শীতবস্ত্র বিতরণ

শীতবস্ত্র বিতরণ | ছোটগল্প

সন্ধ্যাবেলায় চা খেতে খেতে অপু বলল, ‘বুঝছিস আজিম, আমাদের ক্লাবের জন্য চাঁদা কালেকশান করতে হইবো। ওই চাঁদা দিয়াই আমরা আপাতত শীতবস্ত্র বিতরণ করবো।

-হ্যাঁ, আইডিয়াটা খারাপ না।

-আচ্ছা, আমরা তো একটা লিস্ট করতে পারি, কি কস? কার কার কাছে ব্যাপারটা নিয়ে যাওয়া যায় বলতো ?

-হ্যাঁ, আমরা এলাকার কোটিপতি মাসুদ চাচার কাছে যাব। মাসুদ চাচা অনেক টাকার মালিক। দ্ইুটা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি আছে। উনাকে শীতবস্ত্র বিতরণের ব্যাপারটা একটু বুঝায়া বলতে হইবো।

– আমরা চাইলে নিশ্চয়ই ‘না’ করবে না।

– আমি শুনছি মাসুদ চাচা এইবার চাচা এবার ওয়ার্ড কমিশনার পদে দাঁড়াবে।

– তুই শিউর শুনেছিস?

– হ্যাঁ শিউরই তো। লোকজন বলাবলি করছে দেখলাম।

– ও তাইলে তো ভালোই। তারে আমাদের হাতে রাখা লাগবো।

 

কথামতো পরদিন বিকেলে অপু ও আজিম, শোভনের বাবা মাসুদ সাহেবের বাড়িতে গেল। গেইটে এসে বাড়ির কেয়ারটেকারকে বলল, ‘মাসুদ চাচাকে একটু ডেকে দিন।’ কেয়ারটেকার কিংবা দারোয়ান এই লোকটিই বাড়িটি দেখাশোনা করে। সে অপুর দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আস্তে করে বলল, ‘আচ্ছা আপনি ওই রুমটাতে বসুন। কেয়ারটেকার গেস্টরুমে অপু ও আজিমকে বসতে বলল।’

মাসুদ সাহেব ভেতর থেকে আসলেন। এসেই অপুকে বললেন, ‘আরে তুমি যে, তো কি মনে করে?’

– আসছি চাচা একটা কাজে। আপনি তো আমাদের এলাকার মুরুব্বি আপনাকে বিষয়টা জানানো মনে করছি। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে বলতে পারি।

– আরে বলো বলো, তোমরা আমার পাড়ার ছেলে, তোমরা আমাকে যেকোনো ব্যাপারে নিসংকোচে বলতে পারো।

– আসলে চাচা যেটা বলতে এসেছি সেটা হচ্ছে যে, আমরা পাড়ায় একটা সামাজিক সংগঠন করেছি। নাম দিয়েছি ‘ফর পিপল’। আমরা গরীব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু সাহায্য সহযোগিতা করার জন্যই এটা করেছি। এবার শীতে আমরা কিছু গরীব মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করব এমন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আপনার মতো নেতৃত্বস্থানীয় একজনকে আমাদের খুবই প্রয়োজন। আপনাকে আমরা এই সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাখতে চাইছি। অপু এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে গেল।

– তোমাদের ব্যাপারটা আমি বুঝেছি। কিন্তু অনেকেই তো ইদানীং সামাজিক সংগঠন বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করছে। তাদের মধ্যে অনেককেই দেখেছি ছয় মাস বা এক বছরের বেশি টিকতে পারছে না। তোমাদেরও যদি এই অবস্থা হয়?

– না চাচা, আমাদের এই অবস্থা হবে না। আমরা ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করছি। আমরা টিকে থাকবো।

মাসুদ সাহেব মনে মনে ভাবল, ‘সামনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এই এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার হওয়ার। আগামী নির্বাচনে এই ছেলেপেলেদেরই তো তার কাজে লাগবে। মাসুদ সাহেব একটু গম্ভীরভাবে নিজেকে জাহির করে অপুদের বললেন, ‘তোরোটা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন অলরেডি আমাকে তাদের প্রধান উপদেষ্টার পদে রেখেছে। তাদের প্রোগ্রামগুলোতেও আমাকে অনেকটা বাধ্য হয়ে যেতে হয়। সেসব সংগঠনগুলো অনেক জোরাজুরি করে, না গেলে আবার রাগও করে। তাছাড়া আমাকে আমার পার্টির কাজেও অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। সামনে ইলেকশান।’

মাসুদ সাহেব একটা পলিটিক্যাল পার্টির মাঝারি পর্যায়ের নেতা। তাকে সেখানেও যেতে হয়। এই সুযোগে তিনি সেটা তাদের জানিয়ে দিলেন।

তারপর তিনি একটু থেমে বললেন, ‘তোমরা যেহেতু চাইছ আমি কি আর না করতে পারি! হাজার হলেও তো তোমরা আমার এলাকার ছেলে। ঠিক আছে, তোমাদের সাথে আমি আছি।

– ধন্যবাদ চাচা, আপনার মত লোক আমাদের পাশে থাকলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাব। সামনের শুক্রবার বিকেলে আমাদের ক্লাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। আপনি অবশ্যই আসবেন। অপু একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল।

– আচ্ছা, আমি চেষ্টা করব থাকতে।

এলাকার আরো কিছু বিষয়ে কথাবার্তা বলে অপুরা মাসুদ সাহেবের বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেল।

মাসুদ সাহেব এই পাড়ার হবু কমিশনার। কোন কিছু করার জন্য তার সমর্থন খুবই প্রয়োজন সেটা অপু ভালো করেই জানে। তাই উনাকে প্রধান উপদেষ্টার পদে রাখা হয়েছে।

মাসুদ সাহেবের বাসা থেকে বেরিয়ে পাড়ার একটা চা দোকানে ঢুকে অপু বলল, ‘আচ্ছা, আজিম আমরা ফেসবুকে একটা পেইজ খুলতে পারি। তুই কি বলিস?

– হ্যাঁ, পারি তো ,

– পেইজ খুললে কি হবে জানিস? আমাদের ক্লাব সম্পর্কে লোকজন জানবে।

– ঠিক বলছস, আজ রাতেই তুই ফেসবুকে একটা পেইজ খুলে ফেল।

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই এলাকার ছোটভাই রিয়াজের সাথে দেখা অপুর। কুশলাদি বিনিময়ের পর অপু রিয়াকে বলল,

– আরে রিয়াজ কি খবর?

– ভালো। আপনি ভালো?

– হ্যা, ভালো। আমরা চাইতেছি এলাকার সব ছেলেপেলে একসাথে থাকতে। তুমি তো জানো আমরা একটা ক্লাব করেছি।

– জ্বি ভাইয়া, শুনেছি। খুবই ভালো উদ্যোগ।

– তুমি মানে তোমাদের ব্যাচটাকে একদিন আমার সাথে দেখা করতে বল।

– আসলে হইছে কি ভাইয়া! ব্যাচের ছেলেপেলের সবার সামনে পরীক্ষা, সবাই পড়াশোনা নিয়ে একটু ব্যস্ত।

– তাইলে কেমনে হইবো?

– না, ভাইয়া এইতো আর কয়দিন। তারপর আপনার সাথে দেখা করায়া দিব, কোন টেনশন করবেন না ।

– তুমি তো জানোই আমাদের স্টেশন পাড়ার বস্তিতে গরীব লোকজন আছে। তুমি বলো তাদেরকে সহযোগিতা করা আমাদের উচিত কিনা?

– হ্যাঁ, উচিত। রিয়াজ খুব লজ্জিত হয়ে বলল।

তারা দুজনে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে যার যার কাজে চলে গেল।

ফেসবুক পেইজ খোলা হল। সেখানে ‘ফর পিপলের’ একটা লোগা বানিয়ে প্রোফাইলে দেয়া হল। কভার ফটোতে পাহাড়তলী স্টেশনের একটা ছবি সুন্দর করে তুলে পোস্ট করা হলো। পরপর কয়েকটা পোস্ট দেয়া হলো।

ফেসবুক পোস্টে সংগঠনের বার্ষিক কর্মসূচী, উপদেষ্টাদের নাম ও সংগঠনের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। তারা কি কি করতে চায় সেসব তুলে ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা যেটা করতে চায় সেটা হচ্ছে স্টেশন পাড়ার বস্তিতে শীকবস্ত্র বিতরণ এবং কেন শীতবস্ত্র বিতরণ করতে চায় সেসব সম্পর্কেও একটা বড় করে লেখা ফেসবুক পেইজে পোস্ট করা হলো। ফেসবুকে তারা তাদের সংগঠনের রেগুলার আপডেট দিচ্ছে।

আস্তে আস্তে পাড়া বা মহল্লার ছেলেপেলেদের কাছে বেশ পরিচিতি পেতে শুরু করেছে অপুদের ‘ ফর পিপল’ ক্লাবটি। অপুদের এলাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকায় বেশ নামডাক ছড়িয়েছে। অপুরা এবার শীতে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে যাচ্ছে। টাকা সংগ্রহের জন্য অপু ও তার দলবল বিভিন্ন বাজারে ক্যাম্পেইন করতে লাগল। এলাকার বড় বড় টাকাওয়ালাদের কাছে বারবার ধর্ণা দিতে লাগল। এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি ইমরান চৌধুরীর বাসায় গিয়ে বলল, ‘ভাইয়া আপনি তো জানেন ফর পিপল নামে আমরা একটা ক্লাব করেছি। আমরা এবার ক্লাব থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি পাহাড়তলী রেলস্টেশন এলাকার বস্তির লোকদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করব। ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা কালেকশান শুরু করছি।’

ইমরান চৌধুরী একটু ভেবে বললেন, তোমাদের বাজেট কত?

– দুই লাখ টাকা ভাইয়া

– আচ্ছা বেশ ভালো। শোনো আমার তো এখন ব্যবসায়ে মন্দাবস্থা চলছে, তারপরও তোমরা যেহেতু একটা ভালো কাজের সাথে আছ, আমি তোমাদের তহবিলে বিশ হাজার টাকা দিব।

– অনেক ধন্যবাদ। ভাইয়া টাকাটা কি এখন দিবেন?

– এখন তো আমার কাছে ক্যাশ টাকা নাই। তোমরা আগামী শনিবার বিকেলে আস।

– আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া

– চা’টা খেয়ে যাও

– কাজ আছে ভাইয়া, পরের বার আসলে খেয়ে যাব।

ইমরান চৌধুরীর বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল অপুরা। তার মাথায় এখন প্রচুর টেনশন। তাকে দুই লাখ টাকা তুলতে হবে।

সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে রাত ৯ টায় সে বাসায় ফিরল। তারপর ফেসবুকে ঢুকলো। ম্যাসেঞ্জারে টুং টাং করে দুই একটা শব্দও আসছে। অপু দেখছে, চ্যাটে দেখা যাচ্ছে এলাকার কানাডা প্রবাসী মিনহাজ ভাইকে। অপু ভাবল, এলাকার বড় ভাই মিনহাজ ভাইকে তাদের কর্মসূচীর কথা বলবে কিনা! অনেকক্ষণ ভাবাভাবির পর নক দিল,

– ভাইয়া কেমন আছেন?

– ভালো। তোমাদের কি অবস্থা ? এলাকার সবাই ভালো আছে?

– হ্যাঁ, আমরা ভালো, সবাই ভালো আছে। এলাকায় কয়েকদিন আগে ডাকাত ঢুকছিলো। লোকজন গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিয়ে দিয়েছে। এখন পরিস্থিতি বেশ শান্ত।

– ও বেশ।

– তো ভাইয়া কানাডায় চার বছর তো প্রায় হয়েই গেল মনে হয় আপনার, দেশে কখন আসবেন ভাবছেন?’

টাকার কথা প্রথমেই বলা যাবে না, বললে মাইন্ড করতে পারে তাই সে বুদ্ধি করে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে তারপর আসল কথাটা বলবে। অপু সেটাই ভাবল

– দেখো, আমি তো এখানে অনেকটা সেটেল্ড হয়ে গেছি। বছর খানেক পরে আসতে পারি, এখন আপাতত আসার কোনো পরিকল্পনা নেই ।

– ওহ আচ্ছা। বিয়ে শাদী করবেন না? আমাদেরকে আপনার বিয়ের দাওয়াত খাওয়াবেন না? শুধু বিদেশ পড়ে থাকলেই হবে?

– আসলে অপু শোনো, তোমাদেরকে বা পাড়ার লোকজনকে সেভাবে তো জানানো হয়নি ব্যাপারটা। আমি গত দুই মাস আগে কানাডারই এক মেয়েকে বিয়ে করেছি। ফেসবুকেই তো ছবি দিলাম, দেখোনি?

– ভাইয়া ইদানীং আমি ব্যস্ত থাকি তো তাই নিউজফিডে কম ঘুরা হয়।

– ইয়াং ছেলে, তোমার কিসের এত ব্যস্ততা শুনি?

এতক্ষণ কথা বলার পর অপুর মনে হলো আগে যা বলেছে সব প্রয়োজনীয়। এতক্ষণে কাজের কথায় আসা গেল। তারপরে সে ম্যাসেঞ্জারে লিখল,

– ব্যস্ততা বলতে ওই যে পাড়ায় একটা ক্লাব করলাম। ফর পিপল। ওটা নিয়ে।

– ফর পিপল! বেশ ইন্টারেস্টিং নাম তো।

– হুম ভাইয়া। আমরা ছিন্নমূল মানুষের কথা ভেবে এই ক্লাব করেছি। আমাদের এই ক্লাবের জন্য আপনার কাছ থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা লাগবে।

– কেমন সহযোগিতা দিয়ে তোমাদের সহায়তা করতে পারি বলতো?

– দেখেন ভোইয়া, পাহাড়তলী রেলস্টেশনের পাশে অনেকগুলো বস্তি আছে, আমরা চাচ্ছি এবার শীতে তাদের মাঝে কিছু বস্ত্র বিতরণ করব। আপনি আমাদের সামান্য কিছু টাকা দিয়ে ব্যাপারটাতে সহায়তা করতে পারেন। আপনার জন্য এই টাকাটা কিছুই না।

– আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব। তুমি তোমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বারটা দাও, আমি দুই একদিনের মধ্যে পাঠিয়ে দিব।

– ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার সহযোগিতার জন্য।

– স্বাগতম ছোটভাই।

মিনহাজ ভাইয়ের সাথে ফেসবুকে কথা বলে বেশ ভালো লাগলো অপুর। আশ্বাস অন্তত পাওয়া গেল। এখন আরো কিছু বিত্তবান লোকের সাথে কথা বলতে হবে তার। এই সপ্তাহেই সেটা করতে হবে। ফর পিপলের জন্য পাহাড়তলী বাজারে একটি অফিস দেখা হচ্ছিল বেশ কয়েকদিন ধরে। এতদিন অপুদের বাসার নিচ তলার একটি পরিত্যক্ত কক্ষকে ক্লাবের অফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। বাড়িতে অপরিচিত লোকের আনাগোনায় অপুর বাবা বেশ বিরক্ত হচ্ছিল। তিনি একদিন অপুকে বলেছিলেন, ‘শোনরে অপু, বাড়িতে ঘনঘন বেশি লোক ভালো না। তুই বরং বাড়ির বাইরে কোথাও অফিস নিয়ে নে। পরিবারের ব্যবসাটাও তো দেখতে হবে । তোর এসব ক্লাব তো পরিবারের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনছে না। তুই বরং ব্যবসায়ে মন দে।’

অপু ‘আচ্ছা দেখি’ বলে বাবার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। বাবার সাথে তর্ক করে না। কথার প্রশ্নে কথা জড়ায় না।

অপুদের দুটো চাউলের আড়ত আছে। লোকজন দিয়ে সেগুলো পরিচালনা করা হয়। সে সপ্তাহে দুই দিন আড়তে বসে। কিন্তু তার বাবা চায় সে প্রতিদিনই আড়তে বসুক। তাছাড়া পরিবার থেকেও বিয়ের জন্য তাকে চাপ দেয়া হচ্ছে। একদিন অপুর মা অপুকে বলেছিল, “আমরা তো আর বেশিদিন বাঁচবো না, মরার আগে যদি ছেলের বউ, নাতি নাতনিদের মুখ দেখে যেতে পারতাম তাহলে মরেও একটু শান্তি পাইতাম।”

– না আম্মা আমি এখন বিয়ে করবো না। অপু উত্তর দিয়েছিল।

– কেন করবি না?

– আম্মা আমার পছন্দ আছে।

– তাইলে তো ভালোই। ওই মেয়েরে আমাদের সাথে পরিচয় করায়া দে।

– এখন না মা, আরো পরে।

– কখন করবি অপু?

– আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা। বছর খানেক পরে করব।

অপুর মা বুঝতে পেরেছিলেন তাকে আর জোরাজুরি করে লাভ হবে না। সে যেটা বুঝে সেটাই করে। সেটা তিনি জানেন।

রাস্তায় বেরিয়েছে অপু। এর মধ্যে এলাকার মধ্যবয়সী আজাদ চাচার সাথে হঠাৎ দেখা। আজাদ চাচা একটু ভারী গলায় বললেন, কী মিয়া, এত শুকায়া গেলা ক্যান?

– চাচা আমি ক্লাবের কাজ নিয়ে একটু ব্যস্ত আছি। তাই ইদানীং একটু বেশি দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে।

– ও আচ্ছা বাবা, ভালো থাইকো ভালো মত কাম কাজ চালাও।

আজাদ চাচার সাথে কথা বলা শেষে অপু মিন্টু মিয়ার চা দোকানে বসল। সেখানে তার বন্ধুবান্ধবদের অনেকে আরো আগে থেকেই আড্ডা মারছে। সে মিন্টু মিয়ার চা দোকানে ঢুকলো। তার পুরো শার্ট ঘামে একাকার। সানগøাসটাতেও কপালের ঘাম। পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে মিন্টু মিয়াকে বলল, চাচা একটা চা দেন।

সেখানে অপুদের ফর পিপলের কয়েকজন মেম্বারও ছিল। তাদেরকে সে জিজ্ঞেস করলো, তোমরা চা খাইছো?

– হ্যাঁ, আমরা খাইছি। তো আপনি খাওয়াইলে আরেক কাপ খাইতে পারি।

মিন্টু চাচা চা দিল । চা খেতে খেতে আজিম বলল, এলাকায় ইদানীং চুরি ছিনতাই বেড়ে গেছে, কি করা যায় বল তো অপু?

– খুবই ভালো কথা বলেছিস
– একটা পরামর্শ দে তো অপু। আমাদের পাড়ার চুরি ছিনতাই রোধে কি কি পদক্ষেপ নিতে পারি?

– পাড়ার সব শ্রেণীর লোকজনকে নিয়ে ফর পিপল একদিন বসবে। তুই এক কাজ কর।

– কি কাজ ?
-পাড়ার কাসেম মাস্টার, আজাদ চাচা, জহির সওদাগর সহ পাড়ার আরো যত মুরুব্বি আছে সবাইকে ব্যাপারটা নিয়ে একটু বিস্তারিত কথা বলা দরকার।

– সবাই কি আগামী সপ্তাহে থাকতে পারবে?

– তুই সবার সাথে আলাপ করে শিডিউলটা নিয়ে নে। আমি আবার দুই সপ্তাহ পরে ঢাকা যাব।

– ঢাকা কেন?

– ব্যবসায়ের কাজ আছে। চাউল ব্যবসায়ী সমিতির একটা মিটিং আছে।

– আচ্ছা ঠিক আছে

আজিম বিদায় নিল। অপু চা দোকানে বসে রইলো। সে ফেসবুকে ঢুঁ মেরে দেখতে লাগলো কে কি পোস্ট দিচ্ছে। সে একটার পর একটা পোস্ট স্ক্রল করে যাচ্ছে। কোন কোনটাতে সে লাইক দিচ্ছে। ভালো লাগলে কোথাও কমেন্টস করছে। কারো সাফলজনিত পোস্টগুলোতে সে ‘অভিনন্দন’ বা ‘শুভেচ্ছা’ টাইপের কিছু লিখে থাকে। হঠাৎ একটা পোস্ট তার চোখে পড়ল। ইব্রাহীম পোস্টটা দিয়েছে।

‘আলহামদুলিল্লাহ, বিসিএসে ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম। সবাই দোয়া করবেন আমার কর্মজীবনটা যেন সুন্দর হয়।’

অপু পোস্টটাতে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। সে শুধুমাত্র লাইক দিল। ৩৮ মিনিটে ৭৬৫ লাইক পড়ে গেছে, কমেন্ট বক্সে কনগ্রেচুলেশনের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ইব্রাহীমের সাথে সে একই স্কুলে পড়েছিল। তার মনে পড়ল, স্কুলে থাকতে ইব্রাহীমের রোল ৩ ছিলো আর ওর ছিল ১। অপু মনে মনে ভাবল, ‘ঠিকমত পড়ালেখা করলে আমিও আজ এরকম একটা পোস্ট দিতে পারতাম।’

 

ফর পিপল ক্লাবের অফিসটা বাজারের মাঝখানে। বাজারে যাওয়া আসা করে এরকম প্রচুর লোকের চোখে পড়ে অফিসটি। অফিসের ঠিক উপরে মাঝ বরাবর একটা সাইনবোর্ডে কালো অক্ষর দিয়ে বড় করে লেখা হয়েছে ‘ফর পিপল’। ত্রিশটা চেয়ার কেনা হয়েছে, সাথে বড় একটা টেবিল। অফিসটা বেশ চকচক করে রঙ করা হয়েছে। অফিসের দেয়ালে বিভিন্ন মনীষীদের বাণীও লেখা হয়েছে। পাড়ার হবু কমিশনার মাসুদ সাহেব উপস্থিত থেকে সংগঠনের অফিস উদ্বোধন করে গেলেন।

আজ শুক্রবার। পাড়ার লোকজন শুক্রবার বাড়ীঘরেই থাকে। অপু ও তার তার বন্ধুরা পাওয়া যাবে ভেবে বিকেলে এলাকারই কৃতি সন্তান অর্থমন্ত্রণালয়ের সচিব মঈন উদ্দিন সাহেবের বাড়িতে গেল। মঈন উদ্দিন সাহেবের বাড়িটি বিশাল। ঢাকায় তো বাড়ী আছেই, পাহাড়তলী এলাকাতেও বড় ডুপ্লেক্স বাড়ি করে রেখেছেন তিনি। এত সুন্দর বাড়ি সচরাচর দেখা যায় না। দুটো বিদেশী কুকুরও পালে তারা। মঈন সাহেব নিজে তো এই বাড়িতে থাকেনই না, তার পরিবারের কোন সদস্যও থাকেন না। তবে শুক্রবারে তিনি বাড়ীতে আসেন। দুজন কেয়ারটেকার আছেন যারা তারা বাড়ীটি দেখাশোনা করেন। তাঁর দুটো মেয়ে। তারা ঢাকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করছে।

অপু ও তার বন্ধুরা বাড়িতে ঢুকেই খেয়াল করল দুটো বড় কুকুরকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। কুকুরগুলো বাড়িটিতে কোন অপরিচিত লোক আসলে ঘেউ ঘেউ করে। তারা কোন রকমে ঘেউ ঘেউ উপেক্ষা করে বাড়িটির ভিতরে ঢুকে পড়ল। কলিং বেল চাপলে মঈন সাহেব ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, ‘আরে তোমরা? ভেতরে আস।’

ড্রয়িং রুমে বসে তিনি বললেন, তোমরা কেমন আছ?

অপু উত্তর দিল, ভালো চাচা, আপনি ভালো?

– আজকে কয়েকদিন একটু খারাপ লাগছে। ডায়বেটিসটা একটু বেড়েছে।

আজিম বলল, ডাক্তার দেখিয়েছন?

-হ্যাঁ, ডাক্তারের নিকট চেকআপ তো রেগুলারই করা হয়।

মঈন সাহেব েেকয়ারটেকারকে ডেকে সবার জন্য চা দিতে বললেন। কেয়ারটেকার কয়জন লোক আসছে সেটা গুণে কিচেন রুমে চলে গেল।

‘তো তোমরা কি মনে করে এসেছ?’ মঈন সাহেব এবার কাজের কথায় এলেন।

– চাচা আমরা একটা ক্লাব চালাই, ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কাজ করছি। সেজন্য আমরা পাড়া ও বাজারের বিত্তবান মানুষ থেকে তহবিলের জন্য টাকা সংগ্রহ করছি। অপু সুন্দরভাবে তার কর্মসূচীর কথা বর্ণনা করল।

মঈন সাহেব কিছু একটা ভেবে বললেন, তোমরা ছিন্নমূল মানুষকে কি দিয়ে সাহায্য করবা?

– আমরা আগামী শীতে স্টেশন পাড়ার বেশ কিছু বস্তির লোকের মাঝে কম¦ল, মাফলার, সোয়েটার দিতে চাই যেগুলো শীত নিবারণে খুব ভালো কাজ দিবে।

– আচ্ছা, তোমাদের উদ্যোগ তো দেখি বেশ ভালো। তারপর একটু ভেবে বললেন, দেখো, আমার তো ব্যাংকে কিছু টাকা লোন আছে। ব্যাংকে লোন সংক্রান্ত কিছু ঝমেলা চলছে। তাই এখন তো আমি তোমাদেরকে টাকা দিতে পারছি না । তবে তোমাদের জন্য আমার দোয়া থাকলো।

মঈন সাহেবের কথাটা শুনে অপুরা যেন একটু থতমত খেল। মঈন সাহেব বুঝতে পারলেন অপুরা তার কথায় একটু মন খারাপ করেছে। তারপর তিনি হাসি দিয়ে বললেন, ‘তোমরা মন খারাপ করো না। তোমাদের জন্য কোথাও থেকে ফান্ড যোগাড় করা যায় কি না আমি চেষ্টা করব। আমার অনেক বন্ধু মানুষকে দান খয়রাত করে। তাদের সাথে তোমাদের একটা সংযোগ যোগ ঘটায় দিব। তোমরা কোনো চিন্তা করো না। তোমরা আমার উপর আশা ভরসা রাখ।’

অপু বলল, ‘চাচা আপনি আমাদের পাশে থাকলেই চলবে। সমস্যা মানুষের থাকতেই পারে। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করলেই চলবে।”

চা নাস্তা খেয়ে অপুরা মঈন সাহেবের সাথে সামান্য কথাবার্তা বলেই বিদায় নিল। বাড়ি থেকে বেরোতে বেরোতে হা¯œাহেনা ফুলের বেশ গন্ধ পেল। কুকুর দুটো তখন বেশ ঘুমাচ্ছে।

অপু ও তার বন্ধুরা রাস্তায় হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে পাড়ার স্কুল মাঠের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। স্কুলমাঠে বালকেরা খেলছে। দুপুরে বৃষ্টি হয়েছিল, মাঠ এখনো ভেজা। বালকেরা কাদা মাখামাখি করে ফুটবল খেলছে। অপুর এই দৃশ্য দেখে বেশ ভালো লাগছে। তার মনে পড়ল কয়েক বছর আগে তার সমবয়সীদের সাথে সে এভাবে খেলত। সে মূলত স্ট্রাইকার ছিল। স্ট্রাইকার হিসেবে বেশ ভালো পরিচিত থাকার কারণে আশপাশের ছোটখাটো ফুটবল ক্লাবগুলো তাকে হায়ার করে নিয়ে যেত।

অপুদের এলাকার সাথে পাশের এলাকার প্রায়ই ফুটবল ম্যাচ হতো। সে ম্যাচের দিনগুলোতে দুই পাড়ার অসংখ্য লোকজন খেলা দেখতে আসতো। মাঝে মাঝে দুই পাড়ার লোকজনের মধ্যে বাদানুবাদও হতো। কখনো কখনো সেটা হাতাহাতির পর্যায়েও চলে যেত। তবে তা খেলার মাঠ পর্যন্তই সীমিত। পরে আবার সবাই মিলমিশ হয়ে চলাফেরা করত। এসব পুরনো স্মৃতির কথা নিয়েই অপু, আজিম, আবির ও সুমন নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ গল্প করল। দুই পাড়ার ছেলেমেয়েরা একসাথে স্কুলে যেত। সেগুলো আরো দশ বছর আগের কথা। স্কুল জীবনের দিনগুলোর কথা ভাবতে ভাবতেই তারা নস্টালজিক হয়ে পড়ে।

সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে সেদিন রাত দশটায় অপু শুয়ে পড়ল। অন্য সময় এগারোটার পরেই ভাত খায়। আজ একটু তাড়াতাড়িই খেয়ে ফেললো। ঘুম আসছে না তার। শুয়ে শুয়ে সে চিন্তা করল, আচ্ছা স্টেশন পাড়ার বহু বস্তি শিশু তো স্কুলে যায় না সেখানে শিক্ষার আলো একেবারেই পৌঁছেনি। বস্তির শিশুদের অবস্থা খুবই খারাপ। তাদেরকে কিভাবে স্কুলমুখী করা যায়! সে ভাবল, তাদের ফর পিপলের সদস্যরাই তো বস্তির শিশুদের পড়াতে পারে। সদস্যদের সবার তো দিনের বেলায় কাজ থাকে। তবে সবাই যেহেতেু বিকেলের দিকেই ফ্রি থাকে তাহলে পালাক্রমে ওই সময়টাত তারা পড়াতে পারবে। এসব ভাবতে ভাবতেই সে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল।

 

সকালে ঘুম থেকে ওঠেই অপু ফোন দিল আজিমকে।

-শোন আজিম, আজকেই স্টেশন পাড়ার বস্তিতে যাব। তুই দশটায় মিন্টু চাচার চা দোকানে চলে আয়। একসাথে বস্তিতে যাব।

-বস্তিতে আজকে কেন? আজিমের কৌতুহল উদ্দীপক প্রশ্ন

– জরুরী কাজ আছে। তুই আগে আয়, তারপর বলব।

-আচ্ছা আসব

অপু নাস্তা করে রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। সে মিন্টু চাচার চা দোকানে অপেক্ষা করতে লাগল আজিমের জন্য। দশ মিনিট পর আজিম আসলো। অপু তাকে দেখে বলল,

– বস আগে এক কাপ চা খা।

– বল, স্টেশন পাড়ায় কি কাজ?

– আমরা একটা জরিপ করবো

– কীসের জরিপ?

– কত জন ছেলেমেয়ে ওই পাড়ায় স্কুলে যায় না সেটি দেখতে।

– মানে কি বলতো?

– মানে হচ্ছে আমরা ওসব ছেলেমেয়েদের পড়াব যারা এখনো স্কুলে যায় না

– তাই, বেশ ইন্টারেস্টিং তো।

– হ্যাঁ, কালকে রাতে আইডিয়াটা আমার মাথায় এসেছে।

– কিভাবে আগানো যায় বলতো?

– আমরা তো বিশ জন আছি, সপ্তাহে পালাক্রমে আমরা তাদের পড়ানোর দায়িত্বটা তো নিতে পারি, তাই না!

– হুম ঠিক। তারপরও সবার সাথে আলাপ করে নিলে ভালো হয়।

তারা দুজনে আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে সেদিনের মত বিদায় নিল।

এেদিকে প্রবাসী বিভিন্ন লোকজন, ভ্রাম্যমাণ সংগ্রহ এবং ফেসবুক পেইজে আহবানের মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ টাকা সংগ্রহ হয়ে গেছে ‘ফর পিপল’ ক্লাবের। অপুরা নিউ মার্কেট ও রিয়াজ উদ্দিন বাজার থেকে কয়েকশত কম্বল, সুয়েটার,মাফলার কিনে। প্রায় দুইশত মানুষকে সেগুলো বিতরণ করার পরিকল্পনাও করে ফেলেছে। শীতবস্ত্র বিতরণ উপলক্ষে পাড়ার বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগামী রোববার পাহাড়তলী রেলস্টেশন প্রাঙ্গনে শীতবস্ত্র বিতরণের দিন ধার্য্য করা হয়েছে। ক্লাবের অফিসে যাবতীয় শীতবস্ত্র সামগ্রী রাখা হয়েছে। ক্লাবের সামনে বড় একটা ব্যানারও টানানো হয়েছে।

অপু আজিমকে বলল, তাহলে আমরা তো অনেকটুকু কাজ করে ফেলেছি।

– হুম, এখন এগিয়ে যাওয়ার পালা

– আমরা অনেক কষ্ট করেছি গত কয়েক মাস যাবত শুধুমাত্র গরীব মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য এখন সফলতা দেখার পালা।

সেদিন রাতে তারা সবকিছু গুছিয়ে অফিস রুমের তালা বন্ধ করে যার যার বাসায় চলে গেল। পরদিন সকাল দশটায় পাহাড়তলী স্টেশন প্রাঙ্গনে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচী হবে। বেশ খুশি মনেই তারা বাড়ীতে গেল। স্টেশন পাড়ার লোকজনের মুখে মুখে ফর পিপলের ছেলেপেলেদের প্রশংসা।

সেদিন রাতে ঘুমানোর আগে একজন বয়স্ক লোক তার স্ত্রীকে বলছে, ‘কোনদিন তো কেউ একটা লুঙ্গিও দেয় না। ওই দেখো পোলাগুলি কত্ত ভালা, হেরা আমাগো লাইগা কত্ত কিছু করতাছে। ’’

তার বউ বললো, ‘আইচ্ছা হেগুনের এত গুণ গাওনের দরকার নাই কা। পরে আবার মুখ দোষ পড়ইব।’

আজ ফর পিপলের শীতবস্ত্র বিতরণ করার দিন। সব কিছু আগে থেকেই প্রস্তত। সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রধিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গকে শীতবস্ত্র বিতরণের দিন উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বস্তির লোকজনের মুখেও হাসি তাদের এই শীতে আর কষ্ট করতে হবে না।

সকালবেলা অপু ও তার বন্ধুরা ফর পিপল অফিসের সামনে গিয়ে দেখে পুরো অফিস কারা জানি লন্ড ভন্ড করে দিয়েছে। এতগুলো কম্বল, সোয়েটার ও মাফলর সব গায়েব। সোয়েটারের প্যাকেটগুলো মেঝেতে পড়ে আছে। কম্বল দুই একটা রেখে আর সব নিয়ে গেছে। মাফলারগুলোর বেশিরভাগই নিয়ে গেছে।

ফর পিপলের অফিস রুমের তালা ভেঙ্গে ডাকাতরা এই কাজটি করেছে নিশ্চিত হয়েছে অপুরা। ক্লাবের সকল সদস্যের চোখে পানি এসে গেল। গত তিন মাস যাবত শুধুমাত্র শীতবস্ত্র বিতরণ করার জন্যই এই ক্লাবের সদস্যরা দিন রাত এক করে চাঁদা সংগ্রহ করেছে। পাড়া মহল্লা, বাজার ঘাট, স্কুল কলেজ, পাড়ার ধনী লোক কত জনের কাছে তারা শীতবস্ত্র বিতরণ করার জন্য চাঁদা সংগ্রহ করতে গিয়েছে তার হিসাব নেই। ডাকাতরা কি মানুষ না! ক্লাবের সদস্যরা চিন্তা করে, ডাকাতরা এই গরীব মানুষের অধিকার কেনো হরণ করল! তা ভেবে কুল পায় না ক্লাব সদস্যরা। তারা আরো ভাবে, কার ইশারায় হয়েছে এমন ঘৃণ্য দুর্বৃত্তায়ন! কখনো কি জানা যাবে কারা এই শীতবস্ত্র লুটপাট করেছে। কিংবা ফর পিপলের সদস্যরা কি আর কখনো কাউকে শীতবন্ত্র বিতরণ করার কথা ভাবতে পারবে কিংবা তারা যে বস্তির ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করার উদ্যোগ নিবে ভেবেছিল তা কি বাস্তবায়ন করতে পারবে! অপুরা ভাবে, মানুষের উপকার করতে চাইলে হয়তো আরো বড় বাধা আসতে পারে। এসব ভাবলেই তো গা শিউরে উঠে। কি এসব বাধা উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে?

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত