সবুজ সিএনজি

সিএনজিতে উঠেই দোলা চোখ বন্ধ করে নিজের মধ্যে ডুব দেয়। কয়েক বছর আগে সবুজ গাছ-পাতায় ঢাকা এক সিএনজি নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছিল। দোলা নিজেও পত্রিকায় -টিভিতে নিউজ দেখেছে। খুব সুন্দর করে সাজানো ভেতর-বাহির। ভেতরে আয়না-চিরুনি থেকে শুরু করে মোবাইলে চার্জ দেয়ার ব্যবস্থাও রাখা। আর সিএনজির বডিতে-ছাদে বাহারি ফুলের আর ঘাস জাতীয় গাছ লাগনো। নিউজে দেখার পর দোলা নিজেও দূর থেকে ছুটে যেতে দেখেছে। মনে হয়েছে এক টুকরো সবুজ দৌড়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু হাতের নাগালে কখনো পায়নি। প্রায়ই দোলার মনে হতো এই সিএনজিটায় একদিন চড়তে পারলে বেশ হতো। তার নিজেরও টুকটাক বাগান করার শখ। ভেবে রেখেছে সেই থেকে-যদি কখনো তার দেখা পায় তাইলে জানতে চাইবে এই রোদ্দুরে গাছগুলো বেঁচে থাকে কী করে? কী তার গোপন রহস্য! আসেনি হাতের নাগালে আর। ভুলেও গেছে সেসব ইচ্ছার কথা। কয়েক মাস আগে হঠাৎ সেই সিএনজি একদম নাকের ডগার সামনে। কিন্তু সিএনজির দিকে তাকিয়ে দোলা পুরাই বেকুব হয়ে গেল। প্লাষ্টিকের ফুল-গাছ-ঘাস দিয়ে সাজানো। এতবড় ধোঁকাবাজি!

 

চোখ খুলে দেখে সামনে ঘণ জ্যাম। সিএনজিতে উঠে বসার পর বড়জোড় ৫০ গজ এগিয়েছে।  বাস, রিক্সা, প্রাইভেট কার, ভ্যান, ঘোড়ার গাড়ি সব একসাথে জড় হয়ে আছে। সিএনজিতে দোলা এবার উঠেছে অনেক দিন পর। সাধারণত রিক্সায় এদিক সেদিক যায়। দূরের যাত্রা হলে বাসার গাড়িটা নেয়। কিন্তু আজ গাড়িটা নেই। এদিকে সকালেই একটা জটিল ধরণের কাজে বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল। গন্তব্য পুরান ঢাকা। অফিসের গাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেছে। কখন কাজ শেষ হয় তার ঠিক-ঠিকানা নাই দেখে গাড়ি ছেড়ে দেয় দোলা। কিন্তু দুপুরের আগেই শেষ হয়ে যায় কাজ। অফিস ফিরতে হবে- ভাবে দোলা। জ্যাম এড়াতে দোলা একটা রিক্সা নেয়। কিছুটা পথ এগিয়ে সিএনজি নেবে ভাবে। রিক্সায় পথটা ভালোই এসেছে জ্যামবিহীন। যদিও মাথার ওপর ঠা ঠা রোদ তখন। টিএসটি নেমে তারপর সিএনজি নিয়েছিল অফিসের উদ্দেশ্যে মিরপুরে।

 

এক জায়গায় জ্যামে অনেকক্ষণ বসে থাকলে কখনো পাশের মানুষগুলোও স্বল্প পরিচিত হয়ে যায়। এক দুইবার চোখে চোখ পড়ে যায়। যদিও চোখের ভাষা একই সবার। গরম, বিরক্তি, সময়মতো পৌঁছানো যাবে কিনা -এইসব। দোলা এবার গা এলিয়ে দেয় সিএনজিতে। বাঁ পায়ের ওপর ডান পা দিয়ে যতটা আয়েশ করে যেভাবে বসা যায় সিএনজিতে সেভাবে বসে। বোঝা যাচ্ছে আজ এক জায়গায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট কেটে যাবে। পাশের সিএনজিতে দুইজন লোক বসে আছে সরাসরি না তকিয়েও বোঝা যাচ্ছিল। অন্য সময় তবু পাশ থেকে এক গাড়ি সরে আরেক গাড়ি জায়গা নিতো। কারণ ড্রাইভাররা প্রতিনিয়ত চেষ্টায় থাকে সামান্য ফাঁক-ফোকর পেলেই গাড়ির মাথা ঢুকিয়ে দিতে। কিন্তু আজকে সে অবস্থা না। যাকে বলে কঠিন জ্যাম। পিঁপড়াও মাথা গলিয়ে দিতে পারবে কিনা সন্দেহ! দোলা বুঝতে পারছিল পাশের ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে ওকে নিয়ে। দোলার এগুলো অভ্যাস হয়ে গেছে। এই শহরে কোন মেয়ে একা থাকলে, রেস্টুরেন্টে খেলে কিংবা রাস্তায় একা হাঁটলে পাশে থেকে কথা বলা-আড়চোখে তাকানো চলেই। দোলা পাত্তা দিলো না তাই। প্রায় চল্লিশ মিনিট হয়ে গেছে এক জায়গায়। পাশের সিএনজি থেকে এবার একজন বলেই উঠলো-আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

-জ্বী বলুন

-আপনার পায়ের নূপুরটা কি সোনার?

দোলা এক ঝলক প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, না।

সাথে সাথে প্রশ্নকর্তা চিৎকার করে উঠলো-‘কইছিলাম না এটা ইমিটেশন।‘ দোলার দিকে তাকিয়ে বলে এবার। আমরা দুইজন বাজি ধরছিলাম। আমি শিওর ছিলাম এটা ইমিটেশন। হঠাৎ সিগনাল ছেড়ে দেয়ায় সিএনজি জোরে টান দিয়ে চলে যায়। ওর মধ্যেই শোনা যায় প্রশ্নকর্তা পাশের জনকে বলছে-মানুষ সোনা গলায় দিতে পারে না, আর পায়ে দিবে?

দোলা চলে যাওয়া সিএনজিটি দেখতে দেখতে ভাবে-বাজিতে আসলে কে জিতলো?

 

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত