি আমাকে ভুলেই যাচ্ছ। উনি বুঝি তোমাকে খুব আদর করেন?

— জ্বী, অনেক আদর করেন আমাকে। উনি আর একা এক খাটে ঘুমাতে পারেন না। আমাকে ওনার কাছে যেয়ে শুইতে হয়। আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমান। আমি ওনার কাছে না শুইলে ওনার চোখে ঘুম আসে না। আমার শরীরের গন্ধে নাকি ওনার চোখে ঘুম চলে আসে।

আমি বললাম — খুব ভালো। এত সুন্দর একজন আপু তুমি পেয়েছ , যে তোমাকে সারাক্ষণ আদরে সোহাগে আর ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখে।

দিন যত যেতে থাকে মরিয়মও কেমন যেন বদলে যেতে থাকে। এখন প্রায়ই সে ক্লাসে আসে না। পড়াশোনায় আগের মতো মনোযোগ নেই। আমি ওকে বলতাম, কী হয়েছে তোমার? কোনও কিছুই বলত না ও। কখনও হেয়ালি করে বলতাম –‘ তুমি এত সুন্দরী হয়ে গেছ, এত আগুনপোড়া রূপ তোমার ! তোমার তো আনন্দে থাকার কথা। তা এত বিষাদ নিয়ে থাকো কেন?’ মরিয়ম নির্বিকার থাকত।

একদিনের ঘটনা দেখে আমি বিষাদে নিমগ্ন হয়ে যাই। সেই নিমগ্নতা আজও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। মরিয়ম সেদিন গলায় ওড়না পেচিয়ে ক্লাসে এসেছিল। আমি ওকে বলি- তোমার কী ঠাণ্ডা লেগেছে? মরিয়ম বলে- না।
— তবে কী হয়েছে?
— কিছু না।

দুটো ক্লাস করার পর মরিয়ম বললো — ভাল লাগছে না। হোস্টেলে চলে যাব। আমি বললাম — চলো, হারিস মামার দোকানে বসে দুজন চা খাই। তারপর তুমি চলে যেও রুমে।

— আচ্ছা। চলো।

চা খেতে গিয়ে মরিয়ম ম্যাসিভ একটি বিষম খায়। গলা থেকে সে ওড়নাটা সরিয়ে ফেলে। দেখতে পেলাম ওর গলায় জখমের চিহ্ন। আমি চমকে উঠি। কেমন যেন বুনো কামড়ের দাগের মতো মনে হলো। কোনো কথা বলছিলাম না। মরিয়ম দ্রুত ওড়নাটা পুনরায় গলায় পেচিয়ে নেয়।

মরিয়ম একদিন বলছিল — এষা আপু সম্ভবত জার্মানি চলে যাবেন এমফিল করার জন্য। আমি বললাম, তোমার কী এজন্য মন খারাপ?
— হ্যাঁ।
— তা কবে যাবেন উনি ?
— আমাদের সামার ভ্যাকেশনের ভিতরই চলে যাবেন ।

এরপর ইউনিভার্সিটি সামারের ছুটি হয়ে যায়। দুই মাস ক্লাস বন্ধ থাকবে। আমি গ্রামের বাড়ি চলে যাই। বাড়িতে যাবার আগে মরিয়মকে বলেছিলাম — তুমি বাড়ি যাবে না?

— না। এষা আপু যেতে দেবে না।

মরিয়মই বলছিল — চলো কোথাও যাই। মনটা ভালো লাগছে না। বললাম, কোথায় যাবে?

— তুমি যেখানে নিয়ে যাবে। সেখানেই যাব।

আমি বললাম — আজ আর কোথাও যাব না।

দেখলাম — মরিয়ম কাঁদছে।

****

ভ্যাকেশন শেষে ফিরে আসি ইউনিভার্সিটিতে। ঢাকায় পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে যায় । হোস্টেলের রুমের তালা খুলে ভিতরে ঢুকি । রুম ভর্তি গাঢ় অন্ধকার। দু’মাসের বদ্ধ রুম থেকে কেমন যেন একটি ভ্যাপসা গন্ধ নাকে এল। লাইট জ্বালাই। দরজার ফাঁক দিয়ে ডাকপিওন একটি চিঠি মেঝেতে ফেলে রেখে গেছে । খামের উপর লেখা দেখে বুঝতে পারলাম চিঠিটি লিখেছে মরিয়ম।

চির-কল্যাণীয়েষু
রঞ্জন,

আমি এই দেশ ছেড়ে সুদূর জার্মানিতে চলে যাচ্ছি। আমার পাসপোর্ট, ভিসা, অর্থ সবই এষা আপু ব্যবস্থা করেছেন। তোমাকে আমার জীবনের অনেক কথা বলা হয়নি। এখনও বলতে পারছি না। শুধু এইটুকু বলছি — আমার জীবনধারা বদলে গেছে। এষা আপু বলেছে — আমাকে ছাড়া উনি নাকি বাঁচবেন না। তাই উনি আমাকে জার্মানিতে নিয়ে যাচ্ছে। ওখানে ওনার সাথেই থাকব। সে আমাকে একটি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করে দেবে।

জানি না কেমন থাকব। তোমার কথা খুব মনে পড়বে। তুমি এত ভালো ছেলে ছিলে! কী পরম সৌভাগ্য হয়েছিল আমার, তোমাকে আমার জীবনের করে নিতে পারতাম। বিধাতা আমাকে অমূল্য কিছু দিয়েছিল ঠিকই , কিন্তু আমিই তা গ্রহণ করিনি।

বার্লিন শহরের পাশে নাকি নীল জলের হ্যাভেল নদী প্রবাহিত। কোনও বসন্ত বিকালে ঐ নদীর তীরে যখন একাকী ঘুরব, তখন মনে পড়বে আমাদের সন্ধ্যা নদীর কথা। যার তীরে কেটেছিল আমার শৈশব ও তারুণ্যের স্মৃতিক্ষরিত সময়কাল। পুরনো ঢাকার বলধা গার্ডেনের মতো কোনও উদ্যান ঐ শহরেও হয়তো দেখতে পাব। সেই উদ্যানেও হয়তো ফুটে থাকবে অজস্র অর্কিড, আমাজন লিলি ও লাল ক্যাকটাস। মনে পড়বে এক দুপুরের একটি ক্যাকটাসের রক্তাক্ত হওয়ার কথা! কী শিহরণই না ছিল ঐ স্বর্গীয় মুহূর্তের!

আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল তোমার দুটো চোখ। কী যে মায়াময় তার চাহনি! ঐ চোখে কোনও অশ্রু ঝরা মানায় না। তুমি কখনোই আমার জন্য কাঁদবে না। এই জীবনে যত কান্না আছে তা আমিই কেঁদে নেব।

তোমার জীবনকে সুন্দর রেখো।

— মরিয়ম।

****

চিঠিটি পড়ে ঘরের আলোটা নিভিয়ে শুয়ে পড়ি। ভ্রমণে এত ক্লান্ত ছিলাম যে, কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না। সকালে ঘুম ভাঙে একটু দেরিতে। ভ্যাকেশনের পর আজ প্রথম ক্লাসে যাই। সেই প্রথম দিনের মতো আজকেও যেতে দেরি হয়ে গেল। গিয়ে দেখি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আমি পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে ব্যাক বেঞ্চে গিয়ে বসি। আজ আর ঐ বেঞ্চে কেউ বসে নেই। আমি একাই বসেছিলাম।

****

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত