ডিটেক্টিভ কে কে (কেরামত আলীর কেরামতি)—১৪

১৪
কেরামত আলী গতকাল যে মুদি দোকানটিতে গিয়েছিল এবং যে দোকানে চা খেয়েছিল সেগুলোতে আজ যাবে না। যে রাস্তা দিয়ে শুক্রাবাদ ঢুকেছিল আজ সে রাস্তা দিয়ে ঢুকবে না। এবং সে মনে মনে কামনা করল, কাল যে ফাজিল লোকটার সাথে তার দেখা হয়েছিল—যার বন্ধুর একটি লন্ড্রির দোকান আছে কাঁঠালবাগান মসজিদ গলিতে—তার সাথেও যেন দেখা না-হয়। এমনকি, যে কুকুরগুলো কাল দাবড়াদাবড়িতে মত্ত ছিল আজ যেন তাদের দেখাও না মেলে।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সে শুক্রাবাদ ঢুকল এবং তার কামনা সফল হল।
কাঁধ বাঁকা লোকটা যে বাড়িটাতে ঢুকেছিল কেরামত আলী সে বাড়ির তিনতলার ডান পাশের ফ্ল্যাটের কলিং বেলে চাপ দিতেই চিকনা-চাকনা শ্যামলা একটি মেয়ে দরজা খুলে দিল। মেয়েটির পোশাক-আশাক দেখে মনে হল—গৃহপরিচারিকা।
প্রথম দেখাতেই মনে হল— মেয়েটি পুতুল। তাই উত্তেজনায় তার বুকের ভেতরটা চড়াক করে উঠল। মনে মনে বলে উঠল—পাওয়া গেছে চিকনি-চামেলিকে।
কিন্তু চিকনি চামেলিকে দিখে তার জবান যেন বন্ধ হয়ে এল। মুখ থেকে কোনো কথা বের হল না।
মেয়েটা বলল, ‘আপনি কারে চান?’
কেরামত আলী বলল, ‘আমার নাম কেরামত আলী, এ্যাসিসটেন্ট ক্লার্ক, মৎস্য বিপণন বিভাগ কাওরান, বাজার।’
ভুল উত্তর দেওয়াতে মেয়েটা হয়তো মনে মনে হাসল। কিন্তু মুখে বিরক্ত প্রকাশ করে বলল, ‘আপনি কার কাছে আসছেন?’
কেরামত আলী বলল, ‘আমি রাকিব সাহেবের কাছে এসেছি।’
‘পাশের বাসা দেখেন।’—বলে মুখের উপর ধড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিল মেয়েটি।

কেরামত আলী হতবিহ্বল হয়ে পড়ল। কী করবে বুঝে উঠতে পারল না। সে দরদর করে ঘামতে লাগল।
তারপর সে পাশের বাসার কলিং বেলে চাপ দিল। ক্রিং করে বেজে উঠল কলিংবেল।
ভেতর থেকে একটি নারী কণ্ঠ লম্বা স্বরে বলল, ‘কে!’
কেরামত আলী মুখে কিছু না-বলে দ্বিতীয় বার কলিং বেল বাজাল।
এবার দরজার কাছে এসে নারী কণ্ঠটি জানতে চাইল, ‘কে!’
কেরামত আলী বলল, ‘আমার নাম কেরামত আলী, এ্যাসিসটেন্ট ক্লার্ক, মৎস্য বিপণন বিভাগ কাওরান, বাজার।’
‘আপনি কোত্থেকে আসছেন?’
‘কাঁঠালবাগান থেকে।’
‘খালুজান তো বাসায় নাই।’
‘তিনি কখন ফিরবেন?’
‘তা জানি না।’
‘কিন্তু আমার একটু দরকার ছিল যে?’
‘কী দরকার?’
‘না মানে…আমি পুতুলের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম আর কি!’
সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে গেল।
পুতুল কিংবা কেরামত আলী কেউ একে অপরকে চেনে না কিন্তু দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল।
কেরামত আলী বুঝতে পারল, এই মেয়েটিই তবে পুতুল।
পুতুলও বুঝতে পারল, তার কাছেই এসেছে লোকটা। বলল, ‘আপনি কে?’
‘আমি কেরামত আলী, এ্যাসিসটেন্ট ক্লার্ক, মৎস্য বিপণন বিভাগ কাওরান বাজার।’
‘তা তো বুঝলাম। কিন্তু আমার সাথে কী কথা বলতে আসছেন?’
‘না ইয়ে মানে আমি বশিরুল্লাহর খালাত ভাই।’
মেয়েটা কেরামত আলীর দিকে অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
কেরামত আলী বলল, ‘আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বশিরুল্লাহর ব্যাপারে দুই একটা কথা জানার ছিল। আর কিছু না।’
মেয়েটা বলল, ‘আপনি দাঁড়ান!’—বলে দরজা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেল।
একটু পরে একজন ভদ্রমহিলা এলেন। দেখে মনে হল ইনি এ বাসার গৃহকর্তৃ। তিনি দরজা হালকা খুলে বাইরের দিকে মুখ বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘কী ব্যাপার?’
কেরামত আলী তাকে সালাম দিল, ‘আসসালামালাইকুম।’
‘অলাইকুম সালাম। বলেন?’
‘না মানে—পুতুলের সাথে আমার কিছু কথা ছিল।’
‘পুতুলের সাথে কী কথা? আমাকে বলা যায় না?’
‘তা যায়।’
‘বলেন।’
‘পুতুলের সাথে যার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সে খুন হয়েছে, জানেন তো?’
‘হ্যাঁ, শুনেছি।’
‘সে ব্যাপারে পুতুলের সাথে দুচারটে কথা ছিল।’
‘আপনি কি গোযেন্দা বিভাগের লোক?’
‘না। আমি বশিরুল্লাহর খালাত ভাই।’
‘বশিরুল্লাহ কে?’
‘যার সাথে পুতুলের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সে হল বশিরুল্লাহ।’
গৃহকর্তৃও কেরামত আলীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন।
কেরামত আলী তাকে আশ্বস্ত করে বলল, ‘ম্যাডাম ভয়ের কিছু নেই। আমি একজন ভালো মানুষ।’
গৃহকর্তৃ যেন আঁৎকে উঠলেন।
‘না ম্যাডাম। আমি আসলেই ভালো মানুষ। সহজ-সরল। কখনো কারো উপকার বৈ অনুপকার করি না।’
‘কোনো ভালো মানুষ কি কখনো বলে, আমি ভালো মানুষ?’
‘তা হয়তো বলে না।’
‘আপনি বলছেন যে?’
‘স্যরি।’
‘আসেন। ভেতরে আসেন।’
কেরামত আলী ভেতরে ঢুকল।

গৃহকর্তৃ কেরামত আলীকে বসতে দিয়ে ভেতরের ঘরের দিকে চলে গেলেন। তার সাথে সাথে চলে গেল পুতুলও।

কেরামত আলী সোফায় বসে ঘরের চারপাশে তাকাল। ফাঁকা দেয়াল। শুধু এক পাশে শোভা পাচ্ছে কাবা শরীফের ছবি। ধার্মিক পরিবার।
ঠিক তখন একটি তখনই পিস্তল নিয়ে তার দিকে তেড়ে এল একটি শিশু।
খেলাচ্ছলে দুহাত শূন্যে তুলে উঠে দাঁড়াল কেরামত আলী।
শিশুটি তাকে তাড়া করতে লাগল। সে পড়িমড়ি করে ছোট্ট ড্রইং রুমে ছুটোছুটি করতে লাগল কিন্তু নিজেকে লুকানোর জায়গা পেল না।
শিশুটি খুব মজা পেয়ে হাসতে লাগল। বলল, ‘তুমি খুব ভয় পেয়েছ, তাই না?’
কেরামত আলী বলল, ‘তা পেয়েছি বৈকি!’
‘তোমার নাম কী”
কেরামত আলী বলল, ‘আমার নাম কেরামত আলী।’
শিশুটি বলল, ‘আমার নাম জিজ্ঞেস কর।’
‘তোমার নাম কী?’
‘আমার নাম মোহাম্মদ সাফোয়ান।’ নিজের নামটি বলে নতুন প্রশ্ন করল, ‘তুমি কোন ক্লাসে পড়?’
কেরামত আলী বলল, ‘আমি নার্সারি ক্লাসে পড়ি।’
‘একটা ছড়া বল তো শুনি?’
‘আম পাতা জোড়া জোড়া—
মারব চাবুক চড়ব ঘোড়া,
ওরে বুবু সরে দাঁড়া
আসছে আমার পাগলা গোড়া,
পাগলা ঘোড়া ক্ষেপেছে
চাবুক ছুঁড়ে মেরেছে।’
‘গুড বয়। বসো।’

গৃহকর্তৃ ভেতর থেকে পর্দা করে এলেন। মানে হিজাব পরে এলেন। তার পেছন পেছন এল ছোট্ট একটি মেয়ে এবং পুতুল। মায়ের আগমনের সাথে সাথে সাফোয়ান চড়ুই পাখির মতে ফুড়ুৎ করে চলে গেল।
এক ফাঁকে তের ও চৌদ্দ বছরের দুটি মেয়ে উঁকি দিয়ে দেখে গেল কেরামত আলীকে। ওরা বোধ হয় সাফোয়ানের বড় বোন।
গৃহকর্তৃ বললেন, ‘বলেন, কী বলবেন?’
কেরামত আলী কী বলবে বুঝে উঠতে পারল না। মানে তার জিহ্বা জড়িয়ে এল। তাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
গৃহকর্তৃ কেরামত আলীর আচরণে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
অবশেষে কেরামত আলী বলল, ‘না ইয়ে মানে—চিকনি-চামেলির ব্যাপারে কিছু কথা ছিল আর কি।’
গৃহকর্তৃ অবাক হয়ে বললেন, ‘চিকনি-চামেলি কে?’
‘আপনার পেছনেই দাঁড়ানো।’
গৃহকর্তৃ ঘাড় ঘুরিয়ে পুতুলকে দেখলেন। ব্যাপারটা তার কাছে পরিস্কার হল না। বললেন, ‘ও তো পুতুল।’
‘জি জি পুতুল। নামটা ভুলে গেছিলাম। তাই চিকনি-চামেলি বলেছি।’
‘কিন্তু আমার নাম তো চিকনি-চামেলি না। যার নাম পুতুল আপনি তাকে চিকনি-চামেলি বলবেন কেন?’
‘কারণ—বশিরুল্লাহ তোমাকে এই নামে ডাকত।’
‘আমাকে এই নামে ডাকত মানে?’
‘হ্যাঁ। তোমাকে দেখার পর বশিরুল্লাহ খুব মুগ্ধ হয়েছিল। তাই চিকনি-চামেলি বলত।’
তারপর কেউ কিছু বলল না। চুপচাপ কয়েকটা মুহূর্ত কেটে গেল।
নিরবতা ভেঙে কেরামত আলী বলল, ‘বশিরুল্লাহর ব্যাপারে কিছু কথা ছিল।’
গৃহকর্তৃ বললেন, ‘বলেন।’
‘না মানে বশিরুল্লাহ খুন হওয়ার সাথে সাথে পুতুল ঢাকায় চলে এসেছে। তার এত তাড়াতাড়ি চলে আসা নিয়ে কেউ কেউ কানাঘুষা করছে।
গৃহকর্তৃ বললেন, ‘কানাঘুষা করার তো কিছু দেখছি না।’
কেরামত আলী বলল, ‘ম্যাডাম সেটা আমারও কথা। কিন্তু মানুষ কানাঘুষা করলে তো কিছু করার নেই। যাইহোক। আমি সেজন্য আসি নি। আমি এসেছি এটা জানতে যে, কে বা কারা বশিরুল্লাহকে খুন করেছে, তাদেরকে পুতুল চেনে কি-না!’
‘না। আমি তাদের চিনি কাউকে চিনি না।’
গৃহকর্তৃ বললেন, ‘আপনি এই কথাটা জিজ্ঞেস করতে আমার বাসায় এসেছেন?’
‘জি।’
‘আমি নিশ্চিত আপনি মিথ্যা বলছেন। নিশ্চয় আপনার মনে অন্যকোনো মতলব আছে।’
দুহাত জোর করে কেরামত আলী বলল, ‘বিশ্বাস করুন ম্যাডাম আমার মনে কোনো মতলব নেই। আমি একজন সহজ-সরল মানুষ।’
গহৃকর্তৃ তার কথা বিশ্বাস করলেন কি করলেন না—বোঝা না। তিনি কেরামত আলীর দিকে অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। বললেন, ‘আপনি কি পুতুলকে সন্দেহ করেন?’
‘না না না আমি তাকে সন্দেহ করি না। কিন্তু তার সাথে কথা বলে যদি কোনো ক্লু পাওয়া যায় সেজন্যই আমি আপনার বাসায় এসেছি।’
‘না ভাই। আপনার কথাবার্তা সন্দেহজনক। আপনি যান।’
কেরামত আলী নিজের ভিজিটিং কার্ড গৃকর্তৃর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘এটা আমার কার্ড। পড়ে দেখেন, আমি সন্দেহজনক কেউ না।’
‘না, কার্ড লাগবে না।’
‘আরে রাখুন। কখনো কাজে লাগতে পারে।’
‘না। লাগবে না।’
‘ম্যাডাম, বোন হিসেবে রাখুন। আপনি তো আমার বোনেরই মতো, তাই না?’
এতক্ষণে বোধ হয় কেরামত আলীর সরলতা একটু হলেও বুঝতে পারলেন গৃহকর্তৃ। পেরে তার হাসি পেল। কিন্তু তিনি হাসলেন না। হাসি চেপে রেখে বললেন, ‘আপনি কী চাকরি করেন?’
‘এ্যাসিসটেন্ট ক্লার্ক, মৎস্য বিপণণ বিভাগ, কাওরান বাজার, ঢাকা।’
‘মানে মাছ বেচেন?’
‘জি জি।’
‘মাছ দিতে পারবেন আমাদেরকে?’
‘কেন নয়? নিশ্চয়। নদীর মাছ আছে। সমুদ্রের মাছও আছে। আপনার কোনটা লাগবে?’
‘টেংরা মাছ আছে? গুলশা মাছ?’
‘না। চলতি সপ্তায় টেংরা-গুলশা আসে নি। তবে বাতাসি আছে।’
‘দাম কেমন?’
‘১২০০ টাকা কেজি। কিন্তু আপনার জন্য ১০০ টাকা ছাড়।’
কেন?
‘কারণ আপনার নামে যে মাছটা পাঠাব সেটা আমার নামে কিনব। আমি যেহেতু স্টাফ তাই আমার জন্য ১০% ছাড় রয়েছে।’
‘তাহলে দুই কেজি পাঠাবেন। আর মাছ হাতে পেয়ে টাকা দেব, কেমন?’
‘নিশ্চয়।’
গহকর্তৃ কেরামতের ভিজিটিং কার্ডটি পুতুলের হাতে দিলেন।
কেরামত আলী বলল, ‘আমার খালা খুব কান্নাকাটি করছেন। বশিরুল্লাহ ছিল তার একমাত্র ছেলে। বোঝেনই তো ম্যাডাম, পুত্র হারানো কতটা কষ্টের ব্যাপার। আমার ধারণা, পুতুল যদি তার সাথে একবার দেখা করত তাহলে তিনি হয়তো একটু হলেও মনে শান্তি পেতেন।’
গৃহকর্তৃ বুঝলেন কেরামত আলী অপ্রয়োজনীয় কথা বলছে। মনে মনে ভাবলেন, হয়তো লোকটার মধ্যে কিছুটা অস্বাভাবিকতা রয়েছে। তাই তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে ভাই। মাছ পাঠিয়ে দেবেন, তাহলে এই কথাই রইল।’
‘জি ম্যাডাম। অবশ্যই।’
সাফোয়ান আবার এল। এবার তার হাতে চকোলেটের প্যাকেট। কেরামত আলীর উদ্দেশ্যে বলল, ‘চকোলেট খাও তো?’
‘খাই।’
‘দাঁতে পোকা আছে?’
‘না।’
‘দেখি।’
কেরামত আলী দাঁত দেখাল।
‘তোমার দাঁত খুবই পরিস্কার। এত পরিস্কার হল কীভাবে?’
‘আমি প্রতিদিন দুই বেলা ব্রাশ করি।’
‘গুড বয়। চকোলেট খাও তো দেখি, কেমনে খাও।’
কেরামত একটা চকোলেট মুখে দিল।
সাফোয়ান বলল, ‘কামড় দাও তো।’
কেরামত আলী কামড় দিয়ে চকোলেট ভাঙল।
‘উয়াও। তোমার দাঁত খুবই স্ট্রং। আলহামদুলিল্লাহ।’
গৃহকর্তৃ বিরক্ত হয়ে নিজের ছেলেকে বললেন, ‘এ্যাই তুই যা তো!’
সাফোয়ান যেভাবে ফুড়ুৎ করে এসেছিল সেভাবেই চলে গেল।
গৃহকর্তৃ কী যেন বলতে যাবেন এমন সময় ভেতর থেকে বাচ্চার কান্না ভেসে এল। কান্নার আওয়াজ শুনে মনে হল ছয়/সাত মাসের বাচ্চা। গৃহকর্তৃ চটজলদি উঠে পড়লেন। বললেন, ‘আপনি বসেন। আমি আসতেছি।’
কেরামত আলী বোকার মতো ফস করে বলে ফেলল, ‘উনার কয়টা বাচ্চা?’
পুতুল বলল, ‘পাঁচটা।’
কেরামত আলী বলল, ‘দারুণ!’—তারপর বলল, ‘তুমি কি সত্যিই জানো না বশিরুল্লাহকে কে খুন করেছে?’
‘বললাম তো—জানি না।’
‘পুলিস কি তোমাদের বাড়ি গিয়েছিল?’
‘হ্যাঁ, গেছিল।’
‘তোমাকে সন্দেহ করেছে?’
‘হয়তো করছে। কিন্তু আমার সাথে কথা বলার পর বুচ্ছে, আমি এই ঘটনার আগেও নাই পিছেও নাই।’
‘কিন্তু তোমার হবু বর যেদিন খুন হল সেদিনই তুমি ঢাকায় চলে এলে কেন?’
‘খালুজান ফোন দিছিলেন তাই চলে আসছি।’
‘এ-রকম একটা দুর্ঘটনার দিনে তিনি তোমাকে ঢাকায় চলে আসার জন্য ফোন দিলেন কেন?’
‘কারণ—আমি না-থাকলে এই বাসাটা অচল হয়ে যায়। খালুজান চাকরি করেন। খালাম্মায় একলা একলা বাচ্চা-কাচ্চা আর সংসার সামলাতে পারেন না।‘
কেরামত আলী বলল, ‘সেটা অবশ্য ঠিক। যাইহোক। আমি তাহলে উঠি। ভালো থেকো।’

ফাঁকা সিঁড়িতে রাকিব সাহেবের সাথে মুখোমুখী দেখা। কেরামত আলী নামছিল আর রাকিব সাহেব উপরে উঠছিলেন।
কেরামত আলীকে দেখে রাকিব সাহেব যারপরনাই অবাক হলেন।
কেরামত আলী থেমে পড়ল এবং তাকে সালাম দিল।
রাকিব সাহেবও দাঁড়িয়ে পড়লেন। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
কেরামত আলী বলল, ‘ভাই সাহেব, ভালো আছেন?’
রাকিব সাহেব বললেন, ‘এই তো ভালো। আপনাকে ঠিক চিনলাম না তো!’
কেরামত আলী বুঝতে পারল, রাকিব সাহেব তাকে চিনেও না চেনার ভান করছেন। বলল, ‘আমি আপনার কাছে এসেছিলাম ভাই সাহেব। অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করে শেষে চলে যাচ্ছি।’
রাকিব সাহেব কৃত্রিম অবাক হয়ে বললেন, ‘আমার কাছে মানে! আমার কাছে কী মনে করে? আমি তো আপনাকে চিনি না।’
কেরামত আলী লোকটার কথায় আটকে গেল। কী বলা দরকার তা খুঁজে পেল না। শেষে বলল, ‘আপনার কাছে মানে, পুতুলের কাছে আর কি। পুতুলের হবু হাজবেন্ড খুন হয়েছে, সে ব্যাপারে জানতে এসেছিলাম।’
কেরামত আলী স্পষ্ট বুঝতে পারল এবার রাকিব সাহেব আটকা পড়ে গেছেন। তিনি কী বলবেন তা খুঁজে পাচ্ছেন না।
কেরামত আলী বলল, ‘পুতুলের হবু হাজবেন্ড খুন হয়েছে—এ কথা জানেন তো?’
‘হ্যাঁ, শুনছি।’—বললেন রাকিব সাহেব।
‘কে খুন করেছে, জানেন কিছু?’
রাকিব সাহেব কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘সেটা আমি কেমন করে জানব? আমি থাকি ঢাকায় আর ঘটনা ঘটেছে আলমডাঙ্গায়।’
‘না না না সেটা আমি বলি নি যে আপনি জানেন। যদি জানেন আর কি!’
‘না। আমি কিছু জানি না। আর আপনি এই ফালতু বিষয় নিয়ে আমার বাসায় আসছেন কেন?’
‘ফালতু বিষয় নয় ভাই সাহেব। খুনের মতো ঘটনা কি ফালতু বিষয় হতে পারে? পুতুলের হবু হাজবেন্ড ছিল আমার খালাত ভাই। আমার খুবই আদরের ছোট ভাই। সে বিবেচনায় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
‘আপনার কথা কি শেষ হইছে?’
‘জি জি।’
‘ওকে বাই।’
—রাকিব সাহেব উপরে উঠতে লাগলেন। কিন্তু কেরামত আলী দাঁড়িয়েই রইল।
কয়েক কদম উপরে উঠে পেছন ফিরে তাকালেন রাকিব সাহেব। বললেন, ‘কী হল, দাঁড়ায়ে আছেন কেন, যান।’
কেরামত আলী থতমত খেয়ে বলল, ‘আহা, আপনি আমার সাথে রাগ করছেন কেন?’
রাগান্বিত রাকিব সাহেব নিচে নেমে গেলেন। চাপা কণ্ঠে বললেন, ‘আপনি এক্ষুনি এখান থেকে না গেলে কিন্তু বিপদে পড়বেন।’
‘ঠিক আছে যাচ্ছি। আপনি রাগ করবেন না। আমি যাচ্ছি।’

(চলবে)

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত