ছাপ/পর্ব-২ (রহস্য উপন্যাস)

একটু দেরী নয়, মিটুন উপস্থিত হয়েছে পাক্কা দুই ঘণ্টা পর। অফিসের কাজে একটু ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো। বসকে ম্যানেজ করে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হতে পারতো। কিন্তু এমন সুযোগ ও নেয় না। এসব ছোটো ছোটো সুবিধা নিলে কর্পোরেট কালচার আর অফিস রাজনীতির ফাঁদে আটকে পিছিয়ে পড়তে হয়। মিটুন ক্যারিয়ারে পিছিয়ে পড়তে চায় না। তবে মিটুনের দেরী হবার মূল কারণ যানজট। ঢাকাকে একটা সময় মসজিদের শহর বলা হতো, বর্তমানে ঢাকা হচ্ছে যানজটের শহর। যানজট এতটাই জটালো যে এম্বুলেন্সও থেমে থাকে।স্বজনের কান্নার সাথে সাইরেন বাজে। সাইরেনের অসহনীয় শব্দটা শোনা যায়, কান্নার আওয়াজ এম্বুলেন্সের জানালা ভেদ করে এসে কাউকে বিব্রত করে না। মাঝে মাঝে দূর্ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌছতেও দেরী হয়ে যায়। ততক্ষণে উৎসুক জনতার একটা অংশ উদ্ধার কাজে নেমে পড়ে, আরেকটা অংশ মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়।

বিকেল থেকেই আকাশে মেঘ ছিলো। আলগোছে আরও মেঘ জমছিলো। সন্ধ্যার আগে মাত্র বিশ মিনিটের ব্যবধানে আকাশ কালো হয়ে আসবে এবং শ্রাবণ দিনের মত এক তুমুল বর্ষণ হবে – এটা আবহাওয়া বিভাগও ভাবে নাই। কিছুক্ষণ ঝুম বৃষ্টি হয়ে থেমে গেলো। তবে যে কোনো সময় আবার বৃষ্টি ঝরানোর সম্ভাবনা নিয়ে আকাশ থম ধরে আছে। ভিজে বাতাস বইছে। এমন আবহাওয়ায় স্ট্রিট ফুডের দোকানীরা মাছি মারে। দোকান খোলা রাখতে হয় বলেই খোলা রাখে। কোনো একটা দোকান কেন্দ্র করে আড্ডায় মেতে উঠে। ওই সন্ধ্যা আর রাতগুলোতে আড্ডার গুঞ্জন ও হাসপাতাল গেটে রোগী বা রোগীর স্বজনদের চলাচল ছাড়া হাসপাতাল রোডে কোনো শব্দ থাকে না, গা ছমছমে একাকীত্বের মত নিঝুম। প্রায় নির্জন হাসপাতাল রোডের উপরে পাতা এক লাল টেবিল ঘিরে বসে আছে তিন অসম বয়সী বন্ধু, নিরবতা ভাঙে কাজল,

‘মিটুন এইবার বলো, এত জরুরী তলব কেনো? বিয়ের কথা ফাইনাল হয়ে গেছে! কোন গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করছো!’

 ‘ধুত্তোরি ভাই, আমি আসতে না আসতে আপনে খোঁচাইতে শুরু করলেন!’ মিটুনের মুখে অপ্রস্তুত হাসি।

‘কাজল ভাই খুব অস্বাভাবিক কিছু বলছে কি! তুমি এত জরুরী ডাক দিলে, আমি মনে করেছি তুমি এক গার্লফ্রেন্ডকে অলরেডি বিয়ে করে ফেলছো। অন্য গার্লফ্রেন্ডরা তোমাকে সাইজ করার প্ল্যান করছে, এই উপদ্রব থেকা বাঁচার পরামর্শ নিতে এত আমাদের শরণাপন্ন হয়েছো।’

‘মিলন ভাই, আপনেও শুরু করলেন! আমার আলাপটা কিন্তু জরুরী। আগে কফির অর্ডার দেই।’

কাজল আপত্তি করে, ‘কফি না। চা হলে ভালো হয়। তোমাদের এখানে ত্রিশ পয়ত্রিশ রকমের চা পাওয়া যায়, আজ তেতুলের চা খাওয়াও।’

‘শোনেন কাজল ভাই, সাধারণ আলাপ করতে হয় চা খেতে খেতে। জরুরী আলাপ করতে হয় কফি খেতে খেতে। আর অতি জরুরী আলাপ করতে হয় মদ্যপান করতে করতে। আমার আলাপটা এখন পর্যন্ত জরুরী মাত্রার, তাই কফি খেতে খেতে আলাপ চলুক। জরুরী মাত্রাটা সাধারণ মাত্রায় নামলে চা খাওয়া যেতে পারে।’

কাজল টিপ্পনি কাটে, ‘ওরে মিলন, কর্পোরেট অফিসে ঢুকে আমাদের মিটুন দেখি আলাপ বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছে।’ অকস্মাৎ প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে, ‘তোমরা একটা ব্যাপার খেয়াল করছো- এখন স্ট্রিট ফুডের দোকানেও কাপাচিনো কফি পাওয়া যাচ্ছে। দৃশ্যমান উন্নয়ন কারে বলে দেখো।’

মিলন ফুঁসে উঠে, ‘হ, ভাই। উন্নয়ন এতই স্পষ্ট যে প্রত্যেকটা স্ট্রিট ফুডের দোকানে শিশুশ্রমিকরা কাজ করছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে পড়ার জন্য চা, চপ, সিঙ্গারা সমুচাসহ অন্যান্য খাবার বানানোর তালিম নিচ্ছে। এই শিশুদের অভিভাবকরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে, এপার্টমেন্টে থাকে, মার্সিডিজ গাড়ি ড্রাইভ করে। এই তো কিছুক্ষণ আগে উন্নয়নের ঠেলায়-খুশিতে-ঘুরতে স্যান্ডুইচটাও পুরা খেতে পারলেন না, এক বুড়ো ফকিরকে অর্ধেকটা দিতে হলো।’

মিলন সবসময়ই শান্ত। কখনো কখনো বারুদের মত ফুঁসে উঠে, তারপর অখ্যাত কোম্পানির সস্তা ম্যাচের কাঠির মত পুরোটা না জ্বলেই শান্ত হয়ে যায়। আজও কথাগুলো বলে মিলন শান্ত হয়ে যায়। মিলনের কথার প্রসঙ্গ ধরে কাজল বলে, ‘তাতে কি প্রমাণিত হয়! এই যে ২০১৯ সালে আমরা বসে আছি, এখন পর্যন্ত আমাদের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের সর্বচ্চো গন্তব্য হচ্ছে আমেরিকা বা ইউরোপে পরিণত হওয়া। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো, অথচ উন্নয়নের চাপে দেশ এখন সিঙ্গাপুর বেয়ে লাসভেগাস হওয়ার দিকে দৌড়াচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বিষয়টাকে তুমি ইতিবাচকভাবে দেখতে পারো। একজন বৃদ্ধ ভিক্ষুক আরাম করে স্যান্ডুইচ খাচ্ছে- মানে ভিক্ষুকের ফুড হ্যাবিট চেঞ্জ হচ্ছে। দেশটা আমেরিকা ইউরোপের হয়ে গেলে তাকে তো স্যান্ডুইচ, বার্গার, ব্রেড এন্ড বাটার, কফি বা ওয়াইন খেয়েই বাঁচতে হবে। গরিব বলে তো ভাত খাওয়ার সুযোগ তাকে দেওয়া যাবে না- তাতে উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। অবশ্য হার্ড ড্রিংকসটা এভোয়েড করা ভালো। যদিও দেশের মদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু এন্ড কোং চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে সরবরাহ ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ফুড হ্যাবিটের সাথে ল্যাঙ্গুয়েজ হ্যাবিট চেঞ্জ করাটাও জরুরী হয়ে উঠছে। বাণিজ্যিক বাংলা চলচ্চিত্রের নির্মাতারা বহুদিন আগেই এ কাজ শুরু করেছেন। অশিক্ষিত দর্শকদের ইংরেজি শেখাতে সিনেমার নায়ক-নায়িকা ও ভিলেনদের দিয়ে বাংলা অনুবাদসহ ইংরেজি ডায়লগ থ্রো করিয়েছেন- ‘আই হেট ইউ, আমি তোমাকে ঘৃণা করি।’ ‘ফরগেট মি আকাশ, আমাকে ভুলে যাও আকাশ।’ ‘গো আকাশ গো, চলে যাও আকাশ চলে যাও।’

হাসতে হাসতে মিটুন বলে, ‘কাজল ভাই, আপনে পারেনও!’

‘তুমি আমার কথাকে পাত্তা দিচ্ছো না! চোখ বন্ধ করে ভাবো- বর্ষণমুখর এক সন্ধ্যা,  জিন্সের শার্ট আর প্যান্ট পরে এই বৃদ্ধ ভিক্ষুক আন্ডারগ্রাউন্ড সাবওয়েতে বসে আছে। চোখে উদাসীনতা। আনমনে ক্লাব স্যান্ডুইচে কামড় দিচ্ছে। স্যান্ডুইচ চিবুতে চিবুতে বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিচ্ছে। এয়ারফোনে গান শুনছে- রেইনড্রপস আর ফলিং অন মাই হেড। তুমি তাকে বিরক্ত করতেই গম্ভীর কণ্ঠে বললো- ‘ফাক্ক্যু, তোরে চু…।’ উন্নয়নটা দৃশ্যমান হচ্ছে না! বলো!’

‘হো হো হো। কাজল ভাই, থামেন তো’ মিটুন হাসি চাপার চেষ্টা করে, ‘আপনারা কফির সাথে আর কিছু নিবেন?’

মিটুন জানে কফির সাথে কেউ কিছু নিবে না। তবু দু’জনকে থামানোর জন্য তাৎক্ষণিকভাবে এ প্রশ্ন করা ছাড়া অন্য কথা খুঁজে পায়নি। বলা যায় না মিলন আবার কখন ফুঁসে উঠে, আর আলাপটা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক তর্কে গড়ায়। রাজনীতির আলাপ মিটুনের ভালো লাগে না। কর্পোরেট অফিসে যোগ দেওয়ার পর থেকে রাজনীতি বিষয়ক আলাপের প্রতি বিতৃষ্ণা ও বিরক্তি দুটোই মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে।  কাজল বা মিলন কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা গোড়া সমর্থক নয়, কিন্তু তাদের আলাপ শুনে সে প্রায়ই বিভ্রান্ত হয়। কখনো মনে হয় তারা আওয়ামী লীগ করে, কখনো মনে হয় বিএনপির কর্মী আবার কখনও মনে হয় জামাত বা বাম। মিটুন ‘আই হেট পলিটিক্স’ প্রজন্মের প্রতিনিধি। ওর বিশ্বাস, যে রাজনীতি করে বা রাজনীতির আলাপ করে সে হয় লীগ না হয় দলের কর্মী বা সমর্থক। এই দুই পক্ষের না হলে সে হয় জামাত না হয় বাম। আরেকটা পক্ষ আছে জঙ্গি। এর মাঝামাঝি কিছু নেই। পক্ষ এবং বিপক্ষের প্রতিপক্ষ বলে কিছু থাকতে পারে এটা চিন্তাও করতে পারে না। দেশের রাজনীতিকদের কাজকারবার দেখে দেখে রাজনীতির প্রতি সকল আগ্রহ হারিয়েছে।  ওর মনে রাজনীতির প্রতি চরম ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

মিটুনের প্রশ্নের উত্তরে কাজল বলে, ‘তোমার ক্ষিধা লাগলে কিছু নাও, মিটুন। আমার আর মিলনের কফি-সিগারেটেই চলবে। কফি আসতে আসতে তোমার আলাপটা শুরু করো।’

মিটুন হাতে থাকা মোবাইল সেটা’টা লক করে পকেটে রাখে। ওর কণ্ঠ কিছুটা গম্ভীর করে বা হয়ে যায়, ধীরে ধীরে বলে, ‘কাজল ভাই, আপনি একটা সময় মঞ্চ নাটকের ডিরেকশন দিয়েছেন। শর্ট ফিল্মও বানিয়েছেন। ফিল্ম মেকিং নিয়ে আপনার পড়াশোনাও ভালো। সবসময় আপডেট থাকেন। এদিকে আমাদের মিলন ভাই যথাযথ ফোকাস পান নাই, কিন্তু উনি ভালো লিখেন- এটা নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেন না। আমার প্রফেশন শুরু করেছিলাম এসিস্ট্যান্ট ক্যামেরা ম্যান হিসাবে। দুই তিনটা প্যাকেজ নাটকে ছোটোখাটো চরিত্রে অভিনয় করেছি। আসেন, আমরা তিনজন মিলে একটা মুভি বানাই, হোক শর্ট বা টেলিফিল্ম। কিন্তু ফিল্ম মানে মুভি হতে হবে, ভাই।’

উচ্চস্বরে হেসে উঠে কাজল, ‘হা হা হা.. কারে নায়িকা বানানোর জন্য মুভি বানাতে চাও মিটুন! আমাদের দুই বুড়োকে জড়াচ্ছো কেনো?’

‘কাজল ভাই, আমার সাইড থেকে আমি সিরিয়াস। মুভি বানানোর ইচ্ছা আপনারও ছিলো, হাত পাকানোর জন্য তিন চারটা শর্ট ফিল্ম বানিয়েছিলেন। কি বানান নাই! মিলন ভায়ের বহুদিনের ইচ্ছা চিত্রনাট্য আর সংলাপ লিখার, যা দিয়ে নাটক বা মুভি নির্মাণ করা হবে। মুভি বানাবো এই স্বপ্ন নিয়েই আমি ক্যামেরার কাজ শিখেছিলাম, ক্যামেরার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’

‘হু, তো!’

‘কাজল ভাই, আমাদের মুভিটা হয়তো যাচ্ছে তাই মানের হবে। কোনো সিনেমা হল বা টিভি চ্যানেল দেখাবে না। তবু আসেন, মুভিটা বানাই। নিজেদের পরিচিত প্রফেশনাল লোকজন তো আছেই, খরচে না কুলালে এমেচারদের নিয়ে কাজটা করি। তবু মুভি বানিয়ে নিজেদের ইচ্ছাটা পূরণ করি, তারপর এই জগতের হাতছানিকে চিরদিনের জন্য গুডবাই জানাই।’

কথার ফাঁকে স্ট্রিট ফুডের দোকানের ছেলেটা কফি পরিবেশন করে গেছে। কাজল মিলনের দিকে তাকায়, ‘তুমি কি বলো?’

‘আপনিই বলেন, এক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা বেশী। বিবেচনাবোধও ভালো।’

‘শেষ পর্যন্ত আমার কোর্টেই বল ঠেলে দিলে! আমার অখণ্ড অবসর। স্বার্থপরের মত বলছি, নিজের সময় কাটানোর জন্য মিটুনের প্রস্তাবে আমার আপত্তি নাই। কিন্তু প্রশ্ন দুটো- তোমরা কি সময় দিতে পারবে? কোন কাহিনী নিয়ে মুভি বানানো হবে? কোনো গল্প ঠিক করছো মিটুন!’

‘কাজল ভাই, আপনার কাছে প্রস্তাব দেবার আগে মিলন ভায়ের সাথে হালকা আলাপ করেছিলাম। আমাদের পক্ষে সময় দিতে সমস্যা হবে না। তবে আমরা আপনাকে কেন্দ্র করে ঘুরবো। আপনি আমাদের বন্ধু, তেমন মুরুব্বীও।’

‘মিটুন, তুমি বেশ কথা শিখছো। এই যুগে এমন কথায় টনটনা থাকা ভালো। গল্প কি ঠিক করেছো?’

‘না। কাজল ভাই, কোনো গল্প ঠিক করিনি। তবে অন্যরকমের একটা গল্প, মানে ফরমুলার গল্পের বাইরে একটা গল্প নিয়ে মুভিটা হোক। গল্পটা যেনো নিরেট ফ্যান্টাসি বা প্রেমের না হয়। গল্পটা হবে এমন যাতে দর্শক মুভির সাথে নিজেদের রিলেট করতে পারে। শেষে একটা মেসেজ থাকবে। তবে নো রাজনীতি।’

কাজল বিরক্ত, ‘মিটুন, তুমি যেমন চাইছো তাতে মুভির গল্প পাঁচমিশালী শাকের ঘাঁটা হয়ে যাবে। এমনিতে প্রতিটা শাক পুষ্টিকর হলেও কোনোটার স্বাদই ঠিকমত বুঝা যাবে না। মুভির শেষে মেসেজের নামে ইশপের গল্পের মত একটা উপদেশ থাকবে – ‘কদাচ মিথ্যা বলিও না’ বা ‘অসৎ পথে চলিও না’ বা ‘নিরাপত্তার স্বার্থে একই সময়ে একাধিক প্রেম করিও না’, তবে নৈতিক শিক্ষার মুভি বানানো ভালো। মিলন তুমি কি বলো!’

মিলন ইতঃস্তত করে, তারপর বলে, ‘একটা আইডিয়া দিতে পারি। তবে আইডিয়াটাকে গল্প রূপান্তর করতে হবে। গল্পটা ক্রসফায়ারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হবে। বাকী কাহিনীটা তিনজনে মিলে এগিয়ে নিয়ে যাবো। অবশ্য, যদি আপনারা রাজী থাকেন।’

মিটুন বলে, ‘এটা ভালো প্রস্তাব। আমি সমর্থন করছি। যদিও মুভিটা আমাদের আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব ছাড়া অন্য কারো দেখার সম্ভাবনা কম, তবু মুভিতে ক্রসফায়ারের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো ম্যাসেজ রাখা চলবে না। ঝামেলা হতে পারে। দর্শকরা নিজ নিজ বিচারবুদ্ধি দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করে নিবে। মুভিতে কোনো রাজনীতির ছায়া যেনো না থাকে- এটা বারবার বলছি।’

কাজল আরেকটা সিগারেট ধরায়, ‘আজ তবে এ পর্যন্তই থাক। পরশুদিন শুক্রবার, সকাল দশটার মধ্যে বাসায় চলে আসো। আমরা মিলনের কাছে গল্পটা শুনি, তারপর গল্পটা মুভি বানানোর মত করে দাঁড় করানো যাবে।’

আড্ডা ভেঙে গেছে। মিটুন চলে গেছে। বাস কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছে কাজল আর মিলন। কাজলকে বাসে তুলে দিয়ে মিলন হাঁটতে হাঁটতে ঘরে ফিরবে। যেদিন কাজল বাসে করে আসে, সেদিন এই সৌজন্য রক্ষা করা অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। কাজল আরেকটা সিগারেট ধরায়, অপ্রমিত বাঙলায় বলে, ‘শোনো মিলন। তোমারে কিছু ভুল তথ্য দিছি। তুমি হয়তো জানো, তারপরও তোমারে জানায়া দেওয়া আমার কর্তব্য।  আষাঢ় শ্রাবণ মাসে বিকালটা বড় হয়। ভাদ্র- আশ্বিনে মাসে দিন ছোটো হইতে শুরু করে, বিকালও ছোটো হয়া আসে। তবু এই বিকালগুলারে আমার কাছে খুব দীর্ঘ লাগে, সন্তান হরানো পিতার বিষাদের মত দীর্ঘ।’

কাজলের কথা শুনে বুকের ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে, মিলন লুকানোর চেষ্টা করে না। কাজলের হাত ধরে বলে, ‘ভাই, আবেগের বশে ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘিরে গল্প রচনা করাটা কি ঠিক হচ্ছে! পরিবার আর দুই শিশু সন্তানের ভালোর জন্য সবসময় চোখ ও মুখ বন্ধ রেখে চলবো বলে শীলার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি। প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করা হচ্ছে না তো! ’ কাজল কোনো উত্তর দেয় না, মিলনের হাতে আলেতো চাপ দেয়- এই চাপ আস্থা ও নির্ভরতার।

কাজলকে বাসে তুলে দিতেই বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টি যেনো কাজলের বাসে উঠার অপেক্ষাতেই ছিলো। হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছে মিলন। ওর মনটা খচখচ করছে।

পর্ব ১ ছাপ/পর্ব-১ (রহস্য উপন্যাস)

নোট : উপন্যাসের সকল চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত