অন্তর দ্বন্দ

কোন এক জোৎস্না স্নাত রাতে তিস্তা নদীর পাড়ে পুরনো বটগাছের নিচে একটা কুঁপি জ্বলছে , হালকা বাতাসে নিভে যাওয়া নিভে যাওয়া অবস্থা।আর সেই জোৎস্নায় ভিজতে ভিজতে  রুপালি চাঁদটার দিকে তাকিয়ে গাইতে ইচ্ছে করে নিজের লেখা গান,
”   আমি তার নাম দিয়েছি সুখ
যা্রে ভেবে ভেবে আমার হয়েছে অসুখ
যার চোখের কাজল কালোয় এসে হার মেনেছে

রাত
ও তার মূখোর হাসির নরম ছোঁয়া ভাল থাকার ফাঁদ
ও তার টোলের ভাঁজে মিশে থাকে সন্ধ্যা তারার আলো
যার একটু অগোচরে আমার মনে আঁধার কালো ”
তারপর ভাবি ইদানিং কেউ খোঁজ নেয়। আমিও কারো খবর নেই না। কেন নেওয়া হয় না জানা নেই।যন্ত্রনির্ভর পৃথিবীর যান্ত্রিকতায় আমরা সবাই মূহ্যমান। তখন নীরবে কয়েক লাইন বিড়বিড় করে বলে ফেলি,
কেউ নেয় না আমার খোঁজ,
আমি গল্প লিখি রোজ
যে গল্পে শুধুই ক্লেশ
ছন্দহীন আমি অবশেষ
যেন মনে বেজায় বায়না
আমায় ভালো থাকতে দেয়না
তারপরও খুঁজে ফিরি
মনের গহীন বনে ভিড়ি
যেথা নিজের মতো আমি
বুনি শত কথার জাল
জানে সবই অন্তর্যামী
আমার মন খারাপের হাল
তারপর কোথা থেকে যেন একটা বাতাস এসে আমার সামনের চুলগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়। হটাৎ দমকা হাওয়া শেষে দেখি মেঘেদের ছোটাছুটি।সেখান থেকে ভেসে আসে অপার্থিব কন্ঠ।সে আমায় কবিতা শোনায়,
মেঘের উপর গড়ব বাড়ি, ইচ্ছে হলেই এসো|
জনম ভরে কাঁদব না হয় একটু ভালোবেসো|
বিষাদ ভরা অশ্রু চোখে সারাটিক্ষণ রাখব,
তুলোর চেয়েও নরম মনে তোমার ছবি আঁকব|
একটু  পাশে বসো না হয় ভরিয়ে দিতে বুক,
আর কি বা চাই এর চেয়েও আছে বেশি সুখ?
দূঃখ গুলো দিও আমায় রাখতে সযত্নে ,
বিনিময়ে খুশি থেকো রেখো একটু মনে|
নিকষ কালো আঁধার রাতেও তোমায় খুঁজে পাই,
চোখ বুজলেও তোমায় দেখি চোখেই আছো তাই|
তারপর সেই কন্ঠ থেমে গেলে আমি চারপাশে হাতড়াই কিন্তু নদীর স্বচ্ছ জলে সামনে থাকা আমার ছায়াটুকু ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাই না। আমি যেতে চাই সেই অপার্থিবার সাথে, তার মেঘেদের দেশে।সে যদি চলেই যায় তবে কেন আমায় কবিতা শোনায়? আমার ঘোর কাটে।ভাবি আমি তো একাই ছিলাম। আমার সাথে ছিল নদীর ধারে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা বোবা অশ্বথগাছগুলো, সেগুলো তাদের পাখা দোলায়। দূর থেকে ভেসে আসা শেয়ালের ডাকে হুহু করে উঠে বুক। কলঙ্কের দাগ লাগানো রুপালি থালার মত  চাঁদটা ফিনিক ফোঁটা জোছনা দেয়। কখনো বা নদীর কলকল শব্দের অতিরঞ্জিত ধ্বনিগুলো মনকে উসকে দেয়। আমি এদের সঙ্গ করেই থাকি।এরাই আমার সঙ্গী।যাদের সঙ্গ পেয়ে আমি নিঃসঙ্গতায় ডুবে থাকি।

রাহাত শাহরিয়ার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত