তৈমুরের অভিশাপ -১২

বার.

স্বামীর মৃত্যুর পর সুলেইমান আদহাম মেয়েকে স্বামীর পরিবারে রাখতে চাননি। তার কারণও ছিল। বাবা মারা যাবার সময় বাবরের বয়স পাঁচ বছর। এদিকে সুলেইমান আদহামের একমাত্র ছেলে, ছেলের বউ আর তাদের সাড়ে তিন বছর বয়সী কন্যা সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে মাত্র চার দিন আগেই হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে ছেলে আর ছেলের বউ বাঁচেনি, তবে তাদের ফুটফুটে কন্যা জারা বেঁচে যায়। তখন জারার দাদী ছিলেন কিন্তু তার পক্ষে সম্ভব ছিলনা জারার যাবতীয় দেখাশুনা চালিয়ে যাওয়া। ফলে খানিকটা জারার কথা ভেবেও সুলেইমান আদহাম বাবর আর তার মা কে তড়িৎ নিজের বাড়ীতে স্থায়ী ভাবে নিয়ে আসার পদক্ষেপ নেন। মেয়ে চলে আসলে তার কাছে নাতনীকে বুঝিয়ে দিয়ে দুই বুড়ো-বুড়ি নিশ্চিন্ত হন। সেই থেকে ফুপুর কাছেই জারার বড় হয়ে উঠা আর পাশাপাশি বাবরের সাথে খেলা-হইচই এর মধ্য দিয়ে ঘনিষ্ঠ হওয়া।

শৈশব থেকেই বাবর অত্যন্ত মেধাবী ছিল। সুলেইমান আদহামের স্বপ্ন ছিল বাবর তার মতই প্রত্নতাত্ত্বিক হবে। তিনি সেই চিন্তা মাথায় রেখেই বাবরকে ছোট বেলা থেকেই গড়ে তুলতে মনস্থ করেন। বাবরের সমস্ত কর্মকাণ্ডের বিষয়েই জনাব আদহাম দিক নির্দেশনা দিতেন। আস্তে আস্তে নানা আর নাতির সম্পর্কের গভীরতা এক অনন্য উচ্চতার দিকে যেতে থাকে।
সেকেন্ডারী স্কূল পর্যন্ত বাবরের বেড়ে উঠা আর নানার আদর্শে গড়ে উঠা সমান তালে চলতে থাকে। সব দেখে মনে হচ্ছিল , হ্যাঁ-বাবর ভবিষ্যতের আদহাম হয়ে উঠবেই। কিন্তু পর্দার অন্তরালের কিছু বিষয় রয়ে গিয়েছিল।

বাবর মনে মনে জারাকে পছন্দ করতো কিন্তু কখনো বলতে সাহস পায়নি। যতই আদর দিক, নানার পরিবারে থেকে সব কিছুর দ্বারা প্রতিপালিত হয়ে এমন একটা বিষয়ে অগ্রসর হতে গেলে কতটুকু প্রতিবন্ধকতা সামনে এসে হাজির হতে পারে তা আঁচ করার মত বয়স তখন বাবরের হয়েছে। সে নানা ভাবে জারাকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করতে থাকে। কোন না কোন ভাবে জারাকে একটুখানি খুশি করার জন্য সে হেন কোন চেষ্টা নেই যে করেনি।

জারা তখন মাত্র উঠতি বয়েসের এক অর্ধপ্রস্ফুটিত কিশোরি। কলেজ থেকে ফেরার পথে ফুল নিয়ে আসা, জন্মদিনে নিজের হাতে গিফট কার্ড বানানো থেকে শুরু করে আরও এত এত মন জয় করা তৎপরতা চালাতে থাকে বাবর। জারা বাবরের কাজে খুশি হয়, সমস্ত অন্তর ঢেলে কৃতজ্ঞতা জানায়, কিন্তু পর্দার অন্তরালের ভালবাসাটুকু ধরতে পারেনা। এ যেন বাবরের পেয়েও না পাওয়া এক বিজয়।

বাবরের এসব বিষয় তার মা জানতে পারেন। তিনি বুঝতে পারেন সময় থাকতে বাঁধা না দিলে পারিবারিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করবে সে। একদিন বাবরকে ডেকে অনেক কথা বোঝান। নানার স্বপ্ন আর পিতৃহারা পরিবারের আশ্রিত অবস্থা মোচনে দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়ে বাস্তববাদী হতে উপদেশ দেন। ক্যারিয়ারের দিকে মনযোগী হতে বলেন। বাবর সব শুনে, সব বুঝে। কিন্তু নিয়মের উর্ধ্বে উঠতে চাওয়া মনটাকে বোঝাতে পারেনা।

আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্সে গিয়ে বাবর আরও অস্থির হয়ে পড়ে। তার সমগ্র চিন্তা আর কল্পনাশক্তি জুড়ে জারা অবস্থান করে। বাড়ীময় খোলাচুল হাওয়ায় উড়িয়ে চলা কিশোরীটা তার সমস্ত অনুভূতির জগত দখল করে থাকে। এসময় সে ধূমপানে আসক্ত হতে শুরু করে। তবে লুকিয়ে। বাড়ীতে কেউ জানতো না। ফাইনাল পরীক্ষার ফল মোটামোটি মানের হওয়ায় তার প্রত্মতত্ত্বে পড়াশোনার স্বপ্ন চরম ঝুঁকিতে পড়ে যায়। তবে নানার সম্মানের জোরে তাসখন্দ ইউনিভার্সিটিতে পছন্দের সাবজেক্টটা ম্যানেজ করা যায় শেষ পর্যন্ত।

তখন পড়াশুনার জন্য বাড়ী ছেড়ে ভার্সিটি ক্যাম্পাসের আবাসিক ছাত্র বাবর। প্রায়ই সুযোগ পেলে জারাকে ফোন দিত। জারা তখন উঠতি যুবতী। বাবরের অভিপ্রায় সে বোঝে, তবে সরাসরি নাকচ না করলেও এ ধরণের চিন্তাধারাকে সে মেনেও নিতে পারেনা। বাবরের কথায় সে সায় দেয়না, তবে নিজেও বুঝতে পারেনা তার কী করা উচিত। জারা নিজেকে নানা ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন করে-বাবরের অভিপ্রায়ের বিপরীতে তার অবস্থান আসলে কী-হ্যা, নাকি না? কিন্তু কোন উত্তর বা সমাধানে উপনীত হতে পারেনা। বাবর সক্ষম আর সুদর্শন পুরুষ। সবই তার আছে। তবে জারার মনের কোণে ভাবনার আন্দোলন তৈরী করার মত কী একটা যেন তার নেই। আবার পরক্ষণেই মনে হয়,ধূর এসব কী ভাবছি। আমি কেন এসব নিয়ে ভেবে নিজের মাথা এলোমেলো করছি। বাবর যদি তার নানার ইচ্ছার প্রতিফলকে পরিণত হয়ে থাকে, তবে আমি কি পারবনা আমার দাদুর চিন্তার আরেকজন যোগ্যতম ধারক হতে? এসব বিক্ষিপ্ত চিন্তার বৃত্তে ঘুরপাক খেতে খেতে জারা নিজেকে তৈরী করার জন্য আরও সচেষ্ট হয়। ওদিকে বাবর নিজের আবেগী আর বিরহী ভাবনার খেয়ালে আরও বেশী করে হারিয়ে যেতে থাকে।

তাসখন্দ ইউনিভার্সিটিতে অনেক বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীও পড়াশোনা করে। এর মধ্যে মধ্য ও পূর্ব এশীয়ই বেশী। বাবরদের ডিপার্টমেন্টে বেশ কয়েকজন চীনা আর তাইওয়ানীজ আছে। এদের একজনের সাথে বাবরের বেশ সখ্যতা গড়ে উঠে। ছেলেটার নাম যিন হো । বাবর তাকে হো বলেই ডাকে। ছেলেটা অনেক নম্র-ভদ্র আর মেধাবী। মেধার কারণে সবার মন জয় করে নিয়েছে এর মধ্যেই। পড়াশোনা ছাড়াও আরও অনেক বিষয়েই দু’জনের কথা হত। বন্ধুত্বটা আস্তে আস্তে গাঢ় হতে থাকে। হো ইতিহাসের এক অলিখিত পণ্ডিত। উজবেকিস্তানের ইতিহাস বাবরের চাইতেও বেশী জানে। বাবর তাকে জিজ্ঞাসা করে, এত এত ইতিহাস মাথায় নিয়ে ঘুরে কী মজা পাওয়া যায়। বাবরের কথায় হো এমন ভঙ্গিতে হাসে যেন বাচ্চা ছেলের বোকামী দেখে মজা পাচ্ছে। হো’র হাসিটাও অনেক সুন্দর। একটা পবিত্রতার ছাপ আছে। বাবরের মত এলোমেলো হয়ে থাকেনা সে, বেশ পরিপাটি চলন বলন। অবশ্য বাবর ভেবেছে,ওর হয়তো কোন প্রেম ঘটিত বিষয় নেই,তাই সুন্দর করে চলা ফেরা করার আগ্রহ এখনো অবশিষ্ট আছে। যদি জারার মত একটা কাজিন থাকতো কবেই পড়া ছেড়ে জঙ্গলের দিকে হাঁটা দিত। সেই তুলনায় বাবর তো নিজের উপর অনেক জোর খাটিয়ে এখনো স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপনের প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসব সাত পাঁচ ভেবে ভেবে বাবর নিজেকে সান্তনা দেয়। হো বাবরকে বোঝায়, কেন প্রত্নতত্ত্বের ছাত্রদের ইতিহাস ভাল করে জানা প্রয়োজন। ঐতিহাসিক বিক্ষিপ্ত জ্ঞান কীভাবে প্রত্নতত্ত্বের সমন্বয়ে বাস্তব আর মূর্তিমান হয়ে উঠে। হো’র চিন্তাধারা আস্তে আস্তে বাবরকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। আর তাছাড়া হো’র মত ভাল একজন মানুষের সংস্পর্শে থাকলে এমনিতেই মানুষ সুপথে আসবে বলে বাবরের ধারণা জন্মায়।

হো ইতিহাস আর রূপকথার বর্ণনা দিয়ে বাবরকে বোঝায় কীভাবে একটা যুদ্ধ আর প্রতারণার ঘটনা চীনাদের চীরদিনের জন্য ঐশ্বরিক দুর্যোগ আর অভিশাপের শিকারে পরিণত করেছে। যিন সম্রাটের জেনারেল চেনিয়ু লিউ যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে চেঙ্গিস খানের সাথে যোগ না দিতেন তাহলে কখনোই চেঙ্গিস খান দৈব বস্তুর কথা জানতেও পারতেন না।  সেক্ষেত্রে সাময়িক রাজনৈতিক পরাজয় যদিবা কখনো ঘটতোও তবুও ঐশ্বরিক আশীর্বাদের মাধ্যমে চীন তার হাজার বছরের গৌরব পূণরোদ্ধার করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো। সে চীন হয়তো আজকের চীনের মত হতো না। পৃথিবীর নিয়ন্তার ভূমিকায় থাকতো।
বাবর পাল্টা যুক্তি দিয়ে বোঝায় যে, চীন তো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর থেকে বেশ সমৃদ্ধ অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। আর তাইওয়ানও স্বায়ত্বশাসন নিয়ে বেশ ভালই আছে। হো এসব শুনে হো হো করে হাসে আর বাবরকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দেয় ঐশ্বরিক আশীর্বাদের তুলনায় এসব ফালতু কমিউনিজমের উন্নতি কতখানি ফাঁকা বুলি।

প্রথম প্রথম বাবরের এলোমেলো লাগত, কিন্তু আস্তে আস্তে সে হো’র চিন্তা দর্শন বুঝতে থাকে আর মুগ্ধ হতে থাকে। একটা সময় বাবর প্রায় সব বিষয়েই হো’র সমর্থক হয়ে উঠে। আর এভাবেই সে জানতে পারে তাইওয়ানে একটা প্রাচীন আর অতি গোপন সংগঠন তৎপর রয়েছে যারা পীত সম্রাটের দৈব বস্তুর প্রকৃত উত্তরাধীকারী এবং কেবল তাদের রাজকীয় রক্তের নেতৃত্বেই আবার পৃথিবীকে তার প্রাচীন ও শুদ্ধ রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। মানবজাতী সভ্যতার অগ্রগতির নামে সমগ্র সৃষ্টির যে বিকৃতি সাধন করেছে তা ধুয়ে মুছে সাফ করে পৃথিবীকে আবার ঢেলে সাজাতে না পারলে তা আপনা আপনিই চীরতরে ধ্বংসের পথ ধরবে। এজন্য বিশ্বব্যাপি সকল জাতিগোষ্ঠীর মধ্য হতে এই শুদ্ধ দর্শনে বিশ্বাসী সমর্থক আর সদস্য প্রয়োজন। যাদের সহায়তায় ও আদি যিন রাজবংশের নেতৃত্বে নতুন পৃথিবী জেগে উঠবে।

যিন রাজবংশ আর দৈব বস্তুর কথা বাবর অনেক আগেই শুনেছে এবং তার নানা তাকে নিষেধ করেছিল এসব বিষয়ে কারও সাথে আলাপ না করতে। কিন্তু সেসব নিষেধাজ্ঞার কোন কেয়ারই বাবর করলনা। তার মাথায় এখন হো’র শুদ্ধ পৃথিবীর চিন্তা। এসব নতুন আর শিহরণ জাগানো দর্শনের স্রোতের টানে জারার প্রতি প্রবল ভালোবাসা কোথায় যে হারিয়ে গেল তা বাবর নিজেও জানতে পারলনা।

গুপ্ত সংগঠনের চীনা নামটির ইংরেজী করলে দাড়ায় ‘স্যালভেশন’। বাবর তার মেধা আর আন্তরিকতা দিয়ে হো’র পরিপূর্ণ আস্থা অর্জন করার পর সংগঠনের গভীরতম বিষয়গুলি জানতে শুরু করে। আস্তে আস্তে সে স্যালভেশনের একজন উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি হয়ে উঠে। সংগঠনের সর্বোচ্চ কর্তার সাথে তার যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে থাকে হো। হো যে স্যালভেশনের এত উঁচু পর্যায়ের কেউ-তা বাবর বুঝতে পারে একেবারে শেষের দিকে এসে।

এরপর থেকে বাবর নিজেকে ধন্য মনে করতে থাকে এত বড় একটা ভূমিকায় নিজেকে কল্পনা করে। বাবর জানতে পারে ইতোমধ্যেই দৈব বস্তুর মূল অংশটা স্যালভেশনের হস্তগত হয়েছে। সুগন্ধী ছড়ানো বায়োলজিক্যাল এজেন্ট এর পাত্র আর তার ব্যবহারের ফলক সংগঠনের কাছে আছে। সেটা সংগঠন পেয়েছে আরও বছর ত্রিশেক আগে। তবে দৈব বস্তুর সাথে আরও একটা ফলক ছিল। তা না পাওয়া পর্যন্ত পাত্রের প্রাণঘাতী দ্রব্য ব্যবহার করা যাবেনা। সংগঠন ও এর সমর্থকদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে দ্বিতীয় ফলক প্রয়োজন। সেখানেই রয়েছে আত্মরক্ষা তথা ঘাতক দ্রব্যের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ব্যবহারের প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিকনির্দেশনা।

ইতোমধ্যে বাবর পরিবারের সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে এবং ইউনিভার্সিটি ছাড়ার প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছে। তাকে জরুরী ভাবে তাইওয়ানে যেতে হবে। সংগঠনের লোকেরা সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থায় সমস্ত প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে ফাঁকি দিয়ে বাবরকে তাইওয়ানে অবস্থিত অতিগোপন সদরদপ্তরে নিয়ে গেল। বাবর নানার তত্ত্বাবধানে থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক হবার জন্য আগেই ক্লাসিক আরবী আর আরামায়িক ভাষা শিখে নিয়েছিল। সে দেখল ফলকে চীনা ভাষার পাশাপাশি আরামায়িক লেখাও খোদাই করা রয়েছে। বাবর খুব অবাক হয়ে গেল। কারণ যেখানে ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে আরামায়িক ভাষার জন্ম সর্বোচ্চ নয়শ থেকে একহাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দ সেখানে প্রায় তিন হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দের একটি ফলকে কীভাবে আরামায়িক ভাষা এল? তাহলে কী ফলকে পরবর্তীতে আরামায়িক খোদাই করা হয়েছে? সেটাও হতে পারে কারণ ফলকের যে পাশে চীনা ভাষা তার বিপরীত পাশে আরামায়িক ভাষা খোদাই করা। নাকি ভাষাবিদরা যতটা মনে করেছেন আরামায়িক ভাষা প্রকৃত পক্ষে তার চাইতে আরও প্রাচীন?

বাবরের উপস্থিতিতে তাইওয়ানেই সিদ্ধান্ত নেয়া হল যে অবশিষ্ট ফলক উদ্ধারের জন্য পৃথক পৃথক দল কাজ করবে। তবে যেহেতু একটি ফলকে চীনা ভাষার পাশাপাশি আরামায়িক ভাষার খোদাই পাওয়া গেছে, তাই খুব সম্ভব সে ফলকটির সাথে আরব ভূ-খণ্ডের কোন যোগসূত্র থাকবে। কারণ আরামায়িক ভাষার সাথে আরবীর ভাষার সম্পর্ক আর আরবী ভাষার সাথে আরব ভূ-খণ্ড প্রাসঙ্গিক। আরও একটি কারণ আছে। তৈমুরের রাজ্যের পশ্চিম সীমানা ছিল খানিকটা আরব অঞ্চল জুড়ে যা বর্তমান সিরিয়ার মধ্যে পড়েছে। দুই হাজর এগারো সাল থেকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ আরম্ভ হবার পরে দুই বছরে অধিকাংশ সিরিয় ভূমি এখন আই.এস এর দখলে। তাই সেখানে অবাধে তৎপরতা চালাতে গেলে আই.এস. সদস্য বা সমর্থক হয়েই যেতে হবে। তাই যারা চীনা বংশোদ্ভুত তারা উইঘুর মুসলিম পরিচয়ে আর যারা মধ্য এশীয় তারা স্থানীয় মুসলিম পরিচয়ে আই.এস এ যোগ দেবে এবং ফলকের ব্যপারে অনুসন্ধান চালাবে। পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলেও চেষ্টা আর খোঁজ চলবে। যে কোন মূল্যে সংগঠনের দর্শন বাস্তবায়িত করতে ফলক পেতেই হবে। এর জন্য এই সংগঠন গত আটশ বছরেরও বেশী সময় ধরে অপেক্ষা করছে। যখন ‘আটশ বছর’ কথাটা উচ্চারণ করা হল, তখন সভায় উপস্থিত প্রতিটা মানুষের অন্তর কেঁপে উঠল। এত দীর্ঘ সময় ধরে একটা লক্ষ্য অর্জনের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার যে কোন বিচারে খুবই দূর্লভ। তাই একে সফল করতেই হবে এমন প্রতীজ্ঞা সবার অন্তরে আরও বদ্ধমূল হয়ে গেল।

এর পর পরই বাবর সিরিয়া যেতে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সংগঠনের লোকেরা তাকে পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়। যার ফলশ্রুতিতে পালমিরা ধ্বংসকাণ্ডের সময় জিনিসটা সে পেয়ে যায়। অন্য সবাই যদিও বুঝতে পারেনি কিন্তু বাবর ঠিকই চিনতে পারে ফলকটা। তাই সে অন্যদের মতই না বোঝার ভান করে জিনিসটা নিজের কর্তৃত্বে নিয়ে নেয় সদর দপ্তরের নাম ভাঙ্গিয়ে। অনেক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে বাবরের সময়গুলি কাটছিল তখন। সিরিয়া থেকে মধ্য এশিয়া দিয়ে আফগানিস্তান আর ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বাবর। গন্তব্য বাংলাদেশ- ভারত-মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চল, যেখানে সংগঠনের কিছু সদস্য আর স্থানীয় কিছু সহযোগী বাবরের অপেক্ষায় ছিল। ধ্বংসের বীজ তাইওয়ানে বসে বিলি-বিতরণ না করে এ জায়গাটা বেছে নেয়ার কারণ হল-প্রথমতঃ গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের ড্রাগ স্মাগলারদের ট্রানজিট চ্যানেল ব্যবহার করা আর দ্বিতীয়তঃ তৃতীয় বিশ্বের দূগর্ম পাহাড়ী এলাকায় থেকে পশ্চিমা শকুণদের চোখ এড়িয়ে কাজ সমাপ্ত করা।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত