মর্জিনা উপাখ্যান

একচালা কুটিরটা কয়েকটি সুপারি গাছের পালার উপর ভর করে কোনোরকম দাঁড়িয়ে আছে। পুরনো জীর্ণ- শীর্ণ ঘরটা যতই শ্রীহীন হোক না কেন এর দিকে গ্রামের জোয়ান ছেলেপুলেরা সবাই আড়ে আড়ে চায়। উত্তর পাড়ার নবাব আলী বিশ বছর ধরে বিদেশ থাকে। অনেক পয়সা খরচ করে একটা ঘর তুলেছে গেল বছর। কী ডিজাইন সেই বাড়ির! তবুও সেই বাড়ির দিকে এত তৃষ্ণা নিয়ে কেউ তাকায় না।

জিল্লু তার দলবলসহ খড়ে ছাওয়া সেই বাড়িটির বাইরে উৎ পেতে থাকে। ঘন্টাখানেক আগে রশিদ মেম্বারের একমাত্র ছেলে জিল্লু সবাইকে অর্থাৎ আরজু, ফিরোজ আর কালাকে ফোন দিয়ে তাড়াতাড়ি আসতে বলে। আরজুর একটু ঝামেলা ছিল তাই সে গাইগুই করছিল প্রথমে। কিন্তু জিল্লুর ফোনের পর না করার সাহস হয়না কারোর।

কী অইছে জিল্লু ভাই? ফিরোজ একটু অস্থির হয়।

কথা কইস না। মাগী ঘরের মাইঝে লাং ঢুকাইছে। আজকা শালীরে… কথা শেষ করে না জিল্লু।

এই কথা শুনে সাহসী হয়ে উঠে কালা। এতদিন জিল্লুর খাতিরে কিছু বলেনি। নডী দেহি তলে তলে টেম্পু চালায়- মন্তব্য করে সে।
শুনে হেসে উঠে আরজু আর ফিরোজ – হ হ আম্রা কইলে হরতাল।

শালার পুতেরা থামবি তরা। খেঁকিয়ে উঠে জিল্লু। ধমক খেয়ে থতমত খায় তিনজনের দলটা।

জিল্লু বেশ কিছুদিন ধরেই ছগির আলীর বড় মেয়ে মর্জিনাকে দেখে দেখে রাখছে। এইতো সেদিন কলপাড়ে গোসল করছিল মর্জিনা। সকাল সকাল বলেই হয়তো অতটা সচেতন ছিলনা। তাছাড়া কলের চারধারে বাঁশের উপর অনেকদিন আগে দেয়া শুকনো কলাপাতারও কিছুটা দোষ ছিল।

ফলে এ রাস্তায় ঘন ঘন আপ-ডাউন করা জিল্লুর দৃষ্টি এ বাড়ির উপরেই পতিত হয় সময়-অসময়। স্ফীত স্তনের উপর কোনোরকম চাপিয়ে দেয়া শায়ার লাল কাপড় বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছিল। নীচে নেমে যাচ্ছিল ক্ষনে ক্ষনে। অপরদিকে নিজেকে সামলে নিতে ব্যর্থ হচ্ছিল জিল্লু। জৈষ্ঠমাসের পাকা আমের কথা মনে পড়ছিল তার।

জিল্লুর এতদিনে বিয়ে টিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু হঠাৎ করে মা’টা মরে গিয়েই যত বিপত্তি। দুই বার মেট্রিক ফেল করে গ্রামের অলিগলিতেই এখন সময় কাটাতে আগ্রহ বেশি তার। বাপ তার টিআর কাবিখার চাল, গম এদিক-ওদিক আর বিচার বৈঠকেই সময় পার করে।

রাতের আধার ধীরে ধীরে বাড়লে সরব হয় ফিরোজ। বিরক্ত হয়েই বলে, অহন কি বইয়াই থাকবা না ঘুঘুরে ধরবা?

খাড়ো, দেহি কেমনে ধরন যায়। ভাবতে থাকে জিল্লু।

কেম্নে বুঝলা ঘরর মাইঝে কেউ হামাইছে? আরজু জিজ্ঞেস করে।

বেডা ইহান দিয়া দিন কয়েকবার যাওয়া আওয়া পড়ে। এইত্ত ওই সময় কচু গাছের ছোবাডার মাইঝে মুত্তাম বইছি। দেখলাম দুয়ারটা খুইল্লা কেডা জানি ধুম কইরা হামাইয়া গ্যাছেগা।

চিনতা পারছনি জিল্লু ভাই? আম্রা গ্রামের নি?

আরে না, চিনতা পারছিনা রে। আম্রা গ্রামের কার ইমুন শাবাস অইব আমার মালের মাইঝে হাত দ্যায়?

তুমি মিয়া খালি চাইয়াই দেখলা আর কাম করল কেডা না কেডা! খোঁচা দেয় কালা।

কালার এধরণের কথায় তেতে উঠে জিল্লু। কালা অন্যসময় হলে এভাবে বলতে পারতো না। চল চুদির ভাইরে দেইখ্যা দিমু।

ধীরে ধীরে তারা আগায় দরজাটার দিকে।

দরজার টক টক শব্দে সচকিত হয় মর্জিনা। বুকের উপর ক্লান্তিতে সমর্পিত একটা দেহ। কিছুক্ষণ পূর্বের যুদ্ধের চিহ্ন তখনো সারা শরীরে, আলুথালু কাপড়ে। দ্রুত নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ঠেলে সরিয়ে দেয় উপর থেকে।

আমার কথা ত শুনো না। দেখো কেডা ডাকাডাকি করে!

স্বামীর সংসারে টিকতে না পেরে ঢাকার এক গার্মেন্টসে কিছুদিন চাকরি করে ফিরে আসে মর্জিনা। গাজীপুরের কিছু বদমাশের নজরে পড়ে গেছিল সে। মা মরে গেছিল সেই ছোট বেলায়। বাপটা বাড়ি ফেরার পর। নানা ঘাটের পোড় খাওয়া মর্জিনা সবশেষে তার বাহুলগ্না হয়। এখন বুঝে সে, প্রভাব প্রতিপত্তির দরকার তার, বয়স না।

ঠেলা খেয়ে আস্তে আস্তে সোজা হয় লোকটা। সারা শরীরে তার মৌতাত। কোনো মতে ট্রাংক থেকে কাগজটা হাতে নিয়ে দরজাটা মেলে হাঁক দেয়, কোন শাওয়ার পুতেরে এইখানে ডিস্টাপ দেয়?

কন্ঠটা চেনা লাগে সবার। অন্ধকার সয়ে এলে আবছা আলোয় চেহারাটা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয় সবার সামনে।

এফিডেভিটের কাগজ হাতে চোখ কুঁচকে বাইরে তাকায়, দেখার চেষ্টা করে রশিদ মেম্বার।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত