স্বপ্নের অবচয়

সাগরের ঢেউ যেখানে হাঁটু অব্দি ধাক্কা খায় তার বেশি যেতে পারি না। পায়ের তলার বালি সরে যায়।

কতবার এক পা আটকে গেছে ভরাট গর্তে। আরেক পা টেনে নিয়ে গেছে বিশাল বিশাল ঢেউ। এই সব স্বপ্নই দেখি অনেক দিন ধরে। তার আগে দেখতাম হামাগুড়ি দিয়ে অনেক উঁচু ছাদের কিনার থেকে নিচের দিকে দেখছি আর আঁৎকে উঠছি। সবাই হাসছে আমাকে নিয়ে।

কিন্তু আজ স্বপ্নে তোমাকে দেখলাম। এমন করে তোমাকে কেন দেখলাম জানি না। হতে পারে ঘুমের শুরুতে গুমোট গরমের কারণে তোমাকে দেখেছি। খেয়াল করেছি তুমি যখন কাছে থাকো ভীষণ গরম লাগতে থাকে। গলা শুকিয়ে যায়। হোন্ডায় তোমার পেছনে বসে রাজ্যের বাতাস কেটে ছুটছি। অথচ কপালে, নাকের নিচে বিন্দু বিন্দু ঘাম, গলার তলায় ভিজে ওঠে। কতদিন তোমার ঠান্ডা অফিস ঘরে বসে ঘেমেছি দরদর। তুমি জানো না।

আজ স্বপ্নে যখন এলে, তুমি, আবহাওয়া গরম ছিল না। কিন্তু অনেক মানুষ ছিল। বিশাল হলঘর, পার্টি হচ্ছে। অনেক মানুষের মধ্যে আমার আপু দুলাভাই ছিল, বাচ্চারা ছিল। তোমার বউ বাচ্চারাও ছিলো।

মেহমানদের জন্য আমি ফল কাটছিলাম। তুমি দূরে দাঁড়িয়ে ছিলে। স্বপ্নে কখনো আমার হাত কাটে না। আজ কাটলো। রক্তের রঙ লাল নাকি কালো ছিল মনে নেই। তুমি আশেপাশে থাকলে বিশ্বাস করো আর কিছু দেখি না, বুঝি না।

তোমার সাথে একবার বাইক এক্সিডেন্টের পর আমার মনেও হয়নি পুলিশ কেস হলে ব্যাপারটা কোন পর্যায়ে পৌঁছাতো। করিৎকর্মা তুমি কিভাবে জানো ট্র্যাফিককেও ম্যানেজ করে ফেললে!

দুলাভাইয়ের বিবাহিত বন্ধুর সাথে প্রেম কোনো ভাবেই কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে জাস্টিফাইড না, কথাটা বহুবার বোঝাতে চেয়েছি তোমাকে।

অথচ তুমি একদিকে চলে যেতে যেতে আমার পৃথিবীটাকেও নিয়ে গেছ সাথে করে। আপাত শান্ত লক্ষী মেয়ের হুমড়ি খেয়ে প্রেমে পড়া জীবন আমার। লেখাপড়া চাঙ্গে।

তুমি তাকিয়ে ছিলে বলেই হয়তো হাত কাটল। আমার কাছে এসে হাতের খবর না নিয়ে তুমি উষ্ণ নিশ্বাস ছড়িয়ে বললে, আর পারছি না এবার তুমি বাড়িতে সব জানাও।

আমি অবাক হয়ে বলি, কি জানাব?

বললে, তোমাকে আমি নিয়ে যাব। আমার সাথে থাকবে।

ফল, চাকু, টেবিল, ঘর ভরা মানুষ থেকে ঠেলে নিয়ে নিয়ে চললে।
আমার প্রাণ দুরুদুরু। চোখ তুলে আশেপাশে তোমার বউয়ের খোঁজ করি। না তাকে দেখা যায় না। আমরা সবার মধ্যে আছি কিন্তু কেউ দেখতে পাচ্ছে না।

বললাম তোমার বউ তো পেটাবে আমাকে।

তুমি বললে, দূর এটা কোনো ব্যাপার না ওকে আমি রাজি করাব।

তোমার হাতে শক্ত করে ধরা আমার হাতটা ছাড়াতে চেষ্টা করতে করতে আমি বললাম, আমাকে চারবার খুন করতে চাও তুমি?

হাত ছাড়লে না আরো কষে ধরে বসলে। টেনে আমাকে দরজার বাইরে নিয়ে যাবার জোর চেষ্টা চালাচ্ছো স্বপ্নের ভেতর মানুষ ব্যথা পায় সেটা আগেও জানতাম ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে বললাম, দুলাভাই আমাকে খুন করবে আপা জানলে আপা খুন করবে তারপর মা বাবা আরো দুইবার খুন করবে।

আমার কথা তোমার কানে যাচ্ছে না। একটা কথাই বারবার বলছ সবাইকে ম্যানেজ করবো, তোমাকে ছাড়া আর একদিন থাকবো না থাকতে পারছি না।

বুকের ভিতর রক্ত ছলাৎ করে ওঠে তখন মনেহয় তোমার জন্য হাজারবার খুন হতে চাই লক্ষবার খুন হতে চাই।

হাত ছেড়ে দিলে তুমি। তখনই ধুপ করে একটা আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখি নিজের বিছানায় শুয়ে আছি হাত থেকে ব্রিফ ডেলিভারি অফ হিস্টোরিক্যাল মিথলজি নামের বিশাল বইটা ধাম করে মাটিতে পড়ল বলে ঘুম ভাঙলো। সময় বুঝতে পারছিনা সকাল না সন্ধ্যা বাইরে অন্ধকার আজান ভেসে আসছে উঠে বসে মোবাইল দেখলাম পৌনে সাতটা। অর্থাৎ সন্ধ্যা। বাইরে মেঘ, ভালই অন্ধকার। কিন্তু গত কয়েক দিনের মনের মেঘ কেটে গেল। তিন চারদিন আগে তোমার সাথে ঝগড়া হবার পর ফোনেও আমাদের কথা হয়নি। মেজাজ খারাপ ছিল।

চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিতে দিতে অদ্ভুত শিহরণে প্রাণ ভরে ওঠে। তোমার সাথে প্রথম দেখা একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানে। আমাদের প্রেম হবার কোন কারন ছিল না। অথচ হয়ে গেল। আমার অনেক পাণিপ্রার্থী আর তোমার স্ত্রী-সন্তান। তবুও প্রেম হয়ে গেলো। দেখতে দেখতে পাঁচ মাস চলেও গেল আমাদের। এই জামানায় এতদিন কারো প্রেম টিকে? আমার তো জানা নেই। আমার ফ্রেন্ডদের সবার প্রেম একমাস বড়জোর দেড় মাস এর মধ্যে একজনের প্রেম তিন মাস টিকেছিল তারপর খুব জঘন্য ভাবে তা ভেঙে গেছে। অবশ্য আজকাল আমাদেরও ঘনঘন ঝগড়া হচ্ছে। কথা বন্ধ থাকছে।

যাক আমি আর কোনো নেগেটিভ কথা মনে করতে চাই না। ভীষণরকম মন ভালো হয়ে আছে। তুমি যেখানে হাত চেপে ধরেছিল সেখানে অন্য হাত বুলিয়ে তোমার স্পর্শের উষ্ণতা অনুভব করি। ফোন হাতে নেই এখনই ঝগরা মিটমাট করতে হবে এত সুন্দর স্বপ্নের পর একটা রুম ডেট করে সেলিব্রেট করতে হবে। তোমার বন্ধুর ছাদের মিনি ফ্ল্যাটে।

কিন্তু তোমার ফোন রিচ করতে পারছি না। তিনবার কল দেবার পর বিফল হয়ে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলাম,

জান তুমি কোথায়?
ফোন রিচ করছে না কেন?
এক্ষুনি কল দাও নয়তো আমি ফোন দেবো।

দেখতে দেখতে সব মেসেজ সিন হল। রিপ্লাই এলো

ওয়েইট।

তিন চার মিনিট পর ফোন করলে হোয়াটসঅ্যাপে। আমি তোমাকে সব সময়ের মতো, হ্যালো বাবু সোনা বললাম।

তুমি গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বললে, হ্যাঁ বলো কী হয়েছে?

তোমার শান্ত শীতল ফিসফিসানিতে আমি দমি না। হড়বড়ে করে বলি, অনেক কিছু হয়েছে।কাল দেখা করব। তুমি ফিসফিস করছ কেন? কোথায় তুমি?

আরো ফিসফিস করে বললে, আমি একটু বাইরে আছি। তোমাকে বলা হয়নি আমার ওয়াইফ ভীষণ সিক। তাকে ডাক্তারের রিকমেন্ডেশনে বালি নিয়ে এসছি। এখানে কিছুদিন থাকতে হবে। কত দিন জানি না।

মোটামুটি জোরে একটা আর্তচিৎকার
বেরিয়ে এলো আমার কন্ঠ থেকে – কী!

তুমি ফিসফিস করে বললে, ও ব্যালকনিতে আছে। এখন রাখি হ্যা? আর মেসেজ বা ফোন দিও না।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত