স্বস্তির অনুভূতি

রাজশাহী নগরের রোড ডিভাইডার গুলোতে যে বিভিন্ন পাতাবাহার কিংবা হাল্কা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ লাগানো হয়েছে, যা ইট কাঠ পাথর কিংবা কলকব্জা, গাড়ি-ঘোড়া কিংবা যান্ত্রিক কোলাহল, নাগরিক জীবনের জটিল সব স্বাদ, রুচি, গন্ধ কিংবা ব্যকরন- ইত্তকার সকল কিছুর সাথে পাল্লা দিয়ে প্রকৃতির নৈসর্গিক দিকটা জানান দিতে চায় কিংবা মাঝে মাঝে জটিলতার সাথে সরলতার, যান্ত্রিক জীবনের সাথে প্রকৃতির অনুপাতটা সমান রাখার জন্য আপ্রান চেষ্টা চালায় এবং অবশেষে হেরে যায় এবং এই হেরে যাওয়ার পরেও যে নগরের যন্ত্র, মানুষ কিংবা কোলাহলকে একটু হলেও প্রাকৃতিক স্পর্শ দেয়ার গর্বই যে প্রায় প্রতিকূল পরিবেশে, মানব পরিকল্পনায়-পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা প্রাকৃতিক উদ্ভিদ গুলোকে বাঁচার শ্বাস যোগায় একথা ভাবতে ভাবতে কোর্ট স্টেশন থেকে তেরখাদিয়া, বর্ণালি কিংবা রেলগেইট হয়ে ভদ্রা আবাসিক কিংবা জিয়া পার্কে যাওয়ার পথে সম্পূর্ণ গ্রামীণ এবং নৈসর্গিক সৌন্দর্যে বেড়ে ওঠা এক বিধ্বস্ত তরুনের মনে পরে। রিক্সায় চেপে গোধূলি বেলায় নগরের এইসব প্রশস্ত রাস্তায় চলার সময় এক ধরনের অজানা অনুভূতি তার মনের মধ্যে এক ধরনের বিরক্তি সৃষ্টি করে এবং সেই অনুভূতির সন্ধান করার জন্য যখন তার ভিতর থেকে অনবরত অত্যধিক চাপ আসতে থাকে এবং যাপিত জীবনের সকল কোলাহল ভুলে যখন সে সেইসব বিঘ্ন সৃষ্ট করা অনুভূতির সুলুক সন্ধান করার চেষ্টা করে তখন নগরের যানবাহন কিংবা চিৎকার, চেঁচামেচির শব্দ তার মনকে অনুভূতির উৎস সন্ধান থেকে বিচ্যুত করে এবং অনুদ্ঘাটিত সেই অনুভূতি তার মনে পাথরের মত চেপে বসে। অভ্যন্তরীণ এইসব চাপ এবং ব্যস্ত শহরের যন্ত্রনায় সে খেয়াল করে দেখে যে তার ভিতরে বিরক্তি সৃষ্টি করা সেই অনুভূতির মধ্যে শুধু বিরক্তির উপাদান তৈরি হয় এক ধরনের শব্দ থেকে যেখানে দেখা যায় পিচের রাস্তায় ব্যটারি চালিত অটো রিক্সা দ্রুত গতিতে চলার ফলে রিক্সায় যে এক ধরনের ভাইব্রেসনের সৃষ্টি হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আহরিত জ্ঞান ধার করে তার অবচেতন মন হিসাব করে দেখে যে এই রিক্সায় তার পাশে অবশিষ্ট সীটে তার ওজনের সম পরিমান ভর স্থাপন করলে এই ভাইব্রেসন অনেকাংশেই প্রশমিত হয়, তখন সে খানিকটা স্বস্তি অনুভব করে। রিক্সার চাকার সাথে পিচ রাস্তার এই অনিবার্য ঘর্ষণের ফলে অহেতুক এই স্পন্দন প্রশমনের জন্য অতিরিক্ত ভর স্থাপনই যেখানে সবচেয়ে সহজতম উপায়, সেখানে মানব মনের সীমাবদ্ধতার কারনেই হোক কিংবা উচ্চাভিলাষের কারনেই হোক সে দেখে যে, যেকোনো ধরনের বিশালাকার পাথর কিংবা অতিশয় ভারী বস্তুর কাল্পনিক স্থাপনও যখন তার মনে কোন মানসিক শান্তি স্থাপন করতে পারে না, তখন তার মনের মধ্যে এক ধরনের সুক্ষ আপত্তিবোধ জেগে ওঠে এবং এই মানসিক শান্তি অর্জনের জন্য তার মন রাজশাহী থেকে রাজধানী শহর ঢাকায় কাল্পনিক যাত্রা করে কল্যাণপুর পৌঁছানোর পর এবং সেখান থেকে দেড় দুই কিংবা তিন ঘণ্টা লোকাল বাসে, ভ্যাপসা গরমে ঘেমে পলাশীর উলটো পথ, কিংবা নাজিমুদ্দিন রোডের নীরব হোটেলের সামনে, লালবাগ কিংবা আজিমপুর মোড়ে পোঁছালে, সেখানে তার জন্য অপেক্ষমান হালকা বেগুনি-নীল শাড়িতে, কাল টিপে কিংবা খোলা চুলে দাড়িয়ে থাকা কোন অপরূপ মেয়ে যখন ঠোঁটের কোণায় এক পশলা হাসি নিয়ে তার রিক্সার সীটের বাম পাশে উঠে বসে, তখন ঢাকার অসহনীয় যানজট আর গরমের চাপে ঘামে ভেজা শরীরেও এক ধরনের স্বস্তির অনুভূতি হয় এবং এই স্বস্তি যখন শরীর অতিক্রম করে হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরে গিয়ে কোন এক তন্তুতে স্পর্শ করে তখন তার মনে যে শীতল স্পর্শের ছোঁয়া লাগে সেটা শুধু মাত্র পাশে বসা তরুণীর জন্যই নাকি অন্য কোন কারনে সেটা তার মনকে পুনরায় বিক্ষিপ্ত করে এবং সে অধিকতর মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করলে দেখতে পায় যে তার পাশে বসা তরুণীর মাঝে সে তার বিগত, আগত কিংবা অনাগত সকল প্রেমিকার ছায়া খুজে পায় এবং তার মন তখন ঢাকায় স্থির না থেকে কখনও রংপুর, কখনও ময়মনসিংহ শহরে বিগত প্রেমিকাদের স্মৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করার পাশাপাশি অন্য কোন অচেনা শহরে পরিভ্রমণ করে, যেসব শহরে তার অনাগত প্রেমিকার উচ্ছল হাসি তাঁকে আঁকড়ে ধরে।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত