বেঘর

‘মা,ওমা,মা তুমি গেছো আমাদের পুরান বাসায় আজকে?’,রবি গামছায় তার গন্ধমাখা বগল মুছতে মুছতে বললো আরো -‘ভাত কি দি মা?’

‘ডাইল আছে,আলু ভাজি আর ডিম ভাজি  একটা ভাজি করে দিই খাড়া”,-মা বললো।মাকে চিন্তিত দেখে রবি ফের জিজ্ঞেস করলো কি ভেবে যেন,-“মৌমিতা দের কি অবস্থা মা?”যদিও রবি জানে মৌমিতা রা আর সেখানে নেই।রবি যেন মায়ের মুখে দেখতে পায় মৌমিতা দের প্রস্থান,মায়ের শীর্ণ মুখরেখা যেমন রবির চোখ ফাঁকি দিতে পারে না ঠিক তেমন ই রবি দেখতে পায় মৌমিতার বড় ভাইটাকে,অদ্ভুতভাবে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া প্রণব দাদা;ছোটবেলায় খুব টিটকারি মারতো রবি কে,রবির আজো মনে পড়ে প্রণব দার ঝোল এ ঝাল বাড়ানো বাড়াবাড়ি প্রশ্ন-‘কিহ রবি?বড় হয়ে কি হবি?’
রবির খুব রাগ হোত তখন,মনে হোত যেন প্রণব দা তাকে বলতো তুই এই জীবনে বড় হয়ে ঘোড়ার ডিম হবি।প্রণব দার সুস্বাস্থ্য কে রবি  ঈর্ষা করতো।

‘দুই বছর ধরি কোনো ভাড়া দেয় ন ওরা,বাসাত দুইজন লোক পাঠায় জমিদারে পরে,জিনিস্পত্র বাইর করে ওগো,পরে একদিন ওরা কি কাজে সবাই বাইর হইলে হেই সুযোগে বোলে অতেরা তালা মারি দেয়’।

রবির বিস্ফোরিত চোখের ভাষা গিয়ে ঠেকলো রবির মুখে-‘কিই মা?ওরা কই থাকলো তাহলে?’

মা ডিম টুকু ভেজে প্লেট এ লেপ্টে দিয়ে বললো- “সিঁড়িতে”!

রবি অবাক হয়, রবি অবাক হয়ে যেন মাকেই দোষারোপ এর ভংগিতে জিজ্ঞেস করে-” ওদের কেউ থাকতে দিলো না?”

অতঃপর মা ঘিন্নার স্বরে বলে-“কে দিবে”?রাগের স্বরে মা আরো বলে-“এইজন্য ছেলেমেয়েদের কে আগে থেকে অভ্যাস করাইতে হয় টুকটাক কাজ করার”।

মনে মনে রবি প্রণব দার হাড্ডিমার্কা শরীর,ঢিলে হয়ে যাওয়া দুধ,শোয়ানো গরুর মতো তেরচা চোখ,আঠা আঠা অশ্রু,টুটো ফুটো গেঞ্জি,থেতলে যাওয়া স্বর -এসব এসব নিয়ে ঝল্পনা করে,আর গঞ্জনা করে!
এরপর রবি শুধু  একটা ঢোক গিলে মাকে বলে-“তারপরে মা,তারপরে”?

 

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত