শামসুর রাহমান স্মৃতি পদক

হ্যালো, আপনি কি কবি যাবেদ য়ারিফ বলছেন?

জি। আপনি…?

আপনি আমাকে চিনবেন না। আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, আপনি শামসুর রাহমান স্মৃতি পদক- ২০২০ এর জন্য চূড়ান্ত ভাবে মনোনীত হয়েছেন।

কী বলছেন? এই পদকের নাম…!

শুনেননি তো? ঠিক তাই। এ বছর থেকেই এই পদকটি প্রবর্তিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠা বর্ষে আমরা এই পুরষ্কারের জন্য বিশেষ করে তরুণদেরকে নির্বাচিত করছি। আপনার ‘এক প্যাকেট মায়াবড়ি ও অন্যান্য কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য কাব্য শাখায় আপনাকে এ সম্মানে ভূষিত করা হচ্ছে।

তা আপনারা কবে নাগাদ দিচ্ছেন?

ফোনে আপনাকে এ সম্পর্কে আপডেট জানানো হবে স্যার। ভালো থাকবেন।

সে রাতে আর ঘুম হয় না তার। শামসুর রাহমানের নামাঙ্কিত পদক একটা ঝুলিতে থাকলে মন্দ হয় না। কাভার পেজে, ব্লার্বে লেখা থাকবে ‘শামসুর রাহমান স্মৃতি পদক – ২০২০ বিজয়ী কবি যাবেদ য়ারিফের… ‘ আর ভাবতে পারে না সে।

পরদিন তার এককালের ক্লাসমেট পৌরসভার কাউন্সিলর শহীদুলের সাথে দেখা। দেখা হতেই বুকে জড়িয়ে ধরে তাকে।

কাম তো একটা কইরা ফেলছি দোস্ত। আমি তো সমাজসেবায় ওসমানী স্মৃতি পদক পাইয়া লাইছি। খুশিতে ডগমগ কাউন্সিলর শহীদুল।

কস কী দোস্ত, সেদিন না তুই রিলিফের মাল পাচার…!

আরে, ওইডা ত ষড়যন্ত্র বেডা!

যাবেদ য়ারিফ অবাক হয়। অনুষ্ঠানে লোকজন খুব একটা নেই। জাতীয় পর্যায়ে যারা খ্যাতিমান তাদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না। সভাপতির আসনে বসা লোকটা নাকি ‘সমগ্র বাংলাদেশ কবি পরিষদের’ সভাপতি, এস আর সঞ্জু। আর সামনে যে কয়জন তরুণ বসা তারা সকলেই গল্প উপন্যাসে অসামান্য অবদান রেখেছেন! যদিও সে কাউকে চিনতে পারল না।

আপনি কোন উপন্যাসের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন? একজনকে জিজ্ঞেস করে সে।

ভুল করেছি ছাত্রজীবনে প্রেম করে। আমার প্রথম উপন্যাস। গর্বিত ভঙ্গিতে উত্তর দেন পুরষ্কারজয়ী ঔপন্যাসিক।

সভাপতি তার বক্তৃতায় জানান শামসুর রাহমান পদক প্রদানের মাধ্যমে তরুণ কবি, লেখকগণকে অনুপ্রেরণা দেওয়াই মূলত তাদের লক্ষ্য ইত্যাদি ইত্যাদি। যাবেদের কবিতাও পাঠ করে একজন –

‘একবার মায়াবড়ি খাইসিলাম বাকীটা ইতিহাস এখন খালি মায়া মায়া লাগে…।’

বাড়ি ফেরার পথে পদকটার দিকে একবার চমকে তাকায় সে। ‘শামছুর রহমান স্মীতি পদক – ২০২০’ লেখাটা তার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। মেজাজ আর ঠিক রাখতে পারে না সে। ঠাস করে পদকটাকে একটা আছাড় দেয় রাস্তায়। তারপর ছুড়ে ফেলে পাশের নর্দমায়। নোংরা পানির মধ্যে পড়ে থাকা পদকটার দিকে তাকায় একবার। কাউন্সিলর শহীদুলের কাছ থেকে ধার করা দশ হাজার টাকার কথা মনে পড়ে কবি যাবেদ য়ারিফের।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত