ডিটেক্টিভ কে কে (কেরামত আলীর কেরামতি)—১১

১১
কইতরি বেগম একেবারে চুপ হয়ে গেছে। কোনোদিকেই তার খেয়াল নেই। কান্নাকাটি করছে না, আহাজারিও করছে না। উদাস দৃষ্টিতে বসে আছে উত্তর ঘরের জানালায়। ছানাহারা পাখির মতো তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।
তাকে ঘিরে আছে কয়েকজন মহিলা। একজন মহিলার হাতে তেলের বাটি। সে কইতরি বেগমের মাথায় তেল দিয়ে দিতে চায়। কিন্তু তার সাহস নেই কইতরি বেগমের কাছে যাওয়ার। কারণ—কাছে গেলে কইতরি বেগম রাগ করতে পারে। ঝামটা মেরে তেলের বাটি ফেলে দিতে পারে।
এ অবস্থায়, তেলের বাটিঅলা মহিলাটি সন্তর্পণে কেরামত আলীর দিকে এগিয়ে এল। বলল, ‘দেখেন তো, আপনার খালার মাথায় একটু তেল দিয়ে দিতে পারেন কি-না?’
এ ধরনের কাজ করা কেরামত আলী ধাতে নেই। তবু যেহেতু অপরিচিত মহিলাটি তাকে বলল তাই সে না করতে পারল না। মহিলাটির হাত থেকে তেলের বাটি নিয়ে কইতরি বেগমের কাছে গেল। মৃদু স্বরে ডাকল, ‘খালা!’
কেরামত আলীর প্রথম ডাকে কোনো সাড়া মিলল না। দ্বিতীয় ডাকে কইতরি বেগম রাগী দৃষ্টিতে তাকাল।
কেরামত আলী ভয়ে ভয়ে বলল, ‘তোমার মাথায় একটু তেল দিয়ে দেই।’
কইতরি বেগম বলল, ‘না। তেল দেওয়া লাগবে না।’
সুযোগ বুঝে তেলের বাটিঅলা মহিলা ভিড় ঠেলে এগিয়ে এল। বলল, ‘চাচিআম্মা! না বইলেন না। তেল দিলে মাথা ঠাণ্ডা থাকবে।’
কইতরি বেগম বলল, ‘আমার মাথা ঠাণ্ডা থাকার দরকার নাই। আমার মাথা গরম হইছে। সারাজীবন গরমই থাকবে।’
‘না খালা! তুমি কথাটা ঠিক বললে না!’—কেরামত আলী বলল।
কইতরি বেগম বলল, ‘ঠিক-বেঠিক তোর থেকে শেখা লাগবে নাকি? তুই ঢাকায় চলে যা। তোর বউ একলা বাসায় রইছে। এক্ষুনি চলে যা।’
‘না খালা, তোমাকে এ অবস্থায় রেখে আমি যেতে পারব না।’
‘আমার আবার অবস্থা কী? আমারে নিয়ে তোর চিন্তা করা লাগবে না। তুই বাসায় চলে যা। না-গেলে তোর দজ্জাল বউ তোকে বকা দিবে।’
কইতরি বেগমের বেফাঁস কথায় বেদনাহত গুমোট ঘরে রোদের ঝিলিকের মতো এক টুকরো চঞ্চলতা ঢুকে পড়ল। মহিলারা একে অপরের দিকে চোখ চাওয়াচাওয়ি করে মুচকি হাসল। তারা হাসল বটে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ঠোঁট থেকে সুকৌশলে হাসির রেখা উঠিয়ে নিল—কেননা মরা-বাড়িতে হাসি বড়ই বেমানান। অশোভন।
কইতরি বেগম বলল, ‘শুধু কি বকা দিবে?—তুই তো স্বীকার করবি না, কিন্তু আমার ধারণা—ওই দজ্জাল বউটা তোকে মারতেও পারে। সত্যি করে বল তো—বউ তোকে মারে কি-না?’
‘না খালা। মারে কম। বকে বেশি।’
কেরামত আলীর এই কথায় ঘরের মহিলারা বিস্মিত হয়ে পুনরায় একে অপরের দিকে তাকাল এবং তাদের ঠোঁটের কোণ হাসির চাপে প্রসারিত হয়ে উঠল। এই হাসি দমিয়ে রাখা কষ্টকর। মশা বা পিঁপড়ায় কামড় দিলে যেমন স্থির হয়ে থাকা যায় না তেমনি হল তাদের অবস্থা।
‘বউয়ের মার খাস বলেই তো তোর স্বাস্থ্য এ-রকম পাট-কাঠির মতো শুকনা। না-হলে তো ঢাকা শহরে থাকা কোনো মানুষের শরীর এত শুকনা থাকার কথা না। বাবা না ভালো, খালার কথা শোন। অযথা ঝামেলা বাড়াস না। আমার ছেলে তো গেছেই। যে গেছে সে আর আসবে না। কিন্তু তুই আমার বোনপুত। বউয়ের হাতে তোর জান গেলে আমি সইতে পারব না।’
‘খালা তুমি আমাকে নিয়ে এত চিন্তা কোরো না তো। আমার কিছু হবে না। তুমি তোমার মাথাটা একটু আমার দিকে ঘোরাও। তেলটা দিয়ে দিচ্ছি।’
কইতরি বেগম ঘুরে বসে নিজের মাথাটা পেতে দিয়ে দিয়ে বলল, ‘দে—এতই যখন তেল দেওয়ার শখ—মনের খায়েশ পুরা করে দে।’
কেরামত আলী খালার মাথায় তেল দিয়ে দিতে লাগল। ভাগ্নে তার খালার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে—দৃশটা দেখে ঘরের মহিলারা খুশি হল।
হঠাৎ কইতরি বেগম ফোঁৎফোঁৎ করে কেঁদে উঠল। অনেক ক্ষণ বিরতির পর—এই তীব্রকান্না। ভাঙা গলায় কান্নার শব্দ ফেটে ফেটে বের হতে লাগল। এবং কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হল ক্রন্দন-পদাবলী,—‘তুই আমার আদরের ভাগ্নে রে কেরামত! আয় আমার বুকে আয়।’—কাঁদতে কাঁদতে কেরামত আলীকে জড়িয়ে ধরল।
মহিলাদের চোখ ভিজে উঠল। আবার থমথমে ও গুমোট পরিবেশ ফিরে এল ঘরে।
এবার কেরামত আলীও গোঙায়ে কেঁদে ফেলল।
কইতরি বেগম নিজের আঁচল দিয়ে ভাগ্নের চোখের জল মুছে দিল।
কেরামত আলী শিশুর মতো হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘তুমি কাঁদলে আমারও কান্না আসে খালা!’
‘ঠিক আছে। আমি কাঁদলে যদি তোর কান্না আসে তাহলে আমি আর কাঁদব না। কান্না বন্ধ করলাম।’
মহিলারা অনুধাবন করল, কইতরি বেগম তার ভাগ্নেকে কতটা আদর করে। তারা এটাও বুঝতে পারল—ভাগ্নে তার খালাকে কতটা ভালোবাসে।
কইতরি বেগম শুয়ে পড়ল। সবাই ভাবল, সে অজ্ঞান হয়ে পড়ল বুঝিবা। কিন্তু না। ঘুমের ঘোরে সে শুয়ে পড়েছে।
ব্যাপারটা নিশ্চিত হয়ে কেরামত আলী বেরিয়ে পড়ল।

কেরামত আলী ভেবেছিল—হীরার সাথে একবার দেখা করবে। ফলে সুযোগ পেয়ে হীরাদের বাড়ির দিকে হাঁটা দিল।
হীরা শান্ত হয়েছে। সে আর উল্টাপাল্টা কথা বলছে না। দা-বটি নিয়েও টানাটানি করছে না। তাই সে এখন অবমুক্ত।
হীরা চুপচাপ বসে আছে পালানের পাশে, মাটির ঢিবির উপর। পাশেই একটি লাউয়ের জাংলা। জাংলার খুঁটির উপর একটি ফিঙে বসা।
কেরামত আলীকে দেখতেই হীরা মাটির ঢিবি হতে নামল।
হীরা উঠে দাঁড়াতেই ফিঙেটি উড়ে গেল।
হীরা বলল, ‘আসসালামালাইকুম।’
‘অলাইকুম সালাম।’—কেরামত আলী ভয়ে ভয়ে হীরার সালামের উত্তর দিল।
লিয়াকত মোল্লা বলল, ‘আমার ছেলেটা শক খেয়ে উল্টাপাল্টা আচরণ করছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে সে এখন সম্পূর্ণ ভালো। ভয়ের কিছু নাই।’
কেরামত আলী তবুও ভয়ে ভয়ে হীরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।
হীরা হ্যান্ডশেক করতে করতে অবাক হয়ে বলল, ‘আরে! আপনার হাত দেখি আমার হাতের চাইতেও নরম!’
হীরার অভিনব কথার উত্তরে কী বলবে বুঝতে পারল না কেরামত আলী।
অবশ্য তাকে উদ্ধার করল লিয়াকত মোল্লা। বলল, ‘শহরের মানুষদের হাত নরমই থাকে। তারা আমাদের মতো ক্ষেত-খামারে কাজ করে না। সেজন্য তাদের হাত নরম থাকে।’
লিয়াকত মোল্লা কাজে যাচ্ছিল। তাই সে আর দেরি করল না।
লিয়াকত মোল্লা চলে যাওয়ার পর কেরামত আলী বলল, ‘তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।’
হীরা বলল, ‘বলেন।’
‘গাঞ্জুইট্টা কোনো ছেলের সাথে তোমার পরিচয় আছে কি?’
‘কী ছেলে?’
‘মানে যারা গাঁজা খায়?’
‘গাঁজা কী জিনিস?’
কেরামত আলী চিন্তায় পড়ে গেল। হীরা গাঁজা চেনে না। তাকে গাঁজার ব্যাপারে ব্যাখ্যা করা ঠিক হবে কি?—হবে না। তাই সে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, ‘মানে বদখৎ চেহারার কোনো ছেলে চান্দুর দোকানে আসত কি-না?’
‘উফ! আপনি কী-সব কথা বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। বদখৎ চেহারা মানে কী, বাংলায় বলেন?’
‘বদখৎ চেহারা মানে হল—অসুন্দর চেহারা। দেখতে বিশ্রী। ঠোঁট কালো। দাঁত লাল—মনে কর এ-রকম কেউ।’
‘হ্যাঁ, এইরকম একজন আসছিল।’
‘কবে? কতদিন আগে?’— কেরামত আলী উত্তেজনার চোটে কী থেকে কী বলবে বুঝে উঠতে পারল না।
‘এই তো কয়দিন আগে।’
‘তার নাম কী?’
‘নাম—চেংকু।’
‘সে কেন আসত?’
‘বশিরুল্লাহ ভাইয়ের সাথে মোলাকাত করতে।’
‘মোলাকাত মানে?’
‘কোলাকুলি।’
‘তা ওই চেংকু কি শুধু কোলাকুলি করার জন্য আসত?’
‘না কোলাকুলির পর চা খাইত। সিগ্রেট খাইত।’
‘কার দোকানে আসত? চান্দুর দোকানে?’
‘না, সব দোকানেই।’
‘তোমাদের গ্রামে আর কয়টা দোকান আছে?’
‘আরো চারটা দোকান আছে। আজিজের দোকান। মোতালেবের দোকান। আর ল¹ার দোকান। সব দোকানেই চা খাইত। মাঝে মাঝে তারা দুইজনে ঘুরতে যাইত।’
‘তারা দুই জন কারা?’
‘বশিরুল্লাহ ভাই আর চেংকু ভাই।’
‘তোমাকে রেখে যেত কেন? নাকি তুমিই যেতে না?’
‘না, আমি যেতে চাইতাম কিন্তু আমাকে নিত না?’
‘কেন?’
‘তা জানি না।’
‘তারমানে তাদের মধ্যে গোপন আলাপ হত।’
‘তা তো হতই।’
তুমি তা শুনতে চাইতে না?’
‘না।’
কেরামত আলী ভাবল, চেংকু খুবই ধুরন্ধর ছেলে। সে শুধু চান্দুর দোকানেই চা খেত না, অন্যান্য দোকানেও যেত। এর একটাই কারণ—আর তা হল—সতর্কতা; যাতে সে ধরা না পড়ে। কিন্তু চান্দু এই চেংকু ছেলেটার কথা বলে নি কেন? সে কি তবে সচেতনভাবে চেংকুর কথা এড়িয়ে গেছে? কিন্তু কেরামত আলী চাইলেও এ কথা জানতে পারবে না। কারণ চান্দু তাকে বলবে না। একটা প্রশ্ন করলে উল্টো উত্তর দেবে। আচ্ছা এমন কি হতে পারে না, চান্দু নিজেও জড়িত? চেংকু যেমন ধুরন্ধর চান্দু নিজেও তো সেরকমই ধুরন্ধর। কথায় বলে, চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। চেংকু যখন এ গ্রামে এসেছে, চান্দুর সাথে যখন পরিচিত হয়েছে, তখনই সে তার দূরভিসন্ধির কথার ইঙ্গিত দিয়েছে চান্দুকে। আর চান্দু মতো ধামাধরা লোকেরা টাকার লোভে সহজেই সততা বিসর্জন দিতে পারে। ফলে সে খুব সহজেই চেংকুর আঁতাতে পা দিয়েছে। বিনিময়ে কিছু টাকা পেয়েছে। আর প্রাণ গেছে বশিরুল্লাহর।
কেরামত আলী দেখতে পেল তাদের দিকেই হেঁটে আসছে তার খালার দেবর অব্দুর রহমান। তাকে দেখে কেরামত আলীর ভাবনায় ছেদ পড়ল। বরং চেংকুর স্থানে প্রতিস্থাপিত হল আব্দুর রহমান। বশিরুল্লাহকে তো আব্দুর রহমানও খুন করতে পারে। পারে না?
বড় ভাইয়ের সাথে ঝগড়া তথা— রেসারেসির কারণে আব্দুর রহমান পিতৃভিটা ত্যাগ করে চলে গেছে শ্বশরবাড়ি—শরিয়তপুর। গেছে মানে কি একেবারেই চলে গেছে?- তা তো নয়। কেননা এখানে রয়েছে তাদের বাড়ি-ঘর, জমি-জমা। কেরামত আলী যদ্দুর জানে, ত্রিশ বিঘা জমির মালিক ছিলেন বশিরুল্লাহর দাদা আব্দুল খালেক। খালেক সাহেবের দুই ছেলে আব্দুর মালেক ও আব্দুর রহমান। কোনো মেয়ে নেই। খুব সহজ হিসাব। একেক ভাই ১৫ বিঘা করে জমি পাবে। এখন প্রশ্ন হল—কোনো ভাইয়ের যদি সন্তান-সন্তুতি না থাকে তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবে ভাইয়ের সমস্ত সম্পত্তি অপর ভাই পাবে। সেই হিসাবে আব্দুর রহমান এই খুনের হোতা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সম্পত্তির লোভে মানুষ কি-না করতে পারে। এমন নজির দেশে বহু রয়েছে।
কেরামত আলী বলল, ‘তুমি কি এখানেই থাকবে?’
হীরা বলল, ‘হ্যাঁ।’
‘তাহলে আমি যাই।’
‘ঠিক আছে।’

কেরামত আলী ছোটকাকা বলে ডাক দিল।
আব্দুর রহমান থেমে পেছন ফিরে তাকিয়ে বলল, ‘আরে কেরামত আলী, তুমি এখানে কী করছ?’
কেরামত আলী বলল, ‘এই তো হীরার সাথে কথা বলছিলাম।’
‘তুমি একজন বুইড়া পোলা হয়ে এই ছোটবাচ্চার সাথে কী কথা বল?’
‘বশিরুল্লাহ তো সবসময় হীরার সাথে মিশত। তাই ওর কাছে জানতে চাইলাম, সন্দেহজনক কাউকে সে দেখেছে কি-না।’
আব্দুর রহমান আঁৎকা থেমে পড়ল। যেন কেরামত আলী খুবই বাজে কাজ করে ফেলেছে।
‘তুমি কি গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছ নাকি কেরামত?’—আব্দুর রহমান জানতে চাইল।
‘না না ছোটকাকা। গোয়েন্দাগিরি করতে যে ধরনের জ্ঞান লাগে তা কোনোকালেই আমার ছিল না। আমি হীরার সাথে কথা বলে বুঝতে চেয়েছি, ঠিক কী কারণে বশিরুল্লাহর মতো নিষ্পাপ একটি ছেলে খুন হতে পারে।’
‘এটাই হল—গোয়েন্দাগিরি। শোন। এসব করবে না। দেশে থানা পুলিস আছে। আইন আছে। এসব উজিয়ে নিজে নিজে মাতবরি করার নামই হল গোয়েন্দাগিরি।’
‘জি ছোটকাকা।’
‘তারপর বল— তোমার কী খবর? চাকরি-বাকরি কেমন চলছে?’
‘ভালোই চলছে ছোটকাকা।’
‘তুমি একা আসছ যে? তোমার উয়াইফ আসে নি?’
‘আপনাদের বউমার বাতের ব্যথা। তাই আসতে পারে নি।’
‘তোমার কাকীও আসতে পারে নি মাজার ব্যথার কারণে।’
‘মাজার ব্যথা কিন্তু খুবই জটিল রোগ ছোটকাকা। কাকীমার যত্ন নেবেন।’
‘কে কার যতœ নেয়? আমার এ্যাজমা। দুইটা ইনহেলার নিতে হয়। কখনো শ্বাসটান পড়লে বাপ-দাদার নাম ভুলে যাওয়ার দশা হয়; আর তো তোমার কাকীমা।’
‘এ্যাজমা অত জটিল রোগ না ছোটকাকা। পয়-পরিস্কার থাকলে, ধুলা-ময়লা আবর্জনা এড়িয়ে চললে এই রোগ থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়ায যায়।’
‘তুমি দেখি ডাক্তারদের মতো কথা বলছ। পয়-পরিস্কার থাকব কেমনে? আমরা গ্রামের মানুষ। আমাদের মতো মানুষের পক্ষে কি ধুলা-ময়লা আবর্জনা এড়ায়ে চলা সম্ভব?’
‘তারপরও যতটা পারা যায়। এসব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।’
‘ঠিক আছে। খুব চেষ্টা করব। আমি একটু গাঙপারের দিকে হাঁটতে যাব। তুমি থাক।’
‘যদি কিছু মনে না করেন আমিও যাই আপনার সাথে।’
‘চল।’

আব্দুর রহমানের সাথে যেতে যেতে কেরামত আলী বলল, ‘কাকা, যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম।’
‘কর।’
‘না মানে, জন্মভিটা রেখে ঘরজামাই হয়ে থাকতে আপনার কেমন লাগে?’
কেরামত আলীর অপ্রাসঙ্গিক ও বেফাঁস প্রশ্নে আব্দুর রহমানের মেজাজ চড়ে গেল। কিন্তু সে কোনো উত্তর দিল না।
‘আপনি বোধ হয় আমার কথায় রাগ করলেন ছোটকাকা।’
‘না। রাগ করি নি।’
‘তারমানে ওখানে থাকতে আপনার ভালোলাগে।’
‘তুমি যদি অন্যকিছু বলতে চাও বলতে পার।’
কেরামত আলী সুযোগ পেল। বলল, ‘আপনি বশিরুল্লাহর বিয়ে খেতে এসেছেন নাকি ওর মৃত্যুসংবাদ শুনে এসেছেন?’
আব্দুর রহমান থেমে পড়লেন। কেরামতের দিকে তীক্ষè দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি কী বলতে চাও?’
‘যদি বিয়ে খেতে এসে থাকেন তাহলে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু যদি বশিরুল্লাহর মৃত্যুসংবাদ শুনে এসে থাকেন তবে আমার একটা কথা আছে।’
‘আমি তোমার কথার উত্তর দিব না।’
‘তারমানে আমার ধারণাই ঠিক। আপনি বশিরুল্লাহর মৃত্যুসংবাদ শুনে এসেছেন। বিয়ে খেতে আসেন নি।’
‘তো? তুমি কি বলতে চাও আমি বশিরুল্লাহকে খুন করেছি?’
‘সেটা বলতে চাই না তবে বুঝতে চাই আপনি বশিরুল্লাহর একমাত্র চাচা হয়েও কেন তার বিয়েতে আসেন নি!’
আব্দুর রহমান কেরামত আলীর গালে ঠাশ করে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলল, ‘বশিরুল্লাহ আমার ভাইয়ের ছেলে। তার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক। মনে রাখবা, বশিরুল্লাহ আমার চাইতে তোমার বেশি আপন না।’
—বলে সে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল।
বাম হাতে চোয়াল চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রইল কেরামত আলী। এক ফাঁকে আশপাশে তাকিয়ে এটা দেখতেও ভুল করল না, থাপ্পড় খাওয়ার ঘটনাটি তৃতীয় কেউ দেখে ফেলল কি-না!

(চলবে)

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত