পূর্ণিমা বিরিয়ানি হাউজ [পর্ব-১]

শরতের শেষ বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা।ঘটনাটি ঘটলো দ্রুত।পূর্ণিমা বিরিয়ানি হাউজে বসেছি কাচ্চি খেতে।সারা দিনে সাকুল্যে একটা রুটি আর দুই কাপ চা খেয়ে সময় পার হয়েছে।

সন্ধ্যায় বিরিয়ানি হাউজে দেখলাম পরিবেশটা বেশ আরামদায়ক। আলোয় ঝলমল।মৃদু গান বাজছে।অথচ কিছুক্ষণ আগেই বাইরে অনেক বৃষ্টি হয়ে গেছে।বৃষ্টির মধ্যে মোটরসাইকেল চালানোর সময় লক্ষ্য করলাম ঠাসাঠাসি ভিড়ের মধ্যে মাস্ক নেই অনেকের মুখে।রাস্তাঘাট, ফুটপাত, এককথায় বলতে গেলে বাঁধভাঙা মানুষের ভিড়ে করোনা মহামারি নিয়ে সবাই উদাসীন।এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেলে একটা বাস ধাক্কা দেয়।তখন ঠিক সন্ধ্যার আগে।বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী পড়ে গেলো পিচঢালা রাস্তায়।মুহূর্তেই লোক জমা হয়ে গেলো। মোটরসাইকেল আরোহীকে উদ্ধার করে উপস্থিত জনতা হাসপাতালে নিয়ে গেলো।ওই আরোহী বেঁচে আছে না মারা গেছে তা এই মুহূর্তে আন্দাজ করা না গেলেও অবস্থাটা খারাপ বুঝা গেলো।

বিরিয়ানি অর্ডার করেছি।দিতে দেরি হচ্ছে।ঠিক সেই সময় পাশের টেবিলে ঘটে গেলো এলাহীকাণ্ড।

-‘আমি চাইলাম কাচ্চি বিরিয়ানি।আপনি দিলেন গরুর মাংসের বিরিয়ানি।’
-‘এক্সিকিউজ মি, স্যার আপনার কথা বুঝলাম না।’
-‘চাইলাম কাচ্চি বিরিয়ানি, দিলেন গরুর বিরিয়িানি?’
-‘অর্ডার করলেন কাচ্চি বিরিয়ানি, খাসি না গরু এটাত আপনি বলেননি।’
-‘অর্ডার নেওয়ার সময় ক্লিয়ার করবেন না কোনটা দেবেন।’
-‘স্যার, সালাত বানায়ে দিব না এমনি দিব? বোরহানি খাবেন না কোল্ড ড্রিংকস?’
-‘বোরহানি দেন।সালাতে একটু ঝাল বেশি দিয়েন।’

হঠাৎ বাঁশির শব্দ।আমরা দ্বিতীয় তলায় বসা।খুব গোছানো বিরিয়ানি হাউজটি।কাস্টমারও অনেক।অনেকেই খাচ্ছেন।কেউ খাওয়া শেষ করে গল্প করছেন।কেউ অর্ডার দিয়ে বসে খাবারের অপেক্ষায় আছেন।হঠাৎ বাঁশির শব্দ শুনে অনেকেই অবাক হলেন। কি ব্যাপার কি হলো? নিচ থেকে দ্বিতীয় তলায় সিঁড়ি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উঠছেন।

আমি কাউন্টারে গিয়ে হোটেলের হোটেলের একজন কর্মকর্তাকে বললাম-
‘ভাই কি হয়েছে?’
-‘কিছু না। মাঝে মাঝে ওরা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন) আসে। দেখে যায়। খোঁজ খবর নেয়।এই আর কি।ভয়ের কিছু নেই। কি খাবেন? অর্ডার দিয়েছেন? বসেন।’

আমি ধন্যবাদ দিয়ে টেবিলে এসে বিরিয়ানি খাওয়া শুরু করলাম। সন্ধ্যার আগে বৃষ্টি হলেও সন্ধ্যার আকাশে তারা দেখা যাচ্ছে। বিরিয়ানি খাচ্ছি আর মাঝে মাঝে জানালার গ্লাসের ভেতর দিয়ে আকাশে তারা দেখছি। হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল। বাম হাত দিয়ে রিসিভ করতেই মাহমুদ চৌধুীর কণ্ঠ শোনা গেলো।
-‘কি ব্যাপার চৌধুরী সাহেব?’
-‘আপনি তো ওই বিষয়টা নিয়ে কিছু জানালেন না?’
-‘আমি পরে ফোন দিচ্ছি। একটু বিজি আছি। ফোন রাখেন।’
-‘আপনাকে ফোন দিলেই বিজি বিজি বিজি..। সমস্যা কী আপনার?’
-‘ না কোনও সমস্যা নেই।’
-‘কালকের মধ্যে জানান। রাখছি ফোন।’

ফোন শেষ করে আবারও খাওয়া শুরু করলাম।অর্ধেক প্লেট বিরিয়ানি এখনো খাবার বাকি। চৌধুরী সাহেবের ফোনটার পরই মেজাজটা চরম খারাপ হয়ে গেছে।পাশে তাকাতেই চোখে পড়লো একজন সুন্দরী তরুণী।
চলবে..

প্রচ্ছদ: কাজী জহিরুল ইসলামের চিত্রকর্ম অবলম্বনে

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত