গোয়েন্দা তড়িত – একটি বাল্যবিবাহ রোধ  

-তড়িত দা, তোমার মত এত বড় গোয়েন্দা করছে এই কাজ..দূর এ হয় নাকি? হয়না, হওয়া উচিৎ না।
:আরে পাগলা, বিবেক, মানবতা, আইন বলে কিছু আছে তো। বিবেকের তাড়না অনেক বড় বিষয়, তাকে ইগনোর করা কষ্টদায়ক সে  কারণে এই কাজ করতেই হবে। তারোপর কালিডাঙ্গা থানার ওসি আমার অতি নিকটজন। তোর মনে নেই উনি যখন ঢাকাতে ছিলো তখন ঐ যে আমাদের সেই কেসটা সলভ করতে …
– সে মনে থাকবে না । নির্ঘাত প্রাণটা যেতো ওসি সাহেব সময় মত না পৌঁছালে – আমাদের দু’জনেরই । যাক, তুমিই ভালো বোঝকি করা উচিৎ, কোনটাতে নাক গলানো উচিৎ আর কোনটাতে গলানো উচিৎ পুরো শরীর। তা কিভাবে প্রমাণ করবে মেয়েটা যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি?
: আমি না, তুই প্রমাণ করবি। তুইই এখানে আসল প্লেয়ার। আজই চলে যা কলমাডাঙায়। এই নে বাসের টিকেট।

 

…কলমাডাঙার চেয়ারম্যান হাজী হুরমত আলী চৌধুরী সাহেবের  কন্যার বিবাহ বলে কথা। শোনা যায় হুরমুত আলী যৌবনকালে একজন ডাকাত ছিলো। কোন প্রমাণ নেই অবশ্য কোথাও- গুজবও হতে পারে। চলমান বাস্তবতা হলো আজ তিনি বিশিষ্ট একজন। সাথে নামের পেছনে স্বরচিত চৌধুরী। সকাল থেকেই আশেপাশের সবক’টা গ্রামের লোকের মাঝে হৈ হুল্লোর। বর আসবে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে। এই গ্রামের কয়জনাই আর জীবনে চর্ম চক্ষু মেলে হেলিকপ্টার দেখেছে !

হেলিকপ্টারটা হাই স্কুলের মাঠে নামবে। মাঠের চারদিকে সকাল থেকেই লোকে লোকারণ্য। বেলা মধ্যবলোয় পড়তেই হুরমত আলীর বাড়িতে আশেপাশের সব বড় বড় হোমড়া চোমড়াদের ব্যক্তিদের পদচারণা শুরু হয়ে গেলো। আশেপাশের গন্যমান্য, উচ্চপদস্থ, দলীয় পদপ্রাপ্ত কেউ  বাদ যায় নি।
অথচ সেখানে কেবল একজন উপস্থিত  নেই -তিনি লোকাল থানার ওসি, গন্যমান্যদের সিকিউরিটির ব্যবস্থা করে তারপর আবার তিনি থানায় চলে গেছেন…
ওসি সাহেবের সাথে থানায় বসে আছেন গোয়েন্দা তড়িত। ডিএনএ রিপোর্ট, কোর্টের ওর্ডার সব সুন্দর করে ফাইলে ঢুকালেন ওসি সাহেব।
তড়িত একটু চিন্তিত  কন্ঠে বললো- ওসি সাহেবে ওরা এখনও আসছে না কেনো?
-চলে আসবে। আমি বিশ্বস্ত লোক পাঠিয়েছি। বুঝলনে ভাই, এত এত গন্যমান্য সব লোক কিন্তু তারা  জেনেও কিছু বলতে পারছে না। স্কুল সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট সব একদম ১৮ বছর দেখিয়ে আপটুডেট করে রেখেছে। অথচ সবাই জানে কিন্তু । মাত্র ১৪ বছর বয়সে পড়েছে মেয়েটা। সে পড়তে চায়। তা আপনিই পারলেন। আপাতত এই ডিএনে রিপোর্ট আর কোর্টের অর্ডারে বিয়েটাতো থামানো যাবে…বাকীটা কোর্ট দেখবে..ঐতো ওরা চলে এসেছে।
তড়িত দেখলো একদম মেয়ের সাজে তার শিষ্য মিমিখ আর সাথে কিউট একটা মেয়ে, অপূর্ব সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে। দেখলে কেমন মায়া হয় । সে বুঝলো এই তাহলে চেয়ারম্যান কন্যা।
মিমিখ বলে উঠলো- তড়িত দা গত দশ দিন ধরে এই মেয়ে মেয়ে সেজে থাকা, আর সবচেয় কষ্ট  গত একটা ঘন্টা বিউটি পার্লারে একপাল মেয়ের মধ্যে মুখ ঢেকে বসে থাকা..উফ্ আর পারছিনা, মুক্তি দাও!
: চল চল, আগে বিয়েটা আটকাই।…

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত