বেকার

বেকার | ছোটগল্প

আসগর মিয়া বলে, মাস্টার্স পাশ করেছ দুই বছর হয়ে গেল এখনো তো কিছু করতে পারলা না।
সাদেক বলে, ভাগ্য খুলতেছে না, তাই হচ্ছে না।
তো কী করবা চিন্তা করতেছ?
চাকরিই করব। বিভিন্ন জায়গাতে পরীক্ষা দিচ্ছি হয়তো আরেকটু ভালো প্রস্তুতি নেয়া দরকার।
এখন তো লবিং ছাড়া ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না। আসগর মিয়া মনে হয় ঠেস দিয়ে কথাটা বললেন।
সাদেক বলে, ঘুষ, লবিং ছাড়াও হয়। তবে পরীক্ষয় খুব ভালো করতে হয়।
এবার আসগর মিয় বলে, কই দেখি না তো। কত মাস্টার্স পাশ পোলা রাস্তায় রাস্তায় সার্টিফিকেট নিয়া ঘুরতেছে।
সাদেক ভাবে, এসব মান্ধাতার আমলের মুরুব্বির সাথে কথা বলা জাস্ট টাইম ওয়াস্ট। মানুষের সমালোচনা ছাড়া এরা ভালো কিছু করতে পারবে না। সাদেকের রাগ লাগে। সে বলে, আচ্ছা আমি যাই।
সাদেক বাজারের পত্রিকা স্টলে আসে। চাকরির খবর পত্রিকাটি হাতে নেয়। সে অনেকগুলো সার্কুলার দেখে। সে কয়েকটাতে আবেদন করার যোগ্যতা রাখে। কয়েকটা সার্কুলারে সে আবার আবেদন করার যোগ্যতা রাখে না। কারণ সে পড়েছে বাংলায়। সে দেখে বিবিএর ভালো ডিমান্ড।
সাদেক দেখে, তার পকেটে আছে মাত্র পনের টাকা। পাঁচ টাকা দিয়ে পত্রিকাটি কিনে নেয় সে। আর ভাবে,
আর বাকি দশ টাকা দিয়ে চমুচা সিঙ্গারা খাবে।
এমন সময় হাই স্কুলের শিক্ষক আফজাল মাস্টারের সাথে দেখা হয়ে যায় সাদেকের।
কুশলাদি বিনিময়ের পর আফজাল মাস্টার জিজ্ঞাসা করে, তুমি এখন কোথায় আছ?
সাদেক উত্তর দেয়, কোথাও নাই স্যার।
কিছু করছ?
না স্যার। তবে করার চেষ্টা করছি।
তোমাদেও ক্লাসের আতিক সাহেবের ছেলেটা তো গতবার বিসিএসে এডমিনে টিকে গেল।
জি¦ জানি স্যার।
সাদেকের শুনতে ভালো লাগে না এসব। সে অপরের সফলতার গল্প শুনে নিজেকে মনে মনে গালি দেয়।
সাদেক আফজাল মাস্টারের কাছ থেকেও দ্রুত বিদায় নেয়।


আজ মাসের শেষ তারিখ। বিকেলে একটা টিউশনিতে যায় সাদেক। টিউশনির টাকাটা পাওয়ার কথা আজ। সে পড়ার ফাঁকে তার স্টুডেন্টকে বলে, তোমার বাবাকে বলেছ, তোমার বাবাকে আমার টাকার কথাটা বলেছ?
ছাত্র জবাব দেয়, হ্যাঁ বলেছি স্যার। বাবা বলেছে, আরো এক সপ্তাহ পর বাবার অফিসের বেতন হবে। তখন দিবে।
সাদেক আবার হতাশ। আরেপিা এক সপ্তাহ লেগে যাবে। টাকাগুলো পেলে সে তার মায়ের হাতে দিতে পারত।
সাদেকের বাবা একটা বেসরকারী এনজিওতে চাকরি করত। এখন অবসরে গেছেন। পরিবারের বড় ছেলে সে। তার বাবা দুই দিন আগে বলেছিল, বাবারে সাদেক, দ্রুত একটা চাকরি ধর। আমি আর কতদিন বসায় বসায় খাওয়াব। সাদেকের চোখের সামনে বাবার অসহায় মুখটি ফুটে উঠে। তার বাবা কত কষ্ট করে তাকে পড়াশোনা করিয়েছেন। অল্প বেতনের চাকরি কেও পরিবার চালিয়েছেন। বাবার কষ্টের কথা ভেবে তার চোখ ভেসে আসে।


দেখো সাদেক, তুমি যদি দুই মাসের মধ্যে কিছু করতে পার, তাহলে আমাদেও বিয়েটা হতে পারে।
আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারবা না?
নাহ। অলরেডি আমার জন্য পাত্র রেডি হয়ে আছে। বাবার শরীরটা ভালো না। আমাকে বিয়ে দিতে পারলে বাবা একটু টেনশন মুক্ত হবে।
শায়লা, আমার সাথে পালাবা?
না সাদেক, আমার পালিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছে নাই।
না থাকলে আর কি করার আছে!
তোমার জন্য রেডি করা পাত্র কী করে?
লন্ডনে থাকে।
বাহ। তুমি লন্ডন চলে যাবা। আমার আর কি!
বাজে কথা বলবা না তো। আমি তো তোমার সাতে থাকতে চাই।
পার্কে বসে সাদেক আর শায়লা কথা বলছে। পাশ দিয়েই একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা যাচ্ছে। ঝালমুড়িওয়ালাকে সাদেক ডাকে। তারপর জিজ্ঞাসা করে, ‘ভাই আপনি কী সুখী?
ঝালমুড়ি বিক্রেতা উত্তর দেয়, আল্লাহর রহমতে সুখেই আছি।
জীবন নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে আপনার?
না। আমার কোনো আক্ষেপ নাই।
ভাই, আপনার প্রতিদিন ইনকাম কত হয়?
এই ধরেন চারশো পাঁচশো
এইটা দিয়ে আপনার সংসার চলে?
হ। চলি যায়। আর এক পোলা চা দোকানে কাম করে।
আপনি ওকে স্কুলে পাঠাতে পারেন না?
ঝালমুড়িওয়ালা উত্তর দেয়, না। আপনার লগে আজাইরা কথা কওনের টাইম আমার নাই। আমি যাই।
সাদেক বলে, আচ্ছা দশ টাকার ঝালমুড়ি দিয়ে যান।
ঝালমুড়িওয়ালা ঝালমুড়ি দিয়ে চলে গেল।
সাওদেক বলে, দেখো শায়লা, মানুষ গাছতলায় শুয়েও দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিতে পারে।
শায়লা বলে, এইসব ফালতু কথা আমাকে বলে লাভ নাই। তুমি দ্রুত একটা চাকরির ব্যবস্থা কর। না হলে আমি লন্ডনীওয়ালা ছেলের সাথে লন্ডন চলে যাব।
আমাদের চার মে বছরের সমম্পর্ক তুমি এভাবে ভুলে যেতে পারবে?
কায়লা কোনো উত্তর দেয় না।
দেখো এসব আবেগী কথা বলে লাভ নাই।
আবেগী কথা !
হ্যাঁ।
সাদেক আর কথা বাড়ায় না। সে বলে, আচ্ছা আমি গেলাম। কিছু করতে পারলে আমাদেও দেখা হবে।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত