সোনার মেয়ে

কাঁচা সোনার রং এর সাথে যে মানুষ তুলনা দেয়। তুলনাটা যে একেবারে মিথ্যে নয় তা বুঝেছিলাম ওই শেষ বিকেলের সর্বনাশা আলোতেই। বন্ধু’র বিয়ে। দুজনেই বাসায় মিথ্যেকে সত্য করে গড়ে দিয়ে চলে এসেছিলাম। ছাদের ঘরে বাসর। আমাদের সাজানোর আয়োজন দিতেই আমার হাসিতে ঠোঁট গাল ছেড়ে কানে গিয়ে ঠেকেছে। দরজা বন্ধ করেই কড়া সুরে বলে দিলো- “যাহ দূরে সর।” এহহ, আমি যেনো গায়ে পরার জন্যে মুখিয়ে আছি- “তুই ই দূরে থাক।” বলেই দুজনে ঘর সাজাতে লেগে গেছিলাম। এ এক যুদ্ধ’রে বাবা। সব ঝকঝকে তকতকে করে নিতে হবে, যেনো ঢুকেই রোমান্টিক পরিবেশ পায়। আর আমাদের রোমান্স তো দরজা বন্ধ করেই আটকে দিলো। ঘেমে নেয়ে দুজনে একাকার। কখনো কার্পেট তুলতে গিয়ে একজন আরেকজনের উপর পরি তো আবার ঘর বিছানা ঠিক করতে গিয়ে পায়ে পা পেঁচিয়ে পরি। দুই বেতাল সেই তাল সামলে নিতে নিতেই ঘর সাজিয়ে বিকাল। আমাদের রেখে সবাই যার যার কাজে হাওয়া, আর আমাদের কাজ এবার ঘর পাহারা দেওয়া।

নিজেরাই নিজেদের সাজানো বাসর ঘর দেখে মুগ্ধ। বেশি মুগ্ধ তারে দেখে। নাকে কপালে শিশিরের মতো ঘাম জমে মুখটা একেবারে শীতের সকাল বানিয়ে দিয়েছে। মুখের জমিন যেনো পুড়ে পুড়ে সোনা রঙ নিলো এই পরন্ত বিকেলে। ওমন রূপ দেখলে প্রকৃতিও পিছলে পরে যাবে। নইলে সূর্য অত দূর থেকে এমনে তার মুখে মাখামাখি করে? বাতাস ভিজে গালে লেপ্টে থাকা কয়টা চুল তুলে সরাবার জন্যে এমন হিংসে করে? কান ছুঁয়ে ঘাম বুঝি পিছলে গলা বেয়ে শরীরময় ঘুরে ঘুরে বেড়াবে বলে রওনা করে? সব যেনো আমাকে কায়দা করে দূরে রাখার আয়োজনে ব্যাস্ত তবু কোন টানে হুরমুরিয়ে পরি কে জানে? পিঠ ভিজে নীল ব্লাউজ আরো গাঢ় নীল হয়ে, চোখে তিব্র ভাবে লাগছিলো। চোখ সরাবো না মন সরাবো। এমন সময় বলে দিলো- “আয়, শাড়ির ভাঁজ টা ধরে ঠিক করে দে।” “তুই নিজেই ঠিক কর” -বললেও কেমনে কেমনে তার সামনে চলে গিয়েছিলাম বুঝি নি।

হাতে শাড়ি তুলে দিলো কি করে পেঁচিয়ে দিতে হবে তাও শিখিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু শাড়ি ভাজ করতে করেতে যে সামনে গিয়ে পরবো পায়ে পায়ে এমন’টা ভাবিই নি। ভাঁজটুকু হাতে নিয়েই চোখ দিয়ে নিচের কুঁচি ঠিক্ঠাক করার ইশারা দিতেই, ঝপ করে বসে গেলাম। নিচের কুঁচি ঠিকঠাক করতে চোখ ঠেকে গেলো কোমড়ে। এক তিল পিছল খেয়ে যেনো ঢেউ এর মাথায় উঠে বসে আছে। নীল আকাশে সূর্যের মতোই সে স্পস্ট, আর ততই জ্বালা ধরানো। এভাবে কেউ লুকায়া থাকে বুঝি? থমকে যাবার মতো করেই তিল’টা এমন এক জায়গায় আট্কে গিয়েছিলো যেনো আমাকেও আটকে দেবার ক্ষমতা রাখে। “মরে গেলি নাকি?” শুনেই মুখ দিয়ে বের হলো- “তিলটা” ব্যাস আর বলা হয়ে উঠেই নি। তার যেনো মনেই ছিলো এমন ভাব করে আঁচল ছেড়ে দিলো। যাহ শো শেষ। মুখটা কেনো আমার ফসকে গেলো এমন মোহময় সময়ে।

#mxesun #লাভ’য়ু
#ভালো_থেকো_ভালোবাসায়_যতনে

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত