তৈমুরের অভিশাপ -৫

পাঁচ.

বারশ এগার খৃস্টাব্দের মে মাস।

মে মাসের শুরুর দিকে সমগ্র চীনে বসন্তের ছোঁয়া লেগে থাকে। হাজারো রকমের রঙিন মনকাড়া ফুলে ছেয়ে গেছে উপত্যকা ও সমভূমি। দক্ষিণপূর্ব চীনের রাজ্য জুড়ে বসন্ত উৎসব আর আনন্দের অবিরাম কোলাহল। দিনে বাহারী ফুলের সমারোহ আর রাতে অগণিত লণ্ঠনের আলোয় আলোকিত চীনাদের ভূবন। দৈব আশীর্বাদপুষ্ট মহান যিন সম্রাটের অধীনে সুখ চঞ্চল চীনা জাতি।

এদিকে মোঙ্গল শিবিরে ব্যপক যুদ্ধের প্রস্তুতি। সন্ধ্যার পর পরই জেনারেলদের সাথে নিজের তাবুতে স্বয়ং খানদের খান মহান চেঙ্গিস খান যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনায় বসেছেন। নির্দেশ দিচ্ছেন যুদ্ধাভিযান সম্পন্ন করার খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে।
জেনারেল জোরগোদুই জেবেই এবং জেনারেল সুবুতাই বাম দিকের বাহু পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। তাদের মিশন হল সাম্রাজ্যের পূর্ব দেয়াল দিয়ে আক্রমণ পরিচালনা করা এবং যত দ্রুত সম্ভব পূর্বের দুর্গ দুইটি দখল করা। মূল প্রাসাদে পৌঁছাতে হলে এর কোন বিকল্প নেই। ডান বাহুর নেতৃত্বে থাকবেন জেনারেল চেনিয়ু লিউ। মাঝখানের মূল সৈন্যদলের নেতৃত্বে থাকবেন স্বয়ং চেঙ্গিস খান। প্রদীপের স্বল্প আলোয় একেকজন জেনারেলকে এক একটি আধিভৌতিক মূর্তির মত লাগছে।

খানের মাথায় কোন আবরণ নেই এ মূহুর্তে। তার পাতলা মসৃণ ফিন ফিনে লালচে চুল মাথা থেকে ঘাড় পেরিয়ে নেমে এসেছে। থমথমে যুদ্ধের পরিবেশেও খানকে যথেষ্ট উজ্জল আর প্রাণবন্ত দেখাচ্ছে। ঘণ্টা দুয়েক ধরে চলল পরিস্থিতির নানা রকম বিশ্লেষণ। জেনারেলরা নিশ্চিত হলেন যে, খানের কথামত অগ্রসর হতে পারলে অভিযানের সাফল্য নিশ্চিত। আর তাছাড়া মোঙ্গল জেনারেলদের প্রায় সবাই কঠিনতর যুদ্ধের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, তাই তাঁরা নিজেরাও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী আসন্ন বিজয়ের ব্যপারে।

সভাশেষে সবাই চলে গেলেও খানের ইশারায় জেনারেল লিউ তাবুতে আরও কিছু সময়ের জন্য রয়ে গেলেন। খুব আস্তে আস্তে অল্প আওয়াজে লিউর সাথে খানের বিশেষ কিছু কথা ও পরিকল্পনা সম্পন্ন হল। খানের আন্তরিক আচরণে লিউ খানিকটা মুগ্ধ খানিকটা অপ্রস্তুত। প্রখর ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই কঠিন হৃদয় মানুষটির মধ্যে যে এমন একটি কোমল রূপও আছে তা তিনি আগে ধরতে পারেন নি। খানের তাবু ছেড়ে বেরিয়ে যাবার সময় চেনিয়ু লিউর মত অভিব্যক্তিহীন মানুষের মুখেও এক টুকরো মৃদু হাসি লেগে রইল।

ভোর বেলায়ই বাম বাহুর দায়িত্বে থাকা সৈন্য দলের ঘোড় সওয়ার বাহিনীর একাংশ আগে রওনা হয়ে গেল। সৈন্য দলের পতাকা ও প্রতিরক্ষা জেনারেল সুবুতাই এর আয়ত্বে আর আক্রমণের কর্তৃত্ব জেনারেল জেবেই এর দায়িত্বে থাকল। দূর্গের কাছাকাছি পৌঁছাবার পর ঘোড় সওয়ার বাহিনীর আচমকা আক্রমণে দুর্গের প্রতিরক্ষা ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়ার পর পদাতিক সৈন্যদল সামগ্রিক দুর্গদখল নিশ্চিত করবে। সেভাবেই সাজানো আছে পুরো যুদ্ভাভিযান। দূর হতে দূর্গের আকৃতি দৃশ্যমান হতেই আচমকা চঞ্চল হয়ে উঠল বিশাল সৈন্যদলটি। ছোট আর শক্তিশালী পা বিশিষ্ট ঘোড়াগুলির পাঁজরে হাঁটুর খোঁচা দিয়ে আর চাবুকের আঘাতে আঘাতে ক্রমাগত গতি বাড়িয়ে তুলছে অশ্বারোহী বাহিনী । শত শত ঘোড়ার ছুটে চলার শব্দে বিস্তীর্ণ ভূমি প্রকম্পিত।

দুর্গ দেয়ালের পাশে অবস্থান নেয়ার পর তীর দিয়ে রক্ষীদের আক্রমণ করল মোঙ্গল বাহিনী । আচমকা অপ্রস্তুত অবস্থায় আক্রান্ত হয়ে প্রথমটায় দুর্গরক্ষীরা দিশেহারা হয়ে পড়ল এবং মোঙ্গল বাহিনীও আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জন করতে সমর্থ হল। কিন্তু আধঘণ্টার মধ্যেই দেখা গেল পরিস্থিতি আস্তে বদলে যাচ্ছে। সামরিক দিক থেকে দূর্গের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে যতটা শক্তিশালী ভাবা হয়েছিল বাস্তবে তার চেয়ে বেশী। উল্লেখযোগ্য প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হচ্ছে চীনা বাহিনী। মোঙ্গল সেনানায়করা বুঝতে পারছেন পরিকল্পনায় সামান্য পরিবর্তন না আনলে যুদ্ধে অচলাবস্থা দেখা দেবে। মূল লক্ষ্য অজন্য করতে হলে দূর্গ দখলে অধিক সময় ব্যয় করার কোন সুযোগ নেই। বলার অপেক্ষা রাখেনা, যে কোন মূল্যে দূর্গের প্রধান গেট ভেদ করতেই হবে। অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবার আগেই জেনারেল সুবুতাই দুর্গের প্রধান গেট ভাঙ্গার প্রক্রিয়া শুরু করলেন। জেবেই এর সৈন্যদল তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে গেট ভাঙ্গায় নিয়োজিত সৈন্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। প্রচণ্ড  মজবুত গেট ভাঙতে ভাঙতে দুপুর গড়িয়ে গেল। ভেতরে মোঙ্গল অশ্বারোহী বাহিনী ঢুকে পড়তেই পুরো অভিযান তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে লাগল। মোঙ্গলদের অদ্ভুতুড়ে ছোট আর ধারালো তলোয়ারের অভাবনীয় নৈপুন্যের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হল দূর্গরক্ষীরা। চীনা রক্ষীদের রক্তে প্লাবিত হয়ে দুর্গ যখন পুরোপুরি মোঙ্গল বাহিনীর দখলে ততক্ষণে শেষ বিকেল।

প্রথম দিনের মত অগ্রবর্তী বাহিনীর অভিযান ও যুদ্ধ দারুন সফলতার মধ্য দিয়ে শেষ হল। চেঙ্গিস খানের অগ্রসর হওয়া নির্ভর করছে বাম বাহুর অবস্থানের উপর। অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আজ আর অগ্রবর্তী অভিযানে যাওয়া সমীচিন মনে না করায় জেনারেল সুবুতাই দূত পাঠিয়ে দিলেন চেঙ্গিস খানের কাছে। দূর্গে পর্যাপ্ত রসদ রয়েছে। সৈন্যরা বিশ্রামের মাধ্যমে আগামী দিনের যুদ্ধ প্রস্তুতিকে শাণিত করছে। ধারণার চেয়ে কঠিন হয়ে গেছে দুর্গ দখল। পরবর্তীতে আরও সতর্ক পদক্ষেপের প্রয়োজন পড়বে। রাতে দুই জেনারেল জেবেই আর সুবুতাই পরিকল্পনায় কোন ত্রুটি আছে কীনা তার চুল চেরা বিশ্লেষণে বসলেন।
কিছু লোককে পাহারায় বসিয়ে সবাই বিশ্রামে চলে গেছে। বেঁধে রাখা ঘোড়াগুলি থেকে থেকে শব্দ করে উঠছে। ওগুলিকেও খাবার দেয়া হয়েছে। মধ্যরাতের পর পাহারার সৈন্যরা বিশ্রামে যাবে আর অন্যএকদল তাদের জায়গায় পাহারায় নিয়োজিত হবে। রাত্রিকালীন অগণিত ফানুসের উৎসবে ডুবে থাকা চীনবাসী আর যিন সম্রাট জানতেও পারলোনা মঙ্গোলীয় মৃত্যুর দূত তাদের ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে।

এদিকে জেনারেল লিউর মাথায় ঝড় বয়ে যাচ্ছে। পুরো অভিযানের সবচাইতে স্পর্শকাতর অংশটুকুর দায়িত্বে নিয়োজিত তিনি। এবং একাজে কোন অবস্থাতেই ব্যর্থ হওয়া চলবেনা। বস্তুত: তার পরামর্শেই অভিযানের এই মৌলিক লক্ষ্য স্থির করেছেন খান এবং তা সফল ভাবে সম্পন্ন করার দায়িত লিউকেই দিয়েছেন। রাজপ্রাসাদের পশ্চিমে সম্রাটের খাস কামরা অবস্থিত। তার পাশেই বিশেষ রত্মভাণ্ডারে মহামূল্যবান সব সামগ্রী সংরক্ষিত আছে। লিউ অভিযানে বের হয়েছেন সবচাইতে পরে। প্রথমে জেবেই এবং সুবুতাই এর অগ্রবর্তী দল। তারপর স্বয়ং চেঙ্গিস খান বেরিয়েছেন মধ্যবর্তী মূল সৈন্যদলসহ। সবার পর প্রায় বেলা শেষে লিউ বেরিয়েছেন। দুর্গ দুইটি অধিকারের পর সুবুতাই এর বাহিনী খান এর বাহিনীর সাথে মিলিত হয়ে একত্রে প্রাসাদ আক্রমণ করবে। প্রাসাসের প্রতিরক্ষা বূহ্য ধ্বংস করার পর যখন সমাপনি যুদ্ধ চলবে তখন লিউর ডান বাহুর বাহিনী প্রবেশ করবে। তাতে এক ধরণের রিজার্ভ ফোর্সের ভুমিকায় থাকবে ডান বাহু। এবং বিশেষ অভিযানের গোপনীয়তা রক্ষাও সহজ হবে।
লিউর ডান বাহুর সৈন্যদল প্রচলিত যুদ্ধে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ত্রিশজন সৈন্যের একটি চৌকষ দল নিয়ে লিউ নিজে রত্নভাণ্ডারে হানা দেবেন। সময়ের হিসেব কষে তাই চেঙ্গিস খান জেনারেল চেনিয়ু লিউ কে সবার পরে বের হতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ অঞ্চল সম্পর্কে পর্যাপ্ত জানা থাকায় লিউ তার সমগ্র যাত্রাপথ সর্বোচ্চ সংক্ষিপ্ত করে নির্ধারণ করেছেন।

পরদিন সকাল বেলা জেনারেল জেবেই একজন বিশেষ দূতকে খানের কাছে পাঠিয়ে পরবর্তী গন্তব্য ও পৌঁছাবার সম্ভাব্য সময় জানিয়ে দিলেন যাতে খান তার মূল সৈন্যদলসহ সেখানে সহায়ক বাহিনী হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারেন। বাম বাহুর দুইটি অংশকে আজও যথারীতি জেনারেল জেবেই ও জেনারেল সুবুতাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দুপুরের মধ্যে বাম বাহু খানের মূল বাহুর সাথে মিলিত হয়ে ইউশা দূর্গ ঘেরাও করল। দুইটি চক্রে সৈন্যদের সাজিয়ে দূর্গ অবরোধ করা হয়েছে। এই দূর্গে যিন সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সৈন্যদল মোতায়েন করা ছিল। প্রায় সাড়ে বারো হাজার সৈন্য শুধু দূর্গের অভ্যন্তরেই আছে। ফলে দূর্গ আক্রমণ একটি কঠিন যুদ্ধের সূচনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। দূর্গ অবরোধকারী প্রথম চক্রটি বাম বাহুর জেনারেল সুবুতাই নিয়ন্ত্রিত অংশ। দ্বিতীয় ও অপেক্ষাকৃত বড় চক্রটি খানের নিয়ন্ত্রিত মূল বাহিনীর দ্বারা তৈরী। জেনারেল জেবেই এর নিয়ন্ত্রণে থাকা পৃথক সৈন্যদল চক্রের বাইরে জরুরী ও তাৎক্ষণিক সহায়তার জন্য অবস্থান নিয়েছে। যুদ্ধ চলছে। আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে ধরিত্রী প্রকম্পিত। যেমনটা মনে হয়েছিল যুদ্ধ তার চাইতেও দীর্ঘায়িত হয়ে গেল। প্রতিরোধ আক্রমণের ওঠানামা চলতে লাগল কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করে। কখনো মোঙ্গলদের আক্রমণ তীব্রতর হয়ে উঠছে তো কখনো চীনাদের প্রতিরোধ শক্তিশালী হয়ে ওঠছে। যুদ্ধের ভারসাম্র দুইদিকে টালমাটাল করতে থাকল। প্রায় দুই দিনের ক্লান্তিকর যুদ্ধের পর অবশেষে ইউশা দূর্গ মোঙ্গলদের হস্তগত হল। অল্প কয়েকজন বন্দী ছাড়া যিন সৈন্যদের প্রায় সবাই নিহত হয়েছে। পর পর দুইটি সফল যুদ্ধ জয় মোঙ্গল সৈন্যদের মনোবল অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু লোকবল ক্ষয়ও কম হয়নি।

অতিরিক্ত দুই দিনের বিশ্রাম শেষে চতুর্থ দিন মোঙ্গল বাহিনী ইয়েহুলিং এর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যিন রাজধানী ছাড়া সেখানেই সর্বোচ্চ পরিমাণ সৈন্য সমাবেশ রয়েছে এবং মঙ্গোল বাহিনীকে তা মোকাবেলা করতে হবে। টান টান উত্তেজনা আর যুদ্ধ জয়ের উন্মাদনা নিয়ে মঙ্গোল বাহিনী প্রবল বিক্রমে এগিয়ে যেতে থাকল। ইয়েহুলিং এর যুদ্ধ অধিক সৈন্যের সাথে হলেও সম্মিলিত মঙ্গোল আক্রমণে তা মুহুর্তেই একপেশে হয়ে পড়ল। ছত্রিশ হাজার সৈন্যের যিন বাহিনী মাত্র একদিনেই পরাজয় বরণ করে নিতে বাধ্য হল। এমনকি পুরো দিনও লাগেনি। সন্ধ্যার আগেই ইয়েহুলিং মঙ্গোলদের করায়ত্বে চলে এসেছে।

যদিও জয় ধারাবাহিক ভাবে আসছে তবুও যতই দিন যাচ্ছে ততই চেঙ্গিস খান ভেতর ভেতর অস্থির হয়ে উঠছেন। জেনারেল লিউর অগ্রসর হবার খবর তিনি দূত মারফত পেয়েছেন। তবে তার মনের একটা অংশ পড়ে রয়েছে লিউর সাথে। লিউর হাতেই রয়েছে জয়ের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবার আসল চাবিকাঠি সংগ্রহের দায়িত্ব। চেঙ্গিস খানের মনের অবস্থা সম্পর্কে তার জেনারেলদের কোন ধারণাই নেই। লিউ ছাড়া কেউ জানেনা খানের মস্তিষ্ক কী নিয়ে ব্যস্ত।

বিশ্রাম ঘোষণা করলেন চেঙ্গিস খান। নির্দেশ জারি করলেন – একদিন পর সম্মিলিত বাহিনী বেইজিং এর সমতল প্রান্তরের দিকে অগ্রসর হবে ।
বেইজিং সমভূমি অতিক্রমের সময় তেমন কোন প্রতিরোধ না থাকায় প্রাসাদের কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই চেঙ্গিস খান জেনারেল জেবেইকে তার আয়ত্বাধীন সৈন্যদল সহ লিয়াওইয়াং এর উদ্দেশ্যে প্রেরণ করে নিজে মধ্যবর্তী মূল সেনাদলসহ প্রাসাদের দিকে বীরদর্পে এগিয়ে চললেন। লিয়াওইয়াং অভিযান জরুরী ছিলনা। তবে যেহেতু পথে কোন বড় বাঁধার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা তাই চেঙ্গিস খান বর্ধিত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন।

যখন যিন রাজধানীতে পৌঁছাতে একদিনের সমপরিমাণ পথ বাকী তখনই জেনারেল জেবেই লিয়াওইয়াং দখল সম্পন্ন করে চেঙ্গিস খানের মূল বাহিনীর সাথে মিলিত হলেন। দুইটি সম্মিলিত সেনাদলের বিশাল বহর এগিয়ে চলল চুড়ান্ত গন্তব্য যিন সম্রাটের রাজধানী ও প্রাসাদকে লক্ষ্য করে। দিনভর ক্লান্তিকর পথ চলা শেষে চেঙ্গিস খান বিশ্রামের জন্য বিরতি দিতে ও রাত্রীকালিন অস্থায়ী শিবির স্থাপন করতে নির্দেশ দিলেন।

রাতে বিশ্রামের সময় লিউর পাঠানো বিশেষ দূত খানের কাছে তাদের সৈন্যদলের অবস্থান সম্পর্কিত বার্তা নিয়ে এসেছে। এ মূহুর্তে লিউর সৈন্যদল যেখানে অভিযান সম্পন্ন করে এগিয়ে আসছে তাতে আগামী দিন প্রাসাদ আক্রমণের অল্প সময়ের মধ্যেই লিউর ডান বাহু পৌঁছে যেতে পারবে। সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক ঘটছে বিধায় চেঙ্গিস খান সন্তুষ্ট। তবে স্পর্শকাতর অংশটুকু এখনও বাকী। এখন আর যিন সাম্রাজ্য নয় , তার চিন্তা দখল করে আছে পুরো পৃথিবীর কর্তৃত্ব আর পীত সম্রাটের ‘দৈব আশীর্বাদ’।

ভোরের আলো ফোটার আগেই মঙ্গোল বাহিনী যিন প্রাসাদের প্রধান গেটের সামনে উপস্থিত হয়ে গেল। সম্মিলিত মোঙ্গল বাহিনী আর অবশিষ্ট সকল যিন সৈন্যদের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই বেঁধে গেছে। প্রথম কিছুক্ষণ তীরন্দাজদের তীর সাই সাই করে ভারী বৃষ্টির মত বর্ষিত হয়েছে। বর্শা আর তলোয়ারের ঐতিহ্যবাহী যুদ্ধ চলছে এখন। হুরোহুরি , দৌড়ঝাপ, চিৎকার, আর ভারী শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দে গম গম করছে প্রাসাদ এলাকা। নারী আর শিশুদের কান্না পরিবেশটাকে আরও মর্মান্তিক করে তুলছে। প্রতি মূহুর্তে লাশের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি পাঁচটা লাশের চারটাই যিন সেনা। ফলে আস্তে আস্তে যুদ্ধ আর আক্রমণের নিয়ন্ত্রণ মঙ্গোলদের আয়ত্বে চলে আসছে। মোঙ্গল বাহিনী এখন প্রাসাদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। যুদ্ধের প্রচণ্ডতায় অনেক নারী আর শিশুও বর্বর পৈশাচিকতার শিকার হয়েছে। তাদের রক্তাক্ত মরদেহ এখানে সেখানে পড়ে আছে। রাজ প্রাসাদের নারী সদস্যদের একটা বড় অংশই সম্রাটের রক্ষিতা। তাদের কেউ কেউ ধসে পড়া দেয়াল দিয়ে পালিয়ে গেছে ।

জেনারেল চেনিয়ু লিউর ডান বাহু প্রবল বিক্রমে প্রাসাদের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ল। আচমকা যুদ্ধের চিত্র বদলে দেবার জন্য এটি যথেষ্ট ছিল। এতক্ষণ যা অসম যুদ্ধ হলেও আক্রমণ আর পাল্টা প্রতিরোধ মনে হচ্ছিল, লিউর প্রবেশের মধ্য দিয়ে তার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেল। যুদ্ধটা স্রেফ একটা হত্যাকাণ্ডে পরিণত হচ্ছে। তলোয়ারের আঘাতে দুপাশের শত্রু সেনাদের কচুকাটা করতে করতে লিউর সৈন্যরা প্রাসাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী ডান বাহুর মূল সৈন্যদল যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকল। আর লিউ তার একান্ত বিশেষায়িত ক্ষুদ্র ও অভিজাত সৈন্যদল নিয়ে সরাসরি রাজপ্রাসাদের রত্নভাণ্ডারের দিকে এগিয়ে চললেন। খাস কামরার সামনে তেমন কোন প্রতিরোধের মুখে পড়তে হলনা লিউকে। পরিস্থিতি দেখে লিউ খানিকটা অবাকই হলেন। দৈব আশীর্বাদ প্রাপ্ত সম্রাটও তার খাস কামরায় নেই। যতদূর জানা গেল সম্রাটের হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা। আর তাছাড়া খাস কারড়া থেকে রাজকীয় রত্নভাণ্ডারে প্রবেশ করার যে দরজা রয়েছে।সেখানে বিশেষ প্রহরার কোন চিহ্নই দেখা যাচ্ছেনা। এমন তো হবার কথা নয়! তাহলে কী পীত সম্রাটের আশীর্বাদ যিন রাজবংশ থেকে আস্তে আস্তে উঠে গেছে? এসব কি বিলাসী আর সীমালঙ্ঘনমূলক জীবন যাপনের ফল?

লিউ দ্রুত সৈন্যদের আটজনকে রত্নভাণ্ডারের প্রবেশদ্বারে পাহারায় বসিয়ে দিলেন। অপর বার জন সৈন্য থাকল খাস কামরা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। খাস কামরায় বিলাসী আর আয়েশী উপকরণের ছড়াছড়ি। খুব সুন্দর কিছু ঐতিহ্যবাহী পেইন্টিং ঝুলছে দেয়াল জুড়ে। পেইন্টিং-এ চীনা বাঁশ ঝাড়, সাদা কালোর মিশেল দেয়া পালক বিশিষ্ট সারস আর গোলাপী ফুলের প্রাধান্য বেশী। রাতে জ্বালাবার জন্য রঙিন আবরণ আর ঝালর লাগানো লণ্ঠন ঝুলছে কয়েকটা। তাছাড়া নকশা কাটা মোমদানীও রাখা আছে একটা ছোট আর সুদৃশ্য টেবিলের উপর। সম্রাটের শয্যায় ড্রাগন আঁকা চাদর। ড্রাগনটা বড় বড় লাল চোখ মেলে কামরা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সৈন্যদের দিকে তাকিয়ে আছে।

রাজকীয় রত্নভাণ্ডারের চেহারা দেখার মতই। সারা ঘর জুড়ে নানান সাইজের নকশা করা বাক্স পাতানো আছে। লিউ ভেতরে ঢুকে দুয়েকটার ঢাকনি খুলতেই মহামূল্যবান সব রত্ন আর পাথরের উজ্জলতায় চোখ ধাধিয়ে যাবার দশা হল। এ ঘরের দরজা আটকে সিল করা ছিল বিধায় ভেঙ্গে ঢুকতে হয়েছে। তাই দরজার ভাঙ্গা টুকরা ঘরের মুখে খানিকটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মেঝেতে প্রচুর পরিমাণে সোনার বিভিন্ন সাইজের টুকরা আর হরেক রকমের গয়না-গাটির কয়েকটা স্তুপ দেখা যাচ্ছে। দেয়ালে হুকের সাথে আটকানো আছে পুরনো সম্রাটদের ব্যবহৃত ও স্মৃতি বিজড়িত কয়েকটা তলোয়ার। তলোয়ারের খাপে সোনার সুতো দিয়ে মনোমুগ্ধকর নকশা আঁকা। তলোয়ারের হাতলেও মূল্যবান পাথর বসানো আছে।

রত্নভাণ্ডারের দেয়ালে একটা প্রাচীন পেইন্টিং শোভা পাচ্ছে। কাপড়ের উপর আঁকা পীত সম্রাটের ছবি। ছবির মত শোভা বর্ধনকারী জিনিস রত্নভাণ্ডারে কেন সে চিন্তা করতে করতে লিউ ভাল করে ছবিটার দিকে তাঁকালেন। হাঁটু ভাজ করে পীত সম্রাট বসে আছেন। দৃষ্টিতে তাঁর ঐশ্বরিক দ্যুতি। ফিনফিনে পাতলা চুল-দাড়ি-গোঁফ। ব্যকগ্রাউন্ডে হলুদ বর্ণের একটা গোলক শোভা পাচ্ছে। এটা পীত সম্রাটের দৈব ক্ষমতার প্রতীক না সূর্য ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। অদুরে পাহাড়ী উপত্যকায় পাতাঝরা গাছ দেখা যাচ্ছে ছবিতে। শুধু কালো চিকন ডাল পালা মেলে উলঙ্গ গাছগুলি দাঁড়িয়ে আছে। গোলকের উজ্জল হলুদ রং উপত্যকার তুষারাবৃত পৃষ্ঠে হালকা প্রতিফলিত হচ্ছে। পীত সম্রাট চোখ বুজে আছেন। তার দুই হাতের তালু উল্টো করে দুই ভাজ করা হাঁটুর উপর রাখা। ধ্যনস্থ অবস্থায় আছেন পীত সম্রাট। তার পাশেই ছোট একটা বাক্স দেখা যাচ্ছে। সাদা আর কালো পরস্পর ভেদী গোলক আঁকা বাক্সের গায়ে। ‘তাও’ আদর্শের প্রতীক।

সারাটা ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কাঙ্খিত দৈব বস্তুর কোন হদিসই পেলেন না লিউ। মনে মনে বিরক্ত হয়ে উঠছেন। সাম্রাজ্য দখল সম্পন্ন হলেও তার পরামর্শের আর কোন ভিত্তিই থাকবেনা যদি সেটা না পাওয়া যায়। আর জেনারেল লিউ জানেন যে সেটা প্রাসাদেই থাকার কথা।

ঘণ্টা খানিক পাগলের মত খোঁজা খুঁজির পর আচমকা মনে হল তিনি পীত সম্রাটের ছবিতে কিছু একটা দেখেছিলেন, তখন গুরুত্ব দেননি। এখন মনে হচ্ছে ওখানে দৈব বস্তুটির বিষয়ে কিছু একটা চোখে পড়েছিল। লিউ সব ফেলে আবার ছবিটার পাশে গিয়ে দাড়ালেন। মনযোগ দিয়ে দেখতে লাগলেন। পীত সম্রাটের পাশেই দৈব বস্তুর বাক্সটি দেখা যাচ্ছে আর পীত সম্রাট ধ্যনমগ্ন অবস্থায় আছেন। এই ছবিটির মধ্যে কি কোন তাৎপর্য নেই? অবশ্যই থাকতে বাধ্য। কিন্তু সেটি কী? চিন্তায় ঘেমে একসারা হয়ে যাচ্ছেন জেনারেল চেনিয়ু লিউ।

ছবিতে পীত সম্রাট ধ্যনমগ্ন অবস্থায় যেহেতু বাক্সটি পাশে রেখেছেন তাহলে এর সাথে প্রার্থনা বা ঈশ্বরের সাথে সংযুক্ত হবার সময়ের ও স্থানের একটা যোগসূত্র থাকতেও পারে। ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা পাশে নিয়ে ঈশ্বরের সাথে সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে, হতে পারে তা কৃতজ্ঞতারই বহি:প্রকাশ। লিউ জানেন সম্রাটের আলাদা প্রার্থনা গৃহ আছে। এমন নয়তো যে দৈব বস্তুর বাক্সটি যে রত্নভাণ্ডার বা খাস কামরায় আছে বলে ধারণা করে বসে আছেন তিনি সে ধারণাটি আগা গোড়াই ভুল? আসলে তা হয়তো প্রার্থনা গৃহেরই কোথাও আছে।

লিউ ত্রিশজন সৈন্য দলের সবাইকে ডেকে নিয়ে সাথে করে চললেন প্রার্থনা গৃহের দিকে। লিউর জানা আছে প্রার্থনা গৃহ আলাদা করা আছে মূল প্রাসাদ থেকে। প্রাসাদের বাইরের উঠান পেরিয়ে ডান দিকেই আলাদা একটা ঘর প্রার্থনার জন্য নির্ধারিত। প্রার্থনার ঘরটি একদমই সাদামাটা। দেয়ালের রং হালকা গোলাপী। সমতল মসৃণ মেঝেতে বসার জায়গা করা আছে সম্রাটের জন্য। মোটা সুতোয় বোনা একটা মাদুর পাতা আছে মেঝেতে। দেয়াল থেকে চারপাশে দুই ফিটের মত জায়গা উন্মুক্ত রেখে মাঝখানটায় মাদুর পাতা। সাদার রঙের জমিনে গাঢ় কালচে সবুজ রঙের বাঁশ ঝাড় এর নকশা করা আছে মাদুরে। চীনা ঐতিহ্য। এখানে কোন আসবাব পত্রই নেই। তাহলে বাক্সটা কোথায় আছে?

লিউ চিন্তায় পড়ে গেলেন। এখানে না পাওয়া গেলে বিষয়টা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। সম্রাট বা তার নিকট ভাজন কেউ বাক্সটা নিয়ে যুদ্ধের সময় পালিয়ে গেছে কীনা কে জানে। বাক্সটা হাত ছাড়া হয়ে গেলে চেঙ্গিস খানের কাছে লিউ মুখ দেখাবেন কেমন করে?
হতবাকের মত কিছুক্ষণ প্রার্থনা ঘরের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থেকে আচমকা হাঁটু গেড়ে নীচু হয়ে বসলেন লিউ। তারপর ডান হাতে একটানে মেঝেতে পাতা মাদুরটাকে সরিয়ে মেঝেটাকে উন্মুক্ত করে ফেললেন। সাথের সৈনিকরা কিছু না বুঝে জেনারেলের কার্যকলাপ অবাক চোখে দেখছে।
মেঝেটা নীরেট পাথরের বড় বড় টুকরো দিয়ে তৈরী। লিউ মেঝেটা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলেন। ছবিটার যে তাৎপর্য মাথায় এসেছে তা সত্যি হলে এ ঘরেই আছে বাক্সটা। আর মেঝে ছাড়া এখানে আর কোথাও থাকার সুযোগ নেই। দেয়ালের পুরুত্ব এত কম যে সেখানে একটা বাক্স লুকিয়ে রাখার কোন সুযোগই নেই। বাকী থাকল মেঝে।
ভাল ভাবে লক্ষ করতেই লিউ দেখতে পেলেন সম্রাট ঠিক মাঝখানটায় যেখানে বসে প্রার্থনা করতেন তার থেকে ফুট দুই ডানে পাথরের মেঝেতে একটা সুক্ষ দাগ দেখা যাচ্ছে। তলোয়ারের বাট দিয়ে সেখাটায় আঘাত করতেই ফাঁপা শব্দ হলো। আশায় দুলে উঠল লিউর বুক। কয়েকজন সৈনিককে আদেশ করলেন তাদের বর্শার হাতল দিয়ে জোড়ে আঘাত করবার জন্য।
বেশ কিছক্ষণ আঘাত করতেই পাথরের ফাঁপা ঢাকনি ভেঙে নীচে দিকে দেবে গেল। ভেতরে দেড় ফিট বাই দেড় ফিট একটা চেম্বার। তার মাঝে কিছু একটা রেশমী কাপড় দিয়ে আবৃত করে রেখে দেয়া আছে। ভাঙা পাথরের টুকরা ঝেড়ে ফেলে কাপড়ে জড়ানো জিনিসটা তুলে নিয়ে আসলেন লিউ। কাপড়টা সরাতেই সাদা কালোর পরস্পর ভেদী গোলক আঁকা বাক্সটা বেড়িয়ে পড়ল।

লিউ জানেন তিনি কিংবদন্তির সেই দৈব ধারক হাতে নিয়ে আছেন। নিজের বুকের ভেতরের ধুক পুক শব্দ যেন নিজেই শুনতে পাচ্ছেন। উত্তেজনায় তার চওড়া বুকটা কামারের হাপড়ের মত উঠা নামা করছে। একজন সৈনিককে তড়িৎ নির্দেশ দিলেন যেন লিউর পক্ষ থেকে চেঙ্গিস খানকে এখনি সব কাজ ফেলে যিন সম্রাটের খাস কামরায় আসার অনুরোধ জানানো হয়।

লিউ বাক্স হাতে খাস কামরায় দাঁড়িয়ে খানের জন্য অপেক্ষা করছেন। বাইরে তার বিশেষ সৈন্যদলের প্রহরা চলমান। অল্প কিছুক্ষণ পরেই খান প্রবেশ করলেন। যুদ্ধের উত্তেজনা আর পরিশ্রমে তার মুখমণ্ডল রক্তবর্ণ হয়ে আছে। চেহারার ঘাম বেয়ে পড়ে মসৃণ দাড়ি ভিজে গেছে। গায়ে এখানে সেখানে ধুলার আস্তরণ। খাস কামড়ায় সম্রাটের জন্য যে সিংহাসন পাতা আছে সেখানে চেঙ্গিস খানকে বসতে ইশারা করলেন লিউ। অতঃপর খানের সামনে বাক্সটা নিয়ে গিয়ে বললেন
-মহান খান,এই সেই দৈব বস্তুর ধারক বাক্স
চেঙ্গিস খান হতবিহ্বল আর মুগ্ধ দৃষ্টিতে লিউ বাড়িয়ে ধরা বাক্সটির দিকে তাকিয়ে বললেন
-আমার এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছেনা।
লিও সহাস্যে বললেন
-এর মূল্য বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের অনেক উর্ধ্বে মহান খান।
-আমি কি এর ভেতরটা খুলে দেখব জেনারেল?
লিও মাথা সামান্য নত করে সম্মান প্রদর্শণপূর্বক বললেন
-যেমনটা আপনার মর্জি মহান খান

চেঙ্গিস খান বেশ সময় নিয়ে বাক্সের হুকটা খুললেন। সাবধানে ঢাকনিটা আস্তে আস্তে উপর দিকে তুলে ধরলেন। ভেতরে হালকা সবুজাভ জেড পাথরের দুইটা ফলক আর একটা ছোট ধাতব পাত্র দেখা যাচ্ছে। বেশ সুন্দর একটা সুগন্ধে খাস কামরাটা পরিপূর্ণ হয়ে গেল। ওগুলোর ওপর থেকে চোখ না সরিয়েই খান লিউকে উদ্দেশ্য করে বললেন
-এর সাহায্যে আমি বিশ্বজয় করতে পারব জেনারেল লিউ?
লিও আত্মবিবিশ্বাসের সাথে জবাব দিলেন
-আমার বিশ্বাস আপনি পারবেন খান।

চেঙ্গিস খান চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ উপরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। হয়তো বিশ্বজয়ের কথা কল্পনা করছেন অথবা হয়তো ভাবছেন পূর্বপুরুষদের ভবঘুরে জীবনের কথা।

দরজার বাইরের সৈন্যরাও জানেনা তারা ঠিক কোন মিশনে এতক্ষণ জেনারেল লিউকে সাহয়তা দিয়েছে আর আগামী দিনে পৃথিবীতে তা কোন পরিণতি ডেকে আনতে যাচ্ছে। আসলে হাজার বছরের স্থিতাবস্থা থেকে দৈব বস্তুর পৃথিবীব্যাপি বিভিন্ন স্থানে হাত বদলের সূচনা হল মাত্র। স্থবির দৈব আশীর্বাদ ভ্রাম্যমাণ বিভীষিকায় রূপ নিতে তার যাত্রা শুরু করল।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত