তের.
পনজব স্কয়ার। সমরখন্দ, উজবেকিস্তান।
হোটেল গ্র্যান্ড সমরখন্দ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে এসেছে রূপক। উজবেকিস্তানে তার কাজ শেষ হয়েছে। দেশে ফিরতে হবে। এখানে এসেছে জারা আর সুলেইমান আদহামের কাছ থেকে বিদায় নিতে।
সুলেইমান আদহামের বাসভবনের পরিবেশটা ভারী। অনেকটা বাংলাদেশের আষাঢ়ে মেঘের মত। মানুষগুলি যেন মন থেকে চাইছেনা, রূপক ফিরে যাক। সুলেইমান আদহাম রূপককে দেখার পর থেকেই অপ্রয়োজনীয় মেকি হাসি হাসছেন বার বার। একদফা কফি পরিবেশিত হয়েছে এর মধ্যে। জারার ফুপুর সাথে রূপকের কোন আনুষ্ঠানিক পরিচয় নেই। দুয়েকবার আপ্যায়নের সূত্রে চোখের দেখা দেখেছে মাত্র। তাতেই এমন কী হল যে তিনিও চেহারায় একটা অতিরিক্ত মন খারাপের ভাব যোগ করে নিয়েছেন? জারার কথাতো বলাই বাহুল্য। এখন পর্যন্ত রূপকের দিকে চোখ তুলে তাকায়নি। চোখে চোখ পড়লে কী একটা বিষয় যেন রূপকের কাছে ধরা পড়ে যাবে,এমন অবস্থা। অন্য দিকে তাকিয়ে ভাববাচ্যে দুয়েকটা কথা বলার চেষ্টা করছে সে।
সমরখন্দ থেকেই দিল্লীর ফ্লাইট ধরবে রূপক। তাই বেশী তাড়া নেই। এখান থেকে এয়ারপোর্ট যেতে অল্প সময়। এদেশে এসেছে মাত্র আটদিন হল, তাতেই অজানা এক মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পড়েছে যেন। ভালবাসা, মায়া এমনই অদ্ভুত যে ভৌগলিক আর নৃতাত্ত্বিক ভিন্নতাও তার প্রকৃত প্রভাবকে এতটুকু ক্ষুন্ন করতে পারেনা। “আচ্ছা যাই” কথাটা উচ্চারণ করতে রীতিমত লজ্জা বোধ হচ্ছে। শেষ মেষ সাহস করে কথাটা রূপককে বলতেই হল। কিন্তু কারও চোখের দিকে না তাকিয়ে ঘর ছেড়ে বের হল। চোখে তাকালে আবার কোন অস্বস্তিতে পড়তে হয় কে জানে।
জরার ফুপু অজান্তে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন- ছেলেটার মধ্যে বাবরের একটা প্রচ্ছন্ন ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন। হয়তো বাহ্যিকভাবে তেমন কোন মিলই নেই, তবে বহুদিনের সন্তান বিরহী মায়ের কাছে চামড়ার চোখে দেখা যায়না এমন অন্তরালের মিলটাই বেশী প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে।
বের হবার আগে সুলেইমান আদহাম রূপককে উদ্দেশ্য করে বললেন
-পুরো পৃথিবীর পক্ষ থেকে আর ঊনিশশো একচল্লিশ সালের খনন কর্মের একমাত্র জীবিত সদস্য হিসেবে আমি আপনার সফলতার অপেক্ষায় রইলাম….
শেভ্রোলেট এর ড্রাইভিং সিট এ আছে জারা আর পাশে যথারীতি রূপক। জারা রূপককে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌছে দিয়ে আসবে। রূপক খেয়াল করল আজ শীত অনেক বেশী পড়েছে। কুয়াশার চাদরে সমরখন্দ ঢাকা পড়ে আছে, আরও ঢাকা পড়ে আছে স্বল্প পরিচিত তরুণীর রহস্যময় হৃদয়। পরিবেশটাকে হালকা করার জন্য কিছু একটা বলার প্রয়োজন বোধ করল রূপক। জারার দিকে না তাকিয়েই বলল
-জারা, তুমি আমাকে একটা বিষয় বলোনি।
-কী?
-তোমার কাজিন বাবর তোমাকে ভালবাসত।
-কী জানি।
-মানে?
-ওসব ভালোবাসা টালোবাসা আমি বুঝিনা।
-এটা কেমন কথা? তুমি তাহলে কী বুঝ?
-আমি কী বুঝি সেটা বললে তোমার বিশ্বাস হবেনা।
-আগেই বুঝলে কীভাবে? বল শুনি।
-আমি শুধু বুঝি, তুমি চলে যাচ্ছ তাই আমার বুকের ভেতরটা প্রচণ্ড কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। যদি বল কেন, আমি কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবনা।
-কী বলছ এসব? জারা সত্যি করে বলতো কী হয়েছে।
-কিছু হয়নি। তুমি তোমার কাজ সমাপ্ত করার বিষয়ে মনযোগী হও।
-তুমি না বললেও আমি কাজে মনযোগী থাকব। কিন্তু……
-কিন্তু কী?
-আমার চলে যাওয়ার বিষয়টাতে তুমি এত আপসেট হচ্ছ সেটা আমি ঠিক নিতে পারছিনা। আমি তো তোমার এমন কোন ঘনিষ্ঠ বা পূর্বপরিচিত কেউ নই।
-আগেই বলেছিলাম, বললে তুমি বিশ্বাস করবেনা। জানতাম। আচ্ছা রূপক,তুমি দেশে গিয়ে সব ভুলে যাবে? আমার সাথে যোগাযোগ আর হবেনা তোমার?
-কী বলছ এসব? অবশ্যই হবে। তোমার সাথে যোগযোগ না করে থাকতে পারব নাকি আমি?
এরপর আর রূপক কোন কথা খুঁজে পাচ্ছেনা। চুপচাপ উইন্ডস্ক্রীন দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। সমরখন্দের পাংশুটে আকাশ বলে দিচ্ছে জারার মন এখন কেমন। জারা কী বলতে বা বোঝাতে চায় রূপক যে তা বোঝেনি এমন নয়, তবে নিজেকে ভেতর ভেতর কঠিন শাসনে দমিয়ে রেখেছে। এয়াপোর্টে এসে গাড়ী থেকে রূপক বেরিয়ে আসল, কিন্তু জারা গাড়ীতেই বসে আছে। রূপক বাম দিকের দরজার কাছে এসে দাঁড়াতে জারা কাঁচটা নীচে নামিয়ে বলল
-রূপক কিছু মনে করোনা, আমি নামব না। তুমি যাও।
-কেন?
-নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। তুমি যাও, প্লিজ তুমি যাও।
রূপক চলে যাচ্ছে। দু’পাশের গাল বেয়ে ঝর্ণার মত নেমে আসা মৃসণ চুলের মাঝখানে পবিত্র মুখটা আরেকবার দেখতে খুব ইচ্ছা হলেও জোর করে আত্মসংবরণ করল। জানে আবেগের বশে জারার চাইতেও বেশী ছেলেমানুষী করে বসতে পারে। হনহন করে বোর্ডিং লাউঞ্জের দিকে হাঁটছে। জানতেও পারলনা দু’গালে শুধু মসৃণ চুলের ঝর্ণাই ছিলনা, ছিল চোখের জলের ঝর্ণাও। একজন নারী কতখানি ভালবাসা আর মমতা নিয়ে কোন পুরুষের জন্য এ অমূল্য জল ঝরায় তা বোঝার সাধ্য পুরুষের নেই, কখনো ছিলও না। সমরখন্দ এয়াপোর্টের পার্কিং লটে একটা শেভ্রোলেট কোবাল্ট দীর্ঘ সময় ধরে থেমে রইল এক না বলা বেদনার সাক্ষী হয়ে।
রূপকের প্লেন যে মুহুর্তে টেক অফ করল ঠিক সেই মুহুর্তে নুকুস মিউজিয়াম অব আর্টের মেইন গেটের সামনে একটা চারকোল গ্রে রঙের এস ইউ ভি গাড়ী থামল। গাড়ীর ঝকঝকে নতুন নম্বরপ্লেট বলে দিচ্ছে এটি তাসখন্দে রেজিস্ট্রি করা। তবে গাড়ীর যাত্রীরা ছাড়া কেউ জানেনা, নম্বর প্লেটটা মাত্র ঘণ্টা তিনেক আগে লাগানো হয়েছে। গাড়ীর প্রকৃত নম্বর প্লেটের হদিস এই মুহুর্তে অজ্ঞাত।
গাড়ী থেকে চারজন আরোহী নামল। দুইজন আরোহীর পিঠে ব্যাক প্যাক আছে। টিকিট কাউন্টারের মেয়েটা চারজন পূর্ব ইউরোপীয় ট্যুরিস্ট দেখে স্বসম্ভ্রমে দ্রুততার সাথে টিকিট দিয়ে দিল। খেয়াল করেনি যে টিকিট কাউন্টারের পাশের চিকন প্যাসেজটা ধরে ব্যাক প্যাক ওয়ালা একজন ব্যক্তি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে এগোচ্ছে।
পনের গজ পরে প্যাসেজের শেষ মাথায় একটা স্ট্রং রুম। সেখানে মিউজিয়ামের সি.সি ক্যামেরার কন্ট্রোল ইউনিট। দরজায় নক করতে ভেতর থেকে কেউ একজন পাল্লাটা খুলে সামান্য ফাঁক করল। কিন্তু আস্ত একটা সাবমেশিনগানের নল দেখে লোকটা থ হয়ে গেল। বন্দুকধারী পূর্ব ইউরোপীয় আগন্তুক পরিষ্কার উজবেক ভাষায় স্বল্প আওয়াজে দৃঢ় গলায় বলল
-যারা চুপ থাকে, শেষ পর্যন্ত তারাই বেঁচে থাকে।
কন্ট্রোল ইউনিটের লোক দু’জনের জন্য এই একটা বাক্যই যথেষ্ট ছিল। তারা বেঁচে থাকার প্রশ্নে ভীষণ সিরিয়াস, তাই শব্দ করা তো দূরে থাক শব্দ করার কল্পনাও মাথায় আনলনা। একে একে সব কন্ট্রোল সুইচ বন্ধ করে দেয়া হল, ক্যামেরা অফ হয়ে গেল যার ফলে সার্বক্ষণিক ভিডিও রেকর্ডিং সিস্টেমও বন্ধ হল।
একই সময়ে অপর তিনজন প্রবেশ পথের মুখে চেকারের হাতে চারটা টিকিট দিয়ে জানাল- একজন পেছনে আছে, মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতার বায়োগ্রাফি দেখছে, এখনি এসে পড়বে।
লোকটা চারটা টিকেট রেখে তিনজনকে ভেতরে ঢুকতে দিল। তিনজন সোজা জুয়েলারী এরিয়ায় জেড পাথরের টুকরো রাখা কেসটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর গভীর মনযোগ দিয়ে দেখতে লাগল। দেখতে দেখতে একজন মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গীকে মিসকল দিল। ফোনে কল ভেসে উঠা মাত্র অস্ত্রধারী বন্ধ কন্ট্রোল রুমের ভেতরের দু’জনকে লক্ষ্য করে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করল। সাইলেন্সার আর বন্ধ দরজার কারণে বাইরে কোন আওয়াজ পৌঁছাল না। কাজটা শেষ করে দ্রুত স্ট্রং রুম ছেড়ে বেড়িয়ে এল লোকটা, গট গট করে হেঁটে পৌছে গেল প্রবেশ পথের টিকিট চেকারের কাছে। চেকারের দিকে অস্ত্র তাক করে বলল
-তোমার কন্ট্রোল রুমের সহকর্মী দু’জন পরপারে, আশা করি তুমি এ মূহুর্তে তাদের সাথে মিলিত হতে চাওনা।
প্রহরী কথা শুনে আর হাতের ভয়াল দর্শন অস্ত্র দেখে পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইল। ওদিকে দ্বিতীয় ব্যাক প্যাকওয়ালা তার ব্যাগ থেকে একটা হাঁতুড়ী বের করে গ্লাসকেসে আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলল। তার পর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে একরাশ ভাঙ্গা কাঁচের টুকরার মধ্য থেকে জেড পাথরের টুকরোটা তুলে নিয়ে একটা বক্সে পুরে ব্যাক প্যাক এ রেখে দিল। ইতোমধ্যে জুয়েলারী এরিয়ার বাকী দর্শণার্থীরা ডাকাত ভেবে দৌঁড়াদৌঁড়ি আর চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিয়েছে। সেসবের দিকে কোন মনযোগ না দিয়ে তিন জন আস্তে আস্তে মিউজিয়ামের বাহির দরজার সামনে চলে এল। । এখানে প্রথম অস্ত্রধারী টিকিট চেকারকে জিম্মি করে রেখেছিল। তাকে টেনে নিয়ে স্ট্রং রুমে ঢুকিয়ে বাইরে দিয়ে হ্যাচবোল্ট আটকে চলে এল। এরমধ্যেই ওরা অস্ত্র আর হাঁতুড়ী যার যার ব্যাক প্যাক-এ ঢুকিয়ে ফেলেছে। রিসেপশনের লোকজন সবার হুড়োহুড়ি দেখে এরই মধ্যে ডাকাত ভেবে পুলিশে ফোন দিয়েছিল। রিসেপশনের সামনে দিয়েই ওরা চারজনও আতঙ্কগ্রস্ত দর্শণার্থীদের মতই দৌড়ে বাইরে চলে এল।
এস.ইউ.ভি র ড্রাইভার গাড়ীর স্টার্ট বন্ধ করেনি। চারজন গাড়ীতে চড়তেই গাড়ী ছেড়ে দিয়ে দ্রুত স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে বোখারার পথে চলল। মুখে ওদের সন্তুষ্টি আর তৃপ্তির হাসি। সংগঠনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথের ছোট্ট আর একমাত্র বাঁধাটা দূর করা গেল। বোখারা আর দশ কিলোমিটারের মত বাকী থাকতে হাইওয়ের পাশে গাড়ী থামাল ওরা। আগের দুইটা ভুয়া নাম্বার প্লেট খুলে ড্যাশ বোর্ডে রেখে দিলো। তারপর ড্যাশ বোর্ড থেকে আরো দুইটা এনে গাড়ীর সামনে পিছনে লাগিয়ে আবার নতুন পরিচয়ে চলল বোখারার দিকে। আজকেই জেড পাথর নিয়ে একজন সমরখন্দ থেকে ইয়ানগনের ফ্লাইট ধরবে ।
প্লেনে বসে বসে সময় কাটতে চায় না। রূপক ফোল্ডারে থাকা ডকুমেন্টগুলোয় একবার চোখ বুলাবার চেষ্টা করল। কিন্তু কই, কালো অক্ষরগুলিতে কোন ইনফর্মেশন দেখতে পাচ্ছেনা তো। একটা কোমল দুঃখী মুখ খালি ভেসে ভেসে উঠছে। অদ্ভুত ব্যাপার, শৈশবের নতুন ক্লাসের অভিজ্ঞতার মতই। এসব কেন যে হচ্ছে! প্লেনের একঘেয়ে গতি রূপকের ভাবনাকে আরও গভীর করে তুলল। আচমকা একটা কথা মনে পড়ল। উজবেক ভাষায় জারা শব্দের মানে হচ্ছে রাজকুমারী। জারা বলেছিল ওর দাদী ইরানের সম্রাট নাদির শাহের বংশধারার মানুষ, সেটা ওর নামকরণের একটা কারণ হতে পারে তবে আসল কারণটা ওর দাদু সোলেইমান আদহাম বিস্তারিত জানেন। রূপক যেন আগ্রহ বোধ করলে সুলেইমান আদহামের কাছে সেটা জেনে নেয়। এই কথাটাতো বুড়োকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। আর কখনো হয়তো জানাই হবেনা। থাক্। সত্যি কারণ তো আরও একটা আছে যেটা রূপক জানে কিন্তু আর কেউ জানেনা। জারা দূরদেশের এক আধো চেনা আধো অচেনা যুবকের স্বপ্ন রাজ্যেরও রাজকন্যা-এই টুকুই তো যথেষ্ট। এর চেয়ে বড় আর কোন কারণের তো প্রয়োজন নেই। সেই রাজ্য নাদির শাহ বা তৈমুরের রাজ্যের চেয়ে অনেক অনেক বড়। সীমাহীন সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ।
সমরখন্দ থাকতেই আশু মামার সাথে কথা হয়েছে। রূপকের অনুসন্ধানমূলক কাজ প্রায় শেষ বলা যায়। জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন সেল এর পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে , বায়োলজিক্যাল এজেন্ট এর স্মাগলিং পয়েন্ট দক্ষিণ এশিয়ারই কোথাও। এখন সমগ্র দক্ষিণ আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিরুণী অভিযান চালিয়ে সুনির্দিষ্ট চক্রটাকে ধরতে হবে। তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার হল এই চরম বিনাশী মৃত্যুর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার রাস্তাও খুঁজে বের করতে হবে। অন্যথায় এটিকে কঠিন গোপনীয়তায় সংরক্ষণ ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা। কিন্তু চিন্তার বিষয়ই হল কোন গোপনীয়তাই শেষ পর্যন্ত নিরাপদ আর গোপন থাকেনা। যেমন থাকেনি চীনা দৈব বস্তু। যিন সম্রাটের কাছে তা শেষ পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকেনি, চেঙ্গিস খানের কাছেও নয়, তৈমুরের কাছেও নয় এবং মস্কোতেও নয়।
রূপক জানতে পেরেছে আক্রান্ত বাংলাদেশী রোগীদের প্রায় সব কয়জনেরই মৃত্যু হয়েছে। একজন দু’জন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। বাংলাদেশী চিকিৎসকরাও নিয়মিত ইউরোপীয়দের সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা নিচ্ছেন যাতে অন্তত নতুন করে কেউ আক্রান্ত হলে তারা সহজেই চিহ্নিত করতে পারেন এবং যথাসাধ্য প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারেন।
দিল্লিতে নেমেই রূপক আরেক ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছেছে। এখন বাসার পথে আছে। ভেবেছিল মোটামোটি ভাল একটা সময় বিয়ের চাপাচাপি থেকে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু নয়দিনের মাথায় আবার বাসায় যাচ্ছে। এ কয়দিনে মা’র বিয়ে ভাবনা যে আরও প্রকট হয়েছে তা বোঝার জন্য মনোবিজ্ঞানী হবার প্রয়োজন নেই। বাসায় গিয়ে কোন বিপাকে পড়তে হয় কে জানে। বিয়ে নামক নিম্নচাপ নির্ঘাত এখন আরও শক্তি সংগ্রহ করে সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে এবং তা রূপকের দিকে প্রবল গতিতে ধেয়ে আসছে। রূপক খুব চিন্তায় আছে।