বিপ্লবী বাতচিত

– ভাই আপনি চে’ না?
– হুম
– মানে আপনিই আর্নেস্তো গুয়েভারা ডি লা সেরনা?
– হুম আমিই
– ওরি খাইসে, আমিতো ভাই আপনার বিরাট ভক্ত। আমার কাছে আপনার ১৭ টা টি শার্ট আছে
– আমার টি শার্ট তোমার কাছে? আমারতো এতগুলো টি শার্ট ছিলো না
– হে হে হে ভাই, কি যে কন, আপনার টি শার্ট না। আপনার ছবি ওয়ালা টি শার্ট। আজিজ থেকে কিনছি।
– আজিজ কে তোমার বন্ধু?
– না আজিজ মার্কেট
– ও আচ্ছা
– চলেন ভাই একটা সেলফি তুলি
– সেলফি? তুমি কে বলতো
– আমি আক্কাস
– তাতো বুঝলাম। কিন্তু তুমি করো কি হে ছোকরা?
– আমিও ভাই আপনার লাইনের লোক
– আমার লাইনের? তুমি কি ডাক্তার নাকি?
– না ভাই, আমিও আপনার মতো বিপ্লবী
– বিপ্লবী? বাহ, তা তুমি কোন ফ্রন্টে বিপ্লব করছো?
– না মানে ভাই, আমি আসলে একজন সাবেক বিপ্লবী
– সাবেক বিপ্লবী? ও তাহলে তুমি বিপ্লব করে ফেলেছো?
– না মানে, বিপ্লব প্রায় হইয়াই যাইতেছিল, অল্পের জন্য হইলো না
– তাই নাকি? ব্যাপারটা একটু খুলে বলোতো
– বছর সাতেক আগের কথা। আমি তখন ইন্টার পাস কইরা ভার্সিটিতে ভর্তি হইছি। তখনই মুকলেচ ভাই আমারে রিক্রুট করলো
– বাহ, তারপর
– আমরা সাতজন তখন অগ্রগামী কর্মী। সবারই তখন এক চিন্তা লেনিন হইতে হবে
– লেনিন হতে হবে? ইন্টারেস্টিং.. তারপর?
– আপনে আবার মাইন্ড কইরেন না। লেনিন আমাদের আদর্শ হইলেও, ফ্যাশন আইকন ছিলেন আপনে
– কি রকম?
– আমরা তখন পুরাই আপনার মতো। আপনার মতো চুলের স্টাইল, আপনার মতো ক্যাপ পরি, আপনার মতো সারাদিন গোল্ডলিফ সিগারেট ফুকি
– গোল্ডলিফ সিগারেট? আমি আবার কবে এইটা খাইতাম? আমিতো চুরুট খাই
– ওই একই। যাই হোক তখন আমাদের বিপ্লবী জোস তুঙ্গে। সারাদিন সিগারেট ফুকি আর দুই বেলা টং দোকানে বাটার বন দিয়া চা খাই। গোসল করি না। দাঁত টাত মাজি না
– দাঁত মাজতে না কেন? দাঁত না মাজাতো খুব খারাপ। আর বিপ্লবের সাথে দাঁত মাজার কি সম্পর্ক?
– আরে দাঁত মাজার সময় কই? বিপ্লব তখন সন্নিকটে। এই হলো বলে…
– তা শেষ পর্যন্ত বিপ্লব হলো না কেন?
– আর বইলেন না। মুকলেচ ভাই। সেই মুকলেচ ভাই যার হাত ধরে বিপ্লবের পথে আসলাম। সে বিট্রে করলো
– মানে শত্রু পক্ষে যোগ দিলো?
– না, আমার ৫০০০ টাকা মেরে দিলো
– কি?
– যারে ভাই ভাবছিলাম সে গাদ্দারি করলো
– তারপর?
– তারপর আমি এই লাইন ছাইড়া দিলাম
– আর তাতেই অতি নিকটে থাকা বিপ্লব থেমে গেলো?
– না মানে, অন্য অগ্রগামী কর্মীরাও এই লাইন ছাইড়া দিলোতো তাই
– কেন? মুকলেচ ভাই কি ওদেরও টাকা মেরেছে?
– না, ঠিক তা না। মফিজের গার্লফ্রেন্ডের সাথে ওর ব্রেক আপ হইয়া গেলো
– আহারে
– মোতালেব আম্রিকাতে ডিবি পাইয়া চইলা গেলো
– অ
– ভোলানাথ পড়াশোনাতে মন দিলো। এখন ও বড় ব্যাংকার
– বাহ
– আর মতিন বড় পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি হইয়া গেলো। এখন প্রমোশন পাইয়া স্পেশ্যাল কারেস্পন্ডেন্ট
– চমৎকার
– বুঝলেন ভাই, অল্পের জন্য বিপ্লবটা হইলো না
– হুম, ভাগ্যিস হয় নাই…
– কেন ভাই? কেন…..আচ্ছা বাদ দেন। চলেন কেএফসিতে চেকইন দিয়া একটা সেলফি তুলি
– না থাক, তুমি চেকইন দাও আমি গেলাম
– কই যাইবেন?
– এখান থেকে ৭ নাম্বার বাসে সোজা সদরঘাট। সেখান থেকে বরিশালের লঞ্চে ভোলা। ভোলা থেকে কাঠের নৌকায় কইরা সোজা লাতিন আমেরিকা। এখানে বেশিক্ষন থাকা নিরাপদ না। এখানকার বিপ্লবী জোসে ঝাজ খুব বেশি।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত