বৈশাখে ভােরের কুয়াশা (পর্ব-১)

হ্যাঁলো, সালমান কেমন আছো? আমি ভালো নেই।মাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হলো।উনার শরীর আর আগের মতো নেই।খাওয়ার রুচি নেই বললেই চলে।শরীরে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানগুলো যাচ্ছে না।ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স হয়ে গেছে।সুগার লেভেল ডাউন। নল দিয়ে খাবার দেওয়া হচ্ছে।তুমি পারলে একবার হাসপাতালে আইসো।

সালমানকে ভয়েস মেসেজ দিয়েই আবারও ছুটলো নার্সের কাছে।কি কি ওষুধ লাগবে-তার লিস্টটা নিয়ে দ্রুত হাসপাতালের চার তলা থেকে হেঁটে নিচে নামছে ফার্মেসিতে।

দ্রুত ওষুধগুলো নিয়ে আবার চার তলায় চারশ পাঁচ নম্বর কেবিনে চললো।ওষুধগুলো নার্সকে দিয়ে হাসপাতালের রিসিপশনে বসলো। এসি চললেও মাথার উপর একটা ফ্যান ঘুরছে।দেয়ালে থাকা টেলিভিশনে ক্রিকেট খেলা চলছে।

সালমান যখর শশীর মেসেজটি পেলো তখন সকাল পাঁচটা বাজে।ঘুম থেকে উঠে ঘরের বাইরে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতেই দেখতে পেলো ধানখেতে ধান কাটা শেষ হয়েছে আরও চার পাঁচ দিন আগে।ধানখেতে এখনো ধানের গোড়া রয়েছে।এসব গোড়ায় শিশির বিন্দু, শিশিরে ভেজা ঘাস, ঘন কুয়াশায় চারপাশ ঝাপসা। এমন দৃশ্যগুলো সাধারণত শীতকালেই হয়ে থাকে।তবে শীত না আসলেও হঠাৎ করেই বৈশাখের এই খরতাপে পাওয়া গেলো শীতের আমেজ। কুয়াশাও পড়েছে।পাশেই মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ পড়ে বের হয়েছেন, কাইয়ুম চাচা, রমিজ চাচা ও কাওছার ভাই।কাছে আসতেই সালমান বললো, ওই রমিজ চাচা
-আবহাওয়ার এই অবস্থা কেন? বৈশাখেও কুয়াশা পড়ছে?

রমিজ চাচা বললো,
-এবার বৃষ্টি কম হইছে।গরমও প্রচণ্ড।জলবায়ুর অনেক পরিবর্তন। আমার জীবনেও দেখি নাই বৈশাখে কুয়াশা পড়ে।এবারই প্রথম দেখলাম।
সালমান বললো,
-হ চাচা। অবস্থা কেমন যেনো। আবহাওয়া দিনে দিনে পরিবর্তন হইয়া যাচ্ছে।চাচা, খবর শুনছেন নি?
-কী?
-শশীর মা ত হাসপাতালে।
-ও।কি হইছে?
-অনেক অসুস্থ। আজ আমি যাব দেখতে।
-যা। আমাদের কথা বলিস যে খবর শুনেছি।
-ওকে চাচা।

প্রচণ্ড রোদ। দুুপুরের খাবার খেয়ে সালমান বাড়ি থেকে বের হলো। পয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে হাসপাতাল। তাপমাত্রা প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। এই গরমে মোটরসাইকেল না নিয়েই বের হলো সালমান।দশ মিনিটের পথ হেঁটে উঠলো সিএনজি অটোরিকশায়।অটোরিকশা যাচ্ছে। সালমান ভাবছে, তবুও জীবন যাচ্ছে। আবারও শশীর মা অসুস্থ।একটা মেয়ে, চাকরি, মাকে নিয়ে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা..। সত্যিই জীবন চলছে।

চলবে..

ছবি: ছবিটি ২৫বৈশাখ (৮ মে ২০২৩) কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থেকে ভােরে তোলা।ছবিটি তুলেছেন লেখক নিজেই

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত